এই শহরে এখনো কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া ফুল ফোটে!
গাছ গাছগাছালি বৃক্ষ রাজি সবুজ অঞ্চল সবারই ভালো লাগে, আমিও তার ব্যাতিক্রম না। কিন্তু আমি গাছের নাম একদমই চিনি না। কিছু কমন জানা শোনা বাদে আমার গাছ চেনা আর খেতে বসে মাছ চেনা সেইম ক্যাটাগরির মূর্খতা। বলতেই পারবো না, আর চেনার চেষ্টাও করি নাই। নিজে নিজে আবিস্কার করেছি এইসব না চিনলেও জগত সংসারের দিন যাপনে খুব একটা ক্ষতি হয় না। তবে আমার মামা দুর্দান্ত, মামা এত ভালো গাছ চিনে শুধু অবাক হই। গাছের গন্ধ শুকেই না তাকিয়ে বলে দিতে পারে গাছের কি নাম। বাড়ীতে গেলে যেখানেই যাই, মামাকে গাছ নিয়ে প্রশ্ন হবে। মামা আগ্রহ ভরে সেই গাছের সব ফিচার বর্ণনা করতে থাকবে। একটাবারের জন্যেও বিরক্ত হবে না। আমার একমাত্র ভাইয়া ছিল বিরক্ত হবার সম্রাট। কোনো জিনিস দু তিন বার জিগেষ করলেই বলবে জানি না। আর ভাইয়ার ধারনা আমি জানি, তাই পরীক্ষা নিচ্ছি ভাইয়া জানে কিনা আদৌ। কি মুসিবতের কথা!
আজ বিকেলে এক বন্ধু উত্তরা থেকে আসবে গার্লফ্রেন্ড সঙ্গে নিয়ে জিগেষ করলো পকেটের অবস্থা টান কোথায় বসা যায় বলতো। আমি বললাম সংসদ ভবনের সামনে বসে থাকি আয়। চটপটি তো আমি খাই না তোরা খাবি, খরচ খুবই কম। খালি বাতাস খেতে খেতে বসে থাকা। বন্ধু সায় দিলো বললো তোর মাথায় তো দারুন বুদ্ধি। আমি বললাম বুদ্ধি থাকলে কি আর তোরা প্রেম করবি, আর আমি তোদের এন্টারটেইনমেন্টের জন্য সাথে সাথে থাকবো। বন্ধু বলে কি যে বলোস না তুই, তোরে কতো ভালো পাই আমি আর আমার জান। হইছে জানরে খুশী করার ডায়লগ আমাকে শুনাস না, আমি এমনিতেই আসবো! যাই হোক গেলাম ১ ঘন্টার জন্যেই। আড়ংয়ের মোড় পর্যন্ত রিকশায় যাওয়া। রিকশা ওয়ালা দেখি ব্যাপক হুজুর, প্যাডেল মারে আর জোরে জিকির করে। আমি জিগেষ করলাম আপনি কার মুরীদ? বললো চরমোনাই। আমি মনে মনে বললাম কাম সারছে। উনি হুয়তো কিছু শুনে জিগেষ করলেন কিছু বললেন মামা । আমি বললাম না- আমি আবার কি বলবো। এমনিতেই আটরশী চরমোনাই পীরের মুরিদদের সাথে আমি তর্কে জড়াই না। কারন এরা এত বেশী মারফতী লাইনে কথা বলে, আমার মতো আমজনতার বোঝা দায়! যাই হোক রিকশা ভাড়া দিয়ে গেলাম। তারপর হাঁটা। বিকেলের রোদ আর কৃষ্ণচূড়া ও রক্তজবার সারি সারি গাছ, দারুন রোমান্টিক পরিবেশ। লাল লাল ইটে লাল লাল ফুল, দারুন এক অঞ্চল। খুব ভালো লাগছিলো। ক্যামেরা ম্যান হলে দারুন কিছু ছবি তোলা যেত। আমি মোবাইলেও তোলার চেষ্টা করি নাই। কারন আমি যা দেখি তা চোখে বুকে মাথায় ধারণ করি, এর একটা সুবিধা হলো ইচ্ছে করলেই মনে মনে ঘুরে আসতে পারি সেই দেখার জগত থেকে। বন্ধু আর তার গার্লফ্রেন্ড আদরে আটখানা হয়ে বসা। আমি দেখেও না দেখার ভান করলাম। কারন তারা একজন আরেকজনের কাঁধে মাথা রেখে বসেছিল। আমি আসলাম আর মধ্যে জায়গা করে দিলো। কাবাব মে হাড্ডি এরেই বলে। এই মেয়ে কাঁধে মাথা রাখার দূঃখেই শুরু করলো কথা। থামেই না আর। আমার বন্ধুর নামে দেয়া শুরু করলো বিচার। বিচার শুনে আমার কাজ কি তা আমি ভাবছিলাম? যখন মেয়ের পক্ষে কথা বলি তখন বলে শান্ত ভাই কতো ভালো, আমার লক্ষ্মী একটা ভাই, কত সহজে বুঝে যায়। আর যখন বন্ধুর পক্ষে কথা বলি তখন বলি, বন্ধুর সাইড তো টানবেনই। দুইজনই তো এক কালে প্রাইভেটে না গিয়ে বনফুলের ফাস্টফুডে বসে থাকতেন। আমি মনে মনে বলি আচ্ছা বিপদে পড়া গেল তো। পরে মাথায় আইডিয়া রাখলাম, বন্ধুর কাছে ভালো সেজে লাভ নাই। কারন আমার ভন্ডামি সে হাড়ে হাড়ে জানে, বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের পক্ষেই যাই। তাতে সবাই খুশী। আমি আনারস খেলাম বিটলবন দেয়া আনহাইজিনিক। তবে টেস্ট ভালো। আর ওরা খেল চটপটি ফুচকা। আমি শুধু বসে থাকলাম। কি এক প্রসঙ্গে জানি দুইজনের হলো ঝগড়া। আমি ভালো মতো বোঝার আগেই তারা ৩০ মিনিটের কথা বলার বিরতিতে গেল। আমি আর কি সেই বন্ধুর এস ফোর দিয়ে গেইম খেলছিলাম। আমাকে মেয়ে বলে শান্তভাই আপনি খারাপ লোক, আমাদের ভেতর ঝগড়া আপনি মিটমাট করে দেবেন না। আমি বললাম আম্মাজানরে আমার উকিল বাপ বা শ্বশুর হবার কোনো খায়েশ নাই। তোমাদের ব্যাপার তোমরাই বুঝবা, আমি কোন হরিদাস পাল। সেই মেয়ের আরো অনেক প্যাচাল হজম করে হাটতে হাটতে এসে পড়লাম চায়ের দোকান। ঘামে পুরো জপজপা অবস্থা! টাকা ছিল তাও হাঁটলাম, শান্তি লাগে খুব এমন করতে!
চায়ের দোকানে এসে দেখি সারপ্রাইজ, জেমস বসা। পুলক আসলো। পুলকের একপাল কলেজ বন্ধু আসলো। সবাইরেই বাধ্যতামুলক চা তারপর আইস্ক্রিম খাওয়ানো হলো। আমি আর জেমস সিনেমা নিয়ে আলাপ করছিলাম। জেমস সব সময়ই নতুন নতুন সিনেমার নাম বলে, আমি তা কিছু দেখি আর কিছু দেখি না। রটেন টমেটোস আর আইএমডিবি পড়ে সেইসব সিনেমা কত বাজে তা নিয়ে আলাপ কপচাই। এই করেই দুজনের চলে। দুজনের দুরকমের পছন্দ। আমার ভালো লাগে রোমান্টিক কমেডি ওর ভালো ওয়ার কিংবা ড্রামা মুভি। তবে দুজনের সব চেয়ে মিলের জায়গা হলো গানে। আমার যা ভালো ওরও তা ভালো লাগে। নতুন কোনো গান ভালো লাগলে জানাই, মোদীরে গালাগাল করি, বাংলাদেশের পলিটিক্সের তত্ত তালাশ নিয়ে ঝগড়া করি এইভাবেই কাটে সময়। সবাই আসে আড্ডা জমে। কিন্তু ঘুরে ফিরে সবাই মিলে পচাই জেমসকে। হাসিমুখে সে মেনে নেয়। আমারে তার ধারে কাছে কেউ কিছু বললে আমি তেলে বেগুনে জ্বলে যাই। কিন্তু জেমস সব হজম করে অবলীলায়, আমিও মানুষটা এই শহরের মতই নষ্ট, নিজের বলার সময় বাছ বিচার নাই, অন্যেরা সামান্য বললেই নিজের রাফ এটিচিউড দেখাই। সবাই তা জেনে গেছে, তাই আমি শুধু কথা শুনিয়ে যাই।
এই পোষ্ট নিবেদন করিলাম ব্লগার প্রিয় কে। আড্ডা দিতে দিতেই এই লেখা শেষ করলাম, ইচ্ছে ছিল না আজ লেখার!
আড্ডা দিতে দিতে এরকম একটা পোস্ট! তুমিতো জিনিয়াস! আর লেখাটাও হইসে সেরাম। পুরাই এন্টারটেইনমেন্ট।
জীবনে প্রথমবারের মতো কেউ আমাকে উৎসর্গ করে কিছু একটা করলো। আমি পুরাই সারপ্রাইজড এবং কিছুটা স্পীচলেস হয়ে গেলাম।
থ্যাঙ্ক ইউ শান্ত। অনেক ভাল থাকো তুমি।
আগে কেউ তোমারে কোনোদিন উৎসর্গ করে নাই?
আজব তো!
আমি সেরকম কোন পপুলার কেউ না।
এই ব্লগইতো পপুলার না। পপুলার না হলে কি একটা ব্লগের প্রথম পাতায় আমার একারই পোষ্ট থাকে পাঁচটা
পপুলার না হলেও ব্লগটাকে আমরা ভালোবাসি। প্রথম পাতায় পাঁচটা পোস্ট থাকলেও তো তোমার লেখা ভালো পাই।
থ্যাঙ্ক ম্যাঙ্কু অনেক!
আমি একবার করছিলাম, ভুইলা গেছে!
এই শয়তান, তুই কবে আমাকে উৎসর্গ করলি?
আমাকে লিঙ্ক পাঠা 
আরও ৩/৪ জনের সাথে আপনেরও নাম ছিল..হুহু..
সেটা অবশ্য আমি অনেকদিন চিন্তা করসি। ব্লগটা বেঁচে আছে তোমার একান্ত প্রচেষ্টায়।
কিপ ইট আপ।
তোমরা পড়ো বলেই লেখা!
হুম আর সব মজার মজার দিনলিপি।
দারুণ একটা কথা।
কপালে আছে হাড়
কি আর করবে চাচা হাকিদার!
পক্ষে ভোট!
এতে এতো ভোটাভুটির কি আছে সেটাই তো বুঝলাম্না
একসাথে দুজন দুজনের কাঁধে কি করে মাথা রাখলো?
আর এক সীটিং এ, ঝগড়া, অভিমান, ফুচকা, কাঁধে মাথা, নালিশ? গতি আছে বটে
মন্তব্য করুন