এমন চৈত্র দিনে!
লিখতে বসলাম রাতে, কিন্তু লেখার মত কোনো বিষয়ই খুজে পাচ্ছি না, ল্যাপটপে নেটও নাই যে ইউটিউবে গান শুনে শুনে ক্লান্ত হয়ে লিখতে বসবো। এখন নেট চালাচ্ছি মোবাইল ওয়াইফাই করে- নোটবুকে। ভাবলাম এত সাধের ডাটা ইউস করছি, কিছু না কিছু লেখি। কিন্তু মাথা পুরো খালি। গরমের দিনে দুপুরে ঘুমালে যা হয় আর কি, সন্ধ্যে থেকে মাথা কাজ করে না। আমারও মাথা কাজ করছিলো না, বসে বসে ফেসবুক দেখছিলাম। ফেসবুকে তেমন কিছু করার নাই, কারো সাথে তেমন চ্যাটও হয় না আজকাল, তাও ফেসবুক খুলে বসে থাকি। এই যুগের মুদ্রাদোষ। আমার এক বন্ধু আছে তিনি ফেসবুকেই আসে না, ফেসবুকে মাঝারি মানের জনপ্রিয়তা উনার, তাও ভালো লাগে না। বললেই বলে, শান্ত সময় নষ্ট, আর কত একই কাজ বারবার করা। আমি জবাব দিতে পারি না, অনেকেই বলে এ কথা। তবে আমার বলা উচিত ছিল দুনিয়াতে কিছুই নষ্ট না, একেক সময় জীবনে একেক রকমের। প্রতিটাই নানান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে অনেক ইম্পরট্যান্ট কাজ আমরা করি না সময় নষ্ট হবার ফলে, সুতরাং ফেসবুকও সেই সময় নষ্টের এক ভান্ডার। এরকম কত ভান্ডারেই না আমরা আসক্ত হই, তাতে আর কি আসে যায়। আমার মনে হয় বাঙ্গালীর হিপোক্রেসি নিয়ে জানতে ফেসবুক এক চরম জায়গা। কত কি দেখি, চুপ করে হজম করে যাই। হয়তো আমারও কত ডাবল স্ট্যান্ডার্ড লোকজন মেনে নিয়ে চলে যায়!
গান শুনতেছি এখন ক্র্যানবেরিসের, চার জিবি ডিসকোগ্রাফী পুরোটা নামিয়ে ফেলেছি টরেন্ট দিয়ে। টরেন্ট এক দারুন জিনিস, আমি সিনেমা নামাই না তা দিয়ে। সমানে নামাই নানান শিল্পীর ডিসকোগ্রাফী, আগে যখন ভাইয়ার পিসিতে বসতাম, তখন ভাইয়ার কল্যানে ক্র্যানবেরিস শুনা। কেমন জানি ভালো লাগে শুনলেই, ইউটিউবে প্রচুর তাঁদের ভিডিও গিলেছি। কিন্তু পুরো ডিসকোগ্রাফী নামিয়ে শুনার আনন্দ অপরিসীম। নোটবুকে বসলেই কানে হেডফোনটা গুজে দিয়ে শুনেই চলছি। ক্যালটিক ব্যান্ডগুলোর মধ্যে ইউটু আর কোরস তো সবারই শোনা, সবারই কম বেশী ভালো লাগে। আমার সব চাইতে বেশী ভালো লাগে এই ক্র্যানবেরিসটাই। ভোকাল আইরিশ মহিলা, কঠিন একটা নাম 'ডোলরেস ও রায়োরডান' (নাম ভুল ও লিখতে পারি)। উনারে আমার ব্যাপক পছন্দ। কি দারুন আইরিশ একসেন্ট আর কি অসম্ভব সুন্দর সব লিরিকে ওল্টারনেটিভ রক ধাচের গান গুলো। আজ কি মনে করে ক্র্যানবেরিস বাংলায় লিখে সার্চ দিলাম। দেখি আকাশ অম্বরের এক ব্লগ পোষ্টেই এই ব্যান্ড নিয়ে দু তিন লাইন আছে। তিনি কেলটিক গান আর মিউজিক ইনস্ট্রুমেন্ট গুলোর মুর্ছনাকে শান্ত নদীর সাথে তুলনা করেছেন। আর শাফকাত নামের এক ব্লগার পেলাম সামুতে। মেলা পুরানো, শেষ পোষ্ট দিয়েছেন ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে, তিনি পোষ্ট দিয়ে জানাচ্ছেন--কেলটিক গানের 3 ভলুমের 6টি সিডির এম পি থ্রী শুনছি। যার ভেতরে ক্র্যানবেরিস আর এনিয়া বাদে আরো দশ শিল্পীর নাম দেয়া। এতটুকুই। আমি অবাক হলাম ইন্টারনেটের শক্তি দেখে, সামান্য এক শব্দের ভিতরে কত অদ্ভুত সব যোগসুত্র প্রস্তুত করে। এই যে আমি এই নীরব নিরস ব্লগে দিনলিপি লেখি সমানে, তাও একদিন কেউ না কেউ না চাইতেই পড়ে ফেলবে। হয়তো ভাববে কি লেইম দিন কাটাতো এই লোক, সারাদিন চায়ের দোকান, সিনেমা দেখা নয়তো বই পড়া নিয়ে আলাপ লিখে ব্লগ ভরেছে। ছফা বলেছিলেন, কোনো অনুসন্ধিতসু তরুন যদি তার মৃত্যুর পর তাঁর লেখা নিয়ে ভাবে ও মুগ্ধ হয় সেটাই তার স্বার্থকতা! আমি সেভাবে চিন্তা করি না। আমি লেখি নিজের জন্যই, ব্যাক আপ নিয়ে রাখবো কোনোদিন নিজের ব্লগে আর পড়ে পড়ে ভালো লাগাবো যে কত গাধা লেখক ছিলাম আমি। দুই তিন দিন আগে আমি আমার সামহ্যোয়ারের এক লেখা পড়ছিলাম, ছয় বছর আগের, এত বানান ভুল আর লাইনে লাইনে বাক্য ভুল। এক চোট হাসলাম এই ভেবে যে কিছুটা হলেও আমার লেখার উন্নতি হয়েছে। আগে নিজের কথা প্রকাশ করতে কি জড়সর লাগতো, এখন কত অবলীলায় নিজের কত গোপন কথা বলে দেই ব্লগে, যা বন্ধুরাই জানে না।
নতুন বাংলা বছর এসেই পড়লো। চৈত্র মাসেও যাবে যাবে করছে, তীব্র গরম করে। রাত জেগে আর দিনে ঘুমোতে পারি না। গরম নিয়ে হাহাকার আমি নিজের কাছেই রাখি, কারন আমার এইসব গ্রীষ্মদিন ভালো লাগে। ভালো লাগে রোদ ঝলমলে এইসব দিন। সবাই ছুটছে যার যা কাজে, আমি অমনোযোগ আর অন্যমনস্কতায় উপভোগ করি এইসব দিন গুলো। পুলকের গরম বেশী পড়ে বলে কোর্টে যায় না। দুজনেই রোদে ঝলসে বসে থাকি চায়ের দোকানে। রোদে ঝলসানোর একটা ফায়দা হলো দুপুরে ক্লান্তিতে ঘুম আসে। ঘুম থেকে উঠে মনে হয় আমার গত জীবনে পেশা ছিল দোকানদারী। আমি অনেক দোকানদার চিনি যারা দুপুরে যত কাজই থাকুক ১-২ ঘন্টা ঘুমোবেই। তাতে দোকান চুলোয় গেল যাক, আমার অবশ্য দুপুরে না ঘুমিয়েও প্রচুর দিন পার করেছি। খারাপ লাগে না। তবে ঘুমালে রাতটায় খুব শান্তি লাগে। অনেক কাজ করা যায়। আমার আম্মু থাকলে বলতো- এই রাত জেগে নামায কালাম পড়লেও পারতিস, এত গান না শুনে। আমি বলি আম্মু, সেরকম হুজুর হলে তো হইতোই, আপনাদের বেহেশত নিয়ে ভাবতে হতো না, পেয়ে যেতেন নেক সন্তানের উসিলায়। এখন আমার তো খায়েশ আপনাদের পুন্যের উসিলায় আমি দোযখ ঠেকাবো। যদিও এইসব উসিলা থিউরীতে আমার ফেইথ নাই, কারন যার যার কাজের দায়ভার একান্তই তাঁর উপরে বর্তে। অমুকের কারনে আমার সমুক হয় নাই এমন আমি বলি না, কারন সব কিছুই করা না করা নির্ভর করে আমার উপরেই। যা ভালো লাগে তা করতে পারলেই সব চাইতে ভালো, সাফল্য ব্যর্থতা পরের ব্যাপার!
চুপচাপ পড়ে গেলাম
ভেরী গুড!
থ্যাঙ্কস!
মনটা উদাস কেন?
এমনিতেই আপু!
ভালো যাক সময়!
থ্যাঙ্কস পাভেল!
ক্র্যানবেরিস চমত্কার লাগে।
তাই নাকি? যাক একজন সমমনা পাওয়া গেল
গ্রাম ঘুরে আসুন। এই সময়টাতে গাও গেরামের দুপুর ভালো লাগার মত বিষয়।
সামনে যাবো!
মন্তব্য করুন