সুপার সানডে!
রবিবার আমার খুব প্রিয়। কারন আগে যখন বাসায় থাকতাম রবি বারে ভালো মন্দ হিন্দি বাংলা সিনেমা টিভিতে দেখে দুপুর রাত কাটতো। চ্যানেল চেঞ্জের উপরে থেকে সব ছবিই টুকটাক দেখা যেতো। অখাদ্য হিন্দী ছবির এতো স্টার এতো ডিরেক্টর প্রডিউসারের নাম আমার সেই সুত্রেই জানা। আর সেই জানার আগ্রহে উস্কে দিছে পুলক। পুলক আর আমি এতো বেশি হিন্দি-তামিল-তেলেগু- বাংলা সিনেমা নিয়ে খোজ খবর রাখছি তা যেখানেই বলতাম সবাই অবাক হতো। তাই রবিবার ছিলো একান্তই টিভি দেখার দিন। টিভিতে কত আজাইরা মুভি যে হজম করছি একেকটা শনি রবিবার তা ভাবলে এখন চিন্তায় পড়ে যাই। কত আজাইরা ছিলাম আগে কত ছেলে মানুষ। আমার এই সারাদিন সারারাত টিভি দেখায় সব চাইতে বিরক্ত ছিলো আম্মু। বলতো আল্লাহর ওয়াস্তে আর কতো দেখবি তুই, সুলতানা তো ফেইল। এখন প্রশ্ন করবেন সুলতানা কে? সুলতানা আন্টি হলো আমাদের পাশের বাসায় থাকতো চিটাগাংয়ে। দিন রাতে ২৪ ঘন্টাই উনি টিভিতে হয় হিন্দি সিনেমা নয়তো সিরিয়াল দেখতো। যাই করুক বাসায় হোক রান্না নয়তো ঘুম সব সময় উচ্চ সাউন্ডে টিভি অন। আমার তখন ইন্টারমিডিয়েট এক্সাম তখন আমার পড়তে আর কতো ভালো লাগে! আমি কান পেতে থাকতাম সুলতানা আন্টির টিভির আওয়াজে। সিরিয়ালের যত ধরনের ডায়লগ, ব্যাকগ্রাউন্ডে ঠাটা পড়ার সাউন্ড সব মুখস্থ হয়ে গেছিলো তখন। আম্মু বুঝতো না যে আমার চোখ বইয়ে কিন্তু কান সিরিয়ালে খাড়া। আব্বু খালি বলতো ওরা কি বয়রা নাকি যে এতো জোরে সাউন্ডে শুনে? যাই হোক ঢাকায় যখন আসলাম। ভার্সিটির ক্লাসের বাইরে কাজ নাই কিছু। তখন এতো চ্যানেল দেখে আমি খুশীতে আত্মহারা। আর তখন তো এমন ছিলো না যে সকালে নাস্তা হোটেলে খেতে হয়। সাড়ে সাতটার ভেতরেই নাস্তা রেডি। আর আমি নাস্তা করেই টিভি নিয়ে বসে যেতাম। টিভিই তখন সব চেয়ে কাছের জিনিস। বাংলা চ্যানেল থেকে শুরু করে হিন্দী ছবি, মুভি খেলা, সব দেখতাম। আমি বাদে বাসায় তখন আব্বু আর ভাইয়া গেছে অফিসে। আম্মু অন্য কিছুতে ব্যাস্ত আর আমি টিভি নিয়ে পড়ে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। তখনকার শনি রবি মানেই বাংলা হিন্দী ইংরেজী ছবি দেখার ফেস্টিভ্যাল। এতো এড, এতো কারেন্ট যায় তাও আমার টিভি দেখা দমাতে পারি না। খুব বেশী একগেয়ে লাগলো বাসার নিচেই ছিলো করম আলীর চায়ের দোকানে। পাচ মিনিটে চা খেয়েই ফেরত। আম্মুও টের পেতো না। কারন তখন আম্মু দিনে দুই তিন কাপের চেয়ে বেশী চা বানিয়ে খেলেই আমাকে যে বকা গুলা দিতো। আর বলতো এখন এতো বেশী চা, কয়দিন পরে সিগারেট তারপর গাজা খাবি। কিন্তু গাজা সিগারেট আমি কোনোটাই খাই নাই জীবনে। এখন যে এতো চা খাই, চায়ের দোকানে আড্ডাই মাঝে মধ্যে হয় আম্মুর শাসন থেকে আমি এখন কতো দূরে চলে এলাম! তবে বাড়ীতে গেলেই এই জন্যে বিপদ যে দাত থেকেই আম্মু বলবে চা তো মনে হয় দিনে ২০ কাপ খাস! আমি হাসি আর বলি ২০ কাপ চা কারো বাপের পক্ষে খাওয়া সম্ভব? তবে চা খাওয়া কমায় দিছি। হিসেব করে ছয় কাপের বেশী খাই না। আর ইদানিং চায়ের দোকানে বসাও কমাচ্ছি কারন আর কতো কাল আড্ডা দিয়ে বেড়াবো!
তাই রবিবার আসলেই আমার শুধু টিভি দেখার কথা মনে পড়ে। গত পাচ ছয় মাস ধরে আমি টিভির ধারে কাছেও নাই। আমার বাসার নিচতালায় সারাদিন টিভি চলে জোরে সাউন্ডে। আন্টি সারাদিন সময় টেলিভিশন খুলে বসে থাকে। এইটা বাংলাদেশে একটা নতুন জিনিস। সারাদিন টিভি খোলা রেখে, খবরের স্ক্রলের দিকে তাকিয়ে থাকা। আমি খবর দেখতে ভালোবাসি। কিন্তু এতো খবর আমার ভালো লাগে না। আর যেই খবর জনমনে শুধু প্যানিক বাড়ায়। তবু একি জিনিস বারবার। তাই আমি টিভি যে দেখি না তা নিয়ে হতাশ না। তবে খেলা চলতেছে বাংলাদেশ আজ ভালো শুরু করেও খেই হারালো তা দেখলে হয়তো ভালোই লাগতো। কিন্তু ওতো আর মিস করা হয় না। টিভি থাকলে হয়তো হিন্দী ছবি নিয়ে রিভিউ লিখতাম, কি অনুষ্ঠান হচ্ছে, নাটক ২৪টা চ্যানেলে কী হয় তা নিয়ে পোস্ট দিতাম। রূম্পা আপু আর হেলাল ভাই এই দুইজন টিভি নিয়ে অস্থির ভালো লেখে। কিন্তু হেলাল ভাই লিখেই না এবিতে আর রূম্পা আপু ইদানিং ব্লগে লেখাই দিছে বাদ। টাকা পয়সা ছিলো না এমন না। টিভি কার্ডও আছে। কিন্তু গেঞ্জাম করে ডিসের লাইন নিতে আর ভালো লাগে না। তবুও সামনে হয়তো নিবো। তবে এই শুক্রবার যখন বাড়ী যাবো। আল্লাহয় দিলে যদি কারেন্ট থাকে বাড়ীতে ঠিকমতো তবে টিভি নিয়ে আবার লিখবো। কারন টিভি নিয়ে লিখতে আমার খুব ভালো লাগে। আর বাড়ীতে টিভি দেখা আর আম্মুর হাতে দারুন সব রান্না খাওয়া আর আব্বুর হাতে ঝাড়ি খাওয়া ছাড়া তেমন একটা কাজ আমার নাই। টিভি নিয়ে বলতে গেলেই আসে বন্ধু আবীরের কথা। আমি আবীর আগে বন্ধের দিনে সকাল সন্ধ্যা রাত একটানা টিভি দেখতাম। আন্টি নাস্তা খাওয়াতে খাওয়াতে টায়ার্ড হতো। ভার্সিটি এডমিশনের দিন গুলোতে আমি আবীর যে হারে রবি বারে রেসলিংয়ের বড় এপিসোড গুলা দেখতাম এখন ভাবতেই লজ্জা লাগে। এখনো টেন স্পোর্টসে রেস্লিং হলে আমি পাচ মিনিট হলেও দেখি। আমার আব্বু তা দেখলেই বলে শান্ত আর বড়ো হইলি না!
তবে এখন এইসব টিভি খেলা ধুলা নিয়ে ওতো আগ্রহ নাই। লোকজন ফুটবল খেলা, ক্লাবের খেলা খুব ইনজয় করে আমার তাও ভালো লাগে না। আগে হিন্দী গান অকপটে দেখতাম। এখন মনে হয় এতো বিশ্রী কথার ভালগার গান কিভাবে দেখি? ক্রিকেট খেলা দেখতে আমার এখনো খুব ভালো লাগে। কিন্তু ওতো সময় কই? তাই আপডেট রাখতে পারলেই খুশী। তবে লোকজনের সাথে আড্ডা জমাইতে হলে আপনাকে এই সব নিয়ে জানতে হবে। কারন আমি দেখছি একমাত্র খেলাধুলার আলাপেই সবাই ইন্টারেস্ট পায়। তাই আমিও খোজ রাখি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের টপস্কোরার কে? কোন ক্লাব কারে নিতেছে? ওয়েফার ড্রতে কি হলো আর ক্রিকেটের খবর রাখা তো আরো সহজ। তবে মানুষের মতো এই সব নিয়ে বেশী প্যারা খাই না। যে নিজের টিমরে শ্রেষ্ঠ প্রমান করতে হবে? বাই দা বাই আমার এখন কোনো পছন্দের কিছুই নাই। খালি আপডেট রাখি যেনো পুলাপানরে টক্কর দিতে পারি কথায়। কারন সবাই কথা বলবে আমি কিছু বুঝবো না এমন হতে পারে না। এক কালে সবাই মার্কেজের গল্প উপন্যাস নিয়ে ব্যাপক কথা বলতো। আমি মার্কেজ পড়ছি শুধু এই কারনেই যে সাধারন ছেলেমেয়েদের চেয়ে কেনো আমি পিছিয়ে রবো? আজ দুপুরে শুয়ে শুয়ে বদরুদ্দীন ওমরের বইটা শেষ করলাম জেদ করেই। যে এতো সময় লাগাচ্ছি কেনো? আমি হলাম এক বসায় বই শেষ করার লোক। নতুন গান বাজনাও খুব একটা শুনছি না। ভালো লাগে না আর নতুন গান শুনতে। কত মেটাল- টেটালের ব্যান্ডের নাম শুনি আজকাল কিচ্ছু শুনা হয় না। বাংলা গান ডাউনলোড করা, সিডি কেনা বাদ দিছি। সকালে ঘুম থেকে ঊঠে পত্রিকায় শুধু বিনোদন, খেলার পাতা, আর সম্পাদকীয় পড়ি। আর কিচ্ছু পড়া হয় না। অথচ আগে আমি পুরা পত্রিকা পড়ে শেষ করতাম। লোকাল খবর, ব্যাবসা বানিজ্য, আজ ঢাকা কি হচ্ছে সব পড়ে শেষ করতাম। এখন নিউএইজ এতো পছন্দ করি তাও কেনা বাদ দিছি।
আজ ওয়েদারটা দারুন। খুব ঠান্ডা একটা হাওয়া। আমার জানলা দিয়ে এই হাওয়াটা দারুন আসে। আর বর্ষার দিনেও এই বাসাটায় খুব ভালো। টিনের চালে বর্ষা ঝুম ঝুম করে নামবে। কি দারুন ব্যাপার। সেই লোভে চায়ের দোকান বাদ দিয়ে বাসায় আসলাম। ও মা বাসায় এসে দেখি উদাও সব। এখান সেই শন শন করা বাতাসটা পাওয়া যাচ্ছে। কাল হরতাল আমার ছোট কয়েকটা কাজ ছাড়া আর কিছুই করার নাই। সারাদিন সেই চায়ের দোকান নয়তো বাসায়। বইগুলাতে পড়ে যে সব শেষ করবো তাও হচ্ছে না। আমি বেকার পুরো দেশটাও এখন বেকার। সবাই বেকারত্বের সুখে পুলকিত। আমার এক ভাইয়া আছে। হরতাল আসলেই উনার মনে যে কী আনন্দ। খুশীতে তারে আর পায় কে? আজ সকালে চায়ের দোকানে এক ভদ্রলোক বললো হরতাল এ বছর তো হবেই কিছু করার নাই। উনার এটিচিউড দেখে মনে হলো। দেশটা উনাদের বাপ দাদার তাই এই বছর পাব্লিকের এই সময়ের কোনো দাম নাই। অথচ ছোটোবেলায় বিদেশের নানান উদহরন দিয়ে জানছিলাম সময়ের মুল্য কত তাদের কাছে। আমাদের কাছে সময় যেমন কারো জান নেয়া আরো বেশী সস্তা তাই এই খেলা চলতেছেই। খালেদা জিয়া বললেন কিছু মানুষ মরবে আন্দোলনে। আমি খুব চাই সেই কিছু মানুষ যেনো উনার আত্মীয় স্ব্জন হয়। তাহলে বুঝবেন অপঘাতে মরার জ্বালা। দুই ডাক্তার আজ অগ্নিদগ্ধ বাসে পুড়লো। এই মানুষ গ্রীলের রাজনীতি আর কতো কাল যে চলবে? তবুও আমরা ভালোই থাকবো। বার্সালোনার জয়ে উল্লাস করবো আর ক্রিকেটে ২০ ম্যাচ পড়ে কেঊ রান পেলে মনের খুশীতে নাচবো। কিছু ভাবার নাই, কিছু করার নাই খালি গা বাচিয়ে পেট উপচিয়ে খাওয়া আর টিভি দেখার দিন!
ভালোই চলছিল শেষটায় এসে মন খারাপ হয়ে গেলো। সত্যি কথা হজম করা কঠিন
ভালোই চললে তো ভালো। মন খারাপের দরকার নাই!
দেশের অস্থির অবস্থা, টিভিতে মানুষ মরার নিউজ... অস্থির লাগে মন সবসময় । সবসময় ভাবি সবাই নিরাপদ থাকুক ।
দিনে ৬ কাপ চা খাওয়াও তো বেশি লাগে । আমার তাইলে ঘুমই হবে না ।
ডিশ লাইন নাও । তোমার কাছ থেকে নাটক সিনেমা নিয়ে লেখা চাই । টিভিতে আজকাল কি যে দেখি নিজেই বুঝি না । যত্তসব!!
৬ কাপ চা খেলেও আমার ঘুম আসে ভালোই। আরো কমাবো সামনে। ভালো থাকেন আপু। সাবধানে থাকেন। আপনি কম কম চা খায়েন। শরীর মন ভালো থাকবে!
এই সপ্তাটা দারুন যাবে,
প্রত্যেকদিন শান্ত ভাইয়ের ইস্পিশাল নামের পোস্ট।
দেখা যাক পারি কিনা। আপনার অনুপ্রেরনায় ভরসা পাইলাম!
ভালো থাকেন, ভালো মুভি ভালো বই ভালো চিন্তার সাথে থাকেন!
সমস্যা কি ভাই?
ব্লগে আপনে আমারে আপনে আপনে কইরা কথা কন ক্যান? ভাল্লাগে না..
কোন মন্তব্য হইব না, কারণ. মন্তব্যের পরে মনে হইব আসলে আরও ভালো কইতে চাইছিলাম, কিন্তু পারলাম না।
ওরে বাবা। থ্যাঙ্কস এ লট। খুব ভালো লাগলো!
টিভি নিয়া কারো এত উৎসাহ থাকতে পারে তা দেখে মজাই পেলাম। তোমার বাবার মতো বলি, শান্তটা আর বড় হইলো না
লেখা যথারীতি কুড়কুড়ে-মুচমুচে
সকালে এই কমেন্ট দেখে বিছানা থেকে উঠলাম। লেখা যা ইচ্ছা হয় তাই লিখি। লেখা নিয়ে প্রত্যাশা একটাই যে আপনারা কষ্ট করে যেনো পড়েন। ভালো থাকেন। শুভকামনা। দেশের যা অবস্থা সাবধানে যাতায়াত করেন!
ডিশ লাইন নাও । তোমার কাছ থেকে নাটক সিনেমা নিয়ে লেখা চাই ।
এই সপ্তাটা দারুন যাবে,
প্রত্যেকদিন শান্ত এর ইস্পিশাল নামের পোস্ট।
দেখা যাক কী করা যায়!
হরতালের আগের দিন গাড়ি পোড়ানো যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে! মানুষের জীবনের মূল্য কি আমাদের নেতা-নেত্রীদের কাছে?
একটা টেলিফিল্ম দেখলাম -- ১৮ অলয়েজ দৌড়ের উপর
মেকিংটা ভাল লাগসে , লিস্টে রাখেন
আচছা ভাইয়া। থ্যাঙ্কস এই তল্লাটে আসার জন্যে!
আজকাল ভাল ভাল কিছু হিন্দি মুভি হচ্ছে। সেসব নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে
জলদি লিখে ফালান!
রবিবারে বাসায় শুয়ে বসে অলস দিন কাটাতাম মনে পড়ে এখন। রবিবারে ভাল ভাল হিন্দী মুভি দেখাতো কোন একটা মুভি চ্যানেলে জি সিনেমা বা এই ধরনের একটা।
এখন জি সিনেমা, স্টারজলসা মুভিজ, স্যাটম্যাক্স, স্টার গোল্ডে ভালো হিন্দী মুভি হয় রবিবারে!
মন্তব্য করুন