নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে খেজুরের রস বিক্রি নিষিদ্ধ
নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে খেজুরের রস বিক্রি নিষিদ্ধ
সালমান ফরিদ | ২৪ নভেম্বর ২০১৩, রবিবার, ৭:৫৮
Share on facebook Share on twitter Share on email Share on print More Sharing Services 2
প্রাণঘাতী নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের কাছে খেজুরের কাঁচা রস বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিভিল সার্জনদের মাধ্যমে এ বিষয়ে সতর্ক বার্তা দেশের সর্বত্র পৌঁছে দিয়েছে। বার্তায় নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এটা কোন আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা বা আইন নয়। মূলত উদ্বেগজনক নিপাহ ভাইরাস থেকে মানুষকে রক্ষার লক্ষ্যে সংগ্রহকারী ও বিক্রেতাদের কাঁচা রস বিক্রিতে নিরুৎসাহিত করার একটি উদ্যোগ। ইতিমধ্যে এটি বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন জেলায় কার্যক্রমও শুরু করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) প্রফেসর ড. বে-নজির আহমেদ বলেন, যেহেতু কাঁচা রস থেকেই নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় তাই জনসাধারণের কাছে যাতে কেউ পানের জন্য রস বিক্রি করতে না পারেন তাই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বিক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করে সচেতনতা ও দায়বদ্ধতার ভেতর নিয়ে আসা হবে। এরপরও যদি কেউ আক্রান্ত হন তাহলে গাছের মালিক ও রস বিক্রেতাদের দায়ী করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ‘নিপাহমুক্ত প্রতিটি গ্রাম’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে প্রত্যেক জেলার সিভিল সার্জনকে গ্রামভিত্তিক তালিকা প্রণয়ের কৌশল এবং মালিক, সংগ্রহকারী ও বিক্রেতাদের সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সে আলোকে সংক্রমণে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা বিশেষ করে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের খেজুর গাছের সংখ্যা, গাছের মালিক, রস সংগ্রহকারী ও বিক্রেতাদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সিভিল সার্জনরা প্রতিটি উপজেলায় গিয়ে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য বক্তিবর্গকে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। পাশাপাশি তালিকা অনুযায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ে বিক্রেতা, সংগ্রহকারী ও গাছের মালিকদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। যাতে তারা সাধারণ মানুষের কাছে কাঁচা রস বিক্রি না করেন। জানানো হচ্ছে, কাঁচা রস পানের কারণেই নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। তাই গুড় ও অন্যান্য উপকরণ প্রস্তুতকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত রস বিক্রি না করতে বলা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট, নবাবগঞ্জ সহ চারটি উপজেলা এবং ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলায় এই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে প্রশিক্ষণে ডব্লিউএইও’র একজন পরামর্শকও অংশ নিয়েছেন। এর আগে নীলফামারীতেও তিনি সচেতনতা কাজে অংশ নেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান, জীবাণুবাহী বাদুড় খেজুরের রসের হাঁড়িতে মুখ দিলে লালার সঙ্গে জীবাণু মিশে যায়। সেই কাঁচা খেজুর রস পান করার ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। নিপাহ হলে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ক্ষীণ। মৃত্যুহার অনুযায়ী এটা অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির তুলনায় বেশি ভয়াবহ। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে গতবারই দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক আক্রান্ত রোগী মারা যায়। প্রতিষেধক না থাকায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। সাধারণত নওগাঁসহ উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের এলাকায় নিপা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের-আইইডিসিআর-এর তথ্যমতে, ২০০১ সালে প্রথম আক্রমণ (আউটব্রেক) শনাক্তের পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশের ২১টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৭৬ জনের মধ্যে ১৩৬ জনই প্রাণ হারিয়েছেন। ২০১১-১২ সালে লালমনিরহাটে আক্রান্ত ২২ জনের মধ্যে সবার মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৪ সালে ফরিদপুরে আক্রান্ত ৩৫ জনের মধ্যে ২৭ জন মারা যান। নিপাহে মৃত্যুহার ৭৮ শতাংশ। শনাক্তের পর প্রথম তিন বছর দেশে এটি অজ্ঞাত রোগ হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-সিডিসি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার পর রোগটি নিপাহ হিসেবে শনাক্ত হয়। গতবছর ঢাকা, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা এবং ঠাকুরগাঁয়ে নিপাহ রোগী পাওয়া যায়। আইইডিসিআর-এর পরিচালক প্রফেসর ড. মাহমুদুর রহমান জানান, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশে নিপাহে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বেশি। প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোস্তাক হোসেন বলেন, এ ভাইরাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নষ্ট হয়। তাই সংগৃহীত রস জ্বাল দিয়ে পান করা হলে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে না।
আপনার মতামত দিন
নাম
ই-মেইল
মতামত
CAPTCHA Image





মন্তব্য করুন