ধর্ম বিক্রি বন্ধ করতে হবে
আমি ঢাকায় বেড়ে উঠেছি। ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছি সংস্কৃতিমনা পরিবারে। যেখানে গান-বাজনা-নাচ-বিতর্ক কোন কিছুতে বাধা নেই। নির্বিকারভাবে তিন ভাইবোনের যা করতে ইচ্ছে হতো তাই করতে পেরেছি। কারও খাবার প্লেটে ভাত বেশি আর কারও প্লেটে কম এই বিষয়টির সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় ‘মিনা কার্টূনের’ মধ্য দিয়ে। সেই কার্টূনে দেখেছি মিনাকে মাছের ছোট টুকরা দেয়া হয় আর মিনার ভাইকে দেয়া হয় বড় টুকরো। সমাজ সচেতনার নানান উদ্যোগ মাঝে মাঝে শিশুদের মনে আটকে যেতে পারে। আমার মনেও আটকে গিয়েছিল। একজন মার কাছে সন্তানের বিভেদকরণ অত্যন্ত ভয়াবহ ইঙ্গিত বহন করে। ভাবতেই পারি না আমার মা অথবা বাবা তার সন্তানকে ছেলে- মেয়ে ভাগে ভাগ করে নিবেন।
তবে আমার পরিবারে এই বিভেদ নাই তার মানে এই নয় যে বাংলাদেশের কোথাও ঘটছে না। সারা বাংলাদেশে চলছে এই ভয়াবহ বিভেদ। আমি বরাবরই বিভেদের বিপক্ষে। মার্ক্সবাদ সমবন্টনে বিশ্বাস করে। তাই আমি মার্ক্সবাদের পক্ষেই কথা বলি। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে হবে সমবন্টন। কেউ কম আর কেউ বেশী আমি তা মানি না।
আমাদের হুজুর সমাজ নারীনীতি নিয়ে বহুত ফালাচ্ছে কয়েক দশক ধরে। বর্তমানে তো তা হরতাল পর্যন্ত গড়িয়েছে সেই ফালানো। হুজুররা দাবি করছেন সম্পত্তির সমবন্টন তারা মানেন না। এতে ইসলাম আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। আমাদের হুজুররা ইসলামই ঠিক মতো বুঝেন না সেখানে তারা যে খুব আইন বুঝে পন্ডিত হয়ে যাবেন এমনটা আমি বিশ্বাস করি না।
নারিদের সম্পত্তি সমান সমান দেয়া হলে মহা পাপ হবে এমনটা ইসলামের কোথাও উল্লেখ আছে বলে আমার মনে হয় না।
ইসলাম তো মানুষের ধর্ম। মানুষ মানে তো নারী-পুরুষ-হিজড়া। সবার জন্য। এখন ধরেন, এক পরিবারে তিন সন্তান। একজন ছেলে, একজন মেয়ে আরেকজন হিজড়া। সেক্ষেত্রে কি হবে? ইসলামে কি হিজড়াদের নিয়ে কিছু লেখা আছে? আমি জানি না। যদি থেকে থাকে তবে তার প্রাপ্যটা কি হবে? কিংবা কেমন হওয়া উচিত?
২.
আমাদের সমাজে “তাবিজ” করছে বলে একটা কথা প্রচলন আছে। তাবিজ মানেই ব্ল্যাক মেজিক। এই কালো যাদু নাকি মানুষকে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে। ইসলামেও কালো যাদু নিয়ে কথা আছে। মহানবী (স:) কে একবার কালো যাদুর শিকার হতে হয়েছিল।
তবে, আমার কাছে সে সময়টা ভিন্ন। এখন সমাজ অনেক আধুনিক হয়ে উঠেছে। ব্ল্যাক মেজিক আমার কাছে একটা ভাওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। একটা তাবিজ একজন মানুষের সকল কিছু ছিনিয়ে নেবে এমনটা আমার সৃষ্টিকর্তা হতে দিতে পারেন না। তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। সমস্ত ক্ষমতা তাঁর হাতে। অথচ তার সৃষ্টি মানুষকে আরেকজন মানুষের করা কালো যাদুর কাছে হার মানাবেন এটা তিনি কোনদিনই হতে দিতে পারেন না। আমি মানুষের মুখেই এই তাবিজের উপকারিতা কিংবা অপকারিতা নিয়ে শুনেছি। কোনদিন দেখি নাই। তাই বিষয়টি আমার আওতার বাইরে।
আর এই তাবিজ সূত্র কিন্তু আমাদের হুজুর মহল থেকেই বেশী আসে। তারা সবসময় মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে চায়। এই হুজুররা কোনদিনই নারীদের মানুষ হিসেবে গণ্য করে নাই।
মোট কথা, তারা ইস্যূ চায়। ধর্ম দিয়ে মানুষের মন জয় করার মতো ইস্যূ। কারণ এই একটা ইস্যূতে মানুষ খুব সহজে দূর্বল হয়ে পড়ে। সেই দূর্বলতার সুযোগই তারা নেয়। একটা অবৈধ জায়গায় মসজিদ বানিয়ে বহু হুজুর জায়গা দখল করেন। রাস্তার পাশে আবার দান বাক্স খুলে বসেন। আবেগী মানুষ ধর্মের টানে সেই বাক্সে টাকা দান করে অবৈধ জায়গাটাকে যে হালাল করে দিচ্ছেন সেটা কিন্তু খেয়াল রাখেন না। তাই দেখা যায়, যখন সরকার সেই অবৈধ জমিটা উদ্ধার করতে যায় তখন হাজার হাজার মানুষ মসজিদ বাঁচানোর জন্য দাড়িয়ে থাকেন। কারণ, আল্লাহর ঘর তারা ভাঙতে দিবেন না। এমনই জঘন্য চাল তারা চেলে দেন সমাজের দিকে। অবৈধ যে কোন কিছুকে তারা ধর্ম দিয়ে কিনে ফেলে। সেটা মানুষের আবেগ হোক কিংবা কোন জমি হোক।
ধর্ম নিয়ে যদি এতই তারা চিন্তিত হন তাহলে হরতাল করার অনেক ইস্যূ আছে। বেশকিছুদিন আগে আত্মহত্যা একটা চলনে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল। তখন সমাজের নানান সমস্যাগুলো নিয়ে তারা হরতাল করে সরকারের উপর চাপ দিতে পারতেন। আত্মহত্যা একে তো ইসলাম বিরোধী কাজ তার উপর সমাজের জন্য ভয়ানক একটি অনৈতিক কাজ। সেটা নিয়ে হুজুররা কোন সাড়াশব্দ করেন নাই। আবার ইফটিজিং নিয়ে তারা চুপচাপ ছিলেন। এইসব জায়গায় তারা চুপ থাকেন। কারন এগুলোতে ধর্মকে বিক্রি করা যাবে না। মানুষকে তারা অন্ধকারের জায়গায় রাখতে অত্যন্ত ভালোবাসেন। যেই অন্ধকারকে তারা তাদের পবিত্র স্থান বলে উল্লেখ করেন।
বহু আগে হুজুরদের বলতে শোনা যেতো যে, টেলিভিশন হচ্ছে শয়তানের বাক্স। কিন্তু বেসরকারি টিভি এসে ধর্ম বিষয়ক নানান অনুষ্ঠান করা শুরু করে দিলো। তখন তাদের ডায়লগ পরিবর্তন হয়ে গেলো। তারা বলতে শুরু করলো- টিভিতে ভালো কোন কিছু দেখা পাপ নয়।
তারা বলতো দুনিয়ার শিক্ষা নেয়া পাপ। ধর্মীয় শিক্ষা হলো সওয়াব। কিন্তু হাদিস আছে- শিক্ষার জন্য প্রয়োজন হলে সূদুর চীন পর্যন্ত যাও।
কথা হইল শিক্ষা। সেটা কি শুধু ইসলাম শিক্ষা নাকি দুনিয়ার মানুষের তৈরী শিক্ষা সেটার কথা বলা হয় নাই।
আর তাছাড়া এই হাদিস দারা বোঝানো হয়েছে, প্রয়োজনে শিক্ষার জন্য দেশান্তরিও হওয়া যাবে। এখন তারা যদি বলেন, ইসলামী শরীয় মতে নারীদের দেশান্তরি হয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা যাবে না। তখন বিষয়টা কতটা ভাওতাবাজি তা কিন্তু খুব সহজেই বলে দেয়া যায়।
আমি শুধু বলতে চাই, এই ধর্ম বিক্রি অবিলম্বে বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। সত্যি কথা হলো, কেনা-বেচা আইন দিয়ে বন্ধ হবে না।
সরকার কখনও আইন দিয়ে কোন কিছুই বন্ধ করতে পারেন নাই।
আইন হয় রাজনীতিবিদদের সেইফটির জন্য। সমাজ রক্ষার জন্য কোন আইন হলেও কাগজে কলমে। তাই আমাদের উদ্যোগি হতে হবে। ধর্ম বিক্রি যারা করবে তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠতে হবে। নাইলে এই সমাজ একদিন ধর্ম বিক্রেতাদের হাতে চলে যাবে। তখন বলা হবে, ব্লগিং করা ইসলাম পরিপন্থি। তাই ব্লগিং বন্ধ করা হোক।
০১.
ইসলামে ব্যক্তির কনসেপ্ট এবং সম্পত্তির মালিকানার কনসেপ্ট একটু ভিন্ন, বর্তমান পুঁজিবাদী মানসিকতায় বড় হওয়া সমাজের মানুষদের জন্য সেটা বুঝার জন্য পড়ালেখার দরকার আছে। হুজুরদের একটা বড় অংশ এটা বুঝেন না। উল্লেখ্য হুজুরদের মধ্যেও অনেকেই খুবই জ্ঞানী এবং সৎ, আমাদের সবকিছুতে হুজুরদের দায়ী করাটা অনেক সময় আসলে সম্পূর্ণি জেনারাইলাইজেশান, ঢাবি'র ছাত্ররাজনীতি দেখে সম্পূর্ণ ঢাবির ছাত্রদেরকে জাজ করার মত। হুজুরদের যে বড় অংশ সবকিছুতেই ইসলাম গেল বলে রব তুলে তাদের সমস্যাটা আসলে সমাজ এবং রাষ্ঠ্রের বানানো। যারা এসব আন্দোলন করতেছে(আমিনী বা এরকম লোকগুলো) তারা হয়ত নিজেরা ভালই জানেন, ভন্ডামির জন্যই সব করতেছে (আমি জানিনা সঠিক কারন কি), কিন্তু যেসব হাজার হাজার ছোট হুজুর এদেরকে অনুসরন করে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিচ্ছে এরা আসলে তেমন কিছুই জানেনা, এরা দুই-তিনটা কিতাব না বুঝেই পড়েছে, কোরান শরীফের ১০ ভাগের এক ভাগেরও মানে জানেনা। সমাজের এতিম এবং পশ্চাদপদ অংশ থেকে এরা আসে, সাধারণ শিক্ষায় এদের স্থান নেয়, সমাজ এবং রাষ্ঠ্রব্যবস্থার ব্যর্থতার জন্য। তাই এরা ছোটকাল থেকেই মগজধোলাই হয়, এদের নিজের বাচ বিচার কখনো গড়ে উঠেনা। মূল সমস্যায় হাত না দিয়ে হুজুরদের বিরুদ্ধে যতই বিষোদগার করা হোক, সেটা শুধু সমস্যা বাড়াবে, এদেরকে আরো এলিয়েনেইট করে দেওয়া হবে এবং অরাজকতা বাড়বে। এখন আসি সম্পত্তির উত্তরাধিকারে নারী-পুরুষ সমানাধিকারের বিষয়ে। ইসলাম যে সমাজ কায়েক করতে চায়/চাইত, সে সমাজে নারীর দায়িত্ব অনেক কম, তার ইনকামের মালিক সম্পূর্ণ সে নিজে, তাকে তার নিজের পরিবারের ভরনপোষণ দিতে হবে না, ছেলে-মেয়ের খরচ দিতে হবে না, তাকে তার মা-বাপকে দেখতে হবে না। এমনকি সে যদি বাইরে ইনকাম না করে, তাহলে হাসবেন্ডকে তার সম্পূর্ণ খরচ দিতে হবে, শুধু তাই নয়, তাকে বাসার রান্না-বান্না কাজের জন্য বাধ্য করা যাবেনা, তাকে শ্বশুর-শ্বাশুরীর খেদমত করার জন্য বলা যাবেনা, সামর্থ্য থাকলে তার জন্য কাজের মেয়েও রাখতে হবে। তাকে মোটা অংকের মোহরানা দিতে হবে যেটা সে যেখানে ইচ্ছে সেখানে খরচ করতে পারবে। মোটামোটি সে ইচ্ছে করলেই নটের বিবি হিসেবে থাকতে পারবে! এর বাইরে সে ইচ্ছে করলে সবকিছু করতে পারবে, চাকরি করতে পারবে কিছু শর্তানুসারে (যেমন বর্তমান প্রচলিত আর্মীতে যেতে পারবেনা), তার নিজের মা-বাবাকে দেখতে পারবে, এসবই তার দায়িত্ব না, সে ইচ্ছে করলেই করতে পারবে, অপশনাল। কিন্তু ছেলেকে তার স্ত্রী-ছেলে-মেয়ের ভরন-পোষন দিতে হবে, মা-বাবার ভরন-পোষণ দিতে হবে।
তাছাড়া বিয়ের আগে হবু-স্ত্রীকে মোটা অংকের মোহরানাও দিতে হবে। তার আত্মীয়-স্বজন, মা-বাবার আত্বীয়-স্বজন এদেরকেও দেখতে হবে সুযোগ হলে, মেয়েদেরকে এটা করতে হবে না। ছেলের যেহেতু দায়িত্ব অনেক বেশি দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে মা-বাবাকে বাধ্যতামূলকভাবে দেখা যদি মা-বাবার আর্থিক সমস্যা হয়, এসবের জন্য ছেলেকে মেয়ের ডাবল সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার দেওয়া হয়েছে। ভালমতে হিসেব করলে মেয়েরাই জয়ী হচ্ছে, কারন তাদের দায়িত্ব নাই, কিন্তু অধিকার আছে। ছেলেদের দায়িত্ব এবং অধিকার সামন্জস্যপূর্ণ।
সমস্যা হচ্ছে আইন করে কি লাভ যদি তা বাস্তবায়ন না হয়? বাংলাদেশে ৯৯ ভাগ লোক মেয়েদেরকে তার প্রাপ্য অর্ধেক কি, ১০ শতাংশও দেয়না। এমনকি কোন মেয়ে যদি বাপের বাড়ির সম্পত্তিতে তার ন্যায্য অধিকার চায়, তাকে সমাজেও ছোট করে দেখা হয়। এসব এসেছে হিন্দু সংস্কৃতি থেকে। হিন্দু ধর্মে একবার যৌতুক দিয়ে বিয়ে দিয়ে ফেললে বাপের বাড়িতে আর তার কোন অধিকার নেই, মুসলমানদের মধ্যে এই অভ্যাসটাই আছে। মোহরানা দেয়ার বদলে যৌতুক দেওয়া হয়, সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার দেয়া হয়না। বোনদেরকে অধিকার না দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, সুশীল-কুশীল, নাস্তিক-আস্তিক, হুজুর-সেক্যুলার সবাই একজন আরেকজন থেকে এগিয়ে থাকতে চায়। যেসব লোক সমানাধিকার বলে লাফাচ্ছে এদের ইতিহাস দেখলে দেখবেন তারা নিজেরাই বোনদের অধিকার দেয়নি, তাদেরকে বাপের সম্পত্তিতে প্রাপ্য অর্ধেকও দেয়নি। কেউ যদি সামান্য পরিমানও দেয়, এরপরে বোন বাপের বাড়িতে আসলে তাকে বিভিন্নভাবে হেয় করা হয়। অথচ ইসলামে বলেছে সম্পত্তি অর্ধেক দেওয়ার পরও বোন বাপের বাড়িতে নিয়মিত বেড়াতে আসবে, এটাও তার অধিকার।
০২.
শিক্ষার জন্য চীনে যাওয়ার যে হাদিসটা বহুল প্রচলিত তবে জাল হাদিস। ইসলামে যে হাদিসটা আছে সেটা হচ্ছে জ্ঞানার্জন ফরজ - নারী, পুরুষ সকলের জন্য। উল্লেখ্য হযরত আয়েশা (রাঃ) নিজে অনেক বিখ্যাত পুরুষ সাহাবী, তাবেঈন, স্কলারদের শিক্ষিকা ছিলেন। প্রফেটের সময়কালে নারীরা যুদ্ধে যেত (মূলত আহতদের সেবা করার জন্য)। ইসলামের প্রথম শহীদ নারী। ইসলামীক দেশগুলোতে নারীদেরকে অত্যাচার করার প্রচলনটা মুলত সেসব দেশের স্থানীয় এবং সাংস্কৃতিক কারনে। যেমন আফ্রিকায় মেয়েদেরকে খাৎনা করানো, আমাদের দেশে যৌতুক দেয়া এসব। নারীদেরকে হারেমখানায় রাখা পর্দার মধ্যে, আফগানিস্টানের তালিবান স্টাইলে বোরখা পড়ানো, তাদেরকে শিক্ষা না দেয়া এসব ইসলামে ঢুকেছে বাইজেন্টিন সাম্রাজ্য যখন দখল করা হয়েছে তারপর থেকে। সেটার ঐতিহাসিক কারন আছে, আমি ওসবে বিস্তারিত যাচ্ছিনা। তবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশাও নিষেধ করা হয়েছে, নারীদেরকে ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার দিকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেজন্য শরীরকে শালীন উপায়ে ঢেকে রাখতে বলা হয়েছে। সে একই হুকুম পুরুষদের জন্যও এবং পুরুষদের পর্দার হুকুম নারীদের আগে! হুজুররা সাধারণত পুরুষদের পর্দার কথা কখনও বলেনা, অনেকেই জানেওনা। হিজড়াদের ব্যাপারে আমি বিস্তারিত জানিনা, তবে শুনেছিলাম পুরুষদের সাথে আইডেন্টিফাই করে এরকম হিজড়াকে পুরুষদের মত করে এবং নারীদের সাথে আইডেন্টিফাই করে এরকম হিজড়াকে নারীদের মত করে ট্রিট করতে হবে, উত্তরাধিকারেও সেরকমই হওয়ার কথা। কিন্তু আমি বিস্তারিত জানিনা, তাই মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকব। ইসলামে ব্যক্তির কনসেপ্টটা যেহেতু ভিন্ন এবং ব্যক্তির চেয়ে একটা অগ্রসরমান, সুবিচারভিত্তিক সমাজব্যবস্থা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে তাই সমানাধাকিরের বিষয়টাও ভিন্ন। ইসলামের স্পিরিটটা মুলত দায়িত্ব এবং অধিকারের সাম্যতাবিধানের সাথেই সম্পর্কযুক্ত। তাই যাকে যেরকম দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার অধিকারও সেরকম, রাজার দায়িত্ব বেশি তাই অধিকারও বেশি, প্রজার দায়িত্ব কম, তাই অধিকারও কম। কিন্তু কেউ তার দায়িত্বের বাইরে গিয়ে দায়িত্ব পালন করলে সেক্ষেত্রে কোন বাঁধা নেই, দেখতে হবে আগে সে তার উপর অর্পিত দায়িত্বটা পালন করছে কিনা, সেটা না করে অন্য দায়িত্ব নেওয়া যাবেনা, তবে সেটা করে বেশি দায়িত্ব নিতে চাইলে সেটা করা যায়েজ আছে এবং অনেকক্ষেত্রে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। বর্তমান মুক্তবাজার, পুঁজিবাদী, ভোগবাদী এবং ব্যক্তিকেন্দ্রীক সমাজব্যবস্থায় ইসলামের সবটুকু না নিয়ে শুধুমাত্র একটা বিশেষ কিছু নিলে ঝামেলা পেকে যায়, সব উলট-পালট হয়ে যায় এবং ইসলামের আইনগুলো অনেকসময়ই অযৌক্তিক ঠেকে। কারন সিস্টেমটা হচ্ছে হলিস্টিক, চেরীপিকিং করে নিলে এদিকও হয়না, ওদিকও হয়না। এই উত্তরাধিকারের ব্যাপারে এক্সিসটিং আইনই বাস্তবায়ন হয়না, ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জন নারী তার পিতার সম্পত্তির অধিকারের অর্ধেক কি, ১০ শতাংশও পায়না। সেখানে নতুন আইন করে ঝামেলা বাধানোর চেয়ে প্রচলিত আইন বাস্তবায়ন করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সম্পত্তিতে সমানাধিকার মানে যদি ছেলেমেয়ে পিতার সম্পত্তির সমান অংশ পাবে বুঝায় আর যদি বাস্তবায়ন না হয় সেটা তাতে লাভটা কি? তবে আমি যদ্দুর জানি নতুন আইনও কোনভাবেই কোরান-হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক না, সেক্ষেত্রে আমিনীরা আসলে কি বলতে চান সেটা আমার কাছে পরিষ্কার না। এটা যদি চিরাচরিত রাজনৈতিক কারনে মানুষের সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করা হয় তাতে আশ্চর্য্যের কিছু নেই অবশ্য।
০৩.
মার্ক্সবাদের সমবন্টন বলতে যেটা বুঝিয়েছেন সেটা আমার কাছে সুবিচারভিত্তিক মনে হয়না। তবে আমি পূঁজিবাদের সমর্থক না, আমার কাছে কল্যান অর্থনীতিই ভাল লাগে। পরিশ্রম, মেধা, যোগ্যতা ইত্যাকার বিষয় চিন্তা না করে সমবন্টন আসলে ঠিক সমবন্টন না, বরং বৈষম্যমূলক হবে। আমাদের ইক্যুইটেবল সিস্টেমই দরকার। সুবিচার ভিত্তিক বন্টন প্রক্রিয়া সমব্টন প্রক্রিয়া থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর বলে মনে করি। মার্ক্সবাদী সমবন্টন প্রক্রিয়া ইনএফিসিয়েন্ট এবং কালক্রমে সবার জন্যই কম মোট কল্যান বয়ে আনবে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মানুষদের চেয়ে নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস এর মানুষ অনেক সুখী এবং কার্যক্ষম।
আপনার বিস্তারিত আলোচনামূলক মন্তব্য আমাকে মুগ্ধ করলো।
ব্লগে এমনই আলোচনা হওয়া উচিত।
অনেক ইনফরমেটিভ মন্তব্য। এটাকে মন্তব্য না বলে মন্তব্য ঘরে একটি পূর্ণ পোষ্ট বলা যেতে পারে।
অনেক ষ্ট্যাডি ছিল এখানে।
ধন্যবাদ।
সবই তো করতে 'হবে', কিন্তু করবেটা কে?
ধর্মের অনেক প্রশংসা করেছ, নিন্দা করেছ ধর্ম-ব্যবসায়ীদের, মানলাম। কিন্তু সম্পত্তিতে নারীদের সমঅধিকার, বা সমবন্টনের আইন যদি ইসলামবিরোধী হয়, তাহলে কি মানবে?
আমি অবশ্য সরকারের নারী-নীতি পড়ে দেখিনি, কী আছে ওখানে তা-ও জানি না। কিন্তু যতোদূর জানি, ইসলামের উত্তরাধিকার আইনে পুত্র ও কন্যা বাবার সম্পত্তির সমান অংশ পায় না।সরকার যদি এমন আইন করে থাকে যে, সম্পত্তির সম-বন্টন হবে, সেটি ইসলাম-বিরোধীই হবে!
আমি ব্যক্তিগতভাবে সমবন্টের পক্ষে। আর হ্যাঁ, আইন কার্যকরী হোক না হোক একটা আইন থাকা খুব দরকার, নইলে লড়ার জন্য কোনো আইনি হাতিয়ার থাকে না।
আমি কিন্তু স্যার বলি নি আইনটি ইসলাম বিরোধী।
আমি বলতে চেয়েছি- আইন আছে যতটুকু দেবার সেটার অধিক যদি দেয়া হয় সেটা কি পাপ হবে বলে কোথাও গণ্য আছে?
কমপক্ষে ঐ অংশটুকুকে আপনি ফরজ ধরেন।
বাকিটা সুন্নত হিসেবে কাউন্ট করলেই হয়।
আর মানুষের আইন বরাবরই ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। সেটা বলে তো লাভ নাই। ইসলামে জিনাহ করলে ১০০টা বেত্রাঘাত।
মানুষের আইনে আপনি বেত্রাঘাত দিবেন? মানবাধিকার সংস্থা আপনার পিছে হই হই রই রই কইরা লাইগা যাবে।
সমবন্টন অবশ্যই জরুরী। ইসলামী আইন তার জায়গায় থাকুক। সেটাকে বাধ্য রেখে একটু বেশী যদি মানুষের আইন দিয়ে দেয় তাহলে সেটা ইসলাম পন্থী হবে কিনা সেটার একটা ব্যাখ্যা থাকা জরুরী।
দেশের বা ইসলামের আইন যাই থাক আমার সন্তানেরা আমার সব সম্পত্তি সমান অংশ পাবে। এ আমাদের সন্তান জন্মের আগের সিদ্ধান্ত। কারন আমার প্রতিটি সন্তান একই প্রক্রিয়ায় আমার গর্ভে এসেছে এবং একই ভাবে আমার জঠরে বড় হয়েছে এবং একই প্রক্রিয়ায় ভূমিষ্ঠ হয়েছে। ছেলে/ মেয়ে জন্মের জন্য আলাদা কোন নিয়ম বা প্রক্রিয়া নেই। ওরা আমার ছেলে/মেয়ে নয়, ওরা আমার সন্তান। দেশে নারীনীতি শুধু মাত্র সংসদে উঠেছে তাতেই সমাজের পুরুষের প্রতিনিধীরা যে আন্দোলন শুরু করেছে তাতে তো মনে হয় তাদের জন্ম মায়ের জঠরে হয়নি বা একই জঠরে ভাই বোন জন্ম নেয় নি । বোনের বিরুদ্ধে ভাই, মেয়ের বিরুদ্ধে বাবা --- এদের কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে মেয়ের জন্য পিতার অশ্রু বা বোনের জন্য ভাইয়ের হাহাকার --মাছের মায়ের পুত্র শোক। এখানে এই সব মূর্খদের সাথে কথা বলা বা বিতর্ক করা শুধুই কালক্ষেপন। -----তবে সত্যিই এই নারীনীতি খুব খুব দরকার ছিলো , এর দ্বারা প্রস্ফুটিত হল আমাদের ভাই বা বাবা আমাদের কত ভালবাসে।
সত্যি কথা বলতে কি সমাজের অনেক অংশে নারীরা পুরুষের চেয়ে অনেক শক্তিশালি। আমি অনেক পুরুষকে দেখেছি স্ত্রীর হাতে নির্যাতিত হতে। আবার ধরুন, স্বামী দেখতে পাচ্ছেন স্ত্রী অন্য পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়ে গেছে। কিংবা নিজ পরিবারে মা-বাবার সাথে বাজে ব্যবহার করতে। কিন্তু বেচারা পুরুষ আইনের অভাবে কিছু করতে পারেন না। কারণ সকল আইন তার বিপক্ষে। বউকে কিছু বলতে গেলেই হয়ে যাবে- নারী নির্যাতন।
আবার অনেক চাকুরী ক্ষেত্রে দেখা যায়, বস্ কে ফুশলিয়ে নারীরা এগিয়ে যায়। {আমি কিন্তু সব ক্ষেত্রে বলছি না। বলছি প্রায়ই দেখা যায়। } নারীরা পুরুষের হীনতা নিয়ে যেভাবে হামলে পড়ে সেভাবে কিন্তু নারীরা নারীর হীনতা নিয়ে কথা বলেন না।
এমনকি, কয়েক মাস আগে এক মা পরকীয়ার জের ধরে নিজ সন্তানকে হত্যা করেন।
তখন আমি খুব চাচ্ছিলাম, নারী নেত্রীরা এর বিরুদ্ধে যথেষ্ট পরিমান সোচ্চার হবেন। কিন্তু আশানুরূপ কিছু দেখতে পাইনি। মানবাধিকার একজন কর্মী বলেছেন- সমাজের জন্য এটা অশনিসংকেত।
এই অশনিসংকেত বলেই তারা থেমে গেছেন। কিন্তু উচিত ছিল সোচ্চার হওয়া। সমাজে এই অবক্ষয়টা ঠিক কোন কারণে হলো। সমাজের মানুষের এমন মানুসিক বৈকল্যতা কেন সৃষ্টি হয়েছে সেটাই গবেষনা করে বের করা উচিত।
তাই ঢালাওভাবে পুরুষের ঘাড়ে দোষ না নিয়ে আসলে ভাগাভাগি করাটাই শ্রেয় হবে।
নারির অধিকারে অনেক পুরুষকে আমি সোচ্চার হতে দেখেছি। যার উজ্জল দৃষ্টান্ত হূমায়ূন আজাদ।
কিন্তু কোন নারীকে পুরুষের অধিকারের ব্যাপারে কথা বলতে শুনিনি। সব নারীই পুরুষের চরিত্র নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন তুলেন।
সিমন দ্যা ব্যাভোয়ারের মতো দার্শনিক লেখক পর্যন্ত বলেছেন, কেউ নারী হয়ে জন্মায় না। নারী হয়ে উঠে।
এতো অসাধারণ মন্তব্যের পর তিনি একের পর এক পুরুষের চরিত্র নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু ব্যাভোয়ারের জীবন নিয়ে পড়লে জানা যাবে একাধিক পুরুষের সাথে তার সম্পর্ক ছিল।
নিজেকে পরিশুদ্ধ তিনি এই জন্যই বলছেন কারণ তার সঙ্গী সার্ত্রে সব জানতেন।
তাতে কি?
আসল কথা নারীরা ঠিক কখন পুরুষের চরিত্র নিয়ে কথা বলবেন সেটাই বুঝে উঠতে পারে না।
তাই বললাম- পুরুষ-নারী কনফ্লিক্টটা অনেক পুরানো।
প্রতিযোগিতামূলক সমাজে এই পক্ষ শুধু প্রতিযোগিতাই করে যাচ্ছে। কেউ বলতে সাহস পান না- এই অবস্থার জন্য আমরা দুজনই দায়ী।
যতোদিন দারিদ্রতা থাকবে থাকবে কুসংস্কার, মডারেটেডে ধার্মিক, ধর্ম ও ধর্ম ব্যবসায়ীরা। উপযোগিতা থাকলে পন্য থাকবেই, কিছু করার নেই। একমাত্র অর্থনৈতিক মুক্তিই এর সমাধান
কথা ঠিক।
বললে আসলে অনেক কঠিন করেই বলা উচিত কিন্তু যেহেতু এক্ষেত্রে সহনশীল আচরণ আমি পছন্দ করি তাই ধর্মগ্রন্থের আলোকে নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার নিয়ে কিছু বলতে চাইনা।
তানবীরা অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছে, আমিও একই কথা বলবো। আর অধিকার কেউ কাউকে দেয়না, সেটা মানুষ তার যোগ্যতা দিয়ে, তার কাজ দিয়ে, উপভোগ/আদায় করে।
সরকারের নারী নীতিতে কি আছে জানি না। যদি সমবন্টনের কথা থাকে তাহলে তো সেটা ভালো।
লীনা আপুর সাথে একমত
দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। তাই এ দেশে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করা সহজ। প্রশ্ন হচ্ছে- এই যে বিশাল জনগোষ্টী যারা আমিনি কিংবা সাঈদীর মতো লোককে ধর্মগুরু বানিয়ে বসিয়ে রেখেছে, তাদের বোঝাবে কে?
সেদিন দেখলাম এইসব নিয়ে ফেইসবুকে গ্রুপ ওপেন হয়েছে, আমাকে সেখানে ইনভাইট ও করা হয়েছিলো। প্রথম ৩০মিনিটের মাথায়-ই আমি গ্রুপ ছেড়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি।
হায়রে ধর্ম প্রান(!) মুসলমানেরা। কি যে তাদের কথা! এবং তারা মনে করে তারা যা ভাবছে সেটাই একমাত্র সঠিক কথা। এদের'কে এইসব আলোচনামূলক যুক্তি গুলো যে কে বুঝাবে
সব মিলিয়ে দারুণ একটা পোস্ট হলো।
থ্যাংকু মাসুম ভাই।
সময় হয়েছে তথাকথিত ইসলামি আইন সংশোধন ও পরিমার্জনের।
মন্তব্য করুন