অদৃশ্য দানব (দ্বিতীয় পর্ব)
কলোরাডো স্প্রিংসে শীত শেষের সেই আলোকজ্জ্বল সকালটি মাত্র দশ সেকেন্ডের ব্যাবধানে একটি হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনাস্থল হয়ে ওঠে যখন ২৫ জন ক্রু মেম্বার এবং যাত্রী নিয়ে ইউনাইটেড এয়ার ৫৮৫ অবতরনের মাত্র কয়েক মুহুর্ত আগে ঘন্টায় ৩৭০ কিলোমিটার গতিতে মাটিতে আছড়ে পড়ে।
সংঘর্ষ আর জ্বালানীর বিষ্ফোরনে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া বিমানটি পরীক্ষা নিরিক্ষা করতে আমেরিকান ন্যাশনাল ট্র্যান্সপোর্টেশন সেফটি বোর্ডের (NTSB) অফিসাররা সন্ধ্যের আগেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। ধ্বংসস্তুপের মধ্যে থেকে একে একে উদ্ধার করা হয় বিমানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি যন্ত্র - ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েজ রেকর্ডার - যা বিমান দুর্ঘটনার কারন চিহ্নিত করতে সবচাইতে বেশী প্রয়োজন হয়।
ম্যালকম ব্রেনার, যিনি পাইলটদের ভুল গুলো চিহ্নিত করার একজন বিশেষজ্ঞ, ফ্লাইট ৫৮৫ এর ককপিট ভয়েজ রেকর্ডার থেকে পাওয়া পাইলটদের কথোপকথন বিশ্লেষন করেন। তার ভাষ্য মতে -
"ফ্লাইট ৫৮৫ এর দুজন পাইলটের মধ্যে চমৎকার সমঝোতা ছিলো এবং তারা কোন ভুল করেননি। দুজন অভিজ্ঞ পাইলট যথা সম্ভব চেষ্টা করেছেন বিমানটিকে সাবধানে অবতরণ করাতে, এবং সঙ্কট মুহুর্তে বিমানটিকে রক্ষা করতে"।
যেখানে বিমান দুর্ঘটনার ৭০ শতাংশ ঘটে থাকে পাইলটের ভুলের কারণে, সেখানে একজন বিশেষজ্ঞের মতামত অনুসারে এই বিমানে পাইলটদের ভুলের কোন চিহ্ন পাওয়া না যাওয়ায় তদন্তকারীরা মনোযোগ দেন বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটির দিকে। তাদের সবার সন্দেহ ঘনীভূত হয় বিমানের রাডারের দিকে - যেটি বিমানের লেজের শেষ অংশে থাকে এবং আকাশে বিমানকে মাটির সাথে সমান্তরালে রাখতে ব্যাবহৃত হয়।
অনুসন্ধানকারীরা বিমানের ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার পর্যবেক্ষন করে অস্বাভাবিক একটি বিষয় লক্ষ্য করেন। বিমানটি যখন কাত হয়ে যাচ্ছিল, তখন পাইলটদের দুজনার কেউই রাডারটি সোজা করার কোন নির্দেশ দেননি। এটি একটি অসম্ভব ব্যাপার, কারন ওই পরিস্থিতিতে পাইলটদের প্রথম কাজ হবার কথা রাডারটির সাহায্যে বিমানটিকে সোজা করবার চেষ্টা করা। ইউনাইটেড এয়ার ৫৮৫ দুর্ঘটনাস্থল থেকে বিমানটির ভাঙ্গা রাডার ও রাডার কন্ট্রোল ইউনিটটি উদ্ধার করে ল্যাবে নিয়ে আসা হয়। খুব সাবধানে রাডার কন্ট্রোল ইউনিটটি খুলে পর্যবেক্ষনের সময় কন্ট্রোল ইউনিটটির ভেতরে থাকা তেলের ভেতর ছোট্ট ছোট্ট ধাতব কণা ভাসতে দেখা যায়। এই ধাতব কণাগুলো রাডার কন্ট্রোল ইউনিটটিকে জ্যাম করে ফেলতে পারে।
দ্রুত রাডার কন্ট্রোল ইউনিটটি নিয়ে যাওয়া হয় এর প্রস্তুতকারকের কাছে, কিন্তু তারা দেখিয়ে দেন যে কন্ট্রোল ইউনিটটির ভেতর ফিল্টার থাকায় ধাতব কণাগুলো কোন ভাবেই ইউনিটটিকে জ্যাম করে ফেলতে দেবে না। তারা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিটটিকে চালিয়েও দেখান যে এত বড় দুর্ঘটনার পরেও ইউনিটটি স্বাভাবিক ভাবেই কাজ করছে। কাজেই অনুসন্ধানকারী দলটি ফিরে গেলেন খালি হাতে। এই দুর্ঘটনার কারণ তারা খুঁজে পেলেননা তখনও।
অনুসন্ধানকারী দলটি তখনও জানতেন না যে ইউনাইটেড ৫৮৫ বিমান দুর্ঘটনার রহস্য উন্মোচন বিশ্বের বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসে সবচাইতে বেশী সময় নিয়ে করতে হবে।
ক্রমশ ...
বিষয়বস্তু জটিল, কিন্তু মারাত্মক কৌতুহলোদ্দীপক।
জ্বি জনাবা, আপনি ঠিক বলিয়াছেন
চলুক ।
আচ্ছা ... চলুক
ইউনাইটেড ৫৮৫ বিমান দুর্ঘটনার রহস্য কি শেষমেষ উদঘাটিত হইছিল??
১০ বছর পর
আমাগো কত বছর অপেক্ষা কর্তে হপে?
৯ বছর ১২ মাস
পরের পর্ব প্লীইইইইইইজ
মন্তব্য করুন