সিরাজীর তিন ‘প’
মাইনুল এইচ সিরাজীর লেখা প্রেম পৃথিবীর পাঁচালি (তিন ‘প’) পড়া শেষ করলাম । কবিতার আবহে রচিত বইটি পড়বার সময় কাহিনীটাকে অন্য রকম কিছু মনে হচ্ছিল, কিছুতেই ধরতে পারছিলাম না সেই অন্য রকমটা কী ? সন্তানের প্রতি পিতামাতার স্নেহ, পিতামাতার প্রতি সন্তানের ভালবাসা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ তিলেতিলে গড়ে ওঠে যেমন করে; তেমনই ঘৃণা আর অবহেলা ক্রমশ বাড়তে থাকে আর শেষ পর্যন্ত তা প্রতিশোধের মাধ্যমে নিরসনের পথ খুঁজে পায় । সে প্রতিশোধ হতে পারে নির্মম কোন প্রক্রিয়ায়, কখনও বা অন্য কোন উপায়ে । সিরাজী তার লেখনীতে এমনই এক প্রতিশোধের পথ নির্দেশ করেছেন যা আগে কোন গল্প-কাহিনীতে আমার চোখে পড়েনি ।
মনস্তাত্তিক ব্যাখ্যা আর বিশ্লেষণে লেখকের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়েছি বারবার । বইটির প্রতিটি লাইনের প্রতি লেখকের তীব্র ভালবাসা ফুটে উঠেছে, অতি যত্নে সৃজিত পুষ্পকাননের মত সাজানো এর প্রতিটি ছত্র । রুবিনা আর শাকিল ইমতিয়াজের সম্পর্ক বুঝে উঠতে পাঠককে গলদ্ঘর্ম হতে না-হলেও কাঠ-খড় কিছু পোড়াতে হবে । আবার গল্পের একেবারে শেষে এসে পাঠকগণ ছোট্ট একটা ধাক্কা খাবেন সহনের পিতৃ পরিচয় জানতে পেরে । শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠকের বিরক্তি উৎপাদন না-করে গল্পের মধ্যে আটকে রাখবার কৌশল সিরাজীর একটা বৈশিষ্ট, এ বইতেও তা বিরাজমান । অত্যন্ত গভীর ও গম্ভীর বিষয় নিয়ে বইটির মূল ঘটনা এগিয়ে গেলেও হাস্যরস দিয়ে পাঠককে সতেজ রাখতে ভুলে যাননি লেখক ।
শাকিল ইমতিয়াজের নারী আসক্তি বইটির অন্যতম ভাষ্য । তবে তার জীবনে আসা মাত্র দু’জন নারীর নাম উল্লেখ করায় তার এই আসক্তির বিষয়টি বেশ খানিকটা তাৎপর্য হারিয়েছে । স্ত্রী বিয়োগের পরের পাঁচ বছরেও যদি আরও কয়েকজনকে তার ঘনিষ্ট হতে দেখা যেত, তা’হলে ব্যাপারটা আরও বিশ্বস্ততা পেত । রুবিনার আচরন এবং বিচরন দুইয়ের মধ্যে কেন যেন সব সময়েই একটু দ্বিধা দেখা গেছে । এটাকে ঠিক দ্বিধা না কি বৈসাদৃশ্য বললে সঠিক হবে তা বুঝতে পারছি না ।
“হাঁটলে মাথায় জমাটবাঁধা চিন্তা গলে গিয়ে পায়ের ভেতর দিয়ে মাটিতে নেমে যায়।”
“ধমক দেওয়ার জন্য আত্মবিশ্বাস থাকা লাগে।”
“মানুষের জীবনে সময় ব্যাপারটা কত বিচিত্র ! একসময় যে কাজগুলোকে, যে আচরণগুলোকে সত্য, সুন্দর, সঠিক বলে মনে হতো; সময়ের ব্যবধানে সেগুলোই হয়ে ওঠে কী তীব্র বিব্রতকর! কী অন্যরকম হাস্যকর!”
– এমনই সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাক্য সাজিয়ে অপরূপ এক মালা গেঁথেছেন সিরাজী তার প্রেম পৃথিবীর পাঁচালিতে ।
“জমির প্রতিটা কোণা, প্রতিটা আইল এখন শুধু ফসল ফলাতে চায় । বুক-জমি দো-ফসলা, আইল-পাড় বারোমাসী, কোনা-কাছা মৌসুমি!” লেখকের এ আবেগের সাথে গল্প মিশে একাকার হয়ে গেছে, পাঠককে নিয়ে যায় স্বপ্নলোকে । “চাঁদের মুখে জোছনা । নরম,মিষ্টি । আমার খেতে ইচ্ছে করবে খুব । না না খাব না । খেলে যে ফুরিয়ে যাবে!” কী অদ্ভুত কাব্যিক প্রকাশভঙ্গী!
ইতি প্রকাশনের এ বইয়ের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদটি করেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি । ৬২ পৃষ্ঠার এ বইয়ের অভিহিত মূল্য ৮০ টাকা, গ্রন্থমেলায় পাওয়া যাচ্ছে ৬০ টাকায় । বাঁধাই সুন্দর । সব মিলিয়ে সংগ্রহে রাখবার মত একটি বই । মাঝেমধ্যে পৃষ্ঠা উল্টালে ভন্ডামীর রকমসকম হৃদয়ংগম করা কিছুটা সহজ হবে ।
“প্রেম পৃথিবীর পাঁচালি”র বহুল প্রচার কামনা করি ।
[এটা “প্রেম পৃথিবীর পাঁচালি” নামক গ্রন্থের সমালোচনা নয়; আমাদের একজন সহব্লগার মাইনুল এইচ সিরাজীর লেখা এই বইটি পড়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ামাত্র ।]
অনেকদিন পর নাজমুল ভাইর লেখা পেলাম।
সিরাজীর লেখার হাত তো বরাবরই ভালো, সেই ভোকা থেকে তার লেখার সাথে পরিচয়।
আপনার বিশ্লেষণও সুন্দর হয়েছে।
ধন্যবাদ লীনা ।
সিরাজীর লেখা দেড়দশকের বেশি সময় ধরে পড়ে আসছি, লেখালেখিতে উনাকে যে অবস্থানে দেখবো বলে ভেবেছিলাম, তেমনটা হয়নি। মাত্র গেলো বছর প্রথম বই এলো। খুব ভালো লাগলো উদ্ধৃতি থেকে পাঠ।
অল্প কথায় সুন্দর আলোচনার জন্য হুদাভাইকে সাধুবাদ।
সিরাজীর লেখার সাথে পরিচয় মাত্র তিন-চার মাস আগে, সিরাজীর সাথে পরিচয় হয়নি এখনও । মন্তব্যে আন্তরিকতা মন ছুঁয়ে গেল ।
এই আক্ষেপ আমারও আছে, তবে হতাশা নেই। কারণ আমি কখনোই সিরিয়াস সাহিত্য করিনি। অবশ্য ইদানিং খারাপ লাগে যখন ভাবি, সিরিয়াস সাহিত্য না করলেও বাণিজ্যিক সাহিত্য নিশ্চয় করা যেত!
সিরাজীর প্রেম পৃথিবীর পাঁচালির প্রচ্ছদ, সিরাজির ফটো ইত্যাদি ইত্যাদি সব গুছিয়ে বসে আছি আমাদের পত্রিকায় দেবার জন্য কিন্তু ফোন নাম্বার না থাকায় উনার সাথে কথা বলতে পারছি না।কী মুশকিল!
সিরাজীর সাথে কথা হয়েছে কী ? আপনার পত্রিকার সংশ্লিষ্ট কপিটা কিভাবে পাব ?
জ্বি হুদা ভাই, সিরাজির সাথে কথা হয়েছে।
আপনাকে জানাবো।
সম্ভবত এই প্রথম রশীদার সাথে কথা হলো। কী বলব! খুব ভালো লেগেছে
নাজমুল ভাই শীত নিদ্রা থেকে ফেরত আসায় ওনাকে ধন্যবাদ।
বইয়ের সাফল্য কামনা করছি
তানবীরা, বেলা পড়ে এলো, সিরাজীর কোনই হদিস পাওয়া যাচ্ছেনা এখনও । মনে হয় শীতনিদ্রায় চলে গেছেন ।
ভালো একটা বই, সাফল্য অনিবার্য ।
শীতনিদ্রায় কে গেছে- আমি না নাজমুল ভাই? যাই হোক, বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
সিরাজী ভাইয়ের বইয়ের সাফল্য কামনা করছি।
সাঈদ, শুধু সাফল্য কামনা করলে তো ভাই চলবে না । বইটা পড়ে ত্রুটী-বিচ্যূতি নির্দেশ করে একটা কঠোর সমালোচনা দিন না, আমরা উপকৃত হই তা'হলে ।
বই এর সাফল্য কামনা করছি।
হুদা ভাইকে ধন্যবাদ সুন্দর বিশ্লেষণের জন্য।
জয়িতা, বইটা পড়বার অনুরোধ থাকলো । ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য ।
সাফল্য কামনা করি। কি কি বই কিনব একটা লিষ্ট বানাতে হবে।
এবার ভাবছি শুধু লেখক কাম ব্লগারদের বই কিনব।
বইয়ের তালিকা তৈরী হলে তবে তো যাবেন বইমেলায় ! আমাকে সাথে নিতে পারেন ।
সিরাজী স্যারকে ফেসবুকে পাবেন।
Mainul H Siraji নামে
protikriyata valo ... khb valo ...
onekdin por huda vi'r lekha pelam ... sei rokom swad ...
siraji vi'r jonno onek shuveccha
মন্তব্য করুন