বৈশাখী মেঘের কাছে!
আজ তেমন গরম নেই, নেই লোডশেডিংয়ের যন্ত্রনা, ফ্যান চললে আরামদায়ক এক অবস্থা, বিকেল থেকে বৃষ্টি হবার শত সম্ভাবনা দেখা দিলেও কয়েক ফোটা মাত্র বৃষ্টি হলো। তাতে কি আর এই তীব্র তাপদহের জ্বালা কমে? তবে আগামী দুয়েক দিন নাকি এরকম মাঝে মাঝে ঠান্ডা হাওয়া আসতে পারে বিকেলের দিকে, হয়তো হালকা বৃষ্টি, এতোটুকুই আশাবাদের জায়গা! আমি অবশ্য আজ ভিজবো বলে খুব আশাবাদী ছিলাম, বের হয়ে ছিলাম ময়লা পাঞ্জাবী পড়ে। বাসে উঠলাম উদ্দেশ্যবিহীন ভাবেই, মনে হয়ে ছিলো ধানমন্ডিতে নামবো। রাস্তায় ভয়াবহ জ্যাম সামান্য বৃষ্টির আলামতেই, গরমে ঘামতে ঘামতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। এমন সময় মোবাইলটাও চলে না। লকের সুইচ খুলে না, কিভাবে জানি সেট অফ হয়েছিল তাতেই কর্মসারা। মোবাইল পুরো অফ। বাসে উঠার অভ্যাস এখন কমছে, খালি ছটফট করি, সেই অস্থির অবস্থাতেই গান গাচ্ছিলাম একা একা। আমার পাশের যাত্রী আমার এই গুনগুন গান উপভোগ করছিল। আমি গান গাওয়া থামলাম, সে তার পকেট থেকে এক্সপেরিয়া জেড বের করে গান শুনা শুরু করলো হেডফোনে। আমি পাইলাম ভয়, কার সামনে করি গুনগুন, ইনি দেখি বড়লোকের ছেলে। বড়লোকের ছেলেরা আরামে বাসে ঊঠে, আর আমি গরীব মানুষ খালি রিকশায় উঠার তাল খুঁজি।
ভুলে ১০ টাকার ভাড়া দিয়ে ১৫ টাকার ট্রাভেল করলাম। গিল্টি ফিল হলো। দশ টাকা সাথে সাথে এক ফকির কে দিয়ে দিলাম। বাসে কম ভাড়ায় চলাচল করা অনেকেরই অভ্যেস, আমার তা মোটেও ভালো লাগে না। আরো ভালো লাগে না স্টুডেন্ট ভাড়ায় চলাচল করতে। কারন কত জায়গায় বেজায়গায় ছেলেরা খিচকে টাকা খরচ করে আর বাসে ভাড়া দিতে বসলেই ছাত্র পরিচয় বড় হয়ে দাঁড়ায়। একটা বেনসনের দামই নয়টাকা এখন, আর সামান্য দশ বারোটাকা ভাড়া দিতে লোকজনের এত কসরত দেখে খুব অবাক হই। আর এখন সেই ষাট দশক নাই যে ছাত্র সমাজ জনগনের প্রতিনিধি, প্রতিটা ছাত্রই এখন পুজিবাদী মানুষ, পড়াশুনাটাও সেই পুজি কামানোর একটা প্রস্তুতি। এদে্রকে হাফ ভাড়ায় বহন করে বাসকর্মীদের তো নাই, জাতির কোনো ফায়দা নাই। কারন দিন শেষে সবাই মইন ভাই টাইপের লোক। মইন ভাই হলো আমার চায়ের দোকানের এক ভাই, ঢাবির হলে পড়ছে থাকছে, বাবা নাই মায়ের অবস্থা নিম্নবিত্ত। সেই তিনি এখন ব্যাংকের মধ্যম সারির অফিসার হয়ে কাউকেই মানুষ হিসেবে গুনে না। সাধারন লোকদের সাথে কথা বলতে তুই তুকারী করে আর ঝাড়ি দেয়, বলে উঠে ফকিরনীর পুত কি বুঝোস তুই? আমি উনার থেকে দূরে দূরে থাকি। কারন এইসব মানুষদের আমি অন্তর থেকে ঘৃণা করি। উনি মিশতে আসেন, মজা মজার কথা বলেন কিন্তু আমার গা ঘিন ঘিন করে।
অনেক দিন পরে আজিজে ঢুকলাম। রিকশা দিয়ে যাই বলে ওদিকে যাওয়া হয় না আর। ঘরভর্তি বই আর বই। পড়েই শেষ হচ্ছে না। নতুন করে আর কি কিনবো? তার ভেতরে চলতেছে ঐতিয্যের মেলা পাবলিক লাইব্রেরীতে। সেখানেই একদিন গিয়ে ঢু মেরে তিনটা বই পছন্দ করে আসছি, কেনা হয় নাই। তাও আজিজ তো আজিজই। যত গেঞ্জী আর পাঞ্জাবীর দোকান থাকে থাক, যতদিন বিদিত নামের বইয়ের দোকান টা আছে ততদিন আজিজ আমার সব চাইতে প্রিয় জায়গা। অনেকদিন পর বিদিত গিয়ে বই দেখলাম শুধু। মিঠু ভাই নাই, মিন্টূ ভাই আমাকে দেখে খুব খুশি। ভাই আসেন না কেন? আমি বলি আমার বই কেনার সাথে সাথে বই ধার নেয়ার হার বেড়েছে তাই আসা হয় কম। দেখলাম বই। আশাপূর্ণা দেবীর বইয়ে দেখি সয়লাব, আমি মনে মনে ভাবলাম এইটা জিবাংলার প্রভাবে নাকি? লীলা মজুমদারের বই দেখলাম। কেনার জন্য মনে ধরলো সরদার ফজলুল করিম আর আরেক জনের সাথে মিলে চল্লিশ দশকের ঢাকা। বইটা আগেও সাহিত্য প্রকাশের দোকানে দেখছি কিনতে ইচ্ছা হয় নাই। কারন আমার এক প্রিয় বন্ধু উনার এক অনুবাদ গ্রন্থের কয়েক লাইন বাই লাইন পড়ে দেখিয়েছিলো যে সরদার ফজলুল করিমের লেখার ভাষা কেমন জানি ওকোয়ার্ড! তবে আজ বইটার কয়েক পাতা পড়ে মনে হলো দুশো টাকায় কেনা হলে খারাপ হবে না। কিন্তু আজ কিছুই আমার কেনার মুড ছিল না। মঞ্জু সরকারের এক গল্পগ্রন্থ হাতে নিলাম। মঞ্জু সরকারের গ্রামীন জীবনের গল্প আমার খুব ভালো লাগে। কিন্তু তিনি যখন শহুরে জীবনের টানাপড়েনের গল্প লিখতে বসেন ঠিক মিলে না। ফ্যানের বাতাস খেতে খেতে দুটো গল্প পড়লাম। মনে ধরলো না, যা মনে ধরে না তাতে আমার আগ্রহ থাকে না। তাজউদ্দীনের মেয়ের বহুল আলোচিত বইটা হাতে নিলাম। মেলা দাম কমিশন বাদ দিলে প্রায় সাড়ে ছয়শো টাকা। লেখকের জীবনীতে দেখলাম তার একাডেমিক ও ক্যারিয়ার সাফল্য ইর্ষনীয়। কিন্তু এত বিদুষী মহিলাকে এইসব ছাইপাশ লিখতে কে বলছে তা আমি বুঝে পাই না। আপনি আমাকে বঙ্গবন্ধুর ব্যর্থতা নিয়ে ১০-২০ টা কথা শুনাতে পারেন, কিন্তু তিনি ক্রিমিনাল মাইন্ডের ছিলেন এই জিনিস আমি বিশ্বাস করতে পারবো না। কারন আমার দেশের স্থপতি আমার কাছে ইশ্বর তুল্য না হলেও অনেক বিশাল মানুষ। সেই মানুষ নিয়ে এরকম অসভ্য কুৎসা রটানোর মানে আমার কাছে খুবই জঘন্য ব্যাপার। এই বইটা খুব চলবে, ঐতিয্য ভালো টাকা কামাবে। কিন্তু বাজে একটা দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। কারন আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতার সু্যোগ সুবিধায় বড় হওয়া এইসব মানুষদের মুখে আওয়ামীলীগ বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা বড় বিশ্রী ব্যাপার বলে মনে হয়! বিদিত তে যতক্ষণ চাই পড়ার সূ ব্যাবস্থা এখনো বিদ্যামান। এরকম একটা বইয়ের দোকান দেয়ার আমার খুব শখ। আরো শখ সেখানে পড়ার ভালো ব্যাবস্থা থাকবে। সৈয়দ হক চান্স পেলেই লন্ডনের বইয়ের দোকান ফয়েলস এর গল্প করে, আমিও সেরকম একটা বাংলা বইয়ের দোকান দিতে চাই। ইন্ডিয়ায় একটা চেইন বুক স্টোর আছে নাম ক্রসওয়ার্ড, ক্রসওয়ার্ডের একটা শাখায় পড়ার যে ব্যাবস্থা না কিনে তা আমাদের সব চাইতে বুর্জোয়া পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রতেও নাই। পাঠক সমাবেশ দেখি এখন বইয়ের দোকানের সামনে পিয়াজু মুড়ি চা বেচে, হাইজেনিক ভাব নিয়ে। তাই খায় মানুষ, কিন্তু দোকানে মানুষ নাই! কিনলাম দুটো ম্যাগাজিন-- কালিও কলম ও উত্তারাধিকার। ৪০+৪০= ৮০
বাসে করেই বাসায় আসলাম, পেয়ে গেলাম রংধনু, এরভেতরে হালকা বৃষ্টি হলো পাঁচ দশ মিনিটে। বাসের জানালা খোলা তাও বৃষ্টি আমাকে ভেজাতে পারলো কই? বিডি নিউজে দেখলাম ১ মিলিমিটার মাত্র বৃষ্টি হয়েছে। তাতেই আমাদের যে স্ট্যাটাস আর সস্তির প্রকাশ তা দেখে অবাক হলাম। আমাদের এখানে দু দমকা বাতাস শুরু হলেই মানুষ দেয় ঝড়ের স্ট্যাটাস, তাতে ঝড় আর আসে না। দু ফোটা বর্ষা শুরু হলেই গান কবিতা কত আদিখ্যেতা তাই বৃষ্টি আর আসে না এখানে। কোথা থেকে আসবে ঢাকা শহর নাকি গ্রীন সিটি, উদ্যান বাদে গ্রীনের দেখা হয়। অনেক গাছ গাছালি ছিল বলে জায়গার নাম ছিল শ্যামলী। এখন সেই গাছের নাম গন্ধও নাই। এরকম সব জায়গাতেই। তবে আমি গাছের ছায়া পাই, চায়ের দোকানে গেলে। দুইটা আম গাছের নিচে, সামনে পচা পানির খাল। তাও সুশীতল বাতাস কিছুটা হলেও শান্তি দেয়। আজ থেকে চার বছর আগে আমরা যখন করমআলীর দোকানে বসতাম তার দোকান ছিল রেইন্ট্রি গাছটার নিচে, গাছ টাকে যে কি আপন মনে হতো। ব্লগে লেখা খুজলে পাবেন যে সেই রেইন্ট্রী গাছ যেদিন রাস্তা সম্প্রসারনে কেটেছে তখন কি মন খারাপই না হয়েছে। আমি ওতো বৃক্ষ প্রেমিক না। কিন্তু বুঝি গাছ জিনিসটা কত কাছের জিনিস আমাদের। আমাদের পূর্বপুরুষরা গাছকে যে ভালোবাসতো তার ছিটে ফোটাও যদি আমরা পেতাম, তা হলে এই শহরটা আরেকটু হলেও বসবাসের জন্য উপযোগী হতো!
এই গরমে তুমি যে কেমনে এত ঘুরো! দুইদিন অপিস বন্ধ ছিলো, আমি বাসার গেট পার হইনি ।
বড় হয়ে এমন একটা দোকান দিও
দোয়া রাইখেন আপু!
কারেং যা পেইন দিতাছে আজকাল তা আর কহতব্য নহে!
ব্যাপক পেইন!
আমি বাসায় বললাম ঢাকায় নাকি বৃষ্টি হয়েছে, বাসা থেকে বললো, হ, ফেবুতে হইছে

মজারু
সব জায়গা ঘুরা শেষ হলে হাতে যদি টাইম থাকে কিছু মানুষজন এসে একটু কাওরানবাজার ঘুরে যেতে পারে।
কেন কারওয়ান বাজারে কি? স্টারে খাওয়াবা নাকি?
মন্তব্য করুন