আমি আমারই মতো, তাতে কি আসে যায়!
আজ সকাল থেকেই আমার বিরক্তিকর মেজাজ খারাপ কারন জানতাম না যে নয়টা পাঁচটা পর্যন্ত কারেন্ট থাকবে না। তাই ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধোয়ার পানি টুকুই শুধু পেলাম পানির কলে। নাস্তা করতে গিয়ে দেখি বুয়া ডিম ভাজিতে এত তেল দিয়েছে খাওয়াই দায়, তাও খেলাম কারন অন্তত বেশী হলুদ আর তেল দেয়া আলু ভাজির চেয়ে ভালো খাবার এইটা। বুয়ারে কত বলি কিন্তু তিনি আমার কিংবা মামার কথা হয় শুনেনই না, হয়তো উনার সেই মেধা নেই যে শুনে তা বাস্তবায়ন করবে। তাই যখন যা ইচ্ছে তাই করেই চলে যাচ্ছে। মামার কথা যাও কিছু শুনে, আমার কথা একেবারেই না। ল্যাপটপেও চার্জ নাই। মনের দুঃখে বের হলাম জানি কেউ নাই কোথাও। তাও এক কাপ ভালো চা তো খাওয়া যাবে দোকানে। চায়ের দোকানে এসে দেখি এক চিরকুট রাখা। এই মোবাইলে জামানায় আজকাল এইসব কেউ রাখে, মুগ্ধ হলাম দেখে। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা-- শান্ত ভাই, এইটা আমার নাম্বার, কল দিয়েন। আমি গাজীপুরে, বাবুর্চি রফিক। কল দিলাম ভাবছিলাম কোনো বিপদ আপদে, কথা বলে জানলাম না ভালোই আছে একদিনের জন্য আসছিলো তাই এসে আমার খোজ নিয়েছিল, না পেয়ে চিরকুট রেখে যায়। গাজীপুরের হোটেলের চাকরী ভালোই করছে এইটাই সারমর্ম।
রফিক লোকটা ভালো। পুরোদস্তুর হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের একটা ক্যারেক্টার। কথাও বলে সেই ঢং এ। তাকে যদি আপনি জিগেষ করেন-- রফিক সাব আপনি কেমন আছেন? 'আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া, আল্লাহ ভালোই রাখছে, খালি যে চাকরী আল্লাহ পাক আমাকে দুনিয়ায় দিয়ে পাঠিয়েছিল তাই করতে পারছি না'। জিগেষ করবেন কোন চাকরী? 'তিনি যা যা নবীকে দিয়ে করতে বলেছেন সেইটা মানার চাকরী'। তা করছেন না কেন? 'জীবনের এত পেরেশানি, আশেপাশে মানুষের এত চাহিদা তা মেটাতে মেটাতেই আল্লাহর দেয়া চাকরীর কথা ভুলে গেছি। এই কথা আমি যখন প্রথম শুনছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো এই লোকের সাথে শাওনের হাজবেন্ডের কানেকশন মাস্ট আছে। তার চাকরি ছিল না দুই তিন মাস, তিনি বিকাল বেলা বের হতেন, বেড়ী বাধ থেকে শুরু করে শ্যামলী পর্যন্ত সাতটা চায়ের দোকানে বসতেন আর হাটতেন। প্রতি দোকানেই দুটা গোল্ডলিফ, একটা চা আর একটা পান বিশটাকা বিল করে হাটা দিতেন। বারেকের দোকানে এসে অনেক গল্প করতেন, সেই সুত্রেই আলাপ। আলাপের সুত্রপাত হয়েছিল তিনি এক গল্প বলছিলেন, তার এক বন্ধু মরার পরে, পীর হয়ে গেছে চোর থেকে। সেই বন্ধু নাকি ততটুকুই চুরি করতো যা তার দরকার। মা ছাড়া দুনিয়ায় সেই পীরের কেউ নেই। একদিন এক লোক সমন্ধে বললো আপনি ইটালী যাবেন। সেই লোক তখন সাধারন কামলা। তার টাকা পয়সা জমি জমা কিচ্ছু নাই, আর ভিসা পাসপোর্ট তো দূরের কথা। কিভাবে জানি সেই কামলাই চলে গেল ইটালীতে, আর সেই পীর হলো পাগল। চার বছর পরে ইটালী থেকে আসলো সেই কামলা, অনেক চেষ্টা তদবিরের পর সেই পাগলের দেখা পেল। পীর দেখেই বললো, তোর অপেক্ষাতেই ছিলাম, আমার মা মারা গেছে এরই মধ্যে। তুই কাল আমাকে নতুন জামা কাপড় কিনে দিস। কিন্তু তারপরের দিনই মারা গেল লোকটা। নতুন জামাকাপড় মানে কাফনের কাপড়। তারপর থেকে জনশ্রুতি হতে হতে এখন বিশাল সংখ্যায় ইতালি সুইডেন পার্টি তার মুরিদকুল। গল্পটা ভালো মতো বলতে পারলাম না। কিন্তু তিনি যেভাবে বলছিলেন তাতে আমি মুগ্ধ হয়ে শুনে ছিলাম। আরেকদিন তিনি দিয়েছিলেন অমর ডায়লগ ' পুরুষ মানুষদের চরিত্র বলে কিছু আছে বইলা আমার মনে হয় না, জগতে ভালো ভালো স্বভাব আল্লাহপাক শুধু মেয়েদেরকেই দিছে; তারপর থেকে টুকটাক কথা হতো, উনার হুমায়ূন আহমেদ স্টাইলের সব এন্সার পেতাম- এতোটুকুই পরিচয়। পেশায় তিনি বাবুর্চি কিন্তু তার কিছু কথার দার্শনিকতা, দর্শনের টিচারদের কাছাকাছি।
যাই হোক বৃষ্টি নামি নামি করছে, আমাকেও চলে যেতে হলো দোকান থেকে। শাহ আলমের দোকান থেকে অনেক কিছু কিনতে হবে। কেনা শেষে দেখি পকেটে আছে ২৫ টাকা। রিকশা নিলাম না। হাটা দিলাম, ঝপঝপ করে বৃষ্টিতে ভিজলাম। বৃষ্টি নিয়ে আমার রোমান্টিক ভাবালুতা কম থাকার কারন হয়তো এই যে না চাইতেই আমাকে ভিজতে হয় বৃষ্টিতে রেগুলারলি। তাই সেন্ট্রিমেন্টালের কিছু নাই। কাকভেজা হয়ে বাসায় ঢুকলাম। পানি তখনো টেপে কিছু আছে তাই দিয়ে নামকাওয়াস্তে গোসল সেরে বই পড়তে বসলাম। 'মার্জিনে মন্তব্য' বইটা আগেও পড়েছি, এখন আবার পড়ছি দারুন একটা বই। এত সুন্দর ভাবে সৈয়দ শামসুল হক -লেখার কলা কৌশল ও খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, বিষ্ময়কর লাগে। সাক্ষাৎকারের এক বইতে এর নাম দেয়া হয়েছে-- নন ফিকশনাল ক্রিয়েটিভ রাইটিং। এর আগে উনার নানান শব্দ নিয়ে যে বই তাতে অসম্ভব মুগ্ধ হয়েছিলাম। তারপর পড়লাম হৃদকলমের টানে উনার পত্রিকায় নানান বিষয় নিয়ে কলাম লেখার সমগ্র। তারপর আবার পড়া শুরু করলাম এই মার্জিনে মন্তব্য, আর তার সাথে উনার উপন্যাস তো পড়ছি তরতর করে, বলা যায় সৈয়দ হকে মজে গিয়েছি পুরো। তার লেখা কথাগুলো মনে রাখতে পারি না। মনে রাখতে পারলে হয়তো আমার লেখার হাত আরেকটু প্রশস্ত হতো! তবে বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ হকের মতো প্রতিভাবান ও পরিশ্রমী লেখক আর পাই নি।
দুপুরের খাবারের বিশ মিনিটের ব্রেক বাদে টানা পাঁচ ঘন্টা বই নিয়ে বসেছিলাম। তারপর কি মনে হলো দেখি পাঁচটার উপর বাজে, কারেন্ট হাজির, ল্যাপটপ নিয়ে বসলাম। দেখি এক ছবি দিয়েছিলাম তাতে ভালো লাইক পেয়েছি। এই ছবিটা পেয়েছিলাম ভাইয়ার পুরানো মোবাইল গুতাতে গুতাতে। আমার ভাতিজির সাথে আমার ছবি। দিয়ে দিলাম দেখি হিট। আমি বাচ্চাকাচ্চার প্রতি বিশেষ ভালোবাসা ছোট থেকেই অনুভব করি না, কোলে নিতেও পারতাম না আর কেউ দিতো না। বড় হয়ে ইন্টারমিডিয়েটের আমলে আমার পাশের বাসায় আবিদ নামের এক পিচ্চি থাকতো। সেই পিচ্চির গুনেই তাকে আমার ভালো লাগতো। কোলে নিতাম পাশে বসিয়ে রাখতাম, নিজে নিজে সে বাসায় ঘুরতো আর শান্তবাইয়া শান্তবাইয়া করতো। ব্যাপক পছন্দ করতাম এই গুলটো টাকে। কথা বলতাম গান শুনাতাম সে মন দিয়ে শুনতাম, কি যে কিউট ছিল তা বলার মতো না। এত কিউট বাচ্চা আমি আজ পর্যন্ত দেখি নি, ঢাকায় এসে সেই পিচ্চিটার জন্য আমার মাঝে মাঝে মন খারাপ হতো। অনেকবারই চিটাগাং গিয়েছি, চাইলেই আবিদকে খুঁজে বের করা যেত না। কারন মনের ভেতরে যে ছবি তাই থাকুক দরকার কি তা সরানোর। আর তারপরেই আমি মুগ্ধ হয়েছি ভাতিজি মাহদীয়ায়। যদিও আমি তার কাছে দূরের মানুষই, কাছে আসার সু্যোগও কম, আমার স্কাইপি নাই তাই দেখেও না, তবুও এই পরীটাকে আমি অনেক ভালোবাসি, আমার আগের মানিব্যাগে মাহদীয়ার ছবি খুব যত্ন সহকারে সাটা ছিল। ভাইয়া হোয়াটসএপে যা ছবি পাঠায় সব ডাবল করে ডাউনলোড করি। যেন না হারায়। মাঝে মাঝে ঘুমানোর আগে দেখে নেই তা আহ কি কিউট বেবী! আমার এক বন্ধু ছিল সৌরভ, প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে প্রায় মরে মরে ভাব। একদিন হাত কাটে তো একদিন ট্যাবলেট খায়, তাকে আমি দিয়েছিলাম এক ডায়লগ, ব্যাটা নিজের তো কিছু হলো না, বোনের ছেলে মেয়েরা আছে তারা মামা মামা করে ডাকবে সামনে, তাঁদের জন্য বেঁচে থাক। আমার কথাটা তার খুব মনে ধরছিল, সে এখন বহাল তবিয়তেই চাকরী বাকরী করে বেঁচে আছে! মরার জন্য শত শত কারন আপনি পেতে পারেন, বেঁচে থাকার জন্য একটা কারনই যথেষ্ঠ, নিতান্তই ক্ষুদ্র জীবনে আমার একটাই মোটো নিজে নিজে রপ্ত করেছি, আমি আমার মতোই থাকবো, দুনিয়ার ভাবনা হিসাব নিকাশ চুলোয় যাক। কারন মরাই যে জীবনের নিয়তি সেই জীবনে এত এত ভেবে কি হবে? তাই সন্ধ্যে বেলায় পকেটকে সর্বশান্ত করে সিপিতে স্পাইসী চিকেন খেলাম, ভালো আড্ডা দিলাম, বাসায় এসে হিউ গ্রান্ট আর সারা জেসিকা পার্কারের এক রোমান্টিক কমেডি দেখলাম। তারপর এই পোষ্ট লিখলাম, ফজরের নামায পড়ে ঘুমাবো। তার আগে এক দেড় ঘন্টা বই পড়বো!
রাত জাগার সবচাইতে পজিটিভ দিক হইলো ফজরের নামাজটা ঠিক টাইমে পড়া যায়।
আর আমার আরেকটা প্রিয় কারন হইলো আপনার এইসব সহজিয়া কথকতা আগেভাগে পড়া যায়, ব্যাপারটা ভাল্লাগে অনেক।
আমারও রাত জেগে লেখতে ভালো লাগে, পড়ার জন্য বর্ণ তো আছেই!
ভালো থাকো সুহৃদ, দিনযাপন সুখের হোক!
রফিক লোকটা তো আসলেই ভালো। সত্য বলার সাহস তো সবার নাই। লোকটার আছে।
তোমার বাণীটাও এপিক
তাই নাকি?
রফিকের এই কথাটা ঠিক না
হ
ভাল লেগেছে
মুড়মুড়ে হয়েছে আজকের লেখা।
সবসময় মচমচে লেখা কি আর সম্ভব হয়
মাঝে মধ্যে লিখে ফেলি আর কি!
আমাকে আমার মত থাকতে দাও, আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি
থাকো তোমার মতো কে মানা করছে তোমারে

আইছেন বুঝদেওনা ওয়ালা
আমি তো আমার মতোই আছি, তাতে গুছিয়ে নেয়ার কিছু নাই। গুছানোর কথা চিন্তা করলেই অন্যের মতো থাকতো হয়!
অবশ্যই না। আই ডোন্ট এগ্রি যে গুছানোর কথা বললেই আরেকজনের মত থাকতে হবে। দুইজন মিলেও একইরকমভাবে থাকা যায় যদি দুইজনেরই সেই ইচ্ছেটা থাকে।
লাভগুরু হুজুরাইন আপনি কোথায় ছিলেন এতদিন? আপনারে এফ এম চ্যানেল খুঁজে তো!
কুনখানে খুঁজে? ঠিকানা কি? নিয়া যাইওতো একদিন।
আইচ্ছা, সহীহ সালামতে প্যাটপেট কইরতে পারবা তো?
আমি যে এক টানা কত কথা বলতে পারি ইউ সিম্পলি ডোন্ট হ্যাভ এনি আইডিয়া।
আর আমার মনে হয় ময়মনসিং এর মানুষজন প্রায় সবাই কথা বেশি বলতে পারে। 
ময়মন্সিংরে টানো কেন, আজ আমার এক বন্ধু আর তার গারলফ্রেন্ডের সাথে বসে ছিলাম তাঁদের আবদারে। বাজি রে বাজি, মেয়ে যে পেটপেট করে রে, কানে পুরো তালা লাগে অবস্থা। আগেও দেখা হইছে তখন কথা এতো বলতো না। বাড়ী তার বরিশাল!
বন্ধু আর বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের মাঝখানে কাবাব মে হাড্ডি হইতে গেসো ক্যান?
আজকের প্রথম আলোতে পাত্র চাই বিজ্ঞাপনে দেখলাম লিখসে, বরিশাল, কুমিল্লা, নোয়াখালীর পাত্র গ্রহনযোগ্য নয়। হাহাহাহাহাহাহাহা
আমারে নাকি তারা খুব মিস করে, দুমাস ধরে দেখে না। তাই যেতে হলো তারপর আবার সংসদ ভবনের সামনে, আইল্যান্ডে দুইজনের মাঝখানে বসে থেকে মেয়ের চাপাবাজি শুনলাম!
পারস্পারিক বিচার শুনতে হয়!
পারষ্পারিক বিচার শুনে কি কর? মিল করায় দাও? আর আমারে খেপাও লাভ হুজুরাইন বলে, না? আমি এগুলি বিচারে যাইনা। যার যার প্রবলেম সে সলভ করে নেক। আমার প্রব কে কবে সলভ করসে?
মিল মিশ করার আমি কে? আমি শুনি খালি আর সিদ্ধান্ত দেই!
প্রেম ভালোবাসার ব্যাপারে আমি কোনো কিছুই কই না, যা কই শুধু রেসপন্সিবিলিটি ও কমিটমেন্ট নিয়ে। এইসব কথা ক্লাস সিক্সের বাচ্চারাও বলে
তাই নাকি! সিক্সের বাচ্চারাও বলে নাকি!
তাই তো দেখছি আশেপাশে!
আয়হায়! আমিতো মিউজিয়ামের জমানায় চলে যাচ্ছি আস্তে আস্তে। আমার কি হবে?
কি আর হবে, অফিস আদালত করবা তারপর একটা জাদুঘরের সাথে বিয়ে থা হবে। সুখে শান্তিতে দিন কাটাবা!
আমি সিদ্ধার্থ মালহোত্রাকে বিয়ে করতে চাই। তুমি কি একটু ব্যবস্থা করে দিতে পারো?
তোমার চয়েজ গ্রেট। হাসি তো ফাসি দেখে ছেলেটার অভিনয় আমারো ভালো লাগে! দেখি আইএমডিবি হাঙ্গামা খুঁজে টুকে ওর এজেন্টের ফোন নাম্বার পাই কিনা!
আমি বেসিক্যালি নিখিল ক্যরেক্টারটার প্রেমে পড়সি। প্লীজ একটু ট্রাই করে দেখোনা পাও কিনা।
আর তোমার জন্য আমি আলিয়া ভাটকে খুঁজতেসি দাঁড়াও। 
আমার আলিয়া ভাটের দরকার নাই, কারন ওর ভালো লাগে বরুন ধাওয়ানকে!
আচ্ছা তোমার কাকে দরকার তুমি আমাকে জানিও। আমি ট্রাই নিব হার্ট এন্ড সোল।
আজকের মত গুডবাই। ঘুমাতে যাই। আর তুমিও ঘুমায় পড়। গুড নাইট এন্ড স্লিপ টাইট।
আমার দরকার নাই, সেরকম ফ্যান্টাসাইজ হই না এখন আর, ভালো থাকো শুভরাত্রি!
ধন্যবাদ আপু!
প্রিয় ও শান্তর কড়চা পড়তে পড়তে এতই মজে গেছি যে লেখাটা অনেক ভাল হয়েছে তা ভূলেই গেছি।
থ্যাঙ্কস ভাইয়া!
মন্তব্য করুন