২৫০ পেরিয়ে!
নিজের পোষ্ট সংখ্যা কত, তার হিসেব আমি খুব একটা রাখি না, সেরকম ভাবে মনে রাখাই হয় না। মাঝে মধ্যে চোখে পড়লে অবাক হই আহা কত পোষ্ট লিখে ফেললাম এই তিন আড়াই বছরের মধ্যেই। শান্তি পাই, পুরোনো পোষ্টগুলো দেখি। ডায়রীর মতো করে পড়ি, আহা আগে কত কি নিয়ে ভাবতাম। কত সেনসিটিভ সচেতন রসিক মানুষ ছিলাম। তবে আগের পোষ্টগুলোতে বাক্য গঠন ও বিরাম চিন্হে ভুল সিরিয়াস চোখে পড়ে। এখনো যে তা নাই তা বলবো না, কিন্তু আগের চেয়ে কম চোখে পড়ে। আগে ধারনা ছিল ব্লগ লিখতে লিখতে এক ধরনের হাত এসে যাবে, হয়তো নিম্ন মাঝারী মানের গল্প লিখতে শুরু করতে পারবো। কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি, যা আশা ভরসা ছিল সব শেষ করে দিয়েছে সৈয়দ শামসুল হক, তিনি বাংলা গল্প উপন্যাস লেখার যে উপায় উপকরণ দেখিয়েছেন তা পড়ে আমি বিস্মিত। লেখালেখি জিনিসটাকে আমরা যত খেলো ব্যাপার হিসাবে ধরি তার চেয়ে অনেক বেশি শ্রমসাধ্য ও অধ্যাবসায়ের সৃজনশীল কাজ। তাই এই ভালো, ব্লগ লেখি তেমন কোনো প্রমিজিং চিন্তা থেকে লেখতে বসি না। যা ইচ্ছে করে লিখে ফেলি। শুরু থেকেই এই ব্লগের মানুষেরা বিশেষ করে আমার বড় ভাই বোনরা যে অনুপ্রেরনা দিয়েছে, তাতে অটোমেটিক এক ব্ল্যাংক চেক পেয়ে গিয়েছিলাম। কে কি ভাবলো, কে কি বললো তোয়াক্কা না করে খালি লিখে যাও। তাই করে করে ২৫০টা পোষ্ট দিয়ে ফেললাম!
ফেলে আসা পোষ্টগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় কত কষ্ট করে লিখতে হয়েছে। কারেন্ট চলে যায়, পিসি হ্যাং হয়, লেখা মুছে যায় কত রকমের যন্ত্রনা পোহাতে হয়েছে। কত সমস্যা তখন, সময়ের সংকট, মশার আধিক্য, গরমের যন্ত্রনা, বুয়ার যন্ত্রনা, দিন যাপনের গঞ্জনার ভেতর দিয়ে ব্লগ লিখতে হতো। তার তুলনায় এখন কত আরাম, এমএস ওয়ার্ডে লিখি নোটবুকে, সেইভ করার ঝামেলা নাই অটো সেভ হয়ে থাকে। মশাও কম, যখন মন চায় লেখা যায়। চা বানানোর দারুন এক ইলেক্ট্রিক কেটলী গিফট দিয়েছে নতুন মামী তাতে চায়ের তেষ্টাও এখন আর থাকে না। খালি আরাম আর আরামে লিখি, তাই হয়তো আগের মতো সেই ফীল দিয়ে লিখতে পারি না। আগের অভ্যাসের একটা শুধু আছে, যা হয়তো থাকবে আজীবন সেটা হলো অস্থিরতা। সৈয়দ হকও অবশ্য অস্থিরতার পক্ষে। তিনি বলেছেন, যে অস্থির উদ্বিগ্নতা ও সৃষ্টির উন্মাদনা না থাকলে ভালো লেখা সম্ভব না। প্রশান্ত মন দিয়ে আসলে ফরমায়েশী লেখা সম্ভব কিন্তু তা লেখককে তুষ্ট করতে পারবে না কখনোই। তাই অস্থির চঞ্চলমতি মন আল্লাহ পাক পছন্দ করুক আর না করুক, আমি তাই নিয়েই খুশী। শান্ত নামকরনের স্বার্থকতা সব সময় রাখতে হবে এমন কোনো কথা নাই!
হলপ্রিন্টে সিনেমা দেখছিলাম 'যদি লাভ দিলেনা প্রানে', ভালো প্রিন্ট নাই। ত্রিশ মিনিট দেখে আর দেখা হলো না। তবে যতক্ষণই দেখেছি, যা বুঝলাম সিনেমাটা খাসা। এই ধরনের রোমান্টিক ড্রামা মুভি আমার ভালো লাগে। সিনেমার প্লট হলো এক ব্যর্থ প্রে্মিক প্রেমিকার আবারো দেখা হবে হবে অবস্থা, তার সাথে এই প্রজন্মের এক যুগল যোগ করে দিয়ে দারুন এক ফিকশন, সেই সমান্তরালে চলছে একটা সিনেমার গল্প তৈরির কাজ। যত দুর দেখলাম আশা করাই যায় ভালো সিনেমা হবে। তাই টরেন্টে নামাতে দিলাম, দেখি কেমন প্রিন্ট আসে। আশরাফ রাসেল ভাই মারফত অপুর পাঁচালীর টরেন্ট লিঙ্ক পেলাম, সেটাও নামচ্ছি। আমার মাসে যে খরচাপাতি পাই তা এই ইন্টারনেটের পিছনেই চলে যায়। ৩০ জিবি নেট ১৪০০ টাকা, তার সাথে মোবাইলে নেট ৪০০-৫০০ তো যাই। থাকলো বাকী হাজার দেড়েক টাকা তাই দিয়ে চায়ের দোকান, তাই দিয়ে আলমাহবুব, তাই দিয়ে সিপি চিকেন থাকে কই আর টাকা? বেকার এক মানুষ আমি, তার কত বিত্ত বিলাস!
বই বের করছি না নতুন, হাতের কাছে যা অপঠিত তাই পড়তে হচ্ছে। পড়ে ফেললাম সরদার ফজলুল করিমের অনশনে আত্মদান। মামা আমার জন্য কিনেছিল, দশটা প্রবন্ধের সংকলন। অভিজ্ঞ মানুষ, মেধাবী অধ্যাপক, ত্যাগী রাজনীতিবিদ ও জ্ঞানী তাত্তিক হলেও সরদার ফজলুল করিমের লেখা পড়াটা এক শ্রমসাধ্য ব্যাপার। উনার যে জিনিসটা সব চাইতে ভালো তা হলো নিজেকে নিয়ে শ্লেষ, নিজেকে এরকম মামুলী সাধারণ বানাতে যে কেউ পারে না। অনশনে আত্মদান নামের যে প্রবন্ধটা তাতে পাকিস্তান হবার একদম শুরুতেই কিভাবে বাম কর্মীরা জেলে অনশন করছিলেন রাজবন্দী মর্যাদার দাবিতে তার অসাধারণ বয়ান। অনশন করলে জেল অথোরিটি কি কি করে তার বর্ননা। আমার মনে পড়ছিল, কিছুদিন আগে পড়া সতীনাথ ভাদুড়ীর উপন্যাস জাগরী র কথা। আরো কিছু প্রবন্ধ আছে যা একাশি বিরাশি সালের দেশ নিয়ে অনুভব নিয়ে লেখা। কিভাবে জানি মিলে যায় এখনো। তবে সেই সহজবোধ্যতার সংকট, ভাষাকে অযথা জটিল করার প্রবনতা সব প্রবন্ধেই বিদ্যামান।
আমার এক আড্ডার ছোটভাই আছে। নাম অভি। ইউআইইউ থেকে ত্রিপল ইতে অনার্সের ড্রপ আঊট, এখন লন্ডনে পড়ার ইচ্ছা। বিয়ে থা করছে। সে একটা ডায়লগ দেয় আমার সাংঘাতিক প্রিয়। 'টেকা পয়সা তো চামার মুচিও কামায়' তাতে কি আসলো গেল? আমিও এই ডায়লগ দেই সমানে ভাইয়ের টাকায় ফুটানি করতে করতে। কিন্তু আজ মনে হলো টাকা পয়সা ওতোটা সহজলভ্য ব্যাপারও না। একটা জিনিস কিনবো, কথা দিয়ে রাখছি বিক্রেতাকে, কিন্তু কিনতে পেলাম আর কই? তাই সামনে ধার যাদের দিয়েছি তা উদ্ধার অভিযানে নামবো। মানুষের কাছ থেকে যেমন নিয়েছি তেমন দিয়েছিও নেহায়েত কম না। জানি ব্যর্থ হবো তাও চেষ্টা করি দেখি কতদুর কি পাওয়া যায়। এদিকে আবার ভার্সিটির এক কাজে টাকা লাগবে, তা চিন্তা করছি বাসা থেকে নিবো না, চাইবোই না আর। দেখি কি হয়। আমাদের আড্ডার এক জনপ্রিয় ডায়লগ আছে- তোর তো কথাই হয় না। আমার শুধু কথা না। লেখাটাও হয় না। তাও লিখি এই ব্লগটার কথা ভেবে, আর লোকজনের যে ভালোবাসা পেয়েছি তা ভেবে। এই করে করে আড়াইশোর উপর পোষ্ট দিয়ে ফেললাম। আশা করি লিখতেই থাকবো!
অভিনন্দন।
একদিন হাজার পার হওয়া পোস্ট দিবেন, সেই দোয়াই করি। শুভকামনা অফুরান।
আরব্য রজনী?
বেঁচে থাকলে আর ব্লগটা থাকলে হবে একদিন এক হাজার!
অভিনন্দন
থ্যাঙ্কস ভাইয়া!
অভিনন্দন তোমাকে।
আমিও তো অস্থির মানুষ কিন্তু লিখতে তো পারি না।
এখন যে সমস্যাগুলি তা ছোটখাটো,এমন থাকেই, একতিন এসব থাকবে না, তখন দিনগুলি মধুর হবে। শুভকামনা শান্ত।
দোয়া রাইখেন আপু!
শান্ত --- আমি আসতেছি, এই কারণে একটা দাবাত হয়ে যাক। কী বলো?
অবশ্যই আপু!
সাবাশ
লিখতে থাকেন!
আপনাকেও থ্যাঙ্কস ভাইয়া!
অভিনন্দন! একদিন দেখা যাবে হাজারতম পোস্ট লিখতেসো।
দোয়া কইরো!
মন্তব্য করুন