দিনগুলোর তাই নাম ছিল না!
কবীর আসলো অনেক দিন পর। কোন কবীর? চায়ের দোকানদার দেলোয়ারের ভাই কবীর। ছেলে ভালো, চিনতাম আগে ভালো মতোই। এগারো সালের দিকে কিছুদিন উনি বেকার ছিল, তখন দেলোয়ারের চায়ের দোকানে বসতো। বয়সে আমাদের সমানই হবে, বিয়ে করেছে দুটো। যেকোনো চ্যানেলে আমি এখন কি করবো টাইপ মানসিক রোগ বিষয়ক অনুষ্ঠান হলে সে অবধারিত প্রশ্ন করতো, আমার দুই বঊ, এক সাথে দুই রুমের বাসা নিয়ে থাকে আমি এখন কি করবো? আমি এই কাজ কারবার শুনে শুধু হাসতাম। একটা মার্কেটিংয়ের জব করতো, দুই মাস নায়ক মারুফের পারসোনাল এসিটেন্টের চাকরীও করেছে। কি ২৩০০ টাকার নাকি কি এক টিব্যাগের বক্স আছে কাজী হায়াত ও তাঁর ছেলে চা খায়, আর খালি টেস্ট করে যে হাতটানের অভ্যাস আছে নাকি, মোবাইল ওয়ালেট ফেলে রাখে নানা জায়গায় দেখে কবীর নেয় কিনা। কবীরের বাসা দূরে তাই খুব একটা দেখা সাক্ষাৎ হয় না অনেকদিন। কিন্তু তাঁর গল্প ভুলি না। দেখা হলো অনেকদিন পর। পুলককে ফোন দিয়েছে। বুকে প্রায় আধা কেজি সাইজের এক টিউমার হয়েছে তাঁর, নরম মাংসপিন্ড চাপ দিলে ভিতরে ঢুকে যায়। ডাক্তার বলছে শীঘ্রই অপারেশন করিয়ে ফেলতে। কবীরের কাছে টাকা আছে মাত্র তের হাজার। সন্ধ্যাটা খুব আমোদে কাটছিলো, সব কিছুই মাটি হয়ে গেল এই কাহিনী দেখে। চিকিৎসার জন্য লাখ খানেক টাকা দরকার, কবীর আমাদেরকে কিছু করতে বলতেছে। আমরা আর কি করবো, নিজেরাই চলি বাপের টাকায়। পুলক বুদ্ধি দিলো শান্ত ভাই আপনে অনলাইনে কিংবা ফেসবুকে ট্রাই দেন আপনার তো জানা শোনা অনেক। আমি চুপ ছিলাম, অনলাইনে আবেগময় পোষ্ট লেখে টাকা পয়সার কান্নাকাটি আমার ভালো লাগে না। নিজের জন্য বা বন্ধু বান্ধবের জন্য হলে ট্রাই করা যেতো, কবীরের জন্য কিভাবে করি? সামান্য নিজের একটা কাজ এড়ানোর জন্য মানুষকে দূরের বলে মনে করা। এইভাবে চিন্তা করলে কেউই আপনার আপন মানুষ না আপনি ছাড়া। তাই অফলাইনেই আগে ট্রাই করি দেখি কি করা যায় কবীরের জন্য। সমস্যা হলো কবীর মেধাবী ছাত্র না, ম্যাট্রিক ফেইল তরুন, আমাদের সমাজে মেধাবী ছাত্র ছাড়া আর কারো জন্য চেষ্টা তদবীর করে টাকা পাওয়া যায় না। আর সবাই মনে করে ধান্দাবাজ, টাকা লুটতে আসছে।
ডেস্কটপে কেমন জানি লাগে, তারপর মনিটরটা যদি হয় ২০০০ সালের মডেলের। তাও কাজ হয়ে যাচ্ছে। কারন নতুন নোটবুকটার পাওয়ারে সমস্যা করতেছে, অন হয় না। ভাইয়ার অফিসে পাঠাবো দেখি কি বলে কম্পিউটার ডাক্তার সাব। এই ডাউস স্ক্রীনে টিভি দেখা ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগে না। তবে টিভি দেখা ফেসবুকের চেয়েও বাজে কাজ, কারন কাজের কিছু নাই, অযথা সময় নষ্ট। এই এতদিন টিভি ছিল না সমানে বই পড়েছি আর নোটবুক নিয়ে বসে থেকেছি। এখন খালি টিভিই দেখা হয়। আজাইরা খবর, বাজাইরা নাটক, বস্তাপচা হিন্দি সিনেমা ও গান। এইসব দেখে দেখে ক্লান্ত। এতদিন পর টিভি দেখতে এসে মনে হয় কিছুই নতুন নাই। হিন্দি সিনেমা সব তো আগেই দেখি, ইংলিশ সিনেমাও টিভিতে যা দেখায় নব্বই ভাগই দেখা। আর সব চ্যানেলেই এত এ্যাড দেখায় অনুষ্ঠানের ফাঁকে তাও এক সমস্যা। রিমোট টেপার যে উত্তেজনা আগে বোধ করতাম তা কেমন জানি লাগে। একমাত্র যমুনা নিউজ বাদে আর কোনো চ্যানেলেই আমি কনভিন্সিং কিছু দেখি নাই। সেই পুরোনো লাইভ টকশো সব পুরানো দালালরাই। সেই ঘুরে ফিরে একই শিল্পী নানান জায়গায় লাইভ গাইছে, সেই অসম প্রেম কিংবা নৈতিকতাহীন প্রেম রোমান্সের গল্প ভরা নাটক, হিন্দি সিরিয়াল কপিক্যাট ধারাবাহিক নাটক- যেখানে সিনিয়র অভিনেতাও কম না কিন্তু স্ক্রীপ্ট পুরাই বাল মার্কা। অনেক নতুন অল্পবয়সী ছেলে মেয়েদের দেখি নাটকে সাজ সজ্জা করে হাতে বিশাল সাইজের এক সেট নিয়ে তরুন তরুনীর প্রেমের রোল করে, আর এমন সব সিন যা সিনেমার জন্য খুব ডালভাত কিন্তু বাংলা নাটকে আমি আগে দেখি নি। নাটকের পরিচালকেরাই সুখী, কত নিত্য নতুন ছেলেমেয়েদের নিয়ে মোজ মাস্তিতে আছে। তবে সব চেয়ে মজা পাইছি ওয়ার্ল্ডকাপ বিষয়ক টকশো গুলাতে, কথাই হয় না কারোর। এনটিভিতে যে টকশোটা হয় সেটাই আমার কাছে একমাত্র লজিক্যাল ও ফুটবলের প্রতি ভালোলাগার কথাগুলো বলে।
রোজা এসে পড়লো। ভুলেই ছিলাম। সময় কম। এই দুই দিনে হেভি খানাদানা দিতে হবে, আজ হুট করে মনে পড়লো। রোজার দিনে আমার কষ্ট লাগে একটাই। সকালবেলা চা খেতে না পারার দুঃখ। এই খুশীতে ইফতারীর পর তিন চার কাপ চা খাই টানা। রোজা রাখার আরেক সমস্যা হলো বুয়ার জঘন্য রান্না খেয়ে রোজা রাখা। তারপরেও ভদ্র মহিলা মাস্ট বি বেশ কয়েক দিন আসবে না। তখন বাইরে খেয়েই বা মামাকে দিয়ে রান্না করিয়ে রোজা রাখতে হবে। ইফতারীরও কষ্ট এবার হয়তো হবে। কারন গত দুই তিন বছরের মতো ভাইয়ার অফিসে গিয়ে ঠাসায়া খাওয়ার দিন শেষ। মামা না থাকলে অফিসে যাওয়া আনন্দদায়ক না। তার ভেতরে গেজেটও এখন হলো না, কবে নিয়োগ কবে পোষ্টিং তা সব তো দূরের কথা। তবে এই রোজা ও এরপরের ঈদেও আমি ফ্রিই থাকলাম আগের মতোই। তাই উপোষের দিন রাত্রী লিখতে পারি- দিনের পর দিন। বাড়িতে গিয়ে পোষ্ট দেয়া হতে পারে যদি নোটবুক ঠিক হয়। এবার আর সেই নোকিয়া সেট নাই, যাতে যেকোনো অবস্থাতেই লেখা যেতো। যাই হোক ব্লগিং চলবে। সিনেমা দেখা, বই নিয়ে লেখা, দিন যাপন, মানুষের গল্প চলবেই। সাথে টিভি দেখা নিয়েও তো এখন লেখা যাবেই। কেউ পড়ুক না পড়ুক লিখবো এইটা শিউর! জয় বাংলা, বাংলাদেশ দীর্ঘজীবি হোক। একশন, একশন, ডাইরেক্ট একশন
এই পোষ্ট নিবেদন করলাম বিষণ্ণ বাউন্ডুলেকে। আমার অনেক পোষ্ট প্রথমে পড়েই কমেন্ট করে সে, রাত যতোই হোক, অনেকদিন ধরেই আমার এইসব আজাইরা লেখা গিলে সমানে, এরকম ব্লগার ও বন্ধু পাওয়াই খুব দুর্লভ। অনেক অনেক শুভকামনা। সফলতার বন্যা বেয়ে নামুক আগামী দিন গুলোতে বর্ণের জীবনে।
বিষণ্ণ বাউন্ডুল এটা ডিজারভ করে।
টিউমার এর সাহায্যের ব্যাপারটা মাসুম ভাই/মেজবাহ ভাই এর সাহায্য চেয়ে দেখতে পারো। খারাপ লাগে
রোজা পরযনত লিখো। তারপর ইদে তুমি ও নাই আমিও নাই
ডাউস/ ঢাউস
মোজ / মৌজ
মনে রাখবো আপু!
তাড়াতাড়ি সুস্থ হন, ইহজাগতিক কোনো সাফল্য ব্যর্থতা নিয়ে মেজাজ খারাপ করে লাভ নাই!
সত্যিই রোজায় ঢাকায় থেকে রোজা রাখাটা কষ্টকর। তাও যদি বোয়ারা রান্না করে রেখে যায়। আগের রোজায় ঢাকায় ছিলাম, ভদ্র মহিলা শুধু তরকারি পাক করেই চলে যেত। ভাত রান্না করতে হত আমাদেরই ! যাক, এবার গ্রামে আছি। শান্তি আর শান্তি...
ভালো থাকেন গ্রামে!
আপনের কিছু লেখা পড়লে মনে হয়, ভালোবাসা একটা টাইমে অভ্যাসের মতন হয়ে যায়।
আপনার স্পিরিট দীর্ঘজীবি হওক।
নিবেদন দেখে মন ভালো হয়ে গেল অনেক, জম্পেস ঘুম হবে এখন।
শান্ত থাকলে জীবনে বর্ণের অভাব হয় না। হবেও না, ইনশাল্লাহ!
থ্যাঙ্কস বর্ণ। এভাবেই আনন্দে সুখে দিন কাটাও!
সুখ দুঃখ মিলিয়েই জীবন
সেটাই!
তোমার লেখাগুলো পড়তে ভাল লাগে।
শুভকামনা সবসময়ের জন্য।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু!
চলুক। শুভ কামনা থাকলো। লেখা ভাল লেগেছে।
থ্যাঙ্কস ভাইয়া!
নিয়োগ হয়ে গেলেই তো ব্যস্ত হয়ে যাবা। রুটিন মাফিক জীবন যাপন। তবু দোয়া করি তাড়াতাড়ি নিয়োগ হোক। আগামী ঈদের আগে একলা থেকে দোকলাও হও। আর লিখতে থাক সবসময়।
পড়ে তো সবাই। নেটে এসে কমেন্ট করি আর না করি, তোমার লেখা ঠিকই পড়ি।
ফেসবুক থেকে রিটায়ারমেন্ট নিয়ে ভালো করছেন আপু, সময় নষ্ট
এখনতো আবার দেখি একই প্রোগাম পাঁচ চ্যানেলে এ্যাট এ্যা টাইম দেখাচ্ছে।
হ আজই দেখলাম। মজা লাগলো। রিচির তরমুজের শরবত সব খানে!
হ। সেটাই।
আবার লাক্সের একটা ফ্যাশন অনুষ্ঠানও সব খানে!
মন্তব্য করুন