বৈকালের গরম দুধ
সেই ছোট্ট বেলায় রোজ সকালে গরু দোহানোর সময় ছোট্ট একটা কাঁসার গ্লাস হাতে নিয়ে অপেক্ষা করতাম। দোহানো শেষ হতেই সেই ফেনা উঠা দুধ মা গ্লাসে ভরে দিতেন, ঢকঢক করে খেয়ে নিতাম, কখনো বা দুই গ্লাস (বড় হয়ে বুঝেছি যে তার পরিমান ছিল এখনকার আধা লিটারের মত)। না-জ্বালানো সেই উষ্ণ কাঁচা দুধের যে স্বাদ ও ঘ্রাণ, তা আর কোন খাবারে কখনও পেয়েছি বলে মনে হয়না। একটু বড় হয়ে উঠবার পরে না-জ্বালানো দুধ বাদ হয়ে গেল। ভাত খাওয়ার পরে কাঁসার থালায় হাত রেখে বসতাম, মা কুসুম গরম দুধ ঢেলে দিতেন পাতে,কব্জি না-ডুবা পর্যন্ত দুধ ঢালতেই হতো। তার কম হলেই চিৎকার, আরও দাও, আরও দাও। চাকরী করতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত এমন করে দুধ খাওয়ার অভ্যেসটা কম-বেশী বজায় ছিল।
ছুটি-ছাটায় বাড়ীতে গেলে মা আগের মত দুধ খেতে দিতেন। কয়েকদিন খাওয়ার পরে বুঝতে পারলাম যে আমার দুধ খাওয়ার দিন শেষ। শরীর (পাকস্থলী) দুধের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। মা দুধ জ্বালিয়ে দৈ পাতলেন। এবার ঠিক আছে – দৈ দুধের স্থান দখল করলো। বাজারের মিষ্টি দৈ বা টক দৈ কোনটাই তেমন সহ্য না-হলেও ঘরে পাতা দৈ আমার ভালো লাগতো – শরীরও তা নির্বিবাদে গ্রহণ করতো। সংসার জীবনেও এ অভ্যেসটা টিকে ছিল। বিবাদ বাঁধলো দুধের প্রাপ্যতা নিয়ে। নিরবচ্ছিন্ন দুগ্ধ সরবরাহ পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে উঠলো ক্রমেই। তবুও কম বা বেশী প্রায় সব সময়েই দুধ নেওয়া অব্যাহত রাখতে হয়েছিল। নিজেরা খাই বা না-খাই ছেলেমেয়েদের দিকটা তো দেখতে হবে!
বছর খানেক আগের কথা, সেদিন দুধের জোগানদার দুধ দেয়নি। আগের দিনের দুধ ছিল অল্প একটু, যা দৈ পাতানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়। বাসা থেকে বাজারের দূরত্ব অল্পই – সেখানে দুই-তিনটা মিষ্টির দোকানে গরম দুধ বিক্রি হয়। সাইন বোর্ডে লেখা, “এখানে বৈকালে গরম দুধ বিক্রয় করা হয়”। বিকেলবেলা গেলাম – দশ নম্বরি কড়াইতে দুধ জ্বাল হচ্ছে, সর পড়ে আছে উপরে। উত্তপ্ত ফুটন্ত দুধ থেকে পাওয়া যাচ্ছে চিরচেনা ঘ্রাণ, দুধের বিশুদ্ধতা নিয়ে দ্বিধার কোন অবকাশ তাই আর থাকেনা। দামও সহনীয় – আমরা যে দামে দুধ কিনি, এখানেও সেই একই দাম। একই দামে জ্বালানো দুধ –অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে সস্তা! অনেককে সেখানেই গ্লাস ভরে গরম দুধ পান করতে দেখলাম। নিয়ে এলাম এক লিটার, প্রফুল্ল মনে। বাসায় আসবার পরে বউ একটু খেয়ে বলল, “দুধটা তো ভালোই মনে হচ্ছে”। চিত্ত আরও প্রসন্ন হলো। যোগানদারের ভরসায় না থেকে প্রতিদিন বিকেলে মিষ্টির দোকান থেকে দুধ নিয়ে আসবার পরিকল্পনা নিলাম মনে মনে।
অন্যান্য দিনের মতই দৈ পাতানো হলো। পরের দিন সকালে নাস্তার সময় দৈ পাতে নিয়ে দেখা গেল, কোথায় দৈ ? প্রায় সবটাই ছানার পানি, আর অল্প কিছু ‘অন্য পদার্থ’। সেই ‘অন্য পদার্থে’র স্বাদ ছানার মত না-হলেও তরল অংশ স্বাদে ও গন্ধে অকৃত্রিম ছানার পানি। এ সব মিষ্টির দোকানে দুধ কিনে ছানা বানানো হয়, সেই ছানা দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমান মিষ্টি বানানো হয় এবং তারপরও ‘বৈকালে গরম দুধ বিক্রয় করা হয়’। কত দুধ সেই মিষ্টির দোকানে কেনা হয় এমন প্রশ্ন তখন মনে জাগলো। এই সব মিষ্টির দোকানে সকালে কিন্তু দুধ বিক্রি করা হয়না এবং কখনোই ঠান্ডা দুধও বিক্রি করা হয়না। এদের তৈরী দুধ ঠান্ডা হলেই দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। সকালে প্রাত্যহিক দৈ খাওয়া না-হওয়ায় এ সকল তত্বকথার তথ্য মাথায় এলো তখন।
এরপর যা মনে পড়লো তাতে এতক্ষণের বিভ্রাট কেটে গেল – সব প্রশ্নের উত্তরও মিলল। কবে যেন খবরের কাগজে পড়েছিলাম, কোথায় নাকি ছানার পানি দিয়ে ভেজাল দুধ বানাবার কারখানা আবিস্কার করেছিল ভ্রাম্যমান আদালত – সেই ভেজাল দুধ বিনষ্ট করে দোষী ব্যক্তিদের জরিমানা করা হয়েছিল। বুঝলাম, যে-সব মিষ্টির দোকানে 'বিকেলে গরম দুধ' পাওয়া যায়, সেসব দোকানের ব্যাবসায়িক সততা আর তাদের গরম দুধের বিশুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ না-করবার কোন কারণ থাকতে পারেনা।
ঢাকাসহ যে সব শহরে মিল্কভিটা, আড়ং বা অন্য কোন প্যাকেটজাত তরল দুধ সহজলভ্য, সে সকল স্থানে তেমন চিন্তার কিছু নেই। তবে দেশের আর সব জায়গায় এমন প্রতারণার সমূহসম্ভাবনা সদা বিরাজমান। অতএব “বৈকালে গরম দুধ পাওয়া যায়” হতে সাধু সাবধান !!
***************
চিন্তার কিছু নেই বলা টা কি ঠিক?
একবার আমার এক আত্মীয় মিল্কভিটা'র প্যাকেট খুলে পাতিলে ঢেলে প্যাকেট উল্টেছেন ধোয়ার জন্য, হঠাৎ খেয়াল করলেন, সরিষা দানার মত ছোট ছোট সাদা কিসব যেন প্যাকেটের গায়ে কিলবিল করছে। এরপর আর কিছু না ই বলি।
আসলে খারাপ ভালো যেমনই হোক ঢাকার মানুষ এইসবের হাতেই জিম্মি। কারন, এইসব প্যাকেটজাত জিনিস কতটুকু ভালো বা কতটুকু মন্দ কে জানে?
পড়ার জন্য এবং প্রথম মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ নাজ।
তা'হলেতো দেখি ঢাকার দুধও নিরাপদ নয়। সারা দেশই বিপদজনক। ভালো থাকা হোক।
ছোট সাদা ওইগুলা কি ছিল ? পোকা ? আল্লাহ মাফ করো । মিল্কভিটা খাওয়া শেষ । খোদাই মালুম, আড়ং দুধে ওইসব আছে কিনা ।
শুধ দুধ না, দুনিয়াটাই এখন বহুজাতিক প্যাকেটে বন্ধি....
ঠিক বলেছেন, সব কিছুই এখন বন্দী। দেশের মানুষ, এমন কি দেশও!
পোস্টটা পড়তে পড়তে এই গানটার কথা মনে পড়লো
পড়ার জন্য ধন্যবাদ এবং লিঙ্কের জন্য কৃতজ্ঞতা।
প্যাকেটের গুলোর কথা নাই বললাম, অল্পক'দিন আগের কথা, চেনা একজন তার গরুর দুধ দিয়ে যেতেন বাসায়, আম্মা বারবার বলতেন অন্তত খাটিঁ কিছুতো পাচ্ছি। তো সেই দুধ দেখতে বেশ ভালো ঘন সরও পড়ে, দামও গড়পড়তার থেকে বেশি নিতেন উনি। একদিন কি মনে করে ছাকনি দিয়ে ছেকেঁ নেয়ার সময় দেখলাম ৮/১০টা পোলাও চালের ভাত!... দুধ ঘন আর সুগন্ধ করার জন্যে চিকন চালের ভাতের মাড় ব্যবহার করা হচ্ছিল!!
উপায় নেই গোলাম হোসেন, বাংলার আকাশে আজ কালো মেঘের ঘমঘটা - - - - -
আমার একটা কাসার থাল আছে ... আমার আপু (নানি) আমাকে দিয়েছিল ... এখনো আছে
আমারও আছে। ব্যবহার করা হয়না। মাজতে ছাই লাগে, ছাই-এর অভাবে সেটা বাদ। আপনাকে ধন্যবাদ।
যাদের বয়স ৪৫ বা তার কাছাকাছি (! ডায়বেটিক্স ও গ্যাস্টিকের রোগীদের কাছে মাফ চাই, এটা তাদের জন্য নয়) তাদের জন্য একটা দুধ ডিমের রেসিপি দিচ্ছি -
উপকরণ
- পৌনে ১ লিটার দুধ
- ১ টা দেশী মুরগীর ডিম
- ২ চামচ চিনি কিংবা ৩ চামচ মধু
প্রস্তুত প্রনালী
পৌনে ১ লিটার দুধ কে জ্বাল দিয়ে হাফ লিটারের নীচে নামিয়ে ফেলুন। তার পর মুরগীর ডিমটা আলাদা বাটিতে ভেঙ্গে চামচ দিয়ে ভাল করে ফাটিয়ে নিন। তার পর দুধে মিশিয়ে জগে ঢেলে ২ চামচ চিনি মিশিয়ে ভাল করে ঘুটাতে থাকুন (যদি পারেন জগ টু গ্লাস কিংবা গ্লাস টু জগ পদ্বতি ব্যবহার করুন)। বাসায় চিনি না থাকলে মধু ব্যবহার করতে পারেন!
ব্যস হয়ে গেল আপনার "বডি রাইডিং শরবত"! এবার একটানে কুসুম কুসুমাবস্থায় পান করে ফেলুন। দিনে একবারের বেশী নয়!
(নাজমুল ভাই, মাফ করে দিবেন। আলাদা পোষ্ট দিলে ব্যান খেয়ে যেতে পারি বলে আপনার পোষ্টে রেসিপিটা দিয়ে দিলাম। আশাকরি আমরা বন্ধু'দের কাজে লাগবে!)
রেসিপিটা তো ভাল। ব্যান খাবেন কেন? "বডি রাইডিং শরবত" কি খারাপ কিছু? ৬৫-এর কাছাকাছি যারা, তারা কি খেতে পারবে না?
সেদিন টিভিতে এক ডাক্তারের কাছে শুনলাম, ১২ বছর বয়সের পর আর দুধ খাওয়া উচিৎ নয়। কী সব ডাক্তারি সূত্র উল্লেখ করে তিনি বলছিলেন, ১২ এর পরে পাকস্থলি দুধ সইতে পারে না। এবং এই মজার কথাটাও বললেন- দুধ হচ্ছে বাচ্চাদের খাবার, বড়দের নয়।
ডাক্তারের শেষের কথাটা আমার বেশ মনে ধরেছে। আমি ওটা নিয়ে ভেবেছি। ভাবনাটা এমন- দুধ বাচ্চাদের খাবার, কিন্তু কার বাচ্চার? যার দুধ নিশ্চয়ই তার বাচ্চার। তাই গরুর দুধ বাছুরের, মানুষেরটা মানবশিশুর। কিন্তু আমরা বাছুরের খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি করি! কী নিষ্ঠুর আমরা! মানবশিশুর খাবারে অন্য কেউ এভাবে ভাগ বসাচ্ছে- অবস্থাটা একবার কল্পনা করুন তো!
ডাক্তাররা কত কথা বলে! তারা যা বলে তা নিজেরাও সব সময় মানেনা। ভাগাভাগিটা তো মনে হচ্ছে গ্রহণযোগ্য ন্য।[অফ টপিকঃ (সবার জন্য নয়) মানবশিশুর খাবারে আর কেউ ভাগ না-বসালেও শিশুর বাবা কী তা মানতে চায়?]
ছোটবেলা থেকে দুধ আর দুগ্ধজাতীয় দ্রব্যের প্রতি চরম অনীহা। তাই ব্রেন গজায় নাই। আল্লাহর নিদারুন শাস্তি দুধের দেশে আইন্যা ফেলছে। এগুলো পানির বদলে দুধ খায়
কী আর করা! দুধের বদলে আর তা না হলে চলুক । আর তো আছেই। এইবার আমি । সহ্য হবেনা এ বয়সে । মন্তব্যের জন্য
অস্ট্রেলিয়ায় দুধ খুবই সস্তা, পানির চাইতেও সস্তা। কনটেইনার থেকে সোজা গ্লাসে, বরফ ঠান্ডা। গরম দুধ আমি খাই না।
ফরেন কান্ট্রি গুলো'তে মনেহয় সবাই-ই বরফ ঠান্ডা দুধ খায়। ইউ.কে এবং ইউ.এস.এ তে তাই দেখেছিলাম এবং নিজেও তাই করতে বাধ্য হয়েছিলাম
মাহবুব সুমন, নাজ, পড়বার জন্য ধন্যবাদ। তবে ভাই, মনে রাখবেন, আমাদের দেশের মত উৎকৃষ্ট ভেজাল দুধ কিন্তু ঐ সব দেশে পাবেন না। আমাদের অনেক বুদ্ধি
পুরাই ভেজাল
সততা শব্দটা আমরা নিজেরাই খেয়ে হজম করে ফেলেছি ।
সবকিছুতে ভেজাল, সব কিছুতে অসততা ।
হা হা হা পুরাই ভেজাল। কোন ফাঁকির কারবার নাই। এক্কেবারে খাঁটি ভেজাল।
মন্তব্য করুন