Agnee- 2014
ধারনা ছিল না আজ সিনেমা দেখা নিয়ে পোষ্ট লিখবো, মানুষের জীবনের ঘটনা প্রবাহ যে এত অনিশ্চিত কখন যে কী হবে বোঝা দায়। টিভি নাই সময় পেলে আমি বাসাতেই প্রচুর সিনেমা দেখি অনলাইনে। কিন্তু হলে গিয়ে এই মাসে সিনেমা দেখা হবে তা আমার ভাবনায় আসে নি। সেই আলাপে পড়ে আসছি, আজ সারাদিন এই টিপটিপ বর্ষা আর মেঘময় দিনে আমার মন মেজাজ খুব একটা ভালো ছিল না। দেরীতে যথারীতি ঘুম থেকে উঠে বাসাতেই বসে ছিলাম না খেয়ে, মামা অফিসের কাজে হবিগঞ্জ অনেকদিন তাই সকালে নিয়ম মেনে বুয়ার দেখা নাই। বাসাতেই বসে ছিলাম, বন্ধুর বাসা থেকে অনেক গুলা বই এনেছি তার ভেতরে তিনটা বই দুইদিনের ভেতর শেষ করার মনোবাসনায় বই পড়া শুরু করলাম। বেছে বেছে অবশ্য চিকন ও মাঝারী তিনটা বই ই নিলাম, প্রথমেই শেষ করলাম এবিএম মুসার মুজিব ভাই, অসাধারণ একটা বই। খুবই চনমনে সব তথ্যে বইটায় ঠাসা। তারপর পড়লাম মৌলি আজাদের, হুমায়ূন আজাদ আমার বাবা। এই বইটা লাগলো মোটামুটি। ব্যাক্তি হুমায়ুন আজাদের কিছু স্নেহশীল মাখা ব্যাক্তিগত জীবনের আলাপ আলোচনা জানলাম। তবে লেখিকা এত প্রখ্যাত ব্যাক্তির সন্তান হয়েও লেখার হাত খুব একটা ভালো না। তারপর পাকিস্তান আমলের চীফ মিনিস্টার আতাউর রহমান খানের 'স্বৈরাচারের দশ বছর' নিয়ে বসলাম, এই বইটা হাফ শেষ। অনেকদিন পর জেদের বশবর্তী হয়ে টানা পাঁচ ঘন্টা বই পড়ে মনটা ভালো হয়ে। চাইলে আমি যেকোনো বই পড়ে শেষ করে ফেলতে পারি এই গুনটা আমার গত পাঁচ বছরের সেরা অর্জন। বুয়া আসলো তার ৩০ মিনিটের রান্না প্যাকেজে রেঁধে চলে গেল। আমি দশ মিনিটে খেয়ে এই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ভেতরেই বই মেলার জন্য রিকশা নিলাম! প্রথমে নিউ মার্কেট তারপর নীলক্ষেত থেকে আবার রিকশা কিংবা হেটে বইমেলা প্রাঙ্গণ!
সায়েন্সল্যাব পুলিশ বক্সের ওখানে তুমুল রিকশার জ্যাম। বসে তো আছি আর টিপটিপ করে ভিজছি বেকুবের মত। রাস্তায় তখনো ভীড় নাই, সাড়ে চারটার দিকে মেলায় ঢুকে দেখি মেলার অবস্থা নাজেহাল। এতদিন ছিলো ধুলো, এখন প্যাচপেচে কাদা। অধিকাংশ স্টল পানি পড়া ঠেকাতে ব্যাস্ত। তার ভেতরেই আমি কিছু বই কিনলাম এক বন্ধুর জন্য, নিজের জন্য কিনলাম শুধু শাহাদুজ্জামানের 'অন্য এক গল্পকারের গল্প নিয়ে গল্প।' সব চেয়ে মেজাজ চড়লো শুদ্ধস্বরে গিয়ে। এক বইয়ের খোজ চাইলাম বললো জানে না, আরেক বই কিনতে চাইলাম তা তাঁরা আনে নাই। সেলসম্যান গুলো জাফর ইকবালের বই বেচতে এত ব্যাস্ত, সুস্থির ভাবে কথাই শুনে না। এই শুদ্ধস্বর আমাদেরই পরিচিত লোকজনদেরই বই বের করে, প্রকাশকও আমাদের চেনা পরিচিত লোক। তাও যদি এই হয় অবস্থা তাহলে কি আর করার! আরো নানান স্টলে গেলাম খালি লেখকের নামের প্রথম শব্দ বললেই বই হাজির। ভাংতি দেয় কত যত্ন করে, খারাপ আবহাওয়ায় এই দারুণ আতিথেয়তা পেয়ে ভালো লাগলো। বের হয়ে গেলাম, কারন অল্প অল্প ফোটায় ভালো ভিজেছি। সদ্য ঠান্ডা থেকে ভালো হলাম তাই এখনি আবার অসুস্থ হবার ইচ্ছা নাই! বের হয়ে দেখি রিকশা পাই না। দিলাম হাটা আর আবার ভিজেই চলছি। নীলক্ষেত মোড়ে যখন আসলাম তখন পুলকের ফোন আপনি বলাকার সামনে দাঁড়ান, আমি এখনি আসতেছি। আমি তো অবাক, এত বিকেলে পুলকের কোর্ট থেকে তো আসার কথা না।
কিছুক্ষণ পড়েই দেখি পুলক এসে হাজির সাথে রাজীব, শান্ত ভাইও আসতেছে। জিগেষ করলাম, কাহিনী কি? বললো অগ্নি দেখবে। অগ্নীর পোষ্টারে পুরো ঢাকা শহর সয়লাব। আমি হয়তো বাংলাদেশের খেলা চলাকালীন সময়ে বলছিলাম অগ্নি সিনেমাটা দেখবো একদিন। তাই সবাই হাজির, সবাই আমার কথার এ্ত গুরুত্ব দেয় তা আমার জানা ছিল না। শো শুরু সাড়ে ছটায়, আমরা সবাই সাড়ে পাঁচটায় ফ্যা ফ্যা করে দাঁড়িয়ে আছি। লোকজন দেখলাম, বেশীর ভাগই তরুন প্রান, অনেক মেয়ে তার ভেতরে অনেক হিজাবী। বাংলাদেশে কত পরিবর্তন এখন সাড়ে নটায় সিনেমা দেখেও বাসায় ফেরা হয় কত মেয়ের। লোকজনের ভীড় ক্রমশো বাড়ছে, ব্যাপক উৎসুক জনতা, লম্বা লাইন। ঢূকলাম সবার শেষে। কারন আমাদের সিট হলো স্পেশাল ডিসি। বলাকার ব্যালকনিতে, দোতালা দিয়ে ঢুকতে হয়। বসে গেলাম চিপস কিনে। সিনেমাটার ট্রেইলারটাই যা ভালো। পুরা সিনেমা অতি নিম্ন মানের। থাইল্যান্ডে নব্বই ভাগ শুটিং, স্টোরি লাইন সেই রাজ্জাক যুগেরই। নায়িকার বাবা মা খুন হয়েছে, তাই নায়িকা প্রতিশোধ নিবে। তাই সে তার মামার অধীনে ট্রেনিং নেয়, পাঁচজনকে খুন করতে হবে বলে। একজনকে ঢাকাতেই খুন করে। বাকী চারজনকে মারতে থাইল্যান্ডে আগমন। নায়ক আরেফিন শুভ বিলেনের লোক। খুন হচ্ছে, প্রেম জমছে এই করেই করেই চিরচেনা এফডিসি স্টাইলে প্রতিশোধের আগুনে পুড়িয়ে অগ্নীর পরিসমাপ্তি। নায়িকা মাহীর এঞ্জোলিনা জলি হবার চেষ্টা প্রশংসনীয়। কিন্তু অভিনয়ে কাঁচা যথারীতি, সব এক্সপ্রেশনই এক ধরনের। আরেফিন শুভ গান গাইছে ভালো সিনেমায়, এপিয়ারেন্স দারুণ কিন্তু কেমন জানি মুখস্থ ডায়লগ বলে। তবে তার ন্যাকামি পূর্ণ প্রেম নিবেদনের সিনে দর্শকদের যে টিটকারী করলো, তা শুনলে বেচারা কষ্ট পেত। কাবিলা নামের এক ভাড়কে রাখা এখন বাংলা সিনেমার সব চাইতে কমন ব্যাপার। আমার উপরের সিটের এক আপা বলছিল এইসব ফাতরামির জন্যই এখন বছরে ছবি মুক্তি পায় ১৫-২০টা। আমাকে রেটিং করতে দিলে ৫য়ে দুই দিবো। গানের লোকেশন, একশন সিকোয়েন্স, শ্লীল পোষাক পরিচ্ছদ এই জন্যই হয়তো সিনেমাটা দেখে যেতে পারে। আমাদের সামনের দিকে ডানের কাপলের সিনেমা দেখার প্রতি আগ্রহ ছিল কম, তা নিজেদের নিয়েই অন্তরঙ্গ সময় কাটিয়েছে। বেচারাদের হয়তো স্থান পাত্রের বড় অভাব তাই সিনেমা হলের বড় মজলিশেই প্রেম ভালোবাসা বিনিময় করতে হয়! যাই হোক যার যা ইচ্ছা, ফেরার সময় রিকশা নাই। বাসে করে চারজনে মিলে আসাদ গেইট নামলাম, সেখান থেকে রিকশা দিয়ে সোজা বাসায়। সিনেমা, বই মেলায় বই কেনা, বৃষ্টিতে ভেজা, আড্ডা এই করে করেই দিনটা চলে গেল। শরীর খুব ক্লান্ত তাও পোষ্টটা লেখা ফেললাম। গতকাল কিংবা পরশুও লিখতে বসছিলাম কিন্তু শেখ জামাল আর বাংলাদেশের হারে মন টানে নি লেখায়। আজ লিখ ফেললাম পোষ্ট, দুই তিনদিনের জন্য দায়মুক্তি!
রাগ ই করলাম । ছোট থাকতে চাও না এটা ভালো কথা না, বুঝছ!!
স্বৈরাচারের দশ বছর কেমন লাগলো লেইখো অবশ্যই ।
বইটা কেনার অতো ইচ্ছা ছিল না জোর করেই কিনলাম। পড়ে কাউকে গিফট দিয়ে দিবো এই ভেবে!
বাংলা সিনেমার অবস্থা কী এর চেয়ে ভালো হতে পারে !
আশা তো ছিল আরো ভালো হবে!
ধুর, আমি ভাবলাম ভাল কিছু হবে। দেখার ইচ্ছা চলে গেল
ট্রেইলারটাই যা ভালো, পুরো সিনেমা দেখার ধইরয্য পাবেন না!
সিনেমা যাইই হোক, লেখা অসাম
থ্যাঙ্কস সিস্টার!
দেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু এখন একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম।
একবারের জন্য গিয়ে দেখে আসতে পারেন!
আমিও কিনেছি শাহাদুজ্জামানের "অন্য এক গল্পকারের গল্প নিয়ে গল্প" চট্টগ্রামের বাতিঘর থেকে।
নাইস!
মন্তব্য করুন