ইউজার লগইন

একটু আত্নপ্রসাদ...

লেখালেখিটা আসলে আমার ধাতে আসেনা।এই একটা প্রেস্ক্রিপ্সন,দুই একটা রোগীর হিস্ট্রি ওইটুক পর্যন্তই।কিন্তু সেদিনের কথাগুলো আমি না লিখে পারিনি।মাঝমাঝেই লাল খাতাটা খুলে বার করে একপলক দেখি লেখাগুলো।অপ্টু হাতের লেখা,কিন্তু অনুভুতিটা ষোল আনা খাঁটি।
অন্য সব দিনগুলোর মতনই ছিলো।নিজের নিয়মে চরে বেড়ানো নির্মল সকাল,কাঠফাঁটা রৌদ্রের দুপুর,দক্ষিনা বাতাসে ভরপুর হেলে ওঠা সূর্যের বিকেল।কিন্তু কিছুই আমার মনকে স্পর্শ করছিলো না।ঘুর্ণাক্ষরেও টের পাইনি,ওইদিনটি আমার জন্যে এক অন্যরকম দিন।
এ বছরের শুরুর দিকের ঘটনা।প্রচন্ড মানসিক অশান্তিতে ঘুরে বেরাচ্ছি।কোঙ্কিছুতেই থই খুঁজে পাচ্ছিনা।কাউকে বলার নেই,বুঝানোর নেই,শুধু স্বস্তি খুঁজে বেড়ানো।এর জন্যে যা অনাবশ্যক ছিলো তার সবটাই পূর্ণ করে ফেলেছি।শুধু আবশ্যকটাই খাতার শেষ পৃষ্ঠার মতো রয়ে গেছিলো।
ঘরে পরে থাকা টি-শার্টের- জিন্স এর সাথে ব্যাকপ্যাকটা তুলে নিয়ে ক্যামেরা হাতে বেড়িয়ে পড়লাম বাসা থেকে।গন্তব্য অজানা।কাঠফাঁটা রৌদ্রের দুপুরে মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম।উপলদ্ধি করতে চেয়েছিলাম বাস্তবতাটাকে।জীবনবোধটা বরাবরই একটু বেশি।গড্ডালিকায় গা ভাসানোটাই নীতিবিরুদ্ধ।ঘাড়ের রগটাও একটু বাঁকা।তাই আপোষের প্রশ্নটাও অবান্তর।ওই নীতিটাই যে আমার এতো বড় ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাড়াঁবে কল্পনাতেও আনিনি।গ্লানি নিয়ে হাটঁতে হাটঁতে আবিষ্কার করলাম অন্যদিনের তুলনায় পথশিশুগুলোর কর্মচাঞ্চল্য একটু কম।তারা একটু হাসিখুশি।দিনটি ছিলো স্বাধীনতা দিবস।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে যতো আয়োজন সবকটিতেই তাদের রাজ্য।এমনি ঘুরতে ঘুরতে ,ছবি তুলতে তুলতে পেয়ে গেলাম কয়েকজনকে,আচমকাই ঠিক করে বসলাম তাদের সাথেই দিন কাটাবো।অপুষ্টিতে ভোগা ,ছিন্ন জামা,জটা চুল,নাকের পানি গড়ানোর শুকনো চিহ্ন,পানির অভাবে গোসল না করার দৃশ্য-এসব কোনকিছুই নতুন না।তবুও তারা আমাকে অবাক করল।কারণ তাদের আমার সাথে থাকার দাবি ছিলো চারুকলার পাশের পার্কটিতে বাচ্চাদের রাইডে চড়ানো।আমার সবসময়ের ধারণা ছিলো,এদের চাহিদার শুরুটা মৌলিক অধিকারটুকু দিয়েই।ধান্মন্ডির আকাশছোঁয়া ফ্লাটে থেকে এর বেশি চিন্তার পরিধি আমার ছিলোনা।ওইটুকু রাইডে চড়ার জন্য এমন আকুল ছোটবেলায় ছিলাম না।ওদের সাথে থাকতে থাকতে আমার মনের ক্লেদগুলো কেটে যাচ্ছিলো।নাগোরদোলায় চড়ে কিংবা চরকিতে চড়ে ওদের হাসির যে বন্যা বইছিলো তা ক্যামেরা বন্দি করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা।মাথায় ঘুরছিলো এতো দুর্দশাতেও তারা তাদের ছোট ছোট স্বপ্নগুলোকে বিসর্জন দেয়নি।মন খারাপের ঝুলি হাতে বিলাসিতাও করেনি আমার মতন।আঙুল তুলে আমার রঙিনচশমা আঁটা চোখের ঘোলাটে দৃষ্টিকে উপহাস করে তারা আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে হেসে যাচ্ছিলো যেনো।অশান্ত মন ক্রমস শান্ত হয়ে উঠছিল।ওইদিন যে আত্নপ্রসাদ নিয়ে আমি ঘরে ফিরেছি,তা ভাষা দেয়া আমার মতন অপ্টু লেখকের পক্ষে সম্ভব না।শুধু জানি এই আত্নপ্রসাদ,অপ্রাপ্তির -মনখারাপের বিলাসিতার জলে গা না ভাসানোর শিক্ষা।

পোস্টটি ৮ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

টুটুল's picture


স্বাগতম এবিতে ...

শুরুটা কিন্তু চমৎকার হইছে Smile
আশা করছি এবির সাথে সময়টা ভালই কাটবে Smile

লীনা দিলরুবা's picture


শত বেদনায়-দূর্দশায় যারা হাসতে জানে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা এমনিতেই চলে আসে।

এবিতে স্বাগতম আপনাকে।

জোনাকি's picture


এবিতে স্বাগতম
ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যাওয়ারও একটা মজা আছে Smile
লেখা ভালো লেগেছে Smile

রাসেল আশরাফ's picture


এবিতে স্বাগতম Welcome

উচ্ছল's picture


উপলব্ধির দারুন প্রকাশ। Smile
এবি'তে স্বাগত।

নিকোলাস's picture


Welcome

মন খারাপের ঝুলি হাতে বিলাসিতাও করেনি আমার মতন।

নুরেন's picture


Smile

আরাফাত শান্ত's picture


চালিয়ে যান লেখা!
শুভকামনা থাকলো

তানবীরা's picture


Welcome

১০

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


পড়ে ভাল লাগলো,
নিয়মিত লিখবেন যেন।

এবি তে সুস্বাগত।

১১

মীর's picture


Welcome টু এবি।
আপনে কি ডাক্তার? তাইলে ডাক্তারি পড়াশোনা আর স্ট্রেস সম্পর্কে কিছু লেখা দিয়েন ব্লগে।

১২

নুরেন's picture


মীর ভাইয়া- Smile চেষ্টা করবো।ওই যে বললাম লেখালেখি টা আমার ধাতে নেই।হঠাত একদিন বসে কিছু লিখে ফেলি,এইরকম। Smile

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

নুরেন's picture

নিজের সম্পর্কে

আমি মানুষ।তাই মানুষের মতো বাচঁতে চাই।এজন্যে যদি কিছু কষ্ট মনের গহীনে থেকে যায় তবুও মানুষ হওয়ার উল্লাসেই আমি হাসবো।
হাসতে ভালোবাসি,হাসাতে ভালোবাসি,আর ভালোবাসি বন্ধুদের।
আড্ডা দেয়া আমার খুব পছন্দের কাজ।
রঙ ভালোবাসি।
বই পড়তে ভালোবাসি।
আর ভালোবাসি দিকভ্রান্ত্ পথিকের মতো উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে বেড়ানো...। Smile