একুশের স্মৃতি (বিস্মৃতি)
টেলিভিশনে একুশের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে । কী সুন্দর ঝকঝকে ছবি ! কী ছিমছাম দৃশ্য, চোখ জুড়িয়ে যায় ! আমার স্মৃতিতে সেই কোন অতীতের ঝাপসা কিছু অস্পষ্ট দৃশ্য – কোনভাবেই স্থির হয়ে দাঁড়াচ্ছেনা, স্পষ্ট হচ্ছেনা । এতগুলো বছর চলে গেছে – কতকিছু বদলে গেছে । বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে কত সুখ-দুঃখ বিজড়িত ঘটনা। ১৯৬৯ সালের পর আর কোন একুশে ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাওয়া হয়নি আমার, এর পরের আর কোন একুশে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকাতেই থাকা হয়নি।
দেশের কোথাও সে সময়ে ফুল কেনা-বেচা হতোনা, তারপরও সেদিন শহীদ মিনার ভরে উঠেছিল ফুলে ফুলে। ঢাকা শহরে বিভিন্ন ব্যক্তিগত বাগানই ছিল ফুলের একমাত্র উৎস । সেদিন কোন যানবাহন চলেছিল বলে মনে পড়ছে না। আমরা দুই ভাই হাটতে হাটতে রায়েরবাজার থেকে খালি পায়ে গিয়েছিলাম, সকলেরই নগ্ন-পা (কার হাতেও জুতা-স্যান্ডেল দেখিনি)। ঢাকায় সেদিন উৎসবের আমেজ নয়, দেখেছিলাম শোকের কালো ছায়া, দিনটি ছিল শোক দিবস। বুকে কালো ব্যাজ ছিল সকলেরই সেদিন। হল-হোস্টেল আর বাসায় কেউ আটকে থাকেনি, সবাই নেমে এসেছিল রাস্তায়, সুশৃঙ্খলভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল শহীদ বেদীতে, আর আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের শেষশয্যায়।
আর কী ঘটেছিল সেদিনটিতে তা মনে পড়ছেনা। অপ্রিয় কোন কিছু ঘটেনি বলেই হয়তো স্মৃতি হাতড়েও কিছু পাচ্ছিনা। স্মৃতিকে উজ্জীবিত করতে অবশেষে ধূলিময় জীর্ণপ্রায় অ্যালবাম খুলে বসলাম, সেখানে পেলাম ’৬৯-এর একুশে ফেব্রুয়ারির কয়েকটা ছবি। আমার স্মৃতির চেয়েও ঝাপসা সাদা-কালো ছবি, এখন আর সাদা-কালোও নেই, সময়ের নখরাঘাতে নিজ রঙ হারিয়ে বিবর্ণ জৌলুষহীন।
অনাকর্ষণীয় কয়েকটা ছবি, যা দেখতে মোটেই সুখপ্রদ নয়, দেখুন আর পোস্টদাতার খামখেয়ালীর তারিফ(!) করুন
১৯৭১ সালে এই শহীদ মিনার ভেঙে ফেলা হয়েছিল । এটিকে বানানো হয়েছিল মসজিদ, 'মসজিদ' লেখা একটা সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছিল ।
দুঃখ এই যে এই চারটি ছবির কোথাও আমার নিজের ছবি পেলামনা । এই ছবিগুলো আমি তুলেছিলাম বলেও আমার মনে হয় না ।
নীচের ছবিটি শহীদ মিনারের দিক থেকে তোলা ।
যে আবেগ, যে ভালোবাসা সেদিন প্রাণে ঢেউ তুলেছিল, তা আজ কোথায় হারিয়ে গেছে! নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছি, সব হারিয়ে 'সর্বহারা' হতে পারিনি; নিঃশেষ হয়েছি মাত্র !
হুদা ভাই, খুব ভাল লাগলো ছবিগুলো দেখে। আপনি কালের সাক্ষী, ৫২ দেখেছেন কিনা জানি না, কিন্তু এরপর ১৯৬০, ৬২, ৬৯,৭০,৭১ এবং এর পরবর্তী সময় নিয়ে আপনার চোখে দেখা আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সময়গুলো আজকের প্রজন্মকে জানাতে পারেন। হয়ত সেগুলো রাজনীতিবিদদের কথার সাথে মিলবে না, অনেক বিতর্কও সৃষ্টি করবে, তারপরও দেশটার ইতিহাস আমাদের সব দৃষ্টিকোন থেকে দেখার প্রয়োজন আছে এবং আপনারা যারা কালের সাক্ষী তারাই পারেন আমাদের কাছে সেই ইতিহাস তুলে ধরতে।
একই দাবী জানিয়ে গেলাম।
আপ্লুত।
ধন্যবাদ হুদা ভাই। আর বকলম ভাইয়ের সাথে একমত।
"যে আবেগ, যে ভালোবাসা সেদিন প্রাণে ঢেউ তুলেছিল, তা আজ কোথায় হারিয়ে গেছে! নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছি, সব হারিয়ে 'সর্বহারা' হতে পারিনি; নিঃশেষ হয়েছি মাত্র!"
মনের কথা হয়েছে।
বকলমঃ হুদা ভাই, খুব ভাল লাগলো ছবিগুলো দেখে। আপনি কালের সাক্ষী, ৫২ দেখেছেন
কিনা জানি না, কিন্তু এরপর ১৯৬০, ৬২, ৬৯,৭০,৭১ এবং এর পরবর্তী সময় নিয়ে
আপনার চোখে দেখা আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সময়গুলো আজকের প্রজন্মকে
জানাতে পারেন। হয়ত সেগুলো রাজনীতিবিদদের কথার সাথে মিলবে না, অনেক
বিতর্কও সৃষ্টি করবে, তারপরও দেশটার ইতিহাস আমাদের সব দৃষ্টিকোন থেকে
দেখার প্রয়োজন আছে এবং আপনারা যারা কালের সাক্ষী তারাই পারেন আমাদের কাছে
সেই ইতিহাস তুলে ধরতে।
................................................... আমারও একই দাবী।
অমূল্য ছবি। '৬৭-র একুশের কিছু ছবি আছে আমার মায়ের, সেখানেও দেখেছি রাস্তায় সবার পা খালি।
অশেষ ধন্যবাদ লেখা আর ছবিগুলোর জন্য।
আপা, ছবিগুলো দেখতে পেলে ভালো লাগতো। কিভাবে সম্ভব?
অশেষ ধন্যবাদ লেখা আর ছবিগুলোর জন্য।
আরিফ ভাইএর মন্তব্যের সঙ্গে একমত।
আগে শহীদ মিনারে ফুল দেবার জন্য ফুল চুরি করতাম সারা রাত। মনে আছে ফুল চুরি করবার জন্য কোনো বাগানকে টার্গেট করে সেটা রেকি করে আসা হতো, মধ্য রাতে গিয়ে যেভাবেই হোক চুরি করা বা চুরি করতে গিয়ে দৌড়ানী খাওয়া বা চুরু করতে গিয়ে দেখতে পাওয়া যে আগেই কেউ কাজ সেরে ফেলেছে
সারা রাত জেগে সেই চোরাই ফুল দিয়ে তোড়া বানানো, খুব ভোরে খালি পায়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাওয়া।
সন্ধ্যায় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুস্ঠান , পাড়ায় বিশেষ সংখ্যা বের করা , কত্ত কিছু। জানি না এখনো সেরকম কিছু হয় কি না।
বকলম, উলটচন্ডাল, মাইনুল এইচ সিরাজী, সাহাদাত উদরাজী, নাহীদ হোসেন, নুশেরা, মীর, মাহবুব সুমন সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি পড়বার ও মন্তব্য করবার জন্য । সবাই ভালো থাকুন ।
অসাধারন প্রকাশ!
হায়, এই শোকের দিনটি এখন পালিত হয় অনেকটা উৎসবের আমেজে। হুদা ভাই, আপনার সৌজন্যে ইতিহাস যেন আবার নতুন করে চোখের সামনে ধরা দিল।
++++++++++++++++++++
আপনার ঝুলিতে কত কি যে আছে!
অসাধারন হুদা ভাই..
দয়া করে বকলম ভাইয়ের কথাটা বিবেচনা কইরেন
আপনার ছবিতে ছোটবেলার একুশ ফিরে পেলাম। আমাদের ছোটবেলায় একুশ কিন্তু একদম সাদাকালোই ছিল। রঙীনতা একুশকে কেড়ে নিয়ে পর করে দিল
ছবিগুলো আমার কাছে(আমাদের সবার কাছেই) একটুও জৌলুষহীন লাগেনি- বরং অদ্ভূত ভালো লাগা ছুঁয়ে গেলো! সেজন্য হুদাভাইকে অনেকককককককক ধন্যবাদ। বকলম ভাইসহ বাকী সবার সাথে আমিও উল্লেখিত দাবীর প্রতি আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করে গেলাম...ভালো থাকবেন
দারুণ ভাল লাগল।
একসময়ের সাধারণ ছবিগুলো ভিন্ন সময়ে এসে ভিন্ন মাত্রার মর্যাদা পায়। ছবিগুলো শেয়ার করার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার কাছ থেকে এরকম মূল্যবান স্মৃতিচারণ আরো আসুক সেই প্রত্যাশায়..........
নাজ, ঈশান মাহমুদ, লীনা দিলরুবা , টুটুল, তানবীরা, বাতিঘর, নড়বড়ে, নীড় সন্ধানীঃ সকলকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। শুভ কামনা।
কী-বোর্ড কেন যেন আমার ইচ্ছামত কাজ করতে চাচ্ছে না। নতুন পোস্ট লিখতে রাজী নয় সেটা । বাধ্য হয়ে পুরাতন পোস্ট নিয়ে একটু পরীক্ষা চালালাম। এই পোস্টের ছবিগুলো তাড়াহুড়া করে দিয়েছিলাম, আজ একটু উন্নত করার চেষ্টা করেছি, আশা করি ভালো লাগবে আগের চেয়ে।
মন্তব্য করুন