শীতবস্ত্র বিতরণ
শীতকাল এলে কম্বল বিতরণ করা হয়, বিতরণ করা হয় নানান পদের শীতবস্ত্র । সহায় সম্বলহীনদের শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচাবার জন্য প্রতিবছর শীত মৌসুমে এ মহান কাজে নেমে পড়েন সচ্ছল ব্যাক্তিরা । বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল বা তাদের অঙ্গদল শীতকাতর মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকে । অত্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কে কার আগে এ মহান ব্রতে অংশ নেবে তার অলিখিত প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় । রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার পান অঢেল । শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠান মুখরিত হয় দাতার জয়গানে, হাততালি পড়ে হাজারো মানুষের । অসহায় শীতকাতর মানুষেরা শীতে কাঁপতে কাঁপতে একটা কম্বল বা সোয়েটার হাতে পেয়ে বর্তে যায়, দোয়া করতে করতে বাড়ী ফেরে ।
বিভিন্ন সংস্থা, দল, গ্রুপ বা স্বেচ্ছাসেবকগণ প্রতি বছর মোট কতজনকে শীতের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে তার কোন হিসাব কেউ রাখে বলে জানা যায়না । এ বছর যারা কম্বল বা অন্য কোন শীতবস্ত্র পাচ্ছে, পরের বছরও সে মানুষেরাই তা পাচ্ছে বা নিচ্ছে কিনা তার হিসাবই বা কে রাখতে চায় । দান-খয়রাতের হিসাব কেউ রাখে না, হিসাব রাখার প্রয়োজনও হয়না । আমাদের দেশে শীতবস্ত্রহীন মানুষের সংখ্যা কত ? এ প্রশ্নের সঠিক জবাব কেউ দিতে পারবেন বলে মনে হয়না । যদি তা জানা যেত তবে প্রতিবছর কতজনকে শীতবস্ত্র প্রদান করলে কত বছরে সকল মানুষকে শীত মৌসুম মোকাবিলায় আর লাইনে দাঁড়াতে হবেনা তার একটা হিসাব হয়তোবা করা অসম্ভব হত না ।
আপনার একটা কম্বল বা সোয়েটার বা চাদর ক’বছর টেকে ? আমার এমন একটাও শীতবস্ত্র নেই যার বয়স দশ বছরের কম । মুক্তিযোদ্ধা ছাত্রদের বদান্যতায় সদ্যস্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালে পাওয়া রিলিফের দেড়খানা কম্বল এখনও পর্যন্ত প্রতি শীতে আমার শীতের সঙ্গী । ভাবতে পারেন, আমার অনেকগুলো আছে বলেই ওগুলো নষ্ট হয়নি । না, সেক্ষেত্রে আপনার ভাবনা বা অনুমান সঠিক নয় ।
শীতে কাতর সহায় সম্বলহীন মানুষদের মধ্যে যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়, পরের বছর তা আর তাদের কাছে থাকেনা । কখনও তা বিক্রি করে দেওয়া হয়, কখনো চুরি হয়ে যায় বা একেবারে নষ্ট হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে । আমার আপনার কাছে যে জিনিষটা বিশ বছর টিকত, তা তার কাছে এক বছরেই কেন অস্তিত্বহীন হয়ে যায়, তার কারণ অনুসন্ধানে আমাদের আগ্রহ জাগ্রত হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি । আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি হাস্যকর মনে হতে পারে, তবে একটুখানি গভীরভাবে তলিয়ে দেখলে তা কোনমতেই গুরুত্বহীন থাকবে না ।
আমি গবেষক নই, নিতান্তই ছাপোষা একজন মানুষ । এ বিষয়ে তাই আমি কোন বিশেষজ্ঞ-অভিমত দিতে সক্ষম নই । আমার ধারণা শীতকাল মাত্র অল্প কয়েকদিনের জন্য টিকে থাকে, তাই শীত চলে গেলে শীতবস্ত্রের প্রয়োজ়ন ফুরিয়ে যায়, সেটি তখন হয়ে ওঠে একটা বোঝামাত্র । সেটা যত্ন করে তুলে রাখবার কথা আর মনে থাকেনা । আর মনে থাকলেই বা কি, নিজেদেরই থাকবার জায়গার ঠিক নাই তো আবার শীতের কাপড়! বেড়ায় ঝুলিয়ে বা চালে গুজে রাখা হয় সেটিকে, পরের শীতে সেটা আর ব্যবহারের উপযোগী থাকেনা । অর্থাৎ বিশ বছরের মেয়াদ এক বছরেই শেষ । আর মাগনা পাওয়া দ্রব্য, তা সে যত মূল্যবান বা প্রয়োজনীয়ই হোক না কেন, যথাযথ মূল্য কেই বা কবে দিয়ে থাকে?
প্রতিবছর শীতবস্ত্র বিতরণের নামে সম্বলহীনদের অসহায় ও পরমুখাপেক্ষী করে না রেখে তাদের জন্য স্থায়ী দীর্ঘমেয়াদী কিছু করার উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ । এ সব অসহায় মানুষদের প্রতি করুণা প্রদর্শণ না করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে তারা নিজেদের আয়ের টাকায় শীতবস্ত্র কিনত, তার প্রতি তাদের দরদ সৃষ্টি হত, তখন প্রতিটা শীতবস্ত্র তাদের কাছেও অনায়াসে টিকে থাকত বছরের পর বছর । এর ফলে অবশ্য অনেকের দরদ দেখাবার জায়গা কমে যেত ।
বিষয়টি নিয়ে আরো অনেক কথা বলা যায়, লেখাও যায় আরো কয়েক পৃষ্ঠা । শীতের যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে এখানে ইতি না-টেনে আর উপায়ান্তর নাই । শীতজর্জরিত সকল অসহায় সম্বলহীন মানুষের প্রতি সহানুভূতি আর হৃদয়বানদের প্রতি কিছু একটা করবার আহবান জানানো ছাড়া আর কি-ইবা করতে পারি !
প্রেজেন্ট কনজামপশনের মূল্য সবার কাছেই বেশি। যে কারনে সাধারন ছাত্ররা সেমিস্টার পেরোলেই দরকারি বইটাও বিক্রি করে দেয়, লাগবে নাকি সামনে ভাবেও না।
আপনার লেখা আগে অফলাইনে পড়েছি। আজকে কমেন্ট করলাম প্রথম
ভালো থাকবেন ।
প্রথমেই প্রথম কমেন্ট ও এই পোস্টে প্রথম কমেন্ট করবার জন্য অনেক ধন্যবাদ জানাই । আসলেই তাৎক্ষণিক প্রয়োজনটা মেটাতে যেয়ে অনেক কিছুই বিসর্জণ দিতে হয় । সমস্যা তো একটা নয় - প্রতিটা সমস্যা আবার প্রত্যেক সমস্যার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । উপায় নাই গুলাম হোসেন অবস্থা সবারই --
শুধু শীতবস্ত্র নয়, একথাটা অনেক কিছুর বেলায়ই খাটে।
শুধু কী অনেক কিছুর বেলায় ! প্রায় সব কিছুর বেলায়ই --
শীতবস্ত্র নিয়ে ডাটা বেইজ করবার খরচের চাইতে পুনরায় বিতরণ ভালো। আর ডাটা বেইজ করবার জন্য একটা আলাদা ব্যবস্থাপনা দরকার তার মানে বাংলাদেশে এগুলো মানে জগা খিচূরী।
ডেটা বেইজ কেন্দ্রীয় না হয়ে স্থানীয় হতে পারে । জগাখিচুড়ি আলাদা ব্যাবস্থাপনার চাইতে যেমন চলছে তেমন চললেই তা হলে ভাল । জোয়ারে গা ভাসাতে ভাল লাগে ---
ফাল্গুন শেষ হবার আগেই ধুনকরের দোকানে দেখবেন কী পরিমাণে শীতবস্ত্র আর কম্বলের ঝুট জমা হচ্ছে। তোশক-ম্যাট্রেসের স্টাফিং হিসেবে এগুলো রিসাইকেল করা হয়। যা-ই বলেন, সবরকম ভোগান্তির মূলে আমাদের কাঁদি কাঁদি ফলনের জনসংখ্যা
ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এ বসুন্ধরা, সুজলা সুফলা ঊর্বরতা কোনটার অভাব ! ফলন তো বেশী হবেই - - -
র্যান্ডম এক্ট অফ কাইণ্ডনেসে আমার বিশ্বাস নাই। এতে লাভ হয়তো অল্প কিছু হয়, ক্ষতি তার চাইতে বেশি হয়। প্লানিং সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ, কাইন্ডনেসের বেলাতেও
একমত ।
কি আর বলব!
কিছুই নাই বলার মত ?
দেশের প্রত্যেকটা গার্মেন্টসকে বাধ্যতামূলকভাবে বছরে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ভারী পোশাক বিনামূল্যে বিতরণের জন্য বানাতে হবে।
আরএমজি আমাদের দেশের এক্সপোর্ট আয়ের সবচে' বড় খাত। তারা যদি দেশের একটা সমস্যাও সমাধানে কাজে না আসে, তাহলে আছে কেন? গাদা গাদা পোশাক বানাবে, বিদেশে এক্সপোর্ট করবে, সরকারকে যৎসামান্য ট্যক্স দিয়ে আয়ের সিংহঅংশ নিজের পকেটে পুরবে; এই পুরো চক্রে দেশের লাভটা কি?
বিড়ালের গলায় কে বাঁধবে ঘন্টা ?
ইকোনমিক অবদানের কথা বলা যায়। রেডিমেড গার্মেন্টস রপ্তানি করে আমরা অনেক বিদেশী টাকা বানাই। কিন্তু তাতে লাভটা কি হচ্ছে? দারিদ্র যদি দূর না হয়, তবে টাকা বানিয়ে লাভ কি? বিড়ালকে লাঠিপেটা করতে হবে। মেরে বিল্লি মেরে সে ম্যও? পায় না।
শীতজর্জরিত সকল অসহায় সম্বলহীন মানুষের প্রতি সহানুভূতি আর হৃদয়বানদের প্রতি কিছু একটা করবার আহবান জানানো ছাড়া আর কি-ইবা করতে পারি !
হা-হুতাশ ছাড়া আমাদের আর কি-ই বা করার আছে ?
যিনি বা যাঁরাই দেন না কেন, অসহায় শীতার্তরা কি শীতবস্ত্র পায়? দলে নাম না লেখালে এদেশে কিছুই পাওয়া যায় না
অতি সত্য কথা !
প্রতিবছর ঘুরে ঘুরে শীত আসে, চেয়ে চেয়ে কষ্ট দেখি।
শীত আসে, নিয়ে আসে কষ্ট তাদের জন্য যাদের শীত নিবারণের ব্যবস্থা নেই । আর সকলের জন্য শীত আনন্দের, স্বস্তির ।
সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দিকে অগ্রসর হতে হবে।
ধন্যবাদ, নাজমুল ভাই।
এই শীতের রাতে সকালের সান্নিধ্যে খুশী হলাম খুব ।
কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না'র নিয়মে দেশ চললে হয়তো এমন হতো না।
ভাসানী নাই, অন্যেরা ভেসে গেছে উন্নয়নের জোয়ারে । প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, দাবী আদায়ে অনড়তা স্মৃতি শুধু ।
যেখানে সেখানে হুজুগে না বিলিয়ে যার যার এলাকায় নিজ দায়িত্বে শীতবস্ত্র বিতরণ করে, পরে সেটা আবার যেকোন একজন সংগ্রহ করে রাখলে মনে হয় একটা সমাধান হতে পারে।
তবে, সুচিন্তিত মতামত না।
পরামর্শটা একেবারে ফেলনা নয় । প্রয়োগ করে সুফল পাবার সম্ভাবনা আছে ।
মন্তব্য করুন