ইউজার লগইন

অণুগল্প: মেয়েটি

১.
কনিংবেল চাপ দিলাম।
একটি মেয়ে হেঁটে এসে বিল্ডিং-এর কলাপসেবল গেট খুলে দেয়।
সেই প্রথম দেখি।
কি মিষ্টি চেহারা।
সেই বাসাতেই আমরা বাসাটা ভাড়া নেই।
আমাদের পাশের ইউনিটেই থাকে।
ধীরে আমরা বন্ধু হয়ে উঠি।
আমরা ঘুরি। রিক্সা দিয়ে। আইসক্রিম খাই।
সারারাত ফোনে কথা বলি।
এপার-ওপার বরান্দায় দাড়িয়ে কথা বলি।
একদিন বুঝতে পারি আমি তার প্রেমে পড়েছি।
নানান ভাবে তাকে বোঝাই।
সে বোঝে।
কিংবা বোঝে না।
একদিন সাহস করে জড়িয়ে ধরি।
ভাবছিলাম- মেয়েটির হ্নদয়ে ভালোবাসা আছে।
কিংবা ভাবছিলাম, হয়তো একটা চড় খাবো।
জড়িয়ে ধরে বললাম- আমাকে ছেড়ে তুমি যেয়ো না।
বলতে বলতে- ঠোটে চুমু খেয়ে বসলাম।
মেয়েটির চোখ বেয়ে পানি বেরিয়ে আসলো।
আমি কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললাম- আমি তোমাকে ভালোবাসি।
মেয়েটির মাথা আমার কাঁধে ছিল।
ভালোবাসি শব্দটা শুনতেই সে চমকে উঠে।
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে- কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি না।

২.
দিন যায়।
মাস যায়।
বছর যায়।
ভালোবাসা এগিয়ে যায়।
প্রতিটি দিন হয়ে উঠে উত্তেজনাময়।
একদিন মেয়েটি আমাকে বলে- আমাকে কোনদিন তুমি ফুল দাওনি।
আমি অবাক হই।
ফুলের মতো এতো পবিত্র উপহার কেন আমি দিলাম না?
দিবো দিবো করে দেয়া হয়ে উঠে না।
আমরা ঘুরি।
ঘুরে বেড়াই এই চাকচিক্যের শহর।
ঘুরে বেড়াই এই অবহেলার শহর।

৩.
একদিন ফোন করে সে কি কান্না!
মা মেরেছে? আমি প্রশ্ন করি।
বলে- হ্যাঁ। তোমার সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না।
কেন? আমি প্রশ্ন করি।
আমাকে বলছে তুমি ভালো না।
কেন? আমি প্রশ্ন করি।
জানি না। আমার পাশে নাকি তোমাকে মানায় না।
আমি হাসি। বলি- ও তাই?
মেয়েটি বলে- হ্যা। তোমার সাথে আমার সম্পর্ক কখনও টিকে থাকবে না।
আমি হাসি। বলি- ও তাই?
মেয়েটি বলে- হ্যা।
আমি বলি- তুমি আমাকে বিয়ে করবে না?
মেয়েটি বলে- না।
এবার আমি আর কোন প্রশ্ন করি না।
আমাদের সম্পর্ক সেখানেই থমকে যায়।

৪.
বছর কয়েক চলে গেলো।
মাঝখানে আমি হতাশায় ঢুবে মরি।
একাকিত্বের ফাঁদে এসে পড়ি।
এই ফাঁদ বড় জটিল ফাঁদ।
মানুষ থেকে মানুষকে আড়াল করে দেয়।
মানুষকে গুমট জায়গায় নিয়ে যায়।
যেখানে দম বন্ধ হয়ে আসে।
যেখান থেকে উদ্ধার কেউ করতে পারে না।
আমি তো চেষ্টা চালাই।
উদ্ধার হওয়ার চেষ্টা করি।
পারি না।

৫.
একজন মানুষকে পাই।
সেও হাতাশায় ঘেরা।
অনেক বছরের প্রেম ভেঙে গেছে।
তার সাথে কথা হয়।
কথা চলে।
আবেগী সব কথা।
মানসিক সাপোর্ট যাকে বলে।
সেটা আমি পাই।
সেও পায়।
বছর দুয়েক পর মনে হয়-
মানসিক সাপোর্ট-টাই বড়।
আমরা একসাথে একটি নতুন জীবন শুরু করি।
কিন্তু দুজনের সিদ্ধান্ত ব্যর্থ হয়।
আমি খুঁজে ফিরি সেই মেয়েটিকে।
আর সে খুঁজে সেই ছেলেটিকে।
আমাদের মিলে না।
হাত ধরতে পারি না।
সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে।
ভালোবেসে দু-একটি মিষ্টি কথা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারি না।
সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে।
মেয়েটিকে মন থেকে ভালোবাসতে পারি না।
সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে।
দূর অজানায় হারিয়ে যেতে পারি না।
সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে।
ওর-ও একই অবস্থা।
আমি সিন্ধান্তটিকে কারেকশন করি।
চলে আসি সেখান থেকে।

৬.
মেয়েটি হঠাৎ একদিন আমাকে ফোন দেয়।
সে শুনেছে আমি একটি প্রেমে জড়িয়েছি।
সে কেঁদেছে।
আমারও কান্না পেয়েছে।
নিজেকে শক্ত রেখেছি।
মেয়েটিকে অনেক ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়েছে।
নিজেকে শক্ত রেখেছি।
আমার হ্নদয়ের তীব্র আকুতি ছিল আবার ওকে পাবার।
নিজেকে শক্ত রেখেছি।
মেয়েটি বলে- সব তোমার দোষ।
তোমাকে চলে যেতে বলেছি আর তুমি চলে গেছো।
আমি তখন অবাক হয়ে শুনি।
মেয়েটি বলে- আমার সবচাইতে খারাপ সময়ে তুমি পাশে ছিলে না। তুমি চলে গেছো।
আমি তখন অবাক হয়ে শুনি।
আমার কান্না পায়। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হয়।
নিজেকে শক্ত রেখেছি।
একদিন আমরা দেখা করি।
মেয়েটির হাত ধরি।
আমার মৃত স্বত্ত্বা আবারও জেগে উঠে।
আমার মৃত সব যে উজ্জল হয়ে উঠে।
মনের ভেতর মৃত ভালোবাসা আমাকে নাড়া দেয়।
আমি চমকে উঠি।
আমি আজও যে তাকেই ভালোবাসি।
অন্যের মাঝে যে আমি তাকেই খুজে বেড়াই।
অন্যের মাঝে আমি মেয়েটির ছায়ার জন্য আর্তনাদ করি।
আজ সেই মেয়েটিই আমার পাশে।

৭.
মেয়েটি হাত ছুটিয়ে নেয়।
আমি প্রশ্ন করি- আমাকে ভালোবাসবে?
মেয়েটি বলে- নাহ।
আমি প্রশ্ন করি- কেন?
মেয়েটি বলে- সম্ভব না।
আমি প্রশ্ন করি- কেন?
মেয়েটি বলে- আমি এখন অন্য কারও।
আমি প্রশ্ন করি- মানে?
মেয়েটি বলে- তুমি ছাড়া দীর্ঘ দু-বছর যেই মানুষটি আমাকে মানসিক সাপোর্ট দিয়েছে। আমি এখন তার কাছেই থেকে যাবো।
চোখ দিয়ে আমার পানি পড়ে।
কিন্তু আমি আর প্রশ্ন করি না।

ভাবলাম- মানুষ হলো পর-গাছা। অন্যের উপর ভর করা ছাড়া এগিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন। তাও তো আমি এগিয়ে যাই ভর করা ছাড়াই। মেয়েটির উপর সমস্ত অধিকার হারিয়ে যাওয়া আমি মেনে নিতে পারি না। তারপরও এগিয়ে যেতে তো হবে। মেয়েটির জন্য কাঁদতে ইচ্ছে হয়। ভালোবাসি তো। ভালোবাসার ব্যাথা তো পূরণ হয় না। ভালোবাসার অনুভূতি তো অনেক জটিল প্রক্রিয়া। মেয়েটিকে পেতে ইচ্ছে হয়। অনেক কাছে পেতে ইচ্ছে হয়। ভালোবাসার একটি সুন্দর ঘর বাঁধতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু মেয়েটিতো আটকে আছে। অন্যের কাছে। হয়তো- আমার কাছেই আটকে ছিল এখন মুক্ত হয়েছে। এসব ভাবতে ভালো লাগে না। নিজেকে শক্ত করে রেখেছি। কিন্তু মেয়েটিকে আমার আর ফুল দেয়া হলো না।

পোস্টটি ১৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

লিজা's picture


কি সহজবোধ্য গল্প!! Smile
বিষয় নির্বাচনের অপশনগুলোর মধ্যে অনুগল্প নাই । এইটা রাখা উচিত ।

শেরিফ আল সায়ার's picture


অণুগল্প নামে কোন ক্যাটাগরি নাই। এই বিষয়টা আমি লক্ষ্য করলাম এই পোষ্টটি দেবার সময়। অণুগল্পও এখন সহিত্যে জায়গা করে নিয়েছে।
এমনকি, ব্লগ সাহিত্যকে কিন্তু অনেকেই এখন অণুসাহিত্য বলতে চান।
Smile
ভালো থাকবেন।

একলব্যের পুনর্জন্ম's picture


শেষের "ভাবলাম" অংশটা বাদ দিলে নাটকীয়তা আরো জমতো মনে হলো ! আমার নিজের মত আর কী !

===============

খুবই ভালো লেগেছে ।

শেরিফ আল সায়ার's picture


হয়তো সেটাই ভালো ছিল।

ধন্যবাদ।

তানবীরা's picture


এটা গল্প কিংবা কাব্য নয়, এটা হলো চরম বাস্তব।

অসাধারণ।

শেরিফ আল সায়ার's picture


বাস্তবতার মিশেলে একটি গল্প কিংবা কাব্য। Smile

লীনা দিলরুবা's picture


কাব্যগল্প ভালো লাগলো।

শেরিফ আল সায়ার's picture


ধন্যবাদ আপু। Smile

টুটুল's picture


ভাল হইছে Smile

১০

শেরিফ আল সায়ার's picture


ভাইজান, কেমুন আছেন?

১১

সামছা আকিদা জাহান's picture


সর্বনাশ এত অনুকাব্য নয় প্রেমের জটিল কাব্য। মারহাবা মারহাবা।

১২

শেরিফ আল সায়ার's picture


লুইজ্জা লাগে Glasses

১৩

বিষাক্ত মানুষ's picture


ভাল্লাগছে

১৪

শেরিফ আল সায়ার's picture


Smile

১৫

লীনা ফেরদৌস's picture


Wink ভাইজান এইডাকি সেলফ এক্সপেরিয়েন্স ? Wink

গল্পটা সুন্দর Smile

১৬

শেরিফ আল সায়ার's picture


পাঠক গল্পে নিজরে খুজে। লেখকরেও খুজে খুব রেয়ার। আপনে দেখি রেহার কাজটা কইরা ফালাইলেন লীনা আপা। Crazy

১৭

লীনা ফেরদৌস's picture


আমার ব্রেনটা একটু রেয়ার কিনা Big smile

১৮

শান's picture


কমন থীম কিন্তু অসাধারন লেখনী প্রতিভা (বিশেষত কাব্য প্রতিভা)
Cool

১৯

শেরিফ আল সায়ার's picture


তাইলে তো দেখি ভুল হইয়া গেছে। অণুগল্প না দিয়া কাব্যিক গল্প নাম দেয়া উচিত আছিল। Smile

২০

শাকিব's picture


ভালো হয়েছে,সহজে বোধগম্য..।

২১

ফাহিম's picture


তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ শেরিফ ভাই , যে তুমি আমার কিছু কথা রাখছিলা । যদিও তুমি সেটা আমাকে জানাও নাই। যাই হোক সত্যি কথা বলতে গেলে আমার আর কিছুই বলার নাই......... কিন্তু হ্যাঁ একটা অনুরোধ করবো , যদি সম্ভব হয় তাহলে কথাটা রাখার চেষ্টা করো। দয়া করে গল্পটি এইভাবে এইখানেই শেষ করে দিও না......... ।

২২

অতিথি's picture


Smile বোহুৎ
ভালো লাগছে ,,,ার কিছু লিকহটে পারটেছি নাাুরা

২৩

অতিথি's picture


Proma na Promi??ki jaani naam??

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.