গ্রীক পুরাণের সৃষ্টি পর্ব - ২
টাইটানদের সাথে যুদ্ধ জয় করার পর দেবরাজ জিউস প্রমিথিউস ও তার ভাই এপিমেথিয়াস কে দায়িত্ব দেয় পৃথিবীর জন্য নশ্বর জীব তৈরি করার এবং সেজন্য বিভিন্ন উপকরণ দেবতার তরফ থেকে দেয়াহয় প্রমিথিউস ও এপিমেথিয়াস কে। কিন্তু এপিমেথিয়াস দেবতাদের দেয়া উপহার শেষ করে ফেলে মানুষ সৃষ্টির আগে সৃষ্টি করা জীবদের দিয়ে দিয়ে,মানুষ সৃষ্টি করার সময় কোন স্বর্গীয় উপহার ই অবশিষ্ট ছিলো না। ধারালো নখ, দাত, খোলস, প্রখর দৃষ্টি শক্তি, ঘ্রাণশক্তি, ইত্যাদি সব ই শেষ হয়ে যায় মানুষ সৃষ্টির আগেই। তাই প্রমিথিউস মানুষ কে সৃষ্টি করে দেবতাদের আদলে, মানুষ কে দেয় সোজা হয়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা, আকাশের দিকে তকাতে পারার উপহার। মানুষ সৃষ্টি করে মানুষের প্রতি দুর্বল হয়ে পরেন প্রমিথিউস।সর্বোপরি প্রমিথিউস মানুষকে তৈরীকরে সৃষ্টিশীল চিন্তা-ভাবনা করার গুণ দিয়ে। মানুষেরা পৃথিবীতে বসবাস শুরু করার পর প্রমিথিউসের মনে হয় মানুষের আগুণের প্রয়োজন, তাই সে জিউসের কাছে প্রস্তাব রাখে মানুষকে আগুণ উপহার দেয়ার জন্য কিন্তু জিউস সে প্রস্তাব প্রত্যাখান করে।
জিউসের প্রত্যাখানে দমে না গিয়ে প্রমিথিউস স্বর্গ থেকে আগুণ চুরি করে মানুষ কে উপহার দেয় আর তার ফলে একি সাথে জিউসের কোপানলে পড়ে মানুষ ও প্রমিথিউস। প্রমিথিউস কে ক্রধাণ্বিত জিউস বেধে ফেলে এক পাহাড়ের সাথে শুধু তাই নয় এক বিশালাকর ঈগল প্রতিদিন ঠুকরে ঠুকরে খেয়ে ফেলতো প্রমিথিউসের যকৃৎ (মতান্তরে হৃদযণ্ত্র) যা আবার রাতের বেলায় পুণরায় আগের মতন হয়ে যেত। বহু বছর পরে জিউসের পুত্র হারকিউলিস প্রমিথিউসকে মুক্ত করে বন্দীদশা থেকে।
আর মানুষ কে শাস্তি দেয়ার জন্য জিউস স্বর্গে তৈরী করেন পৃথিবীর প্রথম নারী, নিখুত মানুষ প্যান্ডোরা। প্রত্যেক দেবতাই অবদান রেখেছে প্যান্ডোরা কে গড়ে তুলতে, সবাই কিছু না কিছু উপহার দিয়েছে প্যান্ডোরাকে। প্যান্ডোরাকে তৈরীকরার জন্য ভালোবাসার দেবী আফ্রোদিতিকে বেছে নায়া হয় মডেল হিসেবে, আফ্রোদিতি তাকে দেয় সৌন্দর্য্য-লাবণ্য-আকাঙ্খা।
হার্মস তাকে দেয় চাতুর্জ ও দৃঢ়তা, এ্যাপোলো নিজে তাগে সঙ্গীত শেখায় এভাবে প্রত্যেক দেবতাই তাদের নিজেদের সেরাটা দিয়ে সাজিয়ে তোলে প্যান্ডোরা কে। সবশেষে দেবরাজ জিউসের স্ত্রী হেরা প্যান্ডোরাকে উপহার দেয় হেরার অনন্য বৈশিষ্ট্য কৌতুহল।
প্যান্ডোরাকে দেবতাদের তরফ থেকে উপহার হিসেবে পাঠানো হয় এপিমেথিয়াসের কাছে, তাকে বলা হয় তার ভাই এর কৃতকর্মের জন্য তারওপর কোন রাগ নেই সেটা প্রমাণ করার জন্য জিউস এই উপহার পাঠিয়েছে। এপিমেথিয়াসের ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ভাই প্রমিথিউস তাকে নিষেধ করেছিলো দেবতাদের কোন উপহার গ্রহণ করতে কিন্তু প্যান্ডোরাকে দেখামাত্র তার প্রেমে পড়ে যান এপিমেথিয়াস। এপিমেথিয়াস-প্যান্ডোরার বিয়েতে প্যান্ডোরাকে দেবরাজ জিউস উপহার দেন এক অপূর্ব বাক্স কিন্তু নিষেধ করে দেন এটি খুলতে। যতদিন এটি বন্ধ থাকবে ততদিন ই সুখে-শান্তিতে এপিমেথিয়াসের ঘর করতে পারবে প্যান্ডোরা এটাও বলেন তিনি।
দেবরাজ জিউসের নিষেধাজ্ঞা পরাস্ত হয় দেবরাণী হেরার দেয়া উপহার কৌতুহল এর কাছে। বিয়ের উপহার একবার দেখতে প্যান্ডোরা বাক্সটি খোলামাত্র বাক্সবন্দী রোগ-জরা-হিংসা-দ্বেষ-লোভ-মিথ্যা ইত্যাদি সব স্বর্গীয় নীচুতা ছড়িয়ে পরে মানুষের পৃথিবীতে, হেরা যখন বাক্সটা বন্ধ করতে পারে তখন শুধু আশা রয়ে যায় সেই বাক্সে।
এভাবেই পৃথিবীর প্রথম ও একমাত্র সর্বগুণে গুণান্বিত স্বর্গীয় মানবী পৃথিবীর জন্য নিয়ে আসে নারকীয় দুর্ভোগ।
আজকের পর্ব থেকেযা শিখলাম:
১) দেবতারা (দেবতাস্থানীয় রা) বিশ্বাসযোগ্য না; তারা যা করে সব নিজের খায়েশ মেটানোর জন্য করে।
২)যখন সবকিছু আপনাকে ছেড়ে যাবে তখনো আশা রয়ে যাবে আপনার কাছে।
৩)তুমি চোর হইয়া চুরি করো হাকিম হইয়া ধর; সর্প হইয়া দংশন করো ওঝা হইয়া ঝাড়ো।
(হারকিউলিসের দ্বারা মুক্ত হয়ে মানুষকে গণিত, লেখনী, কৃষি, বিজ্ঞান ও ওষধের স্বর্গীয় জ্ঞান উপহার দেয়ার আগ পর্যন্ত মানবসভ্যতা পাঁচবার ধ্বংশ হয়েছে দেবরাজ জিউসের হাতে)
প্যান্ডোরার কাহিনী থেইকা বুঝন যায় দেবতারা এবং তাগো রচয়িতারাও কতোটা পুরুষতান্ত্রিক ছিলেন...
শিক্ষামূলক মিথোলজি দারুন হইতেছে। চলুক...
সামুতে দীক্ষক দ্রাবিড় এর দুটা পোস্ট আছে
"নারীমূর্তি ভাঙায় ব্যস্ত পুরুষ ঈশ্বর" আর
"নারী-ঈশ্বরকে মাটিচাপা দেয়ার জন্য শুধু পুরোহিতরা নয় প্রত্নতাত্ত্বিকরাও দায়ী"
শুধু এই শিরোনামটুকুই প্যান্ডোরা/লিলিথ -- এসব মিথের পুরুষতাণ্ত্রিকতার কারন অনেকটাই ব্যখ্যা করে।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম
দীক্ষক দ্রাবিড় এর পোষ্টের লিঙ্ক দুটো দেয়া যাবে কাঁকন?
দীক্ষক দ্রাবিড়ের পোষ্টের লিঙ্ক:
http://www.somewhereinblog.net/blog/Dravirblog/28709270
http://www.somewhereinblog.net/blog/Dravirblog/28708663
হায়রে পেন্ডোরার বাক্স
...
ব্যাস্ত নাকি?
অনেক দিন দেখলামনা যে?
হুমম; আসা হয়নাই কয়েক দিন;
হায়রে প্যান্ডোরার বাক্স
দেবতারা দেখি সুবিধার ছিলো না!
হ
হারকিউলিস আসলে কারে উদ্ধার করছিল!
হারকিউলিস প্রমিথিউসকে মুক্ত করে বন্দী অবস্হা থেকে (সে এক বিরাট ইতিহাস; কিন্তু সেই ইতিহাস তো জানার কথা ছোটবেলায় হারকিউলিস দেখেন নাই?)
মানুষ সৃষ্টি করার পর যখন প্রমিথিউস স্বর্গ থেকে আগুণ চুরি করে মানুষকে দেয় তারপর থেকে পাঁচবার মানব সভ্যতা ধ্বংস করে দেয় জিউস পরে প্রমিথিউস মানুষকে
গণিত, লেখনী, কৃষি, বিজ্ঞান ও ওষধ বিদ্যা শেখায়-- সে এক মেগা সিরিয়াল -- শর্টকাইটাকরে পোস্টামুনে একদিন।
যাই হোক শেষ পর্যন্ত এটা যেহেতু মানুষের কথা তাই হারকিউলিস শেষ পর্যন্ত প্রত্যক্ষভাবে প্রমিথিউসরে মুক্ত করলেও পরোক্ষভাবে মানুষরেই মুক্ত করসে দেবরাজ জিউসের খামখেয়ালি থেকে।
হার্কুলিস তো দেখছিলাম বিনুদনের জন্য...তখন কি বুঝছিলাম যে জ্ঞানার্জন করার আশায় নাম-ধামসহ কাহিনী মুখস্ত রাখলে একটা পোস্ট দিতে পারতাম
আমার ক্লাস সিক্স থেকে এইট পর্যন্ত ব্যাপিড রিডারে গ্রীক মিথোলজির বেশ কিছু গল্প ছিলো তার মধ্যে হারকিউলিসের প্রমিথিউস উদ্ধার ও ছিলো তাই পরে ঐ পর্বটা দেখে খুব মজা পাইছিলাম
বেশী কৈরা লেখেন... পরে একটা ইবুক বানামুনে
আছেন কিরম?
আছি বাইচা
ছোট হয়েছে, আরো বড় আরেকটু ডিটেলস হলে ভালো হয়।
আসলে প্যান্ডোরার কাহিনী তো সবাই জানে তাই আর টানিনাই; পরে কিছু লিখলে যতটুকু জানি ডিটেইলস বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করবো
আগের পোষ্ট পৈড়াই ভাবছিলাম, প্রমিথিউসরে নিয়া আলপ করুম, দেখি কৈরালছো......
পোষ্টের চাইতে পাদটীকে বেশি ইন্টারেস্টিং হৈতাছে..হাহা
হঠাৎ, গ্রীক পুরান নিয়া পড়লা কেন?
একটা জিনিষ চরম কৈছো, স্বর্গীয় নীচুতা ছড়াইয়া পড়ে, মনে হয় গ্রীক আর রোমান মিথেই খালি স্বর্গের চীজ গুলা মানুষের থাইকাও বদমাই, অন্য কোনো ধর্মে আছে কিনা, একটু খোঁজ কৈরা দেখা যায়..(অবশ্য হিন্দু পুরাণে অমৃত নেয়ার সময় দেবতারা অসুর স্লাইট ল্যাঙ মারছিলো..)..কিন্তু গ্রীক গুলার মত লুইচ্চা, অসৎ, বদমাইশ আর নাই..এইটা আমার কাছে সেই সময়কার মানুষের উম্মুক্ত চিন্তার ফসল বৈলাই মনে হয়, দেবতাদের আকামের বর্ণনা বানানোটা..
নিরুঙ্কুশ ভালো দেবতা খুবই কম আছিলো..
গ্রীক আর রোমান মিথ এ পার্থক্যটা কি? সব দেবতা গো নাম ও এক কাহিনীও তো মনে হয় এক
দেবতারা মানুষের থিকা বেশি বদমাইশ ভুল কথা, মানুষের দেবতা মানুষের চেয়ে বেশি মহান বা বদমাইশ হওয়া দুষ্কর; আমাদের মুনি - ঋষিগো জন্যতো আবার রম্ভা-মেনকারা স্বউদ্যোগে আগায় আসতো তাই তাগো লুইচ্চামি করা লাগতো না মনে হয়;
ক্ল্যাশ অফ টাইটান এর এ্যাড দেইখা একটু মনে হইলো গ্রীক মিথোলজি ঝালাই করি আর
গ্রীক-রোমানে বেশি পার্থক্য নাই, কয়ডা ক্যারেক্টার কম বেশি, নাম কয়ডা এদিক সেদিক, আর কয়েকজনের কাজ একটু এদিক সেদিক......
যেমন গ্রীক আফ্রোদিইতি হৈলো রোমান ভেনাস, সে একতু সুচরিত্র....ছুডু খাটো বিষয়..
তা ঠিক, মানুষের দেবতা মনুষের চাইতে বেশি বদমাইশ হওয়া সম্ভব না....কিন্তু দেবতার বদমাইয়েশিরে বদমায়েশি হিসেবে দেখাতেও একটা চোখ খোলা বিষয় আছেনা?
ওডাই কৈলাম আর কি....খিক....
হ এই বিষয়ে অবশ্য অনেক কথা কওয়া যায় কিন্তু এখন মুড নাই
হ এই বিষয়ে অবশ্য অনেক কথা কওয়া যায় কিন্তু এখন মুড নাই
সেটাই। কোন ধর্ম আর কোন দেবতা সৃষ্টিকর্তার মধ্যে যে পার্থক্য আছে কে জানে? একই প্রোডাক্ট ভিন্ন মোড়ক। যাক গে, প্রিয়তে সরাসরি, লাইকতো মারলামই।
দীর্ঘশ্বাসের ইমো কই
লেখা বড়ই উপাদেয় হইয়াছে।
ধন্যবাদ
লেখা পইড়া জ্ঞান নিলাম। আছেন কেমন? অনেকদিন দেখলাম না।
আছি ভালোই; জ্ঞান নিলেগা কেমনে হবে আমার জ্ঞান কমে যাবে তো
সব দেবতাই নিজের খায়েশ মিটাইতে করে।
অনেকদিন দেখি না যে?
হ কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা আমি করলে ঢং;
আসা হয়নাই কিছুদিন
কৃষ্ণ সম্পর্কে পোষ্ট দিয়েন তাইলে, কেন তিনি করলে লীলাখেলা (লীলা মানে কি ?
) আর আপনি করলে ঢং কেন ?
দেখি যদি প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগার করতে পারি দিবনে একদিন
চলুক
দেখি গুগল আঙ্কেলের কাছ থেকে আরো কিছু যোগার করতে পারলে চলবে
ইসসসস
কতোকিছু যে মিস করি।
দেরি হয়ে গেল পড়তে, চলুক আরো ...
ধন্যবাদ; অনেকদিন পরে দেখলাম আপনাকে ব্লগে; ভালো থাকবেন
দৌড়ের উপরে আছি কিনা, তাই দেখা যায় না
ক্ল্যাশ অফ দ্য টাইটানস দেখতে গিয়েছিলাম চরম আশা নিয়ে। ছুডুবেলার প্রিয় কার্টুন বলে কথা। যে বাঁশটা খাইলাম। লেখাটা পড়ে দেবতাগুলির ইতরামি আবারো মনে আসলো। লেখাটা ভালো লেগেছে আপু।
ধন্যবাদ; আমি সিনেমাটা দেখিনি তবে এড দেখেমনে হয়েছে বাচ্চাদের জন্য বানানো ছবি।ওরা একশনটাই হাইলাইট করবে;
দেবতাদের ইতরামি বলেআসলে কিছু নাই সবি মানুষের ই ইতরামি;
প্রমিথিউসের আগুন চুরি নিয়া জানার খায়েশ ছিল... এই পোস্টে সেই আগ্রহ মিটল ... থ্যংস ...
মিথলজি তে আমার পুরানা আগ্রহ ... আমার পয়লা ইমেইল অ্যাড্রেস ছিল অ্যডোনেইস
(প্রমিথিউস ট্রাই মারছিলাম, মাগার কে জানি ঐটা অলরেডি দখল কইরা ফেলছিল
)... স্প্যামের জালায় ঐটা ব্যাভার করা বাদ দিছিলাম...
এখনকার ইমেইল আইডি হইল ইউলিসিস আনবাউন্ড
... এইবারো প্রমিথিউস নিতে চাইছিলাম (শেলীর কবিতার মত কইরা ''প্রমিথিউস আনবাউন্ড'') ... পরে দেখলাম ইউলিসিস আনবাউন্ড'এ আনবাউন্ড হবার আমেজ টা রাদার ভালো আসে ... তাই ইউলিসিস ই সই ...
পোস্টের জন্য থ্যংস
বাফাড়া রে দেখিনা অনেকদিন; আপনার জানা মিথ গুলো লিখে ফেলুন না আপনি লিখলে ওগুলা অনবদ্য হবে ফ্লেভারটাই বদলায় যাবে; লিখে ফেলুন
জটিল কাজ করছেন...আপনাকে ম্যালা থ্যাংকস......অনেকগুলো ব্যাপার ক্লিয়ার ছিলো না.............ক্লিয়ার হয়ে গেলো।
কোনকিছুই ক্লিয়ার হৈল না। অনেক কিছু জট পাকিয়ে গেল। আপ্নার লেখা দুইটা পড়ে এ বিষয়ে উচ্চতর জ্ঞানার্জনের আগ্রহ তৈরী হৈল। কিন্তুক জ্ঞানার্জনে আমার আছে প্রবল বিতৃষ্ণা। তাই আগ্রহের গলা টিপে দিতে হচ্ছে, কিছু করার নেই।
তয় আপ্নার লেখা অদ্ভুত। আর আপনার আইডিয়াগুলাও অদ্ভুত।
ওয়েলকাম ব্যাক কাঁকন
দারুন! আরো কিছু পর্ব বের করুন। অপেক্ষায় রইলাম।
গ্রীখ পুরানের সৃষ্টি পর্ব...
আর পর্ব কই?
মন্তব্য করুন