ইউজার লগইন

দাঁতবিস্তৃত হাসি

আজকে আমার পাঁচবছরের হোষ্টেল জীবনের অন্যতম একটি দিন।আমি মোটামুটি সু এবং কু ভাবে পরিচিত হোষ্টেলে।সু ভাবে পরিচিত কারন যত আকাজ কুকাজ এর প্ল্যান আমার রুমে সম্পন্ন হয়,নয়তো যারা করে আসে তারা আমার বিপুল সমর্থন পায়।হোষ্টেল মনিটর হওয়ার কারনে পরিস্থিতি সামলানো কোন ব্যাপার হয় না।আর কু ভাবে পরিচিত আমার খামখেয়ালীপনার জন্যে,দিনের বেশিরভাগ সময় অনশন করে,মাঝে মাঝে ই সকলের আত্না উড়িয়ে হস্পিটালে ভর্তি হয়ে,রাতবিরাতে গভীর অন্ধকারে উপশহরের রাস্তায় হেঁটে বেড়িয়ে আর হোষ্টেলের দেয়ালে,জানালায়,মেঝেতে রঙের বন্যা ছড়ায়ে। যাই হোক,এতোকিছুর পরেও হোষ্টেলে টিকে আছি মানুষজনের ভালোবাসার জন্যে।সে রুমে কাজ করা খালাদের হোক,বন্ধুদের হোক আর ক্যান্টিনের কাজ করা ছোট ছোট বাচ্চাগুলার হোক।
আজকের অন্যতম দিনটা ক্যান্টিনের এক বাচ্চার জন্যে।এ পর্যন্ত যতো বাচ্চা কাজ করে গেছে তাদের সবার নাম মুখস্ত করেছিলাম।কারন ছোটবেলায় একটা বিজ্ঞ্াপনে দেখেছিলাম ওরা চায় ওদের নাম ধরে ডাকা হোক।মিরাজ ,সিরাজ,সাদ্দাম হোসেন,মাহমুদুল হাসান,ফরিদুল প্রত্যেকেরই আমার সাথে একটা অন্যরকম সম্পর্ক ছিলো।শুধুমাত্র এই নাম ধরে ডাকার কারনে।ক্যান্টিনে গিয়ে পানি খেতে চাইলে এমন কোনোদিন হয়নি ধোয়া গ্লাস আবার ধুয়ে দিয়ে যায়নি।বলার আগেই নাস্তা এসে হাজির।হোষ্টেলে এসে মাঝে মাঝে কুটুর কুটুর করে গল্প করতো।
যে আজকের ঘটনার নায়ক তার নাম আব্দুল কাদির জিলানী।সে খুব ই ছোট ছিলো যখন আসে।খুবি পাগলাটে।একা একা কথা বলত।মাঝে মাঝে পালায়ে বাড়ি চলে যাইতো।যদিও পঞ্চগড় থেকে যে কটা বাচ্চা এসছিলো,সবগুলার মাঝেই পালায়ে বাড়ি চলে যাওয়ার একটা ঝোঁক কাজ করতো।তো সে এমনি ছিলো একবার আমার এক বান্ধবী ওকে রাতে ক্যান্টিন থেকে খাবার আনতে দিলো,সাথে বলে দিলো 'ভাইয়া, তুমি খাবার না নিয়ে আসলে রাতে আমার খাওয়া হবেনা।' ওইরাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো।ক্যান্টিন থেকে ওকে বের হতে দিচ্ছিলো না।সে তারমধ্যে এসে শাখীকে খাবার দিয়ে বল্লো,'আপু,আমাকে আস্তে দিচ্ছিলোনা,আমি পালায়ে আসছি।'এই হচ্ছে তার প্রথমদিকের বর্ণনা।
এরপর অনেকদিন পার হয়ে গেসে।ওর জায়গায় অন্য বাচ্চা এসছিলো।আবার চলে গিয়ে ও এসছে।মাঝে দুইমাস আমি হোষ্টেলে ছিলাম না।আসার পরদিন বিকেলে নাস্তা কিনতে নিচে নামছি এক জুনিয়ার আপু আপু করে দৌড়ায়ে আসছে।কারন হলো আব্দুল কাদির জিলানী নাস্তা নিয়ে সোজা ৬ তালায় চলে যায়।আর ওই তালার সব খাদুক রা সব খেয়ে ফেলে।এরপর আর কোনো তালায় কোনো খাবার দিতে পারেনা।ওকে বলা হইছে নিচে যেখানে থাকার কথা সেখানে যেনো থাকে।কিন্তু ও খুব জেদ করছে।আমাকে বলার কারন ও আমার কথা শুনবে।তো আমি ওর সাথে কথা বলতে গিয়ে দেখি ও আমাকে ভুলে গেছে।আর যাই বলছি তাতেই জেদ করছে।একটু মন খারাপ হয়ে গেলো।পরে মনকে মানালাম যে বয়ঃসন্ধি চলছে।একটু তো জেদ হবেই।কিন্তু বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে এই জেদ ভাঙ্গাবো।
আজকে দুপুরবেলা খাবার দিতে আসার পর দেখি সে নতুন একটা গেঞ্জি পরে আছে।তার মাপের চেয়ে একটু বড়,কিন্তু তাকে বেশ ভালো লাগছে।যখনি বল্লাম,বাহ তোমার গেঞ্জিটাতো বেশ সুন্দর,নতুন নাকি?সাথে সাথে সবকটা দাঁত বের করে দিয়ে বল্লো,নাহ পুরান তো।হাসিটা এতো অকপট ছিলো যে মনটাই ভালো হয়ে গেলো।
বিকেলে নাস্তা কিনতে গিয়ে বললাম পুরি খাবো,সে বলে উঠলো,' দাঁড়ান,আমি আপনাকে গরম গরম পুরি বের করে দিচ্ছি,আপনার হাতেরটা ভালোনা' ।যা বোঝার বুঝে নিলাম।বাকিটা কথায় বলে অনুভুতি ব্যাখ্যা করা সম্ভব না।
এখান থেকে চলে যাওয়ার আর খুব বেশি সময় বাকি নেই।এরপর হয়তো আবার আমাকে ভুলে যাবে।আমিও হয়তো অর কথা চিন্তা করার খুব একটা সময় পাবোনা।তবে মাঝে মাঝে হোষ্টেলের কথা ভাবতে গেলে বিশেষ মুহুর্তের মতো মনে পড়বে পঞ্চগড় থেকে আব্দুল কাদির জিলানী নামের এক বাচ্চা ছেলের দাঁতবিস্তৃত হাসি।

পোস্টটি ৮ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

মীর's picture


সুন্দর লেখাটা। নস্টালজিকও।

নুরেন's picture


Big smile

টুটুল's picture


কৈ গেছিলেন?

নুরেন's picture


পঠনযুদ্ধে Steve

তানবীরা's picture


সুন্দর লেখাটা।, লাইক

আরাফাত শান্ত's picture


চমৎকার বর্ননা!

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


টিপ সই

আসমা খান's picture


হাসিটা সত্যি খুব সুন্দর লাগলো। মন করা লেখা।

নুরেন's picture


Smile

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

নুরেন's picture

নিজের সম্পর্কে

আমি মানুষ।তাই মানুষের মতো বাচঁতে চাই।এজন্যে যদি কিছু কষ্ট মনের গহীনে থেকে যায় তবুও মানুষ হওয়ার উল্লাসেই আমি হাসবো।
হাসতে ভালোবাসি,হাসাতে ভালোবাসি,আর ভালোবাসি বন্ধুদের।
আড্ডা দেয়া আমার খুব পছন্দের কাজ।
রঙ ভালোবাসি।
বই পড়তে ভালোবাসি।
আর ভালোবাসি দিকভ্রান্ত্ পথিকের মতো উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে বেড়ানো...। Smile