ঢাল-তলোয়ারবিহীন নিধিরাম সর্দার
সেদিন অর্থাৎ গত পরশু মানে ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ বিকেলে বইমেলায় গেলাম । মনে মনে ভেবে গেছি যে, ‘আমরা বন্ধু’র বন্ধুদের লেখা যে কটা বই এবার প্রকাশিত হয়েছে সব ক’টি কিনবো । রিক্সা, বাস, অবশেষে হেঁটে বইমেলায় অনেক ভিড় জমে উঠবার আগেই পৌঁছে গেলাম উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে । টিএসসি মোড় থেকে সারিবদ্ধ হয়ে ধীর পায়ে এগুবার বিড়ম্বনা তখনও শুরু হয়নি । মনে মনে খুশি হয়ে উঠলাম – ভিড় ঠেলে স্টলের কাছাকাছি যেতে যে পরিশ্রম হয়, তা না-করেই বই ক’টি সংগ্রহ করে নিয়ে তারপর বইমেলায় ঘুরবো, এই আনন্দে ডানদিকে প্রথম যে গেইটটা পেলাম সেটা দিয়ে ঢুকে পড়লাম সেই মিলনমেলায় ।
এবার প্রধান লক্ষ্য বইগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংগ্রহ করে নেওয়া । বইয়ের নাম, লেখকের নাম ঠিক ঠিক মনে আছে, কিন্তু প্রকাশকের নাম আর কিছুতেই মনে করতে পারিনা । অনেক হাতড়েও স্মৃতি থেকে তা উদ্ধার করা গেলনা । ‘আমরা বন্ধু’ ব্লগের প্রথম পাতায় স্টিকি করা শওকত মাসুম আর আবদুর রাজ্জাক শিপনের বই, এ দু’টোর প্রকাশকের নামও যখন মনে এলোনা, তখন অন্যগুলোর জন্য বৃথা মাথা ঘামানোর অর্থহীন চেষ্টা থেকে বিরত থাকতেই হলো ।
সারা বইমেলা ঘুরলাম, ক্রমেই ভিড় বাড়তে থাকলো । জনতার সংখ্যা যত বাড়ে, আমি তত একাকী হয়ে পড়ি । জনতার মাঝেও আমি নির্জনতার ঘোরে ঘুরে বেড়াই । বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, এরপর সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত । ভিড় বাড়তেই থাকে, দেখে মনে হয় ঢাকা শহরে বিনোদনের অভাব কত প্রকট । সারাদিন শত ব্যাস্ততার মাঝে কাটিয়েও এসব তরুণ-তরুণী ও মাঝ বয়েসী মানুষগুলো শুধু বই কিনবার মহৎ উদ্দেশ্যে এসেছে তা মেনে নিতে পারিনা । অধিকাংশকেই দেখি জটলা করে আড্ডা দিতে বা সদলবলে এদিক-সেদিক হাঁটতে ।
বিকেল পাঁচটা থেকে আটটা পর্যন্ত আমিও হাঁটলাম – না, তাতেও কোন লাভ হলোনা । কিছুতেই কোন ভাবেই স্মরণশক্তি আমাকে আনুকূল্য দেখালোনা । অন্য পন্থা অবলম্বনের ইচ্ছা হলোনা, নিজের স্মৃতিশক্তির দুর্বলতার উপরে রাগ করে । তবে লাভের মধ্যে এই হলো যে, ব্লগের বন্ধুদের লেখা বই কেনা না হলেও সে টাকা খরচ হয়ে গেল অন্য বই কিনতে, বরং খরচ হয়ে গেল তার চেয়েও অনেক বেশী ।
আবারও যখন যাব বইমেলায়, তখন মনে থাকবার জন্য একটা তালিকা হাতে করে নিয়ে যাব । সে তালিকায় থাকবে বইয়ের নাম, লেখকের নাম ও প্রকাশনা সংস্থার নাম । বন্ধুরাও এমন তালিকা করে নিতে পারেন, বইমেলায় ঢুকবার পরে অনেক কিছুই ভুলে গেলেও মূল উদ্দেশ্য ভুলে যাবার আশঙ্কা আর থাকবেনা তা’হলে । যদিও আমি নিশ্চিত যে, আমার মত দুর্বল স্মৃতিশক্তির অধিকারী আর কোন বন্ধু নয়, তবু এ পরামর্শ কারও কারো বেলায় কাজে লাগলেও লাগতে পারে ।
এভাবে একটা তালিকা তৈরী করলামঃ
১। শওকত হোসেন মাসুমঃ সাদা-কালোর অর্থনীতি = দিব্য প্রকাশ
২। আবদুর রাজ্জাক শিপনঃ চন্দ্রাবতীর চোখে কাজল রং = জাগৃতী প্রকাশনী
৩। জনক জননীর গল্পঃ মোস্তফা কামাল = সময় প্রকাশনী
৪। প্রেম পৃথিবীর পাঁচালিঃ মাইনুল এইচ সিরাজী = ইতি প্রকাশন
৫। মানবসঙ্গবিরলঃ সালাহ উদ্দিন শুভ্র = ভাষাচিত্র প্রকাশনা
বই কিনে কেউ নাকি দেউলিয়া হয়না, কাজেই বই কিনতে কার্পণ্য না-করে পছন্দের বই কিনে ফেলায় ভাল । আর ব্লগের বন্ধুদের লেখা বই কিনে তাদের উৎসাহিত করতে আমাদের সকলেরই আগ্রহী হওয়া উচিৎ । এর পরেরবার তারাও আপনার বই কিনবে – এটা মনে করে হলেও একটা করে কপি সংগ্রহ করা যায়
লিস্টি আরো বড় করেন। বই পড়ে রিভিউ দিতে ভুইলেন না।
আপাততঃ আর কারোর বইয়ের কথা মনে পড়ছেনা । যদি কেউ জানেন, দয়া করে জানালে তালিকায় যোগ করে দেবো ।
আহা, হুদা ভাই। কষ্ট হল।
বলেন কী ? এ কাজ তো করলাম আনন্দ থেকে !
হুদা ভাই, আপনার কাছ থেকে খাঁটি রিভিউ চাই। বানান ভুল থেকে তথ্যগত ভুল সব তুলে ধরবেন! হা হা হা.।।
রিভিউ ? কাজটা আমার জন্য কঠিন । তবু চেষ্টার ত্রুটি থাকবেনা । সময় ও পরিস্থিতি বড় নিয়ন্ত্রক ।
উঁহু , কোন ফঁকিবাজি চলবে না।
পারলে আগামি কাল আসেন মেলায়।
আশা করি !
আপনার আন্তরিকতাই আমাদের প্রাপ্তী, হুদা ভাই ।
কাল আসুন মেলাতে । আরো অনেক ব্লগারই থাকবেন ।
যদিও আমি থাকবোনা, তারপরও আমি থাকবো ।
সচিত্র ব্লগিং দেখে মেলার স্বাদ ব্লগে মিটাবো !
আমার বড় প্রাপ্তি আপনাদের সঙ্গ । হ্যাঁ, শিপনের বইয়ের মধ্যেই তো তাকে খুঁজে পাবো । বইমেলা নিয়ে সচিত্র ব্লগিং দেওয়া সম্ভব হবেনা, অন্য কেউ একজন বা একাধিক বন্ধু এ সাধ মেটাবে বলে আশা করি ।
আমি ঢাকায় গেলে আপনার সাথে মেলায় একটা চক্কর দেবার আশা রাখি। এই মাসের শেষ সপ্তাহে হতে পারে।
সেটা হবে আমার জন্য অতীব আনন্দের ও গৌরবের বিষয় !


লেখা এত ছোট কেন? হুদা ভাই, বন্ধুদের বইপড়া নিয়ে, আপনার পড়া সেরা বই নিয়ে পোষ্ট দেবার অনুরোধ রাখলাম।
সকাল ছ'টায় শুরু করেছিলাম, মাথায় ছিল আরও অনেক কিছু । ইচ্ছা ছিল আরও একটু বিস্তারিত বর্ণনা দেবার । শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেতে সময় লাগলো ছয় ঘন্টা । এর মাঝে আমাকে উঠতে হয়েছে অন্তত বিশ বার । বাধ্য হয়ে ছোট পোস্ট দিয়ে দিতে হলো ।
বই পড়া নিয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম, নুশেরার পোস্ট পড়ে তা আর শেষ করতে ভরসা পাচ্ছিনা । তার মত এত সুন্দর করে বলতে পারবোনা, আর স্মরণও নেই অতটা - মেধার কথা আর না-ই বললাম ।
আপনার ধৈর্যের প্রশংসা করি।
ধন্যবাদ । ভাইরে ঠেকায় পড়ে ধৈর্য প্রদর্শন ।
হুদা ভাই আপনি যখনই বইমেলায় যাবেন, মনে রাখবেন আমার মত অভাগারা যারা ঢাকার বাইরে থাকি আপনাদের চোখ দিয়েই বইমেলার একটা বিশাল অংশ দেখি। আর আপনার ক্যামেরা ব্যাবহারের কিন্তু এটা সুবর্ণ সুযোগ। এটা কোন নিবেদন না আবদার...।
আবদার রাখতে পারলে আমিই সবচেয়ে বেশি খুশী হতাম ।
ভুলে যাওয়ার ব্যাপারটা আমাদের সবার মধ্যেই কম বেশি আছে ভাইটি। লিষ্ট লিখে নিয়ে যাবার বুদ্ধিটা কিন্তু মন্দ নয়! বইগুলো পড়ে কেমন লাগলো জানাবেন। দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাতে আমরা কেউ কেউ অপার হয়ে বসে থাকি, তাদের কথা ভেবেই না হয় হৃষ্টপুষ্ট একটা পোষ্ট দিলেন! সে পর্যন্ত হুলস্হূল রকমের ভালো থাকুন।
বইমেলা, পহেলা ফাল্গুন, টিএসসি, বাংলা একাডেমি, পাবলিক লাইব্রেরি, যাদুঘর মিলনায়তন তোমাদেরকে আজীবন মিস করবো।
আবারো মিস করবো তোমাকে প্রিয় বইমেলা
কিন্তু তুমি জেগে থেকো, অপেক্ষায় থেকো
কোন একদিন ফিরে আসবো
ফেব্রুয়ারীর শীত সন্ধ্যায় তোমার বুকে
তাজা বইয়ের মাতাল গন্ধ
মাইকে বেজে যাওয়া অহরহ
কবিতা গান কিংবা আলোচনা
যার কিছু শুনছি আবার কিছু না
বাইরে চটপটি ফুচকার হাঁকডাক
সদ্য গজানো তরুনীদের পরনে
নতুন তাঁতের শাড়ির মাড়ের ঘোচঘাচ
কাঁচের চুড়ির টুংটাং
বইমেলা তুমি ফিরে ফিরে এসো
এই ফেব্রুয়ারীতে, আমিও অপেক্ষায় থাকবো
আগুন ঝরা এই ফাগুনে
তোমার জন্যে শুধু তোমার জন্যে।
তানবীরা
০৮।০১।১০
আমার এই পোস্টের মান বেড়ে গেল এই কবিতার ছোঁয়ায় । ধন্যবাদ তানবীরা ।
আমি যদ্দূর জানি, ঐদিন সিরাজিও মেলায় গেছেন, দেখা হয়নি?
হ্যাঁ, দেখা হয়েছিল । মাইনুল এইচ সিরাজীর সাথে আরও একজন ব্লগার ছিলেন তার নাম এম এ সিরাজী । তাদের সাথে নিয়ে চা খেয়েছি । তবে তাদের ব্যাস্ততা থাকায় একসাথে ঘুরাঘুরি করা হয়নি ।
কথায় কথায় জানতে পারলাম যে, এম এ সিরাজীর মা শাহানা সিরাজী ‘প্রজাপতির দেশে’ নামে শিশু-কিশোরদের উপযোগী গল্পগুচ্ছের একটা বই লিখেছেন। সেটি এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে । বইটি নিয়ে অনিকেত চৌধুরী একটা পোস্ট দিয়েছিলেন 'আমরা বন্ধু' ব্লগে। লেখিকা শাহানা সিরাজী মাইনুল এইচ সিরাজীর ভাবী ।
আপনার সাথে ঘোরাঘুরি মিস করেছি নাজমুল ভাই। আমার ব্যস্ততা ছিল না, কিন্তু ভাতিজার জন্য পারলাম না। সত্যিই খারাপ লাগছে।
আরে ভাই, এটা কোন ব্যাপার হলো ?
নাজমুল ভাই, কামটা জব্বর করছেন আপনে । আমি সিওর সামনে বার লিস্টটা হারিয়ে ফেলবেন । অতএব মনে গেঁথে নিয়ে যান ।
গতকাল গিয়েছিলাম । মনে গেঁথে নয়, কাগজে লিখেছিলাম নামঠিকানা । সে তালিকা নিতেই ভুলে গিয়েছিলাম !

বুঝেন তা'হলে !
নাজমুল ভাই কে অনেক ধন্যবাদ এমন একটা অসাধারন কাজ করার জন্য। কিন্তু বই গুলোর নামের আগে শুধু বক্স দেখায়। যাই হোক অনেক মিস করছি বই মেলা।।আর ঘুরা।আপনারা ঘুরে আসুন ।আর সে অভিজ্ঞতা আমাদের সামনে তুলে ধরুন ।।আপনাদের চোখেই না হয় দেখে নেব বই মেলা।আর ছবি সহ পোস্ট দিতে ভুল করবেন না ।।অনুরোধ বা আবদার যাই বলেন না কেন। অনেক কেই চিনিনা বা জানি না ।তাই ছবির সাথে নামও চাই। আর যে বই গুলো কিনেছেন , পড়ছেন সে গুলোর রিভিউ দিতে ভুলবেন না ।ভাল থাকুন।
জানিনা পারবো কিনা !
হুদা ভাই, অশেষ কৃতজ্ঞতা আসার জন্য। পরে কৈ গেলেন, আর পেলাম না যে?
আপনাদের সান্নিধ্য রীতিমত উপভোগ করেছি । দিব্য প্রকাশ থেকে সাদা-কালো নিয়ে ফিরে এসে আপনাদের আর পেলামনা । এদিক-সেদিক খুঁজে লাভ হলোনা, কী আর করা ?
হুদাভাই, আপনার সঙ্গে আলাপ হলো না কেন!!!???
ব্লগারদের বই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়ে এসেছি

বার্ধক্য মনে হয় একটা প্রতিবন্ধকতা । নূপুর ছাড়া আর কোন মেয়েই এগিয়ে এসে আমার সাথে কথা বলেনি । জয়িতা পূর্ব পরিচিত, কথা হয়নি । রাশিদা আফরোজের সাথে ই-মেইল, মোবাইল ফোনে কথা হয়, ছবিতে তার নাম দেখে জানলাম যে তিনিও সেখানে ছিলেন । নুশেরার উপস্থিতির খবর জানলাম আরও পরে । আমি আগ্রহ দেখাতে পারিনি, বৃদ্ধের মেয়েদের প্রতি আগ্রহকে আবার অন্য চোখে কেউ দেখে যদি সে আশঙ্কায় । ব্লগের অনেকের বয়স আমার ছেলে-মেয়ের চেয়েও অনেক কম, তবু তারা আমার বন্ধু । তাদের বন্ধুত্ব থেকে বঞ্চিত হতে চাইনা, তাই একটু সতর্ক থাকতে হয় ।
-এ অবস্থায় আমি হাতের তালুতে লিখে নিতাম। বাল্যকালে বাজারের ফর্দ হারিয়ে যেতো বলে...
ভাল বলেছেন । হাত তো ভুল করে ফেলে যাওয়া যাবেনা! তবে ধুয়ে ফেললে বিপদ !
মন্তব্য করুন