ইউজার লগইন

সারাটি রাত্রি শুধু তারাদের সাথে তারাদেরই কথা হবে

"আমি কি কথা স্মরিয়া
এ তনু ভরিয়া
পুলক রাখিতে নারি
ওগো কি ভাবিয়া মনে
এ দুটি নয়নে
উথলি নয়ন বারি..."

গভীর নীল সাগরের জলে একবার ভরা চাঁদের নৃত্য দেখেছিলাম। চাঁদের আলো জলের ঢেউয়ে ঠিকরে পড়েই প্রতিফলিত হয়ে দিক বদল করে ফেলে। অন্য কোন দিকে চলে যায়। আমি বসে হারিয়ে যাই সেই প্রতিফলনে সৃষ্ট আলোকচ্ছটা দেখতে দেখতে। দূর অতীতের কোনো এক চন্দ্রালোকিত রাতের স্মৃতিতে।

স্মৃতি যেন ঈশ্বরের এক আশ্চর্য অনুদান। সময় নামক অনাসৃষ্টিটির বিরুদ্ধে সামান্য কৃপা। চলে যাওয়া সময়কে কখনো ফিরে না পাওয়া গেলেও তাই স্মৃতিকে আকড়ে সময়ের ফিকে হয়ে যাওয়া স্বাদ পাওয়া যায়।

যদি স্মৃতি না থাকতো, তাহলে হয়তো সময়ের মূল্যও অন্যরকম হতো। কষ্ট ছাড়া অনাবিল সুখের যেমন কোনো বিশেষ মূল্য থাকে না। স্মৃতি না থাকলে সময়ের ফিরে না আসার বাধ্যবাধকতা মেনে নেয়া হয়তো সম্ভব হতো না।

সেই সাগরপাড়ে চাঁদের আলোয় আলোকিত পথ ধরে হেঁটে দেখা হয়েছিল মেঘের দেশের মেয়ের সাথে। মেঘের মতো গোমড়ামুখো নয় সে। হাসিমুখে জানতে চেয়েছিল, এত সহজে পথ হারিয়ে ফেললে যে?

বলেছিলাম, পথ হারিয়ে তোমায় খুঁজে পাবে বলে কত শত রাজকুমার প্রতিদিন আত্মবলী মেনে নেয়! আর আমি তো কোন ছাড়!

সে বলেছিল, আমরা সবাই নশ্বর, এবং নিজেদের যা ভাবি তাই।

মেঘের দেশের মেয়ের কথাগুলো মিষ্টি লাগছিল খুব। আমরা দিয়েছিলামও যেন এক কথার দীঘিতে ডুব। রুপকথার গল্পের মতো সেই দীঘির গভীর তলেও একটি লুকোনো কৌটা ছিল। মেয়েটি আমায় বলে নি, কিন্তু আমি নিজে ডুব দিয়ে কৌটাটি তুলে আনি। খিলখিলে হাসি চারিদিকে ভাঙা কাঁচের টুকরার মতো ছড়িয়ে দিয়ে সে জানিয়েছিল, ওই কৌটায় রয়েছে মেঘরাজ্যের বন্দি স্বপ্ন। একদিন পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে দৃশ্যমান হবে মেঘের রাজ্য- সেই স্বপ্ন।

জানতে চেয়েছিলাম, কি করে সেই রাজ্য দৃশ্যমান হবে?

মেঘের দেশের মেয়ে বললো, সে জন্য সূর্য উদয় হবার পূর্বে পুরো আকাশে কৌটার রং ছড়িয়ে দিয়ে আসতে হবে।

সেই রাতে অফুরান রংয়ের কৌটা হাতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের আনাচে-কানাচে নক্ষত্রের আলোর গতিতে ছুটি বেড়িয়েছিলাম। তারপরও সূর্য ওঠার পূর্বে শুধু পূর্ব দিকটাই রাঙাতে পেরেছিলাম। সেই রংয়ে খুব অল্প সময়ের জন্য মেঘের রাজ্য দৃশ্যমান হয়েছিল।

হারিয়ে যাওয়া সেই চন্দ্রাহত রাতের স্মৃতি আকড়ে ভাবি মানুষের জীবন কতই না সামান্য, অথচ তবু কত অর্থবহ! এই পৃথিবী, এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যেন সবকিছু নিয়ে অপেক্ষায় আছে আমাদের প্রত্যেকের জন্য। ক্ষুদ্র আমরা আমাদের ততোধিক ক্ষুদ্র ব্যস্ততায় বন্দি থেকে তার সেই অপেক্ষাকে স্বার্থক করে তুলছি প্রতিনিয়ত।

একদিন হয়তো সে সময় আসবে যখন সারাটি রাত্রি তারাদের সাথে তারাদেরই কথা হবে। আর আমাদের মুখ সারাটি রাত রইবে মাটির 'পরে। আলোর প্রান্তর দিয়ে পাশাপাশি হেঁটে যাবেন রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দ দাশ।

---

পোস্টটি ২ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

শাপলা's picture


মীর তুমি এখনো লেখো আমরা বন্ধু ব্লগে?! কি অদ্ভূত ভালোবাসা তোমাদের!!

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

মীর's picture

নিজের সম্পর্কে

স্বাগতম। আমার নাম মীর রাকীব-উন-নবী। জীবিকার তাগিদে পরবাসী। মাঝে মাঝে টুকটাক গল্প-কবিতা-আত্মজীবনী ইত্যাদি লিখি। সেসব প্রধানত এই ব্লগেই প্রকাশ করে থাকি। এই ব্লগে আমার সব লেখার কপিরাইট আমার নিজেরই। অনুগ্রহ করে সূ্ত্র উল্লেখ না করে লেখাগুলো কেউ ব্যবহার করবেন না। যেকোন যোগাযোগের জন্য ই-মেইল করুন: bd.mir13@gmail.com.
ধন্যবাদ। হ্যাপি রিডিং!