বুকের ভেতর কথার পাহাড়
পাহাড় শব্দটা শুনলেই আমার বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর এক ভাষনের কথা মনে পড়ে। তার নির্বাচনী এলাকায় পাহাড়ের নিবাসী লোকজনের উদ্দেশে তিনি বলছেন ' পাহাইড়া বান্দরেরা গাছে উঠছে, কলা দেখাইলেই তারা আবার নাইমা যাবো' ইলেকশনের হেরে তিনিও শিক্ষা পেয়ে গেছেন পাহাড়ি নিবাসী মানুষের গাছে উঠার মর্ম। নিজের এলাকার মানুষ সমন্ধে নির্বাচিত এক সিনিয়র রাজনীতিবিদের কি প্রতিক্রিয়া, ভাবলে অবাক হই। পাহাড় নিয়ে কথা আসলে অনেক প্রসঙ্গই আসে, সব চেয়ে থার্ড ক্লাস প্রসঙ্গটা হলো নাটকের ভেতর নায়কের ন্যাকা প্রশ্ন-- আচ্ছা তোমার কি ভালো লাগে? পাহাড় না সমুদ্র? এইটা আদতে কোনো প্রশ্ন করার বিষয় হলো? পাহাড় এক জিনিস আর সাগর আরেক জিনিস, দুটোর দুই রকমের সৌন্দর্যের মাত্রা, এখানে কম্পিটিশানে আনার দরকারটা কি? আমার দুটোই ভালো লাগে। একটার বদলে আরেকটা কেন ছাড়বো?
কথা সেইটা না কথা হলো ঐতিয্যের মেলা চলছে পাবলিক লাইব্রেরীতে। ব্যাপক বই দেখলাম সাজানো। ঐতিয্য এত এত লেখকের এত বই ছাপাইছে যা দেখে মুগ্ধ হই। মেঘলা সকালে তেমন কিছু করার ছিল না। মামার সাথে বের হলাম, মামা এটিএমে অফিসের কাজে এতগুলো টাকা তুললো। তা দেখে ভালো লাগলো। লাখ খানেক টাকা দেখার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে। দেখলে মন ভালো লাগে। গেলাম চায়ের দোকানে দেখি বারেক সাব আসে নি, স্কুল যাওয়া বাদ দিয়ে জুয়েল চালাচ্ছে দোকান, চা খেলাম কাল রাতের মারামারির সবিস্তারে আপডেট পেলাম। আমার এক চেনাজানা সমবয়সী ছেলে সুমন মারপিট ঠেকাতে গিয়ে শেলী সাহেবের কামড় খেয়েছে তা দেখে শিউরে উঠলাম। শালার ভালো কাজ করতে গেলেও এখন দাত বসিয়ে দেয়া কামড় খেতে হয়, টিটেনাস ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে সাথে সাথেই। কামড়া কামড়ির অভ্যেস আমার ছিল না তাই আমি জানি না মানুষ কামড় দিলে কি হয়? তবে সূমনের এই কামড় খাওয়া দেখে মনে হলো কুকুরের চেয়ে কম না মানুষের কামড়! এইসব দেখে টেকে রিকশা নিয়ে গেলাম নিউ মার্কেট, হাফিজুলের রিকশা। উত্তরবঙ্গের কিছু জেলার মানুষের নামের শেষে উল জিনিসটা দেখি খুব কমন, ওয়াহিদুল, মুস্তাফিজুল, মাজহারুল, মাহিদুল। ব্যাপারটা আবিস্কার করে খুব শান্তি পেলাম। হাফিজুল রিকশা চালায় দারুন,সাথে সাথে সে মানুষ হিসেবেও ভালো। কখনো গালি দিয়ে কথা বলে না। কেউ তাকে গালি দিলো সে চুপচাপ হজম করে যায়। আমি পুলককে বলছিলাম হাফিজুলের উচিত ছিল স্কুল শিক্ষক হবার, হলো কি রিকশা চালক। রিকশা নিয়ে অনেক গান আছে তবে আমার সব চাইতে ভালো লাগে চন্দ্রবিন্দুর এই গান টা https://www.youtube.com/watch?v=KUZRIz1uNMQ
নিউমার্কেটে তেমন কোনো কাজ ছিল না। ম্যাগাজিন দেখলাম, নারীদের আন্ডার গার্মেন্টস বিক্রেতার অশ্লীল জোক্স না চাইতেই শুনলাম, ইয়া বিশাল বিশাল জিলাপী ভাজা কিংবা পচা ব্রেডের বার্গার দেখছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। বলাকায় দেখি চলে 'জান' নামের ছবি। পোষ্টার দেখে মনে হলো নতুন ছবি না। হাটতে হাটতে ঢুকলাম নীলক্ষেত দিয়ে সামনে। আহ কত তরুন প্রান আড্ডা দিচ্ছে মাঠে ও রাস্তার আইল্যান্ডে বসে, দেখে হিংসে হলো। আহ সময় চলে গেল, ঝড়াপাতা গুনে গুনে। সামান্য হাটতে হাটতেই ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে আশেপাশ দেখলাম আরো, দেয়ালে সাটানো পোষ্টার, ছেলেরা মেয়েরা কি নিয়ে আলাপ করে তা ট্র্যাপ করে শোনার চেষ্টা, মানুষের রিকশা খোজা এই দেখতে দেখতেই কেটে গেল। ছবির হাঁটে ঢুকে ইমনের দোকানে বসলাম, কেউ নাই ফাঁকা সব ব্রেঞ্চি, এই ভরদুপুরে এক মাতালকে দেখলাম ঝিম মেরে পড়ে আছে, গায়ে কেরুর গন্ধ। তিনি দেখলাম এক গ্লাস পাঁচ বার ধুইলো তাও তার মন ভরে না। গেলাম পাবলিক লাইব্রেরীত। সেইখানের কিছু কমন ফেস আছে, যারা প্রায় পাঁচ ছয় বছর ধরেই ওখানে পড়ছে বিসিএস বা চাকরীর জন্য। তাঁদের সিনসিয়ারিটি আমাকে মুগ্ধ করে। কিন্তু লাইব্রেরীর এত এত বই তা বাদ দিয়ে চাকরীর জন্য লেকচার শীট পড়াকে আমার কেন জানি এথিকসের খেলাপ বলে মনে হয়।
যা বলছিলাম আবার সেখানেই আসি, ঐতিয্যের এত এত বই পাবলিকশন কিন্তু বিজ্ঞাপন শুধু গালি অভিধান আর তাজউদ্দীনের মেয়ের বইটার। কামাল ভাইয়ের একটা পুরান বইও দেখলাম। সূচিপত্র খুলে দেখি সব গল্পই পড়া। কলিম শরাফীর স্মৃতি কথা টাইপ বইটা মনে ধরলো। ৭৯ পেইজের, দাঁড়িয়েই প্রায় পড়ে ফেললাম। সহজ কথার সহজ বই, জানলাম তা কে নিয়ে। কিন্তু কেনার জন্য কেমন জানি বইটা মনে ধরলো না। ঢাকা নিয়ে ঐতিয্যের এক অভিধান আছে, তার দাম পকেটে নেই তাই কেনা বাদ। রওনা দিলাম বাসে করেই। ভীড় বাস। এক ছাত্র বচসা সুত্রে দিল হেল্পারকে থাপ্পড়, তাতে এক লোকের খুব লাগলো, তিনি বলে উঠলেন ভাই আপনি গায়ে হাত তুলতে পারেন না, এইটা অনুচিত। আমি হাসলাম এক ফালি, এইসব উচিত অনুচিত মেনে চলা লোকেরা কি গায়ে হাত তুলে। ছেলে দুটোকে দেখলাম কেমন জানি। মারুক কাটুক আমার কি, আমি হেডফোনে মহীনের ঘোড়াগুলি শুনে চলছি। বাসায় এসে ভাত খেয়ে নোটবুক নিয়ে বসলাম, সৈয়দ হকের উপন্যাস পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেলাম কখন জানি না। এক বন্ধু আসার কথা, সে দেয় নি ফোন।জিগেষ করলে বললো ফোন দিলাম, ধরলি না একবার তাই আর দেই নাই, বিকেলে ঘুম নিয়ে তোর যে ফ্যান্টাসী আছে তা আরাম করে শেষ কর। আমি হাসলাম, শালার মানুষ আমার কত কি মনে রাখে। রাতে বাসায় ফিরে কবীর সুমনকে নিয়ে বানানো এক টিভি প্রোগ্রাম দেখলাম, দুর্দান্ত। কবীর সুমনের বিনয় আর শ্রীকান্ত আচার্যর উপস্থাপনা সব মিলিয়ে অদ্ভুত সুন্দর এক প্রোগ্রাম। কলকাতা বাসীর হিসেবী জীবনের আজাইরা কত গল্প আমরা বংশ পরম্পরায় করে যাই। কিন্তু টিভিতে কি করে বিনয় ভদ্রতা ও সুন্দর করে কথা বলতে হয় তা আজো শিখলাম না আমরা তাঁদের কাছ থেকে। আজ পোষ্ট লিখতাম না, কিন্তু জিনিস্টা দেখে মনটা ভালো তাই লিখে ফেললাম। আগ্রহীরা দেখতে পারেনঃ
https://www.youtube.com/watch?v=O93BQsealDw
রিস্কাওয়ালার গানটা আমার বন্ধু মিথুন খুব ভাল গাইতে পারে।

বাই দ্যা ওয়ে ফার্স্ট কমেন্ট।
গানটা আমার বন্ধু জেমসও খুব ভালো গায়
বিশেষ করে সেই লাইনটা,
দিন কি এমন যাবে?
রিস্কাওয়ালার গানটা আমার বন্ধু মিথুন খুব ভাল গাইতে পারে।

বাই দ্যা ওয়ে ফার্স্ট কমেন্ট।
থ্যাঙ্কস এ লট
আপনার পোষ্ট কই নয়া? আছেন টাছেন কেমন?
শিরোনামটা চমত্কার।
সবই কবীর সুমনের অবদান!
শেখার কোন শেষ নাই, শেখার চেষটা বাদ তাই --- বাংগালীর মটো
ভালো কইছেন:D
মন্তব্য করুন