সিনেমার নামঃ ভালোবাসা জিন্দাবাদ
দেবাশীষ সাহেবরে আমার আগে খারাপ লাগতো না। সেই একুশে টিভির আমলে পথের পাচালী নামের এক অনুষ্ঠান যা আদতে বিদেশী স্ট্রিট শো থেকে মেরে দেয়া তা খুব গিলেছি এইট নাইনে যখন পড়ি। সেই অনুষ্ঠানের একটা সেগমেন্ট মজার ছিল- তা হলো গান গাইতে বলতো যা খুশী। বিস্তর হিন্দি বাংলা গান শোনা যেত মানুষের মুখে, মানুষকে বোকা বানিয়ে প্যাচালী মদন কনসেপ্টটাও খারাপ না। সেই অশ্লীলতার যুগে হিন্দি সিনেমার গল্প নিয়ে তিনি বানিয়ে ফেলেছিলেন 'শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ'। ভালোই নাকি চলেছিল সিনেমাটা। বিখ্যাত পরিচালক দিলীপ বিশ্বাসের ছেলে সে। তার বাবা বানিজ্যিক সিনেমার পরিচালক হলেও মানসম্মত সিনেমা বানাতেন। কিন্তু বিখ্যাত ব্যাক্তিদের ছেলেগুলো দুই রকমের হয়- এক হয় বাবার চেয়ে বেশী মেধাবী, আরেক হয় বলদের শিরোমনি। তার তিনটি সিনেমা দেখার কপাল আমার হয়েছিল-- এক। শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ, দুই। শুভ বিবাহ, তিন। ভালোবাসা জিন্দাবাদ! সবগুলোই লেইম বলে খারিজ করে দেয়া যায়, শেষ নামের সিনেমাটা হলে গিয়ে দেখার কথা ছিল, কিন্তু আমার আর পুলকের সময় হয় নি বলাকায় যাবার, তাই আজ ইউটিউবে একটা মোটের উপর ভালো প্রিন্ট আসছে তা দেখেই লিখতে হচ্ছে এই পোষ্ট।
এই সিনেমার পোষ্টারটা মোটামুটি। আরেফিন শুভর সেন্টু গেঞ্জী আর জিন্স পড়া সব কিছু চুরমার করবে এই লুকে দাঁড়িয়ে আছে। আমি প্রথম দেখেছিলাম জামালপুর রেল স্টেশনে পাশেই এক দেয়ালে। তবে আজ সিনেমাটা দেখে মনে হলো হুদেই ৫০০ এমবি নষ্ট করলাম। নামেই ডিজিটাল এখনো সেই এনালগ গল্পেই পড়ে আছে, সিনেমাটার নায়িকা আইরিন মোটেও আইক্যান্ডি স্বরূপ নায়িকা না, তার দাত উচু হাসলে ও কথা বললে বিশ্রী লাগে। প্রথমআলো পত্রিকায় পড়েছিলাম তার হাতে নাকি হালি খানেক সিনেমা, আমি আজ সিনেমা শেষে ভাবছিলাম এরা যদি এত সিনেমা করে তাহলে রাস্তা ঘাটে কত সুন্দরী মেয়ে দেখি তারা কেন অভিনয় করে না? সিনেমার কাহিনীতে এক ফোটা ভেরিয়েশন নাই। বিলিয়নিয়ার বাবার মেয়ে নায়িকার সাথে চালাক মধ্যবিত্ত ও দুষ্টু নায়কের প্রেম! দশ বারোটা হিন্দি ও কলকাতার বাংলা সিনেমা থেকে স্ক্রিপ্ট ও ডায়লগ সাজানো। তবে গানগুলোর চিত্রায়ন খুব চমৎকার ভাবে করেছেন দেবাশীষ বিশ্বাস। রিজেন্টে করে মালোশিয়ায় ঘুরে আনেন নাই সিনেমাকে। হাতিরঝিল, সিলেট ও শেরেবাংলা কৃষি ইউনিভার্সিটিতেই কাজ চালিয়েছেন। সিনেমার আরেকটা জিনিস ভালো লাগছে তা হলো অযথা গান বাজনা বা নাচানাচি খুব একটা বেশী নাই। বাংলা হিন্দী সিনেমায় আজকাল যেমন হয় তেমনই আছে। তবে সিনেমাতে হয়তো ইচ্ছে করেই প্রচুর হাত তালির মোমেন্ট রাখা হয়েছে, কমেডি ভিলেন হিসাবে কাবিলাদের বরিশাইল্লা ডায়লগ শুনতে খারাপ লাগে না। আরেফিন শুভ আর সাদেক বাচ্চু বাদে এই সিনেমার সব কাস্টিংই বাজে, ফাইটিং সিনগুলোতে তামিল প্যাটার্নের উড়াউড়ি দেখে হাসি পায়। কারন বুঝা যায় বাজেট কম, শেষ কথা বলা যায় এইভাবেই-- নতুন জিনিস পুরোনো বোতলেই, এই সিনেমা যদি চলেও থাকে হলে ও ভালো ব্যাবসা করে, তাহলে তার অবদান বেশীর ভাগই আরেফিন শুভর। তবে দুনিয়া কত বদলে গেল এই উপমহাদেশের বানিজ্যিক সিনেমা গুলো এখনো কেন সেই সংগ্রামময় প্রেম ও শান্তিময় বিয়েতেই পড়ে রইলো। কোন পত্রিকাতে জানি দেখলাম সিনেমাটা নাকি ভালোই ব্যাবসা করছে ২০১৩তে। আমাদের রাজনীতি ও সিনেমা দুটোই বেঁচে আছে কিছু অংশের জনগনের রুচিহীনতার জন্য, তা না হলে এইসব এত চলতো কিভাবে? আর পরিচালকেরাও বাকবাকুম ২০১৩ তে এসেও তাদের ডায়লগ 'আমরা সিনেমা করি খেটে খাওয়া মানুষের বিনোদনের জন্য'। এইসব সিনেমা নিশ্চয়ই বাংলাদেশের আমজনতা ডিজার্ভ করে তাও গিলে চলছে অবিরাম!
চাইলে দেখতে পারেন
http://www.youtube.com/watch?v=ETLxMz8h_Ts
দেবাশীষের জিন্দাবাদ সিরিজের একটা সিনেমা আমিও দেখছিলাম। হলিউড-বলিউড-টালিউড ইত্যাদি প্রেক্ষাপটে অখাদ্য কিন্তু ঢালিউডের গতানুগতিক সিনেমার চেয়ে সামান্য উন্নত।
শেষ লাইনটা বলেছেন দাদা খাসা!
জিন্দাবাদ সিরিজের প্রথম ছবিটা দেখা হয়েছিল।
ভালোইতো!
রিভিউ ভাল পাইলাম তাই মুভি আর দেখলাম না
আপনাদের পক্ষ হয়ে আমি দেখে ফেললাম
পথের পাচালী আমিও দেখতাম, ভালো লাগতো। শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ ও দেখেছি যতদূর মনে পড়ে। এরপর দেবাশীষ বিশ্বাস এর কোন অনুষ্ঠানও দেখি না। বেটার প্যাচাল আর ভাল্লাগে না। তোমার রিভিউ পড়ে সিনেমা দেখা অর্ধেক হয়েই গেলো।
আমারো ভালো লাগে না!~
রিভিউ পড়ে আর দেখার ইচ্ছেটা জাগলো না
আপ্নি যে ব্যস্ত মানুষ সময় কই দেখার!
মন্তব্য করুন