জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজনগুলো খুঁজে বের করুন
আজ প্রায় মাসখানেক যাবত কফি পান করা ছেড়ে দিয়েছি। তেমন কোন সমস্যা হচ্ছে না। ছেড়ে দেয়ার আগে মনে হতো সকালে এক মগ কফি ছাড়া হয়তো সারাদিন মাথাব্যাথা করবে। দেখলাম তাও করলো না। কফি বাদ দিয়ে প্রতি সকালে এক কাপ করে গ্রিন টি পান করা শুরু করার পর দেখলাম, পানীয়টা শরীরের জন্যও দারুণ। শরীরের ভেতরের অনেক রোগ-বালাইয়ের উপসর্গকে দমিয়ে রাখে। আগে আমার পেটে তৈলজাতীয় খাদ্য থেকে সৃষ্ট জ্বালাপোড়া ও অস্বস্তিকর অনুভূতি, বুকের কোনায়-কানায় মাঝে মাঝে খেলে যাওয়া ব্যাথা- ইত্যাদি নিয়মিত না হলেও, অনিয়মিতভাবে দেখা দিতে আসতো। গত এক মাসে সেসবের কোন বালাই ছিল না বললেই চলে।
সেই সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসে ছোটখাটো পরিবর্তনও দারুণ উপকারী প্রমাণিত হলো। দুইটি মূলনীতিকে সামনে রেখে পরিবর্তনগুলো বোঝার চেষ্টা করলাম। প্রথমত খাবারের স্বাদের দিকে নজর রাখা, অর্থাত যে ধরনের স্বাদের খাবার আমার খেতে ভাল লাগে সে ধরনের স্বাদের খাবার প্রস্তুত করা। দ্বিতীয়ত নিজের রান্না ছাড়া কোন খাবার না খাওয়া। যার অর্থ হলো কোনরকম দোকানের খাবার, রেডিমেড খাবার, অর্ডার দিয়ে আনানো খাবার ইত্যাদি একদম বাধ্য না হলে না খাওয়া।
পরিবর্তনগুলো খুব বেশি কিছু না। তাদের ফলাফলও তেমন চোখে পড়ার মতো কিছু না। কিন্তু তারপরও পরিবর্তনদের দেখতে ভাল লাগে। আরও পরিবর্তিত হতে ইচ্ছে করে। এই যেমন এখন আমার ইচ্ছে- যোগব্যায়াম শেখার। হয়তো মাসখানেক লেগে থাকলে সেটাও হয়ে যাবে! কিন্তু লেগে থাকার এই যে সময়টা, ভেতরের এই সময়টা বড় বন্ধুর। আজ উঁচু তো কাল নিচু। রূপকার্থে অবশ্যই। কিন্তু পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে গমনকারী প্রতিটি ব্যক্তিই জানেন, কোন কোন দিন কিছুই করতে ইচ্ছে করে না।
সেই সব "দিন"-গুলোই সবচেয়ে কঠিন। এবং কঠিন সময়ের জন্য যেমন শক্ত মনোবল জরুরি, তেমনি সেইসব দিনের জন্যই আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রস্তুত থাকা জরুরি। এই প্রস্তুতি মানসিক প্রস্তুতি। মাঝে মাঝে হতাশায় ভরা দিন আসবে, কিন্তু সেসব দিনেও নিজের কাজগুলো আমি সুচারুরূপে সম্পন্ন করবো। এমনভাবে ভেবে ভেবে নিজেকে পূর্ব থেকেই ওয়াকিবহাল ও প্রস্তুত করে রাখার মাধ্যমে সেসব "দিন"-ও পার করা যায়।
এই পৃথিবীটা যাই হোক, এতে বেঁচে থাকাটাই এক আনন্দের ব্যপার। ভাল লাগা আর খারাপ লাগা, আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি-হতাশা সবকিছুই আপেক্ষিক। সময়ের পার্থক্যে সব পাল্টে যায়। তাই আপেক্ষিক বিষয়বস্তুর পেছনে মূল্যবান জীবন অপচয় না করে বরং অন্যভাবে বেঁচে থাকা উপভোগ করতে জানাটা জরুরি। জীবনে যা কিছু চিরন্তন, সেসবের যত্নে সময় ব্যয় করা জরুরি। তখন শুধু বেঁচে থাকার আনন্দে বাঁচতে হয় না আর। একটা অর্থপূর্ণ জীবন যাপনের আনন্দে বাঁচার সুযোগ মেলে সে সময়।
তাই পরিবর্তনকে সুযোগ দিন। শুধু সুযোগই নয়, সময়ও দিন। নিজেকেও সময় দিন। জীবনের অপরিহার্য প্রয়োজনগুলো খুঁজে বের করুন। সেসবের যত্ন নিন। চারপাশটা বাহারি ফুলে ভরে উঠতে খুব বেশি সময় লাগবে না। সবার জন্য শুভকামনা।
---
মন্তব্য করুন