ইলেকশন, সিলেকশন, অভজারবেশন এন্ড ফ্রাসটেসন!
যা হবার ছিল তা হয়ে গেল। কোনো উত্তাপ ছিল না, ছিল না কোনো টানটান উত্তেজনা জামাত শিবিরের অব্যহত আক্রমনের শিকার হয়েছে সাধারন মানুষ ও স্কুল কলেজ, পুড়ছে প্রকৃতি শত সহস্র গাছপালা এত কিছুর ভেতরেই সরকারের সংবিধান রক্ষার ইলেকশনটা হয়ে গেল। গাছাগাছালি কাটা নিয়ে আবীরের কথাটা খুব মনে পড়ে- গাছ কাটে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে শিবির বিএনপির লোকেরা আর তা সুন্দর মত বেচে দেয় ছাত্রলীগের পোলাপান, এই করেই চলছে বাংলাদেশ। আরেকটা গল্প মনে পড়লো ইলেকশন নিয়ে- আমার এক পরিচিত লোকের ফ্যামিলী আওয়ামীলীগ করে, তার বাবা বাড়ী থেকে নিষেধ করে দিলো মিরপুরে ভোট না দিতে, কেন? জীবনের ঝুকি নিয়ে খালি মাঠে গোল দেয়ার মানে নাই, জীবন অনেক মুল্যবান! আমার এক ভাই আছে এনসিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা উনার বাড়ী থেকে ফোন আসছে,-- ভাইস্তা তোমরা তো আসলা না, তোমাদের সব ভোট দিয়া দিছি। দুর্দান্ত সব ঘটনা আরো জানি সব বলা যাবে না!
সরল ব্যাখায় আমি একজন আওয়ামীলীগের ভোটার। এবার একদলীয় ইলেকশনেও যদি মোহাম্মদপুরে ভোট হতো তাও 'নাও' মার্কায় মেরে আসতাম ভোট। এইটা নিয়ে আমার কোনো রিগরেটস নাই, কারন জামাত আছে এমন জোটকে ভোট দিয়ে নিজেরে গনতান্ত্রিক মানস বানানোর কোনো কারিগর আমি না। বামদের প্রতি দুর্বলতা আছে বই পুস্তক পড়ে, তবে তা এই খর্ব শক্তির ক্ষমতার উচ্ছিস্ট খাওয়া বামদের ভোট দিয়ে লাভ কি? আর পশমওয়ালা নায়ক অনিল কাপুরদের মতো কোনো সাধারণ মানুষের পার্টি নাই যে ভোট দিয়ে জনতার জয় ঘটাবো, তাই আওয়ামীলীগই আমি মন্দের ভালো। অন্তত মুখে হলেও তাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জামাত বিরোধীতার আঁচ আছে। আমাদের এখানে আগেই সিলেকটেড হয়ে গেছেন নানক। আমার ধারনা ছিল ইলেকশন হবে পরে জানলাম একক ক্যান্ডিডেট হলে ভোট নাই, একজনই জিতে যায়। এমনিতেও ফেয়ার ভোট হলেও নানক জিততো বলে কাল স্টেটাস দিয়ে পড়লাম বিপদে। দুয়েকজন বলা শুরু করলো আলালও খারাপ না। কিন্তু আলাল বিএনপির হাতী ঘোড়া যাই হোক মোহাম্মদপুরে তারে আমি দামই পাইতে দেখি না। সামান্য মাছওয়ালারাও তারে গাইলায় টাকা বাকী রেখে দেয় নাই বলে, বিএনপির এত আন্দোলন অবরোধে তিনি সাংগাঠনিক কোনো কাজই করতে পারলেন না, জেলে যাওয়া ছাড়া। ছাত্রদলের যা পোলাপান আছে তারা সব চলে হেলাল সাহেবের টাকায় ও বুদ্ধিতে। সব এখন পলাতক, কিছু আবার চলে গেছে বাড়ীতে। বিএনপির যারা এখন ওয়ার্ডের নেতা খেতা আছে দেখি সব গাধার বুদ্ধি নিয়ে রাজনীতি করে। মাঝামাঝে চ্যানেল ডেকে দুই তিনটা ককটেল ফুটানোতেই তাদের সাংগঠনিক সফলতা। এরচেয়ে নানক অনেক ভালো, এক রাস্তা তিনবার করলেও তিনি এলাকায় আসেন, ঘুরেন ও সমস্যার সমাধান করেন। অত্যন্ত পোলাইট ভাবে সবার সাথে কথা বলেন, রাস্তার চায়ের দোকানেও চা খান রাতের নিরিবিলিতে। এখন ছাত্রলীগ ও সেচ্ছাসেবক লীগ বেপরোয়া তারপরেও অন্য এলাকার চেয়ে পরিস্থিতি অনেক ভালো। আর উন্নয়ন করছেন খারাপ না। তাই তাকে ভোট না দিয়ে আলালকে ভোট দেয়ার কোনো কারন নাই!
কাল ভোট দিতে হবে না ছুটির দিন এই করে ব্যাপক রান্নাবান্না আয়োজন হলো শান্ত ভাইয়ের বাসায়। জেমস, আবীর, আমি পুলক শান্তভাই আর আদনান ছয় বন্ধু মিলে দারুণ ব্যাপার। খিচুরী, গরুর মাংস ভুনা, বেগুন ভাজি ও সালাদ। আর রাতের বিশেষ আয়োজন ভদকা। এইসব বিদেশী দেশী কোনো এলকোহল আমি ছুয়েও দেখি না। তাই আমার আশ্রয় ছিল আড্ডা আর টিভি দেখে। শান্ত ভাই নতুন টিভি কিনছে সনি ব্রাভিয়া এলইডি, দারুণ জিনিস- সমানে চ্যানেল ঘুরালাম। অনেকদিন পর লম্বা সময় নিয়ে টিভি দেখলাম। তবে কিছুই দেখি নাই খালি চ্যানেল পাল্টিয়েছি, টকশোতে এখন যারা যারা আসে তাদের কথার গতিধারা খেয়াল রেখেছি। কাল টেলিভিশনের পর্দা জুড়ে ছিল শুধু নৃশংসতা আর ভাঙচুরের খবর, দেখতে ইচ্ছা করে না। তাই দেখলাম হিন্দি রিসেন্ট গান ও কি সিনেমা দেখায়, কি কি চ্যানেল আসছে নতুন এইসব। গানবাংলা টিভি নামে এক চ্যানেল আসছে তারা দেখলাম ভালো ভালো ভিডিওর গান দেখাচ্ছে ননস্টপ। কলকাতার আর্ট ফিলমের গান দেখায়। এইচডি চ্যানেল তাই ঝকঝকে ছবি। সামনে আরো দুইটা নাকি গানের চ্যানেল আসবে, আহা টিভি একটা থাকলে কত ভালো হতো, যেমন গানের চ্যানেল আশা করতাম তার ধারে কাছের হলেও দেখার সুযোগ পেতাম এবার। মনিটরটাও নষ্ট তাই আশা বেধে লাভ নাই, টিভি ছাড়াই থাকিতে হইবে! সকালে সবাই ঘুমালো আমার দুই ঘন্টার পর আর ঘুম আসে নি। আমি আর জেমস চা বানালাম, আড্ডা দিলাম টিভি দেখতে দেখতে। চ্যানেলগুলোতে খালি ফাকা ফাকা সব কেন্দ্রের ছবি দেখে বিরক্ত হলাম আবার বিটিভিতে দেখলাম লোকজন শীতেরে মধ্যেও ভোটের লাইনে। কি আজব সময়। বের হলাম পাশেই বারেকের দোকানে চা খেলাম। দেখি কারোর ঘুম ভাঙ্গে না, বাসার দিকে এসে পড়লাম তাই। এসেই গোসল করে ঘুম। বিকেলে উঠে আড্ডা। অনলাইনে ভোটের হালহকিকত নিয়ে জানলাম, দলকানাদের এক্টিভিজম দেখলাম। ফেসবুকে বিএনপি ভাইদের দম্ভ দেখলাম। বাসা থেকে বের হয়ে আবারো চায়ের দোকান। রাস্তায় মানুষ নাই, চায়ের দোকানেও লোকজন নেই। বাসায় এসে বসেই রইলাম পিসিতে এই করেই গেলো ভোটের দিন!
ভোটের আজকে কোনো ফিলই পেলাম না, মানুষের ভীড় নেই, ফলাফল নিয়ে আগ্রহ নেই খালি জানলাম হাতি মার্কা নিয়ে হাজী সেলিম বিজয়ী। আগে বিটিভিতে ভোটের দিন কি মজা থাকতো, টিভিতে ইংরেজী সিনেমা কিংবা ইলিয়াস কাঞ্চন বা আলমগীরের সিনেমার ফাকে ভোটের ফলাফল দেখার আনন্দ কি অসাধারণ ছিল। বড়দের দেখতাম লিখে রাখছে কি সব, অনেক আংকেলদের দেখতাম নিজের দলের বিজয়ের কথা শুনলে মুখে হাসি ফুটতো। আবার পরাজয়ে টিভির কাছ থেকে চলে গিয়ে ঘুমাতে যেত, ৯৬-২০০১ এই দুই নির্বাচনের প্রচুর জয়ী বিজিতদের নাম আমারে মুখস্থ ছিল। সেই সুত্র ধরে আমি ২০০৮ য়ে নির্বাচনী নানান এলাকার ইলেকশন ইতিহাস ও প্রার্থীদের ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক জানাশোনা ছিল। এখনো সেই তথ্য জানার মন আমাকে মুগ্ধ করে! এবারের ইলেকশনটা নিয়ে আমি খুবই হতাশ হলাম কারন এরকম একদলীয় নির্বাচন যেখানে ১৫৩ জন সিলেকটেড সেরকম একটা ইলেকশন আওয়ামীলীগের মত তথাকথিত মন্দের ভালো দল করবে তা জীবনে ভাবি নাই।
দেশে নাকি আগামী কয়েকমাসে এমন অবরোধ লেগেই থাকবে, সহসা ঠিক হচ্ছে না দেশ। আমি চাইবো চব্বিশ তারিখের নতুন সরকার যত তাড়াতাড়ি পারে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করুক তাতে এই জনসমর্থনহীন ভোটে নির্বাচিত সরকার কিছুটা হলেও জনগনের পক্ষে কাজ করবে। আর যদি পারে তবে আরেকটা কাজ করতে পারে জামাতকে সর্ব উপায়ে শক্তি কমিয়ে দিতে, এছাড়া বাংলাদেশে তাদের কাছে আর আমার কোনো কিছুরই আশা নাই। নামে গনতন্ত্র যেখানে, সেখানে আশা রাখাও একধরনের বিলাসীতা!
গত ২৩ বছরের জীবনে দুইবার দেশের সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল জানার জন্য আমার রাতজাগা হয় নাই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী'র নির্বাচন এবং ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারী'র নির্বাচন বড়ই কষ্ট পেয়েছি রাতজেগে নির্বাচনের ফলাফল দেখে যে আনন্দ পেতাম, গত রাতে Sound Sleep হওয়ার পরও খুব ক্লান্তি লাগছে মনে হয়েছে এবারের সাধারণ নির্বাচন হলো মাছি মারার নির্বাচন
আপনার বক্তব্য সত্য!
ঘটনা সেটাই। কিন্তু ভোট দিতে পারিনি সেই আফসোসও দেখা যায় থাকতে পারবে না। ফেসবুক বুদ্ধিজিবীরা তাতেও দোষ খুঁজে।
কিন্তু ফলাফলে দেখলাম লাখ লাখ ভোটের হিসাব। পুরাই আজব।
এটা কোন ভোট হইলো? কত আমেজ থাকবে, গভীর আগ্রহ থাকবে! কে জিতবে সেই টেনশনে সারা দিন-রাত অপেক্ষা থাকবে...কিছুই হলো না।
সময়টাই বোরিং, কোনো কিছুই ভালো মতো হচ্ছে না নিজেদের কি দেশের!
ভালো থাকেন আপু, সাবধানে থাকেন!
তুমিও নানক ভায়ের এলাকার?
আপ্নিও তো সেই এলাকারই সম্মানিত এমেচার ফটোগ্রাফার!
পোষ্টের সমস্ত বক্তব্যের সাথে একমত
ভাইবোনের ভিতর মিল তো থাকবেই!
মন্তব্য করুন