নিস্ফলা শ্রেষ্ঠ সময় অংশ দুই!
আজকেও যে পোষ্ট লিখবো সেই ইচ্ছা ছিলো না। ইদানিং এতো ঘন ঘন পোস্ট দিচ্ছি নিজেরই বিরক্ত লাগে। তাও লিখি। যারা পড়ার তারা পড়ে নেয়। অন্যেরা হয়তো মুখ ভেংচায়। তাতে আমি ওতো ভাবি না। লেখার সময় সুযোগ থাকলে ব্লগ লেখা কঠিন কিছু না। আর ব্লগ লেখাকে আমি নিতান্তই সরল দিনলিপিতে পরিনত করছি তাতে আমার জন্য সুবিধা হলো যাই ঘটে বলতে ইচ্ছা করলে বলে দেই। অনেকেরই দিনলিপিতে অনেক কিছু বলার থাকে কিন্তু সুযোগ, সময়, ভাষা পায় না। আমার দিনলিপি গুলো ভাষা পায় এতেই আমার আনন্দ।
কাল শাহবাগের ক্লান্তি পোস্ট টোস্ট দিয়ে, ফেসবুকে নানা পদের গুতাগুতিতে ঘুমালাম দেরীতে। তবে উঠছি অনেক সকালে। দুইবার তার আগে ঘুম থেকে জাগলাম। উঠেই পত্রিকা পড়া, ফেসবুকে শাহবাগ নিয়ে কথাবারতা দেখা, নানান ফেসবুক পীরদের নসিহত পড়তে পড়তে বেলা গড়িয়ে যায়। পেটে দেখি অসহ্য খিদে। বেরিয়ে পড়লাম হোটেল খেলাম নাস্তা। সকালের নাস্তা হোটেলে করা এক অভিষাপ। কারন এমনটিতেই পেটে গ্যাস্ট্রিক তার ভেতরে এই কড়া ভাজা পরোটা বা সোডা দেয়া তন্দুররুটি খেলে প্রকোপ বাড়ে আরো। তাও কিছু করার নাই। খেলাম খেয়ে অন্য চায়ের দোকানে বসলাম। সেই চায়ের দোকানে দেলোয়ারের স্ত্রী বসা। সাধারনত নারী জাতির হাতে বানানো চা আমি খাই না। এইটা কোনো জেন্ডারের আলাপ না। নারী দোকানদারেরা চায়ে বলার পরেও এত দুধ চিনি দেয় খাওয়া দায়। আর নারী দোকানদার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর বরাবরই কম। তাও খেলাম চা। কি আর করা উপায় নাই গোলাম হোসেন। সাইফ আসলো, পুলক আসলো। পুলক ভার্সিটি যাবে। কাল সাইফ পুলক শাহবাগে ছিলো আমি কেনো তাদের ফোন ধরি নাই? আমার মতো বললাম যে মন খারাপ ছিলো তাই। সাইফের মুখে শুনলাম কাল তারা হেভ্ভী স্লোগান দিয়েছে। জীবনের প্রথম স্লোগান দেয়ার আনন্দে সে মুখরিত। আমাকে বলতেছে ভাইয়া ব্রাকের এতো পোলাপান বন্ধুবান্ধব ছিলো মনে হইছে মহাখালীর ক্যাম্পাস। পুলক শান্তভাইরাও আসছিলো। স্লোগান টোগান দিয়ে হোটেলে ব্যাপক খানা দিছে। আমি কেনো ফোন ধরি না তা নিয়ে তাদের অভিমানের সীমা নাই। সাইফের একটা কথা দারুন বলছে যে 'নিরাপত্তাহীন দেশে তার ভিতরে রাতে এতো মেয়ে চারিদিকে, কারো কোনো ইভটিজিং নাই, কারো কোনো মাথা ব্যাথাও নাই। সবাই যে যার মতো প্রতিবাদ জানাচ্ছে। এরকম সমাজ কি হবে না? আমি তার এই সমাজ গঠন নিয়ে ভাবি নাই। ভেবেছি যে সাইফদের মতো উচ্চবিত্ত প্রাইভেটের পোলাপান যদি দেশ নিয়ে ভাবে, শাহবাগে আসে তাহলে তো বাংলাদেশে সুখের দিন। দেখলাম সাইফ খুব উচ্চকিত। সবাইকে ফোন দিতেছে দুপুরেই সে আসবে আবার। এই প্রজন্ম যারা রাজনীতি হেইট করতে ভালোবাসে তাদের মুখে এইসব কথা শুনে নিদারুন আনন্দ নিয়ে বাসায় ফিরলাম। বাসায় ফিরে কিছু সময় একটা বই পড়লাম। তারপর গোসল করে ভাত খেয়ে বাসাতেই ছিলাম। বুয়া যে ফুলকপি আর রুই মাছের রান্না করছে তা অতি বিস্বাদ। কারেন্ট গেলো আমি বেরোলাম শাহবাগের জন্য। নিউমার্কেট সেই পঞ্চাশ টাকাতেই। রিক্সা দিয়ে নামলাম। তারপর লম্বা হাটা দিয়ে ছবির হাট। রাস্তায় দেখি অসহনীয় জ্যাম। এমনিতেই ঢাকার রাস্তা ঘাট জ্যামে থাকে তাই শাহবাগ অবরোধে জ্যামটা আমার কাছে উপভোগের। ছবির হাট পৌছে চা খেলাম। শুভ ভাই চলে গেছে আর হেলাল ভাই আসতেছে। জ্যোতি আপুকে জানালাম এসেছি। ছবির হাট থেকে গেলাম মেইন স্পটে। দেখি মানুষ আর কমে নাই বরং বেড়েছে। স্কুল কলেজের ইউনিফর্ম পড়া হাজারো ছাত্র। স্লোগান চলছে সাথে গান। স্লোগান দিচ্ছে যে মেয়েটা তারে আমার খুলনা নেভী স্কুলের জোয়ার্দার স্যার পাইলে অনেক খুশী হয়তো। উনি পিটি প্যারেডে সব সময় বলতো গলার আওয়াজ কই? আমি শিউর এরকম গলার আওয়াজ স্যার এই জীবনে শুনে নাই। হোসেন মনসুর পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সংহতি বক্তব্য দিতে চাইলো। কিন্তু পারলো কই? উল্টা স্লোগান চললো ফুলবাড়ীর বাংলাদেশে/ রাজাকারের ঠাই নাই, দালালের ঠাই নাই। জ্যোতি আপু আসলো। মাসুম ভাই, হেলাল ভাইও হাজির। জ্যোতি আপুর জন্য মাসুম ভাই শর্মা আনলো। আমি হাফ পেয়ে গেলাম। আপুর মনে অনেক মায়া। ডিভিডি ভুলে রেখে এসে মাসুম ভাই আপুকে দিলো পড়তে নেয়া বই। আমি মনে করছিলাম উপহার। পরে জানলাম বই ফেরত। টুটুল ভাই ক্যামেরা নিয়ে ব্যাপক ছবি তুললো। মাসুম ভাইয়েরও মন মানে না। তিনি গ্যালাক্সী ট্যাব দিয়ে অনেক ভিডিও/ছবি তুললেন। ভিডিও গুলা বড় স্ক্রীনের কারনে টিভি টিভি লাগছিলো। তা দেখে লীনা আপু (দিলরুবা নয়) তিনি বললেন প্রথম আলো লাইভ। এই ঘুরলাম হাটলাম। তার ফাকেই দেখি রুবাই ভাই আর জুনাকী হাজির। আমি জোনাকীর প্রচুর ছবি ফেসবুকে দেখছি। সামুর আমলে অনেক আড্ডাও হইছে এবারই লাইভ দেখলাম। তারা আইসক্রীম খাওয়ানোর নাম করে খাওয়ালো ঝাল মুড়ি। আমি খাই নি। বিষন্ন, শুভ ভাই, রাসেল ভাই আসলো। রাসেল ভাই অনেক সময় ধরে আছে। উনার এই অবজারভেশন পাওয়ার মাস্টারপিস। সব কিছুই উনি খেয়াল রাখেন ব্যাখা দেন। পরিচয় হলো রাসেল ভাইয়ের ওয়াইফের সাথেও। দারুন আন্তরিক মিশুক মানুষ উনি। সন্ধ্যা নামলো। জ্যোতি আপু বিদায়। ইয়াং সামুর ব্লগ একটিভিস্টেরা রিক্সা মাইক ভাড়া হালি খানেক ব্যানার নিয়ে মাঠে নামছে। কিন্তু তাদের স্লোগান দেয়ার লোক নাই। এক ভদ্রমহিলা তার স্বরচিত গান গাইলেন যা হট্টগোল বলেই মনে হলো। অরুপ রাহী ভাই বক্তব্য দিলো। তার বক্তব্যটা দারুন। উনি গুছিয়ে বললেন ৪১ বছর ধরে যারা জনগনের সাথে রাজাকারী করছে তাদেরও বিচার জরুরী। স্লোগান হলো। আমি গৌতম দা, ভাবী, বিষন্ন চা খেতে চললাম। তার আগে আরিফ জেবতিক ভাইয়ের আগমন। উনারে দেখলেই আমার কেনো জানি লাইকের হিসাব নিকাশ শুনতে মন চায়। ছবির হাটে চা খেলাম ফিরে পাব্লিক লাইব্রেরী। সেখানে গিয়ে দেখি পাঠক কম। চেয়ার অনেক ফাকা। শাহবাগ অবরোধের উসিলায় কত কি মার খেয়ে গেলো। এতো পাব্লিকের ভীড়ে ভেবেছিলাম ওয়াশরুমের অবস্থা খারাপ হবে কিন্তু গিয়ে দেখি ভালোই। নীচে নামার সময় দেখি মনিকা রশীদ আপু। লীনা আপুদের বন্ধু। গতকালকেও দুপুরে খাওয়ার সময় উনার সাথে চোখা চোখি হলো আজও তাই। পরিচয় না হলে দেখা হয়ে যেরকম একটা অসস্তি থাকে সেরকম অসস্তিতে পড়ি আমি। লতা আসছে সামুর মোমবাতি সার্কেলে বসতে বললো। বসলাম না আর। বসলাম শুভ ভাই আর রাসেল ভাইয়ের সাথে। তাদের মুখে ছোটোবেলায় নাবিস্কো চকলেট বিস্কিটের আলাপ দারুন লাগতেছিলো। মনে হচ্ছিলো এখনি কথা শুনে পোষ্ট দিয়ে দেই। আবার গেলাম ছবির হাট। খেলাম চা আবার। বসে থাকলাম কিছু সময়। মাথা ব্যাথা করছিলো তাই চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। হাটছি এমন সময় দেখি ছোটোবেলার দুই স্কুল দোস্তো। তাদের সাথে আড্ডা জমতেছিলো। ছাত্রলীগের নেতা শাহেদের মুখে পলিটিক্যাল কোপাকুপির গল্প শুনতে দারুন লাগছিলো। তাও মন টানছে না বিদায় নিয়ে পা বাড়ালাম আর খেলাম ধরা। রিক্সা ভাড়া চায় দেড়শো টাকা কেউ একশো বিশ। অন্যদিকে অনেক মানুষ রিক্সার প্রচুর ডিমান্ড। আমিও রাগে দিলাম হাটা। মাথা ব্যাথা নিয়ে হাটছি তো হাটছি দেখি পথ আর ফুরোয় না। মধ্য পথের কোনো রিক্সা আর নেই নাই। সোজা দেলোয়ারের দোকানে চা খেয়ে আবার পনেরো মিনিট হেটে বাসা। এতো প্রানশক্তি যে আমার আছে তা জানতাম। এতো হেটেও আমি ক্লান্ত না। মশার কামড় খেতে খেতে লিখে ফেললাম এই পোষ্ট!
আন্দোলোন হচ্ছে দারুন। এতো এতো মানুষ নিজের উদ্যোগে এসে ক্লান্তিহীন স্লোগান দিচ্ছে এর কোনো তুলনা চলে না। কালকে দেখবেন এক লাখের উপরে মানুষ তার ভেতরে লিডার হীন মহাসমাবেশ। মামা আজ প্রাইম ব্যাংকে, অফিসের কাজের গেছিলো সেখানে এক অফিসার বলছে শাহবাগ মোড় কি এদের বাপের নাকি? পুলিশ পিটায় না কেন। মামা রাগে আর কিছু বলে নাই। আমি ভাবছিলাম এই রাগের কথা। আগে রাগ আসলে আমার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতাম। এখন অনেকে রাগ করলে, অবিচার হলে, দাবী আদায়ে আমরা শাহবাগে নামবো। এই পথ এখন আমাদের সকলের। আজ প্রচুর মুক্তিযোদ্ধারা আসছে। তারা হয়তো আশস্ত হবে। যুগে যুগে তরুনদেরকে যে হানাদার বাহিনীর গল্ল বলে দিবস পালন করানো হয়েছে তার দিন শেষ। এখন সময় প্রতিবাদের রুখে দাড়ানোর!
নারী জাতির বানানো চা না খাওয়ার যে ব্যাখ্যা দিলা তাতে মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতে তোমার কপালে দু:খ আছে ।

রাসেল ভাইয়ের অবজারভেশন পাওয়ার নিয়ে পুরাই একমত আমি ।
কাল চলে আসলাম কিন্তু মন পড়ে রইলো। আর মেয়েটার গলার সে কি ঝকাংর! কানে বাজে ।
এই সময়ে দিনলিপি তো রোজই লিখবা
আরে আপনারা তো দেখি সবাই আসছিলেন। দারুণ তো!
আপ্নে আসেন না ক্যান আমাদের পাশে দাঁড়াইতে বা বসতে?
আমাগো পসন্দ হয় না?
আগে রাগ আসলে আমার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতাম। এখন অনেকে রাগ করলে, অবিচার হলে, দাবী আদায়ে আমরা শাহবাগে নামবো। এই পথ এখন আমাদের সকলের।
সরল কিন্তু কার্যকর ভাবনা.
সেই সাধারণ অনুভূতি প্রকাশের সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মনোভাব প্রকাশ করে ফেলা। এত সাবলীল লেখা, ব্লগে বিরল।
লেখার উপাদান বহাল থাকুক। এই লেখাগুলোর মাধ্যমে প্রজন্ম চত্বরের গল্প বেঁচে থাকবে।
কিতা কইলো ভাইজানে !!!!!
মন্তব্য করুন