ইউজার লগইন

দিন চলে যায় হাওয়ায় মিশে!

কাজ ছিলো না তেমন বসেই ছিলাম বাসায়। রোজার দিন আমি রাতে ইফতারীর পর কিছু খাই না একেবারে সেহেরী। পড়ছিলাম বসে বই নাম তার একাত্তরের বিশটি ভয়াবহ যুদ্ধ। মেজর রফিকুল ইসলাম পিএসসি লিখিত। বইটা কিশোরদের জন্য লেখা। বিশটি যুদ্ধের সহজ বিবরন। তবে বইটার সব চেয়ে ভালো জিনিস হলো প্রতিটা যুদ্ধের ম্যাপ দেয়া, একটা সাধারণ ভুমিকা লেখা, কে কে যুদ্ধে কি অবদান রেখে ছিলো তার সরল বিবরন। গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় নি। দেখানো হয় নি যুদ্ধের করুন পরিস্থিতি। স্রেফ মিলিটারী স্টাইলের ব্রিফিংয়ের মতো লাগবে পড়তে। আরো লাগবে যোদ্ধাদের অতি দেশ ও ধর্ম প্রেমের বয়ান। এতোটুকুই। তবে বইটা সফল বলতে হবে। তিনটা মুদ্রন অলরেডী পাবলিশড। এই ধরনের বইয়ের এতোটুকুই প্রয়োজন যে বাঙ্গালীর অসম সাহসিকতা আর দেশ প্রেমের গল্প থাকে দারুন ভাবে। কিন্তু যুদ্ধ যে কতো বিশাল ব্যাপার তার গভীরে যাওয়ার পথ থাকে না। এরকম আমি আরো অনেক বই দেখছি যেখানে শুধু আহত নিহত আর অস্ত্রের হিসাব লিখে দেয়া। কিন্তু যুদ্ধ যে একটা মানবেতর বিষয় এখানে মানুষের জীবন কতোটা অনিশ্চিত তার হিসাব থাকে না তেমন।গনহত্যা ও নৃশংসতার ছবি অনেকটা দায়সারা ভাবেই দেখা হয়। আহমদ ছফার একটা দারুন স্মৃতি কথার মতো করে প্রবন্ধ আছে। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে ক্রাকডাউনের নামে গনহত্যার অসাধারণ বিবরন। নাম সম্ভবত একাত্তরে ঢাকায় যা দেখেছি। তার এই লেখা নিয়ে মোরশেদ শফিউল হাসান বলছিলো এই একাত্তরে বেঁচে যাওয়া নিয়ে সবসময় মশকারী করতেন উনি। তিনি নাকি বলতেন যে মেথর টাইপের লোক মনে করার কারনেই সে যাত্রায় বেঁচে ফিরেছেন তিনি। আর ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ধরে গনহত্যার যে মর্মান্তিক চিত্র ও গলিত লাশ দেখে নিজের বমি আসার গল্প পড়লেই মনটা বিষিয়ে উঠে। এই প্রজন্মের একটা অংশের হেফাজতের দাবি করা ভুয়া গনহত্যা বিশ্বাস করে কিন্তু একাত্তরকে দিব্যি মামুলী ব্যাপার হিসেবে ধরে নেয়, ত্রিশ লাখ সংখ্যাটাকে নিয়ে সন্দেহ করে। আমি অবাক হই আরো অবাক হয় আমার বন্ধু ফখরুদ্দিন। চবিতে পড়ার কারনে ও শিবিরের প্রচুর ছেলে মেয়ে চিনে যারা বাংলাদেশের এই স্বাধীনতাতেই আস্থাশীল না। বিশ্বাস করে পাকিস্তানের সাথে থাকলে দেশ কতো শক্ত হতো। ভারতকে সকাল বিকাল শায়েস্তা করতো তা ভেবে আত্মপ্রসাদ লাভ করে। আমি নালিশ জানাই আল্লাহর কাছে যে এদের তুমি এইদেশে পাঠাইলা কি বুঝে? এরা লাহোর করাচী মুলতানে থাকতো ড্রোণ খেয়ে মরতো বুঝতো পেয়ারা পাকিস্তানের তাখতে তাউসের মর্ম!

রোজার প্রথম দিন চলে গেলো। আরো ২৯ টা বাকী। প্রথম রোজা গুলো একটু কস্টে যায়। আমার প্রধান কস্ট চায়ের। চা না খেতে পারার জন্য সারাদিন মাথায় ব্যাথা করে। সকালে চা না খেতে পারার কষ্ট ভুলে থাকতে সেহেরীর পর ঘুম দেই উঠি ১ টায়। কিন্তু আজ ঘুমানো গেলো না। কারন কারেন্ট চলে যায় আর কেমন জানি ছটফট লাগে তখন। সেই ঘুম আর নাই চোখে। ল্যাপটপে বসে পত্রিকা পড়ার চেষ্টা করি কিন্তু মন বসে না কিছুতেই। আমার আকন্ঠ শুধু চা খাওয়ার পিপাসা। এছাড়া খিদে টিদে তেমন লাগে না। কারন না খেতে খেতে একটা খিদে সইবার অভ্যস্ততা রয়ে গেছে। ব্লগে যে সময় কাটবে তাও হয় না। কারন ব্লগ বিরানভুমি আর ফেসবুকে যে আগে টাইম কিল করতো তাও করে না। পরিচিত জনদের লাইক দেয়া ছাড়া কাজের আর কিছুই না। আর যাদের সাথে চ্যাটে আলাপ জমাতে চাই তারাও ব্যাস্ত। রোজা রেখে আবার গান শুনতেও মন টানে না। তাহলে কি করা যায় তাই ভাবি। বইয়ের পাতা উল্টাই, নামায পড়ি, পুরানো ম্যাগাজিন চোখ বুলাই এই করেই চলে যায় সময়। অবশ্য আজকে ক্লাসে গেলাম। রিক্সা দিয়ে নীলখেত তারপর হাটা। ভাবছিলাম শাহবাগের মেধাবীদের গেঞ্জামের কারনে জ্যাম বাড়বে কিন্তু সহজেই চলে গেলাম। খালি রোজার প্রথম দিন তাই বেশীর ভাগ দোকানীর মাথাতেই টুপি। মজা লাগে ভন্ডামীর এই মুখোশ দেখে। ক্লাস শেষে ভাবছিলাম ইফতারীর আগে এলাকায় যাওয়া সম্ভব কিনা? দেখি এক বন্ধুর বাইক ফাকা। সাধারণত আমি কারো বাইকে উঠি না। ভালো লাগে না এই বাহনটা। তাও আজ উঠলাম এমন কি মাত্র ১৫ মিনিটেই শিয়া মসজিদ। মজা পাইলাম গতির এই শক্তি দেখে। বন্ধু সোহেলকে ফোন দিলাম। যেহেতু বন্ধু আছে বাসায় তাই তাকে ছাড়া ইফতারী কিভাবে একা ভাইয়ার অফিসে খাই। দুই বন্ধু ঢূকলাম হোটেলে। নরমাল হোটেল যেখানে বছরের অন্য মাস গুলোতে নাস্তা করি সকালের। ইফতারীর প্রতি প্লেট ৬০ টাকা। গুনে দেখলাম ২৫ টাকার জিনিসও নাই। আমরা দুই প্লেটও নিলাম আবার সাথে আলাদা ইফতারী মাখালাম ডিসে। আজান দিয়ে দিলো। অনেক ইফতারী। সারাদিন পর খানাদানা তাই চাপা ব্যাথা করে এই ছোলা মুড়ি পিয়াজু বেগুনী চিবাতে। তাও খাওয়ায় ক্লান্তি নাই। শেষ করে উঠে গেলাম নান্নুর দোকানের দিক। দেখি নান্নুর দোকান বন্ধ। মেলা সময় গালিগালাজ করে নান্নুর গোস্টী উদ্ধার করলাম। বারেক সাহেবের পচা চা খেয়েই আড্ডা চললো। সবাই দেখি উপস্থিত কিন্তু নান্নু নাই। আড্ডা জমলো। রোজা রেখে সবাই টায়ারড। কিন্তু চা সিগারেট খাওয়া বন্ধ না। আমিও বারেক সাহেবের পচা তিন কাপ সাটালাম এতো অভক্তি নিয়ে। কেমন জানি ঝিম ঝিম লাগে তার ভিতরে কেউই তারাবীতে গেলাম না। একদিন তারাবী পড়েই ভাটা পড়ছে সবার। বাসায় আসলাম রিক্সায়। মামা দেখি রান্না করে সেহেরীর জন্য। অবাক হই মামাকে দেখে কারন সারাদিন অফিস, রোজা রাখা তারপর রাতে বাসায় ফিরে আবার রান্না করা। আর আমার দিন যায় এই ক্লাস আর নির্লিপ্ত অলসতায়। তাই হয়তো রাতে ক্লান্তি লাগে না। মাঝরাতেও ঘুম আসে না। সেহেরী খেয়ে ভোরে বই পড়তে পড়তে ঘুমাই!

বন্ধু সোহেলের কাল প্রাইম ব্যাংকে এক্সাম। আসলো সাত আটদিন হয়ে গেল। দিনগুলো এইভাবেই হাওয়া হয় নিমিষে। সোহেল খুব পড়ে ইদানিং। এতো আড্ডাবাজ দুরন্ত ছেলে এখন বসে বসে ইংরেজী ওয়ার্ড শিখে আর সাধারণ জ্ঞান পড়ে দেখলেই মজা লাগে। পড়াশুনাটা খূব করে মুলত বিয়ে করার জন্যই। গার্লফ্রেন্ডদের ফ্যামিলী আশায় বসে আছে যে ওর ভালো একটা জব হবে তারপর বিয়ে হবে। কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। তাই নিয়ে ওর টেনশন। ঢাকায় আসলে সেই টেনশনে পড়ি আমি। আর চাকরী বাকরী এখন এতো কম যে শত পড়াশুনাতেও হয় না, আরো বেশী পড়া লাগে শুধু রিটেনে টিকতেই। রিটেনের পর ভাইভা, তারপর লবিং মেলা দূর দিল্লী, তার চেয়েও দূর চাকরি। তাই আমাদের চিটাগাংয়ের বেশীর ভাগ ছেলেই বিরক্ত হয়ে বিভিন্ন গার্মেন্টসের কম বেতনের অফিসার হিসেবে জয়েন করে। তার ভেতরে এখন অনেকে সিনিয়র হয়ে ভালোই বেতন। মনে তাদের ফুর্তি। চেহারার ভেতরে একটা সাহেব সাহেব ভাব আনার চেষ্টা। আর আড্ডার প্রধান গল্প এখন কার অফিসে কেমন তার আলাপ। এইসব কাহিনী সোহেলদের বিরক্তির কারন। তবে আমার খুব মজা লাগে শুনলে। লোকজন কতো সহজে এই সামান্য বেতনে জব করে হাসিখুশি গল্পের দিন পার করতেছে! এরা যদি ঢাকায় আমার অন্য বন্ধুদের মতো ভালো জব পেতো তাহলে তো নিজেদের পা মাটিতেই থাকতো না। তবে প্রায় শুক্রবারেই বিভিন্ন এক্সাম তাই প্রচুর চেনাজানা লোকের চিটাগাং থেকে ঢাকা আগমন। দেখা হলে মজাই লাগে। কি স্টামিনা এদের। রাতে রওনা দেয়। সকালে এক্সাম তারপর আবার সায়েদাবাদে গিয়ে বাসে উঠে পড়া। আমার বন্ধু যারা আসে তাদের ওতো তাড়া নাই। উঠে আমার বাসায়। খায় দায় ঘুরে ফিরে চার পাচ দিন পর বাসায় ফিরে। এই খাতির যত্ন করার কারনে আমার রিপুটেশন লেভেল খুব হাই। অন্য বন্ধুরা তা নিয়ে টিটকারী করে বলে তোদের তো শান্ত আছে? আমাদের তো কেউ নাই ঢাকাতে। শুনে শান্তি লাগে। আর কিছু পারি না পারি এই জীবনে কিছু বন্ধু সেবা তো করে বেড়াইছি। বন্ধুরা আসলে ঘুরেফিরে আসে আমার হারিয়ে যাওয়া প্রেমের গল্প। তার এখন কয় মেয়ে? তাদের চেহারা কেমন? দেখা হলে আমার সমন্ধে কিভাবে জিগেষ করে তা নিয়ে আলাপ সালাপ। শুনতে ভালো মন্দ দুটোই লাগে। শেষমেষ মন খারাপ হয়। আমার মন খারাপের গানের ভান্ডার থেকে মোবাইলে গান শুনে নেই। খারাপ না জীবনটা। দুঃখ হতাশা বেদনাতো থাকবেই। সেহেরীর সময় গেলো। লেখা স্টপ দেই। এইসব অযথা লেখা লিখে বেড়াই মনের শান্তির জন্য। তবে এখন অনেকেই ভালো বলে তখন শুনতে খারাপ লাগে না

পোস্টটি ২ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

টোকাই's picture


শান্ত'র দিনলিপি পড়লে আমি ফিরে যাই আমার সেইদিন গুলিতে। তখন আমাদের বাসায় ফ্রিজ ছিল না। রাস্তার পাশে মানুষ বরফ কল থেকে কিনে আনা বিশাল বরফের টুকরা তুষ দিয়ে ঢেকে হাতুড়ি আর বাটাল দিয়ে কেটে কেটে বিক্রি করতো। ইফতারের আধ ঘন্টা আগে বাসা থেকে পাঠাতো বরফ কেনার জন্য। ওই বরফ দিয়ে বড় পাতিলএ করে লেবু চিবিয়ে কিংবা রুহ আফযা দিয়ে সরবত বানাতো হত। আহ! কি যে শান্তি লাগতো সারাদিনের রোযা শেষে ওই বরফ ঠান্ডা সরবত খেয়ে রোযা ভাংতে।
আমাদের বাসায় কোন টি,ভি ছিল না। রেডিও সামনে নিয়ে মাটিতে পাটি বিছিয়ে পরিবারের সবাই গোল হয়ে বসে অপেক্ষা করতাম কখন রেডিওতে আযান বেজে উঠবে।
ইফতারের প্রিয় অংশ ছিল বিশাল বড় বাটিতে করে মুড়ি মাখানো। পিয়াজু, বুট, ঘুগ্নি, লেবু, কাঁচামরিচ দিয়ে মুড়ি মাখানো খেতে কি যে মজা লাগতো , এখনো মনে হলে জিবে পানি চলে আসে।
অনেক ইফতারের কোন বাড়া বাড়ি ছিল না, কিন্তু তারপর ও অনেক তৃপ্তি আর শান্তি ছিল।

আরাফাত শান্ত's picture


থ্যাঙ্কস ভাইয়া। আপনার গল্প পড়তেও আমার খুব ভালো লাগে!

লীনা দিলরুবা's picture


শান্ত কখনো বিষয়ে থাকে না, শুরু করলো কিভাবে, শেষে দিলো ঘুটানি Wink

রোজকার ইফতারী ভক্ষন, রোজকার দিনলিপিতে থাকবে মনে হচ্ছে। খারাপ না। তরতর করে লেখা আগায়, পড়তে ভারী মজা।

আরাফাত শান্ত's picture


থ্যাঙ্কু আপু। আপনাদের জন্যই তো লেখার চেষ্টা!

জ্যোতি's picture


৬০ টাকা প্লেট ইফতার না কিনে অাজ বাসায় আসো । আমাদের সাথে ইফতার করো । কাল আমিও রিক্সায় ব্যপক ঘুরলাম মজা করে । Smile

আরাফাত শান্ত's picture


কতো কি করেন তা নিয়া পোস্ট দেন না কেন?

ওকে আপু। বুঝবেন খাদকরে ইফতারী করানোর যন্ত্রনা! Party

তানবীরা's picture


এরা লাহোর করাচী মুলতানে থাকতো ড্রোণ খেয়ে মরতো বুঝতো পেয়ারা পাকিস্তানের তাখতে তাউসের মর্ম!

Big smile Big smile Big smile

আরাফাত শান্ত's picture


Big smile

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!