"কথাই হয় না"
'কথাই হয় না' আমাদের আড্ডার খুব জনপ্রিয় একটা লাইন। যার কথাই পছন্দ হয় না, তাঁর ব্যাপারে সোজাসুজি মন্তব্য, 'আপনার তো কথাই হয় না'। এর আবার যুতসই একটা উত্তরও আমি দেই। ঠিক বলছেন, কথা খালি আপনাদেরই হয়,আপনারাই বরের বাপ আবার আপনারাই কনের বাপ। তবে মেইন লাইনটা যুতের না। কারন কথা কি হওয়ার জিনিস, কথা তো বলার জিনিস। আড্ডায় যার যা মনে আসে তাই তো বলে দেয়। এখানে হওয়া না হওয়া কি? সবই তো দিন শেষে অর্থহীন কথকতা। তাও এত পপুলার লাইন এইসব যুক্তির ধার ধারে না, কাউকে ব্যর্থ প্রমান করতে একটা লাইনই যথেষ্ট, 'ধুর মিয়া তোমার তো কথাই হয় না'। এই লাইনের পারফেক্ট এস্তেমাল করেছিল আমার এক বন্ধু। তাঁর সাথে ঢাকা ভার্সিটির টিচারের কি নিয়ে ঝগড়া হচ্ছিলো নীলক্ষেতে, সে ঠাস করে বলে বসলো আপনি কিসের শিক্ষক, ছেলেমেয়েদের কি পড়াবেন, আপনার তো কথাই হয় না। শিক্ষক মহোদয় নির্বাক হয়ে বিদায় নিলো।
আড্ডায় আমার এক ছোট ভাই রেগে গেলে বলে উঠে, 'টেকা পয়সা তো চামার মুচিও কামায়'। এই কথাটার মানে হলো যে টাকা পয়সা তেমন দুস্প্রাপ্য উন্নত জিনিস না, এইটা অনেকের পক্ষেই কামানো সম্ভব। তাই টাকাকে এতো ইম্পোর্টেন্স দেয়ার মানে নাই। এই ডায়লগটাও আমি সমানে দেই আজকাল। মামাকে বেশী বলা হয়, টাকা নিয়ে ভাবো কেন, টাকা তো চামার মুচিও কামায়। মামা দুম করে বলে দেয়, তা কামাক আমি তো চামার মুচি না তাই আমি কামাই যা তা নিয়ে চিন্তায় পড়তেই হয়। তবে আমার কাছে টাকা এক অসাধারণ জিনিস। টাকা দিয়ে যে অসাধারণ সব জিনিসের সান্নিধ্য পাওয়া যায়। যেমন পকেটে টাকা ছিল কাল, তাই কিনে ফেললাম মাসের খরচের সামনে কি বিহীত হবে না হবে, ১১০০ টাকার বই। মতী নন্দীর দশটি উপন্যাস এক সাথে এক সমগ্র, আর চন্দ্রীলের দুটা বই। শেষ কর্ম খালাস। বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না এই কথাটা আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট মানি, তাঁর কারন হলো একটা বই আমরা যে দাম দিয়ে কিনি, লেখক যে পরিশ্রম করে লেখে, আর প্রকাশক যে চিন্তা ও ঝুকি সাথে করে ছাপায় তাঁর সেই পরিশ্রমের সাথে আমার ক্রীত টাকার মুল্যের কোনও তুলনাই চলে না। কত বই তো আমি ধারে পড়ি, অথচ লেখক তো আর ধার করে লিখে নাই আর লিখলেও তাঁর যে শ্রম ঘাম যত্ন সেই বিনিময়ে আমার পড়তে কষ্ট হলেও তা সব কিছুই আসলে ফ্রি। ওলোর এক ব্রডব্যান্ড প্যাকেজে চলে মাত্র ১ মাস। কিন্তু ১৫০০ টাকার বই আপনি এক মাসে পড়বেন তো পড়বেন, সাথে রেখে দিবেন অমুল্য সম্পত্তি হিসেবে।
যে কথা বলছিলাম, এই দেশে আসলে ভাবলে কারোরই কথা হয় না। মন্ত্রী, সংসদ সদস্য,আমলা, সরকারী- বিরোধী রাজনীতিবিদ, পেশাজীবি, ছাত্র জনতা কে আর হবার মতো কথা বলে। সব কথাই অনর্থক, এমন কি প্রধানমন্ত্রীর কথাও। কি দরকার ছিল উনার বলার, যে উনি ওসমান পরিবারদের সঙ্গে আছেন ও থাকবেন। এইটাতো সবাই আগে থেকেই জানে। বলার কি ছিল প্রয়োজন! এই নিয়ে সবার প্রতিক্রিয়া আমাকে আরো বিস্মিত করে। সবাই কি তবে আশায় ছিলেন, যে সিনেমার মতো হবে সবকিছু, অপরাধীর হাতে হাত কড়া আর নায়ক নায়িকা থাকবে সারাজীবন আনন্দে। এখনকার গডফাদাররা সিনেমার ভিলেন আহমদ শরীফ কিংবা রাজীবের মত নাদান না। তাঁদের আইনের হাতে আনার আগে তাঁরা বছরে ৩৬৫ দিন আইনকে নিজেরে পকেটের ওয়ালেটে রাখার মত পাওয়ার রাখে। তাই সব কিছুই নষ্টদের অধিকারেই যাবে। আমাদের মতো সুবিধাবাদি মানুষদের পালিয়ে সামলিয়ে সাবধানে বেঁচে থাকতে হবে। চান্স পেলেই ধান্দাবাজিতে ছক্কা হাকাতে হবে, ব্যাস লাইফ ইজ বিউটীফুল!
কথায় কথা বাড়ে। কিন্তু কিছু মানুষের কথাই এক আজন্ম ধোকা। যা বলে তা সেই মুহূর্তের জন্যই বলা, আসলে সে কত বড় ভন্ড তা শুধু সেই জানে। আর তাঁর সাথে যে গভীর ভাবে মিশবে সেই জানবে। লুকিয়ে রাখা যাবে তবে কাছের মানুষের কাছে না। একদিন মুখোশ খুলে পড়বেই। মোহাম্মদপুর বসিলা এইসব দিকে আগে প্রচুর ডাকাত ছিল, র্যাবের ভয়ে অনেকেই হাজী হয়ে সেই পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন ব্যাবসায়ী, কেউ কেউ মসজিদ মাদ্রাসা বানায়। কিন্তু জেনারেশনের পর জেনারেশন কিভাবে জানি জেনে যায়, এ লোক ডাকাত। তাই যত ধার্মিকই হোক মানুষদের কাছে পরিচয় সেই আগেরটাই। তবুও আমরা চেষ্টা করি নিজের আসল রূপটাকে না দেখানোর, মার্জিত বিনয়ী ভদ্রতার ভং ধরি। কিন্তু একদিন না একদিন কেউ না কেউ তা খুলে ফেলবেই। বেরিয়ে আসবে আসল শয়তান মানুষটা। আমরা কেউই ট্যাগ খেতে চাই না। এই সমাজে ট্যাগ খেলে আর মুক্তি নাই। একবার যদি সবাই জানে আপনি নেশায় আসক্ত, তবে আপনি আসক্তই। আপনি যত ভালো হন আর যাই হোন, আপনি সবার কাছে ড্রাগ এডিকটেড মানুষই। তাই আমার সাবেক চায়ের দোকানদার করমআলী বলতো, মামা নিজের গোমর ফাঁস করা যাবে না। একবার গোপন জেনে গেলে মানুষ শুধু করে যাবে ব্ল্যাকমেইল আর নিবে দুর্বলতার সুযোগ। তাই ট্যাগ খেলেও বিপদ, আমার এক পরিচিত লোক আছে, নাম খোকন। লোক ভালো খুব ভালো কাজ জানে রাজমিস্ত্রী ও কাঠের। কিন্তু তাকে কেউ কাজে নেয় না, কারন কিছুদিন তিনি ছিলেন পাগল। এখন সুস্থ তাও সবার কাছে পাগল। তাই কথা হয় আর নাই হয় সাবধানে কথা বলেন, যাদের মুখোশ আছে তারা তা খুলে ফেলুন, কারন ধরা পড়তেই হবে। আর যাদের ধরা খাবার চান্স কম তাঁরা শক্ত করে পড়ুন যেন ফাঁস না হয় এক্সামের প্রশ্নের মত!
অদ্ভুৎ লেখার ক্ষমতা আপনার । যেকোন বিষয়ে লিখতে পারেন । না বিষয়েও লেখার সমস্যা নাই আপনার ! প্রায় প্রতিদিন লেখার জন্য ধন্যবাদ ।
আপনারা কষ্ট করে পড়েন বলেই লিখি। ধন্যবাদ ভাইয়া!
বেশ লিখা। দিন দিন আর ও ভাল লিখছ।
থ্যাঙ্কস আপু! নিয়মিত পড়েন আর লিখেন, এই ব্লগের সাথেই থাকেন!
লেখাটা ভাল হয়েছে
তাই নাকি আপু?
লেখাটা ভাল হয়েছে
'আপনার তো কথাই হয় না' - বন্ধুদের পচানো জন্য পারফেক্ট লাইন
একদম ঠিক। তুমি দেশে আসো, তুমারেও কই- ভাই তোমার কথাই হয় না!
বইটা বেশি ভাল্লাগেনাই। দশটার মধ্যে ২/৩টা খালি ভাল্লাগছে।
সেইম টু ইউ
মন্তব্য করুন