কফির জন্যে ভালোবাসা না ভালোবাসার জন্যে কফি !!!
আমাদের বাড়িতে প্রচলিত অনেকগুলো বদভ্যাসের মধ্যে একটি হলো চা-কফি খাওয়া।এক্টু লক্ষ্য করুন,যদিও পানীয়;পান না করা বলে খাওয়া বলছি।কারণটা হলো এই যে,সবাই মুড়ি-মুড়কির মতো চা কিংবা কফি গিলে যায়।দুবেলা ভাত না খেলেও সমস্যা নাই।কিন্তু ইহা ছাড়া জীবন অচলপ্রায় অবস্থা হয়।আমাদের বাসার এই নাটকের প্রথম এবং প্রধান নায়িকা আমার মা।বলাই বাহুল্য,তিনি এদেশের নামকরা এক মহিলা কলেজের গণিতের প্রফেসর।ভাবসাব দেখলে মনে হয়,দুনিয়ার তাবৎ জ্ঞানসাম্রাজ্য তাঁর হাতের মুঠোয়।তাঁর দীর্ঘদিনের অভ্যাস,দুপুরের খাবার না খেয়ে একমগ চা গেলা।এম্নিতে যদি আমরা দুই ভাইবোন দুপুরের খাবারটা একাধদিন স্কিপ করে যেতে চাই,তখন তাঁর জ্ঞানের কচকচিটা শুনিয়ে আমাদের প্রাণ অতিষ্ঠ করে দেন।প্রথমে কয়েকদিন কানে তুলো গুঁজে বিরস মুখে খেয়ে নিতাম।দিঙ্কতক বাদে,কচকচিটা শুরু হলেই আমরা দুই ভাইবোন চোখে চোখে কথা সেরে নিতাম।এরপর দুজনেই একসাথে মাকে জিজ্ঞেস করতাম,"মা ,ভাত খাবেনা?"খানিক্ষন নিরবতার পর মার হার না মানা চেহারার উত্তর ছিলো,"আমিতো বুড়ো হচ্ছি,আমার এতো বেশি খাওয়ার দরকার নেই।কিন্তু তোমরাতো বড় হচ্ছো তাই তোমাদের নিয়মিত খাওয়া উচিত।"মুখ লুকিয়ে দুজনেই একটু হেসে নিতাম।এরপর মা যখন মগভর্তি চায়ে চুমুক দিতাম,আমরা দুজন হাসিহাসি মুখ করে তাঁর পাশে বসে থাকতাম।আমরা একশের হলে মা ছিলেন দশশের।কিছুতেই বুঝতে দিতেন না যে আমরা জিতে যাচ্ছি।
এখন আমরা একটু বড় হয়েছি।যে যার যার মতো হোষ্টেলবাসী হয়েছি।চা ছেড়ে আমি কফির অন্ধপ্রেমে পড়েছি।বাসায় গেলেও চা এর বদলে কফি খাই।খাওয়ার সময় চোখে মুখে প্রশান্তির ছায়া ফুটিয়ে রাখি।আমার খাওয়া দেখেই হোক আর আমাকে দিয়ে বানিয়ে নেয়ার সুবিধাতেই হোক,মাও আমার সাথে কফি খাওয়া শুরু করলেন।মুখে যদিও স্বীকার করেননি,তবুও টের পেলাম তাঁর মন জয় করে নিয়েছে নেস্ক্যাফে এস্প্রেসো।
একদিন হোষ্টেলে বসে কফি খাচ্ছি বিকেলে,হঠাত মার ফোন।কিছুক্ষন হলো কলেজ থেকে ফিরেছেন।কথা বলছেনো খুব ক্লান্ত গলায়।বললাম,কফি খাও,খেলে ভালো লাগবে।কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বললেন,তোমার হাতের কফি ছাড়া কারও বানানো কফিই খেতে ভালো লাগেনা।তুমি বাসায় আসো,তারপর খাবো।ওই মুহুর্তে কফির মগে চুমুক দিতে গিয়েও থেমে গেছিলাম।
 এরপর থেকে যখনি খুব ব্যাস্ততার মাঝে একটু অবসর খুঁজে বের করি কফির জন্যে,মায়ের ক্লান্ত গলা একমুহুর্তের জন্য হলে শুনতে পাই।সাথে সাথেই মনে হয় ঘরে ফিরতে হবে,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।মাকে কফি খাওয়ানোর জন্যে হলেও।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করি।এটাই মনে হয় ভালোবাসার শক্তি।এই ভালোবাসার জন্যেই এত হানাহানি,এত ক্লেশ,আর এই ভালোবাসাই ঘরে ফেরার নিমিত্ত।






এটাই বোধোহয় ভালবাসা।
দারুণ লেখা তো
ছোট্ট কিন্তু দারূণ অনুভুতিপূর্ণ লেখা...
অসাধারণ, হৃদয়স্পর্শী…...
:')
আমাকে আমার ভাইয়া মাঝে মাঝে ডাকে, মিঃ টি!
বাসায় সবসময় আমার নিজের জন্য ৫/৬ রকম চা রেডি থাকে। যখন যা মন চায় খাই।
ইজুয়াল চা কফি মামা আর ভাইদের নিয়েই খাই।
তবে খুব বেশি স্পেশাল অকেশনে বাসায় সবার জন্যই বানাই চা।
এক ঈদের দিনে ভাতের দেগে করে একসাথে ১৬ কাপ চা করেছিলাম!
আজকাল কফিই বেশি খাই,
নেস্ক্যাফে গোল্ড আমার সবচাইতে প্রিয়।
আম্মু কফির ধোঁয়ায় সিগারেটের গন্ধ পায়, তাই আর খাওয়ানোর সাহস করি নাই!
ছোট্ট কিন্তু দারূণ অনুভুতিপূর্ণ লেখা
শেষের প্যারাটা পড়ে গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে।
দারূণ অনুভুতিপূর্ণ লেখা । শেষটুকুই বেশি ভালোলাগার
রাসেল ভাইয়া-আপনার অনুভূতির কথা শুনে আমারও লোম দাঁড়িয়ে গেছে
হায় ভালবাসা ! গোপনে গোপনে,
তুমি কতভাবে যে আসো মানব জীবনে !
কফি ছাড়া আমার চলেই না...
শেষটুকু দারুন...
~
মন্তব্য করুন