দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পোলিওমুক্ত হওয়ার অপেক্ষায়
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পোলিওমুক্ত হওয়ার অপেক্ষায়
শুভজ্যোতি ঘোষ
শুভজ্যোতি ঘোষ
বিবিসি বাংলা, দিল্লি
সর্বশেষ আপডেট সোমবার, 13 জানুয়ারি, 2014 16:31 GMT 22:31 বাংলাদেশ সময়
Facebook
Twitter
Google+
এই পাতাটি বন্ধুকে পাঠান
প্রিন্ট
ভারতে পোলিও সংক্রমণের শেষ ঘটনাটি শনাক্ত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় ২০১১ সালে
ভারতে শেষ পোলিও সংক্রমণের ঘটনাটি চিহ্নিত হওয়ার পর আজ সোমবার পুরো তিন বছর পূর্ণ হল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী এর ফলে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলকে এখন পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা যাবে – যে অঞ্চলের মধ্যে ভারত ছাড়াও বাংলাদেশ, মায়ানমার ইত্যাদি মোট এগারোটি দেশ রয়েছে।
সম্পর্কিত বিষয়
বাংলাদেশ,
ভারত,
আন্তর্জাতিক,
স্বাস্থ্য
তবে ভারতের সাফল্যকে অভিনন্দন জানালেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু ভারতের পশ্চিম সীমান্তে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে পোলিও সংক্রমণের এখনও অনেক ঘটনা ঘটছে, তাই ভারতের আত্মসন্তুষ্টির কোনও অবকাশ নেই।
ভারতে পোলিও সংক্রমণের শেষ ঘটনাটি শনাক্ত হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় – আর সেটা ছিল ২০১১ সালের জানুয়ারি মাস। তারপর কেটে গেছে ঠিক তিন তিনটে বছর, দেশের কোনও প্রান্ত থেকেই পোলিওর কোনও ঘটনা আর ধরা পড়েনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র রীতি অনুযায়ী, এর ফলে ভারতসহ গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে পোলিওমুক্ত বলায় এখন আর কোনও বাধা থাকবে না – যেমনটা বিবিসিকে বলছিলেন দিল্লিতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পত্রলেখা চ্যাটার্জি।
"এই অর্জন অবিশ্বাস্য এবং সম্ভবত আমাদের জীবনকালে জনস্বাস্থ্য খাতে শ্রেষ্ঠ অর্জন"
নিকোল ডয়েশ, ইউনিসেফ
তিনি জানাচ্ছেন, হু-র সার্টিফিকেট আসতে হয়তো আরও কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে – এবং মার্চ মাসের শেষ দিক নাগাদ তারা হয়তো ভারত-সহ গোটা অঞ্চলকে পোলিওমুক্ত বলে ঘোষণা করবে।
চূড়ান্ত সার্টিফিকেট দেওয়ার আগে হু সন্দেহজনক সব নমুনা পরীক্ষা করবে, ল্যাবরেটরিতে রোগ শনাক্ত করার ক্ষমতা, সার্ভেল্যান্সের ক্ষমতা কতটুকু আছে সেটাও দেখবে – তবে সেটা সম্ভবত নিছক ‘ফর্মালিটি’ বলেই মিস চ্যাটার্জি মনে করছেন।
আগামী দুই আড়াই মাসের মধ্যে সেই আনুষ্ঠানিকতাটুকু সম্পন্ন হলে সেটা কিন্তু শুধু ভারতের জন্যই নয়, বাংলাদেশসহ গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্যই বিরাট সুখবর বয়ে আনবে।
তার কারণ এই অঞ্চলে এতদিন ভারতই ছিল শেষ দেশ, যেখানে পোলিও ধরা পড়েছিল – এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সার্টিফিকেট যেহেতু নির্দিষ্ট কোনও দেশ নয়, গোটা অঞ্চলকে দেওয়া হয়, তাই ভারতের জন্যই আটকে ছিল পুরো অঞ্চলের পোলিও-মুক্তির ছাড়পত্র।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে পত্রলেখা চ্যাটার্জি বলছিলেন, ‘হু-র রিজিওনাল সার্টিফিকেশন বোর্ডের আওতায় এই অঞ্চলে শুধু ভারত নয় – মোট এগারোটি দেশ আছে, যার মধ্যে শেষ ভারতেই ধরা পড়েছিল পোলিও!’
ফলে এখন পোলিওমুক্ত হিসেবে সার্টিফিকেট কোনও দেশ হিসেবে ভারত নয় – পাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গোটা অঞ্চলটাই!
পাকিস্তানে পোলিও টিকা কর্মসূচি
এই অঞ্চলের শেষ দেশ হিসেবে পোলিওমুক্ত হলেও ভারতের কৃতিত্বকে অবশ্য কোনও ভাবেই খাটো করে দেখতে রাজি নন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।
ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজ একে পাহাড়প্রমাণ অর্জন বলে বর্ণনা করেছেন, আর এ ব্যাপারে জাতিসংঘও সরকারের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।
ভারতে ইউনিসেফের পোলিও নির্মূলকরণ কর্মসূচীর প্রধান নিকোল ডয়েশ যেমন বিবিসিকে বলছিলেন, ‘এই অর্জন অবিশ্বাস্য এবং সম্ভবত আমাদের জীবনকালে জনস্বাস্থ্য খাতে শ্রেষ্ঠ অর্জন।’
তিনি আরও জানাচ্ছেন, ‘পৃথিবীর যে সব জায়গা থেকে পোলিও নির্মূল করা সবচেয়ে কঠিন বলে ধরা হত, ভারত ছিল তার অন্যতম এবং ২০০৯ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর মোট পোলিও সংক্রমণের অর্ধেকেরই বেশি ছিল ভারতে।’
সেই অবস্থা থেকে পোলিও সম্পূর্ণ দূর করে ফেলা – একেবারে সাঙ্ঘাতিক একটা ব্যাপার বলেই মিস ডয়েশের অভিমত!
কিন্তু এই অভিনন্দনের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান বা তার লাগোয়া আফগানিস্তানেই কিন্তু পোলিও সংক্রমণের ঘটনা এখনও আখছার ঘটছে – এবং ওই দুই দেশেই পোলিও দূরীকরণ কর্মসূচী নানা বাধার সম্মুখীন।
হু-র স্বাস্থ্য মানচিত্রে পাকিস্তান বা আফগানিস্তান যেহেতু ভারতের সঙ্গে এক অঞ্চলে পড়ছে না – তাই আপাতত পোলিওমুক্ত তকমা পেতে হয়তো অসুবিধা হবে না – তবে পোলিও ঠেকানোর জন্য ভারতকে সীমান্ত চেকপোস্টে বা নৌ ও বিমানবন্দরে কড়া নজরদারি কিন্তু চালিয়েই যেতে হবে।
মন্তব্য করুন