আমার ছোট্ট বাবুটা বড় হয়ে গেলো রে ... :)
তুলতুলে ছোট্ট একটা বাবু রেখে আসছিলাম বাসায়। বসতেও পারতোনা। বাবার হাত খাঁমচে ধরে রাখতো কোলে নিলে, পকেটে হাত ঢুকিয়ে শক্ত করে ধরে রাখতো। দাঁত ছিলোনা একটাও, তবুও হাসতো ফোকলা মাড়ী বের করে। চশমাটা খুলে নিতো চোখ থেকে, নিজের চোখে দিতে চাইতো, কিন্তু সেটা ছিলো তার জন্য অসম্ভব রকম বড় । তার পছন্দের খাবার ছিলো নিজের বুড়ো আঙ্গুল - হাতের, পায়েরটাও। হাতের আঙ্গুলটা মাঝে মাঝে আমাকেও খেতে দিতো ।
রাত দু'টার দিকে জেগে যেত বাবু। তারপর তার খেলাধুলা সব পাপার সাথে... আর কেউ জ্বালাতে আসতোনা এতো রাতে । তখন বাপ ব্যাটা কত্ত গল্প করতাম। ওর পছন্দ ছিলো বসার ঘরের একুইরিয়ামটা। সেটার কাঁচে নাক লাগিয়ে রাখতো, মাছগুলো ওর নাক খেতে এলে মাথা সরিয়ে নিতো ভয় পেয়ে আমি ওকে সোফায় কয়েকটা ছোট বালিস দিয়ে বসিয়ে দিতাম, কিছুক্ষন বসে থেকে একপাশে হেলে পরে যেত ... সোজা না করে দিলে উঠতেই পারতোনা।
রিক্সায় চড়তে পছন্দ করতো, কিন্তু ঘুমিয়ে যেত পাঁচ মিনিট পরেই। রিক্সায় উঠেই চারপাশে এক সাথে দেখার চেষ্টা করতো - কত্ অদেখা রে ... । সেজন্য মাথা একবার এদিক, একবার ওদিক ঘূরাতো। ফলে ক্লান্ত হয়ে যেত সহজেই। তাই ওকে আমি ওর মাথা সামনের দিকে দিয়ে বসাতাম। মাঝে মাঝে সিটের ওপর সহযাত্রীর মত করে বসিয়ে
দিতাম। তখন বেশ গম্ভীর মুখ করে বসে থাকতো ।
একবার নিয়ে গেছিলাম মসজিদের সামনে এক দোকানে। মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিন বেড়িয়ে এসে কোলে নিলেন ওকে, আদর করলেন। আর বাবু কোন এক ফাকে হুজুরের টুপিটা কব্জা করে নিল... আর ছাড়েনা। ছোট্ট হাতে মুঠি করে ধরে রেখেছে টুপির কোণা। পরে হুজুর তাকে চকলেট কিনে দিয়ে টুপিটা ফেরত পেয়েছিলেন ।
বাবুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিলাম কয়েকবার। বেশীরভাগ সময়েই ইঞ্জেকশন (টিকা) দিতে। টিকা দেবার সময় আমি ছাড়া আর কেউ থাকতো না, ওর কান্না সহ্য করতে পারবেনা বলে। কিন্তু বাবু বেশীক্ষন কাঁদতোনা। পাপার কাছে থাকলে বাবু কি বেশীক্ষন কান্না করতে পারে? আর ওকে আগেই বুঝিয়ে
বলতাম যে - "দেখো বাবুনী, তোমার যেন অসুখ না হয়, সে জন্য টিকা দিতেই হবে, সবাইকেই দেয়া হয়েছে, একটু ব্যাথা লাগবে, কিন্তু ভাল হয়ে যাবে একটু পরে"। সে মনযোগ দিয়ে শুনতো। ওকে বলা কথাগুলো ভোলেনি বাবু। ওকে বলে এসেছিলাম - বাবুনি, আমি তো চলে যাচ্ছি, আমার মা বাবা আর তোমার মা'কে দেখে রেখো"। সে অনেক কেয়ারিং একটা বাবু হয়েছে । সবার খেয়াল রাখে এখনই।
দেখতে দেখতে প্রায় ছয়টা বছর চলে গেছে। বাবুটা এখন অনেক বড় আর স্ট্রং হয়ে গেছে। একা একা পিপি করতে পারে, নীচে যেয়ে গেট খুলে দিতে পারে, গান গাইতে পারে, বাজার করতেও পারে, ছবি আঁকে খুব সুন্দর করে, ছুরি - কাটা চামচ দিয়ে খেতে পারে রেষ্টুরেন্টে, নিজের ভাঙ্গা খেলনাগুলো জোড়া লাগাতে পারে, পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে, খেলাধুলাতেও প্রাইজ পায়। বাবার কোন গুনই যে ছাড়েনি সে, তার প্রমান রাখে সব সময়। সুযোগ মত ক্লাসের, এমনকি স্কুলের সবচাইতে কিউট পিচ্চি মেয়েটাকে বন্ধু করে নিয়েছে আমার বাবু ।
আমার সোনামনিটা অনেক ভাল একটা বাবু। জেদ করেনা মোটেও। কথা শোনে। খায় দায় ঠিক মতই, কিন্তু লাফায় সারাক্ষন। একটা মুহুর্ত চুপ করে বসেনা। তাই পাট কাঠির মত চিকন। তার বাবাও আমার জানা মতে এমনই ছিলো ছোটবেলায় ।
আমার বাবুটার জন্য দোয়া করবেন। সে যেন আমার সোনার দেশের সোনার ছেলে হতে পারে, সত্যিকারের সোনার ছেলে ...
বাবুর লাফালাফির একটা ছবি দিলে মন্দ হতনা। সে তো ডিক্লারেশন দিয়েছে একদিন উড়তে পারবে।
য়ামার ভাতিজা একটা ঐদিন বলে, "তুমি কি কাক ধরতে পার?" আমি কইলাম, না। জবাব দেয়, "আমি পারি তো! উড়াল দিয়া ধরি!"
হা হা হা ... বাবুরা আসলে অনেক ফ্যান্টাসির মধ্যে থাকে .... কি যে সুন্দর সেই সময়টা ....
হুমমম ..... আরেকটা ব্লগে দিয়া দিব
হুমম...
হুমান কেন? খেক খেক .... হুমানির জন্য ধন্যবাদ
বাবুর জন্য শুভকামনা!!
বাবু দেখি অনেক আগায়া!
আফসুস! আমার সাথে তো এই বয়সেও রূপবতী মেয়ে ঘুরে না!!!
ধন্যবাদ ভাই ....
টিপস দরকার হইলে বইলেন, বাবুরে জিগেস করে দেখবো
অনেক অনেক আদর ও দোয়া রইলো আপনার স্মার্ট বাবুটার জন্য। বাবা হবার আগে বুঝিনাই বাবা কি, এখন বুঝি।
অনেক ধন্যবাদ ভাই .... দোয়া করবেন বাবুটার জন্য
বাবুটার জন্য অনেক আদর
অনেক দোয়া
অনেক ভালোবাসা
অনেক ধন্যবাদ ২টুল, আছেন কেমন?
বাবাদের অনুভূতিগুলো আসলে একই
আমারও তাই মনে হয় ....
বাহ্, সুন্দর
ধন্যবাদ দাদা
আপনি ছেলেটাকে অনেক মিস করেন, দাদা। এ লেখাটা লেখার সময় কি খুব কেঁদেছেন আপনি? প্রার্থনায় বিশ্বাস করি না হইলে বলতাম, আপনার এই কষ্টের অবসান করে দিক কেউ। এখন শুধু আপনার মাথায় হাত রাখলাম, আপনার মনটা যেনো শান্ত হয়, আপনি যেনো কোথাও স্বস্তি খুঁজে পান।
বাবুসোনার জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা রইলো।
আপনি বুঝলেন কি ভাবে? আর কেউ এভাবে বলে নাই ব্লগটা পড়ে। মজা করে লেখা একটা ব্লগের আড়ালে যে কতটা কষ্ট লুকিয়ে ছিলো, কেউ জানবেনা। আমি বেশী কাঁদি নাই, মাঝে মাঝে চোখ মুছেছি ....
কৃতজ্ঞতা ....
যাদের সন্তান আছে তারা প্রত্যেকেই বুঝবে এটা দাদা
আমিও
বাবু সোনাটার জন্য অনেক আদর ভাইয়া। আপনার আদিত্যকে আপনি অনেক মিস করেন বুঝা যায়। আহারে বাবু!!!বাবুর বাবার সোনা বাবু টা অনেক বড় হোক। দোয়া করি।
অনেক ধন্যবাদ জয়িতা। আমি গত সাড়ে পাঁচ বছর থেকে আমার বাবুটাকে ধরতে পারিনা। অথচ সারা জীবন অন্য মানুষের বাচ্চা কোলে নিয়ে নিয়ে বেড়িয়েছি।
আমি অফিসের সময়টুকু ছাড়া কখনই আমার বাবুকে ছাড়া থাকি না। খুব মিস করি ওকে যখন কাছে থাকি না। আপনার অনুভুতিটা বুঝতে পারছি। আপনার বাবুর জন্য অনেক আদর রইল।
অনেক ধন্যবাদ সুবর্ণা। আপনার বাবুটাকেও আদর ...
বাবু অনেক বড় হোক । ভাল থাকুক । দেশ এবং দশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দিক ।
দোয়া করবেন ভাই, অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ...
বাপকা বেটা হইছে দেখি!!!

এখনই ব্লগ লেখার উপকরন জোগাড় কইরা রাখতেছে!!!
বাবুটা বড় হৈয়া গেছে মানে কিন্তু তুমি বুইড়া হৈয়াগ গেছো.....হে হে..
আমিও কেন যেন চাই আমার মেয়েটা সারাজীবন পিচ্চি থেকে যাক। কুটকুট করে আধো আধো বোলে কথা বলুক। আমার গায়ের উপর উঠে কুস্তাকুস্তি করুক, খামচাখামচি করুক। এই সময়টা জীবনের সবচেয় মধুরতম সময়। আপনার প্রতিটা বাক্য মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছি।
বড় হোক আর বুড়া হোক তোমার মতন প্রেম কুমার নাহোক
আপনে ক্যামনে একলা একলা থাকেন এমন সুন্দর বাবুটাকে ছাড়া !
সময় সুযোগ করতে পারলে এই দিকে আইসেন।
কাহিনী কি? কই আছেন এই কিউট বাবুরে ছাড়া.।.।
খুব কষ্টের কাজ্রে ভাই.।।। মেয়েকে ছাড়া ছিলাম ৩+৮ মাস.।।। জান বাড়ায়া গেছলো গা.।.।। মেয়ের কথা তখন মনে পড়লেই মুখটা থমথমে হয়ে যেতো.।.।.।.।
মন্তব্য করুন