হলপ্রিন্ট (২)
গরমে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। চৈত্র মাসের কেবল ষোলো সতেরো চলে, তাতেই এই অবস্থা, এখনো তো আসল গরম বাকি। তবে গরম নিয়ে লোকজনের উৎকণ্ঠা শুনলে হাসি আসে, মনে পড়ে নিজের হাল হাকিকতের কথা। যে গৃহে আমার বাস, সেই ঘর নরকের আগুনের মতো গরম। ছোটবেলায় শুনেছি এই আগুনের চেয়েও দোযখের আগুন ৭০ গুন নাকি বেশী তীব্র। মানুষের বাসায় টাসায় যেয়ে যখন নিজের ঘরে ফেরত আসি তখন মনে হয় ৭০ গুনের চেয়েও বেশী তাপ আমার রুমে। তবে এইসব নিয়ে আমি কখনোই হা হুতাশ বা আফসোস জানাই না। কারন এখন তো তবুও বিদ্যুৎ থাকে, আগে ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং, তীব্র গরমে খালি ঘামি আর ঘামি, তাতেই আনন্দ আহলাদে কত কী করেছিলাম। আর এখন তো কত আরাম, একটা লেখাও মিস হয় না, সব সেইভ করে লিখি, কারেন্ট গেলেও সমস্যা নাই নোটবুকে অফুরন্ত চার্জ, গরম টা আগের মতই তীব্র কিন্তু তাতে কি? আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি। যে মানুষের মনে শুকরিয়া নাই, তার জীবনে স্বস্তি নাই। আম্মু এই কথাটা বারবার বলতো আর আমি প্রতিদিন উপলব্ধি করি স্বস্তি জিনিসটা আসলেই কাজের! তবে আমার নিজের কিছু অদ্ভুত আচরণে গরম আারও প্রকট ভাবে লাগে। তা হলো প্রথমত চায়ের তেষ্টা, দ্বিতীয়ত খালি গায়ে থাকি না কখনোই বাসায় কেউ থাকুক আর না থাকুক, জিন্স পাঞ্জাবী পরতে পরতে এমন দশা যে ঢিলেঢালা পোষাক পারত পক্ষে গায়ে জড়াই না। তাতে গরমের সাথেই সব সময় সংসার। আমার এক বন্ধু ছিল সে সব সময় স্কুল ড্রেসে মোটা গোল গলা গেঞ্জী শার্টের নিচে পড়তো, আমাদের দেখলেই গায়ে গরম লেগে যেত। সে দিব্যি তো সুখেই ছিল! আমিও গরমে জিন্স পাঞ্জাবীতে ঘরে কি বাইরে সুখেই আছি!
যাই হোক একটা কথা আবার মনে আসলো। আমি হল প্রিন্ট বলতে একদম জাহান্নাম জিনিস বুঝাচ্ছি না, মোটামুটি ভিডিও কোয়ালিটি যাতে মোটামুটি ভালোই বোঝা যায় তেমন প্রিন্টেই ছবি দেখা ও কি দেখলাম তা নিয়ে আলাপ করছি। আলাপ করলে অবশ্য অনেক সিনেমা নিয়েই বলা যায়। কিন্তু লিখতে বসলে আর মনে থাকে না। যেমন মার্চের প্রথম দিকে একটা রাবিশ মুভি দেখেছিলাম নাম -তবে তাই হোক। সিনেমার আকর্ষণ মুলত স্বস্তিকা। ইন্টারনেটে তবে তাই হোক লিখে সার্চ দিলে দুটো উষ্ণ দৃশ্যের লিংকই পাবেন। ইউটিউবে সেই সব ভালোই হিট হয়। আমি অবশ্য সিনেমাটা হজম করে মনে হলো সময় নষ্ট অযথা। ছোট্ট একটা পরকীয়ার গল্পকে টেনে টেনে ২ ঘন্টার সিনেমা বানানো। সিনেমার দুইটা তিনটা জিনিস খুব ইন্টারেস্টিং ছিল, ১। দারুন একটা জমিদার বাড়ী, ২। প্রযোজকের নাম শামিম আকতার। আমি কলকাতায় আর্ট কালচার বা সিনেমায় মুসলমান বলতে নাম শুনেছি দু তিন জনের। এক পোষাক সজ্জাঃ জাকির মল্লিক, দুইঃ রুপম ইসলাম, তিনঃ হালের নায়িকা নুসরাত, তারা লিখে 'নুসরত'। সেখানে একটা আস্ত মুসলমান নামের প্রযোজক পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার। তবে সব সিনেমাই যে খারাপ লাগে তাও না। যেমন কঙ্গনা অভিনীত কুইন সিনেমাটা আসলেই জোশ। দিল্লীর এক সাধারন মেয়ের গল্প। বর পক্ষের হাতে বিয়ে বাতিল হয়ে যাবার পর, একা একাই নায়িকা ইউরোপ ভ্রমনে যায়। সেখানে যেয়ে মজার মজার সব কান্ড। আমার দারুন লাগছে কঙ্গনার অভিনয়। শুধু আমার না বলিউডের বাঘা বাঘা নায়িকারাও এই সিনেমায় তাঁর অভিনয় দেখে মুগ্ধ। নতুন ডিরেক্টর, নতুন ভাবনার গল্প, নতুন ধরনের সব চরিত্র আর বিচিত্র ডায়লগ সব মিলিয়ে সিনেমাটা দারুন টাইম পাস মুভি। সিনেমার শেষে দেখে যায় যে বিয়ে টা ভাংছিলো সেই ছেলেই শত চেষ্টা করে কুইনকে আবার বিয়ে করতে চায়, কুইন তা দারুন ভাবে তা সব প্রত্যখান করে। জানিয়ে দেয় সিরিয়াল দেখা, দামি গহনা আর ভালো রান্নাবান্না ও কিটি পার্টির বাইরেও দারুন এক জীবন আছে দুনিয়ায় মেয়েদের জন্যে।
আজ বসে দেখলাম বিকেলে, 'ভুতের ভবিষ্যত' সিনেমার হিন্দি রিমেক 'গ্যাংস অফ গোষ্ট'। প্রায় আড়াই যুগ পরে কলকাতার বাংলা সিনেমার কোনো হিন্দি রিমেক হলো। তবে আমরা ভুতের ভবিষ্যৎ দেখে যেমন প্রান খোলা হাসি হেসে ছিলাম, বিচিত্র সব টুইস্ট ছিল, বাঙ্গালীদের নানান কিছু নিয়ে ওয়ান লাইনার ছিল এখানে তেমন কিছু নেই। তবে পরিচালক, বিখ্যাত অভিনেতা সতীশ কৌশিক চেষ্টা করেছে ভালো বানানোর। অল ইন্ডিয়ান গড়পরতা সিনেমার যে স্টোরি লাইন সে তুলনায় মন্দ হয় নি সিনেমাটা। সারমান জোশি আর মাহি গিল চেষ্টা করছে, কিন্তু তা সস্তিকা আর পরান বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা সমাদর্শীর অভিনয় কে ভুলিয়ে দিতে পারে নাই। তবে হিন্দি সিনেমার চেয়ে কলকাতার সিনেমার বিষয় বিচিত্র আর নানান এক্সপেরিমেন্টে আগিয়েই রাখবো। খুব আশা নিয়ে নতুন এক ছবি 'ইয়ঙ্গিস্থান' দেখেছিলাম, কিছু অংশ দেখেই বাদ, বালের এক পলিটিক্যাল ড্রামা, তবে হিন্দি সিনেমায় এখন চেষ্টা চলছে ভালো রোমান্টিক কমেডি বানানোর। চেষ্টায় যদিও সফল না তবুও টাইমপাস মুভি হিসেবে সেগুলো খারাপ লাগে না। যেমন ধরেন 'হাসি তো ফাসী'। নতুন ডিরেক্টর বিনিল ম্যাথুউ র সিনেমা। প্রথম সিনেমাতেই তিনি নায়িকা পরিনীতি চোপড়ার দারুন অভিনয়ের কারনেই ছক্কা হাকিয়েছেন। গল্পে নতুন তেমন কিছুই নাই, নায়কের বিয়ে ঠিক, এমন সময় নায়িকার এক বখে যাওয়া প্রায় পাগল বোনের প্রেমে পড়ে নায়ক। দোটানা ও কিছু ক্লাইমেক্স, শেষ সিনে সেই নায়িকার কাছে নায়কের ফিরে আসা। তবে সিনেমায় যা দারুন তা হলো নায়কা নায়িকার দারুন ক্যামেস্ট্রি আর অদ্ভুত সব ননসেন্স কমেডি। আমি সিনেমাটা প্রথমবার দেখেই মুগ্ধ হয়েছিলাম, এবং আড্ডায় হিন্দি সিনেমার আলাপ আসলেই সেই মুগ্ধতার বয়ান দিয়ে দিতাম। সিনেমাটার ট্রেইলারটাই দারুন ছিল; একটা ভালো ট্রেইলার হলে সেই সিনেমা ভারতে খারাপ ব্যাবসা করে না! সেরকম আরেকটা সিনেমা 'বেয়াকুফিয়া'। সেইটা অবশ্য আরো সাদামাটা গল্পের। হলিউড স্টাইলের সস্তা রেসিশেসন রোমান্টিক কমেডি। তবে দেখতে বসে আমি বোর হই না, কারন চকচকে ভারতের পিছনে একটা উচ্চ মধ্যবিত্ত ভারতও আছে সেই ভারতের গল্প সিনেমাতে কমই আছে এরকম। এই সিনেমার নায়ক নায়িকা কারোর অভিনয়ই যুতের না, একাই দারুন অভিনয় করেছেন, ঋষি কাপুর। একজন এক্স সচিব কিভাবে শো অফ করে কথা বলে, কোন জিনিস কিভাবে রিএক্ট করে তাঁর দারুন ভঙ্গি নিয়েছেন, সিনেমায় কথায় কথায় ঋষি কাপুর বলে উঠে' হোম সেক্রেটারী আমার ব্যাচমেট' শুনলেই হাসি পায়। সিনেমাটা ভালো চলে নি। হাইওয়ে সিনেমাটাও দেখেছিলাম মার্চ মাসেই। খারাপ না। তবে ইমতিয়াজ আলীর ডিরেকশন আরো ভালো হয় সচারচর। রকস্টার সিনেমাটা এখনো আমার প্রিয় হিন্দি সিনেমার তালিকায় আছে। এছাড়াও আমি চেনা জানা আরো কিছু হলিউডের রোমান্টিক কমেডি দেখেছিলাম। সেগুলা সবাই কম বেশী দেখছে, নতুন করে আর কি বলবো?
হিন্দি সিনেমা নিয়ে কথা বলি বলে কেউ বিরক্ত হয়েন না। ছি ছি রব না তুললেই ভালো! আমি হিন্দি সিনেমা টাইম পাসের জন্যই দেখি, এই বলিঊডের মোটামুটি সব কিছুই আমার কমবেশী জানা শোনা, তাই দেখতে আনন্দ পাই। রাস্তা ঘাটে মানুষের কথা শুনে আপনার মনে হতে পারে এইসব জিনিস কেউ দেখে না, আসল কথা হলো মোটামুটি যাদের টিভিতে আগ্রহ আছে তারা সবাই এসব গিলে। আমার এক ভাই এককালে ছিল কঠিন দেশপ্রেমিক বিপ্লবী, একদিন তাঁর বাসায় গিয়ে দেখি ভাবী সহ দেখছে হিন্দি সিরিয়াল, আমি জিগেশ করতেই হেসে বললো 'শান্ত সংসার টেকাতে হলে এইসব দেখতে হয়'। আপনারা আরো জেনে অবাক হবেন, বাজারে কলকাতার আনন্দলোক যে পরিমান বিক্রি হয় তাঁর ধারে কাছে তো দূরে থাক, সম্মিলিত ভাবেও দেশী সব বিনোদন পত্রিকা এভারেজ দোকানেই বিক্রি হয় না। কিন্তু বাইরে বাইরে সবার কি ভাব, যেন জীবনে হিন্দি সিনেমা কি তা চর্ম চক্ষে দেখেই নি। আমি তাঁদের মতো হিপোক্রেট নই, আমি যা দেখি তা নিয়ে পাবলিক প্লেসে বলার সাহস রাখি!
বাড়ীতে ছিলাম কয়দিন, গরম তেমন টের পাইনি। তবে এত রোদ যে চোখ মেলা দায়। আজ ঢাকায় আসলাম, এখন টের পাব গরম কাকে বলে, আমাদের বাসায় অনেক গরম

গ্রাম যে এখন কি সুন্দর! শুধুই সবুজ আর সবুজ।
সিনেমা দেখতে গিয়ে খুঁটিনাটি কত কি খেয়াল করো, ভাবো! বড় হয়ে তুমি মিয়া লেখকই হবা।
কথা শুনিয়া মোমের মত গলিয়া গেলাম
লেখা ভাল্লাগছে।
ভালা প্রিন্ট পাইলে দেইখা ফেলুম কয়েকটা।
আইচ্ছা ভাই, শরীর মন ভালা?
লিষট করছি ----- দেখব
ওকে
আমার ভালো লাগে পরমব্রত আর স্বস্তিকা।
সেইম টু ইউ!
মন্তব্য করুন