টুকটাক অসুখের দিনগুলো!
শিরোনাম থেকেই বোঝা যায় আমার শরীরটা ভালো নাই। তবে তেমন কোনো জটিল অসুস্থতা না, এমনিতেই শরীর ভালো লাগে না। ঠান্ডা বাড়ী থেকে লাগিয়ে আসছি, তার ভেতরে নতুন যুক্ত হয়েছে মাথা ব্যাথা ও জ্বর জ্বর ভাব! এইসব টুকটাক রোগবালাই নিয়ে একটূ অসুবিধাতেই আছি কয়েকদিন। আমার অবশ্য তেমন একটা রোগে শোকে কাটাতে হয় না। সেই কবে একবার টাইফয়েড হয়েছিল; তারপর গত আট নয়বছর ধরে শরীরটা বেধড়ক ভালোই কাটছে। টুকটাক ঠান্ডা লাগা আর জ্বর এই মুলত আমার এখনকার অসুস্থতার একমাত্র গন্তব্য। তাও তা- বিধাতার অপরিমেয় রহমতে আসেও কম। তবে যখন আব্বু আম্মুর সাথে থাকতাম, তখন মজা ছিল। সামান্য জ্বর হলেই যে সবার এটেনশন পেতাম তাতে অবাক লাগতো। আমার অসুস্থতায় সব চাইতে বেশী চিন্তায় পড়তো আম্মু, আম্মুর সেই উদ্বিগ্ন মুখের কথা এখনও চিন্তা করলে চোখে পানি এসে যায়। এই চার পাঁচদিন ধরে হালকা ঠান্ডা আর মাথা ব্যাথাতেই ভাবি বাড়ীতে থাকলে কত মজা হতো। কিন্তু কি আর করা, মামা নেই বাসায় একা একাই দিনগুলো কাটছে!
তবে শরীর একটু মন্দ না থাকলেই একা একা অনেক কিছু ভাবি। সেই ভাবনার ফার্স্ট চয়েজ হলো মরন চিন্তা। আমি এই অল্পবয়সের জীবনে যত বেশী এই চিন্তায় আচ্ছন্ন ছিলাম, কাজের লোক হলে এতদিনে বড় সাধক কিংবা পীর আওলিয়া হয়ে যেতাম। কিন্তু চিন্তা করতে করতেই সেই চিন্তা হারিয়ে যায়। হয়তো ইমানের জোর কম তাই এসব নিয়ে খুব বেশী শক্ত ভাবনা আসে না। কিন্তু সুখে অসুখে খুব এই বিশ্রী ভাবনাটা এসে। মরে গেলে কি হবে, কে কেমন খবরটা শুনে রিএক্ট করবে, কবরে কি অবস্থায় থাকবো, এইসব নিয়ে ভাবলেই প্রচন্ড বিষণ্ণতায় ভুগি। জীবনটাকে একটা বিশাল ধোকা বলে মনে হয়, এত অল্প সময় জীবনের তেমন কিছুই করার সুযোগ নাই। মরনই যেন একমাত্র পথ। কতভাবে না চাইতেই এদেশে মরতে হবে তার তো হিসাব নেই, কিন্তু আবার বেঁচে থাকতে চাইলেও- যায় না। এরচেয়ে নিষ্ঠুর আর কোনো প্রাকৃতিক বিষয় হতে পারে না। আগে বিটিভিতে খুব ইত্যাদি শুভেচ্ছা এইসব অনুষ্ঠান ভালো লাগতো। চিন্তা করতাম যদি কোনোদিন টাকা হয় অনেক; তখন প্রতিদিন এরকম অনুষ্ঠান দেখবো। শিশুকালের কথা, তখন মনে হতো এইসব অনুষ্ঠান আরো অনেক হয় কিন্তু টিভিতে দেখায় কম। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে খুব মন খারাপ লাগতো তখন, ভাবতাম আবার আরেক অনুষ্ঠান আসার আগেই যদি দুনিয়া থেকে চলে যাই। কিন্তু এত সহজে কেউ মরে না তাই আমিও বেঁচে থাকলাম বহাল তবিয়তেই, আরাম আয়েশের জীবন নিয়েই। সঞ্জীব দা যখন মারা গেল তখনো আমার এই একই ভাবনা মাথায় আসলো, আর গান শুনতে পারবো না ভাবতেই দমটা কেমন জানি বন্ধ হয়ে আসতো। কিন্তু কিসের কি? ভাবতে ভাবতে আমিও ভুলে যাই, এই সাময়িক জীবনকেই বড় করে দেখি। মাদার তেরেসা এক রোগীকে দেখতে গিয়ে সান্তনা দিতে গিয়ে বলেছিলো রোগ শোক হলো বিধাতার আশীর্বাদ, রোগী ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছিলো তোমার ইশ্বরকে বলো আমার এত আশীর্বাদের দরকার নাই, আরেকটু কমিয়ে দিক। মাদার তেরেসা এই গল্পটা প্রায়ই বলতো, আর বলতো আমাদের সবাইকে ইশ্বর আরেকটু কম করে এই আশীর্বাদ দিক। আমিও সেই কম আশীর্বাদ পাওয়াই মানুষ, নিজের দিন যাপনে যত বাজেই যাক এই মামুলি জীবনেই থাকতে চাই। ঐসব ভাবনাও মাথা থেকে হারিয়ে ফেলি তাই জীবনের জয়গানের উল্লাসে!
বইমেলায় যাই না চারদিন, মন মেজাজ থাকে তাই উদাস। বাইরেও কম সময় থাকি। সারাদিন বাসায় বসে বসেই চলে যায়। সুনীলের বই পড়ছি একটা-- কবিতা কার জন্য? পারভীন আপুর কাছ থেকে নেয়া। যদিও কবিতা বিষয়ে আমার জানাশোনা শিশুতুল্য তবুও বইটা ভালো লাগছে সুনীলের আকর্ষনীয় ভাষার জন্যেই। ইউপিএল থেকে সস্তায় কেনা একটা বইও তার সাথে পড়ছি, আবদুল হকের, নাম- লেখকের রোজনামচায় চার দশকের রাজনৈতিক পরিক্রমা। আস্তে আস্তে পড়ছি ইন্টারেস্টিং বইটা। হক সাহেবের 'কথা সামান্যই' শেষ করলাম অনেক ধীরে সুস্থে। এখন পড়ছি 'মার্জিনে মন্তব্য'। খুরশীদা হকের বিটিভি নিয়ে বইটি শেষ করলাম। কিছু কিছু বই কেনার পরে তাকে দায় বলে মনে হয়। দ্রুত পাঠ করে সেই দায় মুক্ত হতে হয়। তবে সেই বইটা পড়ে লাভের লাভ একটা হয়েছে, আশি নব্বইয়ের দশকে বিটিভির নিউজ প্রোডাকশনের মেথড সমন্ধে খুব জানা গেছে। আর কি প্রতিদিন সকালে যখন বের হই একটা ইংরেজী পত্রিকায় চোখ বুলাই, এই তো। ইংরেজী জীবনভর এত পড়লাম তাও কেন জানি দেখলেই ক্লান্তি লাগে। ছোট্ট মোবাইল স্ক্রীনে বাংলা পড়তে যত আরাম, ব্রডশীটের এত বড় স্পেসে ইংরেজী পড়তে কেমন জানি বোরিং লাগে।
ইংরেজী সিনেমা দেখলাম মেলা গুলান। বেশীর ভাগই রোমান্টিক কমেডি। গত বছরের সিনেমা সব; দ্যা বিগ ওয়েডিং, সেইফ হেভেন, বিফোর মিডনাইট, দ্যা হোস্ট, ডনজন আরো কিছু দেখছি নাম মনে নাই। এইসবের ভেতরে বিফোর মিডনাইট, সেইভ হেভেন আর ডনজন টাই যুত্বর লাগছে। বাকী গুলা কেমন জানি! আর আমার ভেতরে কেমন জানি ভারতের দালালদের মতো ডাবল স্ট্যান্ডার্ড টের পাই। হিন্দী ছবি কিংবা কলকাতার বাংলা ছবি গিলতে যত সুখ পাই সেই তুলনায় গড়পরতা ইংরেজী সিনেমা দেখে সেই সুখ আর নাই। কেমন জানি মেজাজ খারাপ লাগে। এইটার একটা কারন হতে পারে, অভিনেতা অভিনেত্রীদের নাম ধাম ও তাদের নিয়ে লেটেস্ট গসিপ এইসব জানা থাকলে কেমন জানি নিজেকে একধরনের রিলেট করতে পারি। যেমন ধরনের এই অভয় দেওলের একটা ছবি দেখলাম নাম -ওয়ান বাই টু। আরবান রোমান্টিক কমেডি, হলিউডের এই ধরনের ভুড়ি ভুড়ি সিনেমা আমি দেখি নাই ইচ্ছা করেই। কিন্তু অভয়ের সিনেমাটা ভালো লাগলো। আনন্দ পেলাম দেখতে বসে। সরল ভাবে নিজের কথা আমি জানিয়ে দেই ব্লগে। সিনেমার ভাষায় বলতে গেলে সরলতাই আমার ব্লগের একমাত্র ইউএসপি। স্রষ্টা যেন কোনোদিন আমায় এই সরল লেখার হাত থেকে না সরিয়ে নেয়!
খুব কম লেখকই সরলভাবে বলতে পারে।
অতএব, প্রার্থনা, লেখায় যেন এ সরলতা-ই থাকে।
কঠিন না হয়ে পড়ে
থ্যাঙ্কস ভাইয়া। আপনাকে নিয়মিত ব্লগে পাওয়াটাও শান্তির!
এই সরল লেখাগুলোই সবসময় উপভোগ্য।তোমার লেখা খুব ভালো লাগে।
শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ আপু, অনেক অনেক দারুণ যাক সময়!
"স্রষ্টা যেন কোনোদিন আমায় এই সরল লেখার হাত থেকে না সরিয়ে নেয়!"
স্রষ্টার কাছে আমাদেরও একই প্রার্থনা। দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।
ধন্যবাদ উচ্ছল ভাই, আপনার দোয়া মিলে যাক, অনেক অনেক শুভকামনা!
শরীর ঠিক হয়েছে?
কয়দিন ধরে তো যাচ্ছ, আজ রমনীদের কেমন দেখলা... সব লিখো । তোমার লেখা পড়ে অর্ধেক ঘুরা হয়ে যায় ।
লিখবো আপু!
মন্তব্য করুন