আমি আছি এর মাঝেই!
শুক্রবারে আমার মন মেজাজ আজকাল ভালো রাখার চেষ্টা করি। সকাল থেকে বের টের হই না। বাসাতে বসেই থাকি। পিসিতে না বসার চেষ্টা করি। সিদ্দিক সালিকের ইংরেজী বইটা প্রায় শেষ করে দিলাম। কোনো এক ইউপিএলের মেলায় কিনে ছিলাম। পড়াই হয় নি। টেবিল আর পিসির চিপায় পড়েছিল। আমার বেশীর ভাগ কিছুই এরকম। এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকে। বুয়া চায় গোছাতে। আমি বলি আপনার দরকার নাই, যে কাজ করেন তাই পারেন না আর অন্য কাজ তাও আবার গোছানো। আমার ঘর ভর্তি বই এইভাবে নানান প্রান্তে ছড়ানো, যে কেউ দেখে ভাববে কি দারুন পড়ুয়া ছেলে, আসলে আমি ওতো পড়ুয়া না। রুমে থাকলে বেশির ভাগ সময় কানে হেডফোন দিয়ে পিসি খুলেই বসে থাকি। কিন্তু খুব ভাব নেই যেন পড়তে পড়তে জান নিয়েই টানাটানি। তবে চাইলেই আমি পড়তে পারি এবং ভালোবেসেই পড়ি সবসময়। নামায পড়তেও গেলাম না। সারাদিন বাসায় বসেই থাকলাম। দুপুর হলো ভাত নিয়ে বসলাম। টিভিতে কি হয়? টিভিতে হয় ঈদের কিংবা পুরাতন নানা সময় আগে প্রচারিত টেলিফিল্মগুলো। তাও এত্তগুলো করে বিজ্ঞাপন আর বিটিভির সংবাদ। বিটিভির সংবাদ পাঠিকাদের দেখলেই আমার ভালো লাগে । এক ধরনের নিরুত্তাপ ভঙ্গীতে তারা খবর পাঠ করেই চলছে, শেষ হলেই বাঁচে। দূরদর্শন কলকাতাতেও সেইম কেস। এমন কি এক শ্রীলংকার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল আসে সেখানেও কিছু না বুঝলেও, বুঝি সেই বিটিভি এটিচিউড। আমার ধারনা সাব কন্টিনেন্টের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলের ফিচারই এমন।
দেড় যুগ আগেও এই বিটিভিই ছিল ভরসা। কেউ যদি আগেভাগে জুম্মাবারে সিনেমার নাম জানতো আজ কি হবে দুপুরে- সে সেইদিনের জন্য ব্যাপক জ্ঞানী মানুষ। আমাদের খুলনার নেভী কলোনীতে, দোতালায় এক ছেলে থাকতো এক ক্লাস বড়, বেচারা ছিল আরেক কাঠি সরেস। সে একটা খাতায় লিখেই রাখতো কোন সময় কি সিনেমা হয়? নায়ক নায়িকা কে কে? বাসা থেকে টাকা চুরি করে সে প্রায় সপ্তাহেই সিনেমা হলে যেত। তার মুখেই আমি জীবনের প্রথম শুনেছিলাম ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের এক সিনেমার রগরগে গানের বিবরন। সে আরেক আলাপ। ভাগ্যের কি নির্মম ব্যাপার, সেই ঋতুপর্ণা এখনো সিনেমা নায়িকা হিসেবে তাই করে যাচ্ছে, আমার ভুড়ি বাড়ছে বয়স বাড়ছে, কিশোর থেকে বড় হতে হতে দিনগুলো হারাচ্ছি। যাই হোক আজ টিভিতে সিনেমা কি হয়, দেখলাম এটিএনে হয় 'ক্ষ্যাপা বাসু'। ডিপজল ভিলেন সে সমানে ডায়লগ মেরে বেড়াচ্ছে। তার ভাই মিশা ভালোবাসে দশমনি ওজনের পপিকে, পপি আবার পুলিশ কমিশনারের বোন। পপির প্রেমিক রিয়াজ, পপি পা কেটেছে তা স্কিন টাইট গেঞ্জী ছিড়ে পপির পায়ে বেঁধে দিলো নায়ক। এই সিন দেখে আর হজম করতে পারলাম না। তবে ফেসবুকের আতেল সিনেমা বিশেষজ্ঞ হলে আপনার এর ভেতরেও পজেটিভ ভাবে দেখতে পারা লাগবে। যে আগে নায়িকা শাড়ীর আঁচল ছিড়তো কিন্তু এই সিনেমাতে নায়কই তার গেঞ্জী ছিড়ে। এত মুটকি তখন পপি তাকে কোলে তোলা বাপের ঘরের আবদার না, সেই কঠিন কাজ রিয়াজ করে দেখিয়েছে সফল ভাবে। অপূর্বের টেলিফিল্ম চলে সেখানে গেলাম। সেই অসম পরকীয়া, সেই একই বালের গল্প। টিভি বন্ধ করে ইউটিউব খুলে গানবাজনা শুনছি, জেমস এসে হাজির দেখি বাসায়। পুরোই অবাক। ওর তো আজকে আসার কথা না। দুই বন্ধু একত্রে বের হলাম, পকেটে টাকা নাই তেমন- খুব গ্রীল খাবার মুড ছিল।খাই নাই। চায়ের দোকানেই গেলাম। পুলক গেছে কুষ্টিয়ায়, আবীর ঢাকার বাইরে। তাই দুজনেই। চা খেলাম, আর জেমস সুরুত সুরুত করে হলিঊড টানে। হলিউড সিগারেট নাকি ব্রাজিলের এক নাম্বার ব্র্যান্ড তা শুনে মজা পাই। টাকার অভাবে মার্লবোরো থেকে হলিঊডে নেমে আসা। খাওয়াতে চাই তাকে মার্লবোরোই কিন্তু সে ইগোর জাহাজ নিয়ে ঘুরে, আমার মত জীবনে সিগারেট টান না দেয়া মানুষের কাছ থেকে সিগারেট খাবে না। আমি আর কি কড়া লিকারের দুধ চা খাই, আর জেমসের মুখে সাম্যবাদ জাতীয়তাবাদ, নারীবাদ, নাস্তিকতা, নিয়ে বয়ান শুনি।
ছোটভাই অভি আসে আড্ডায়। তাঁদের বিজলী মহল্লার টুর্নামেন্টের ম্যাচ রিপোর্ট শুনি। ছেলেটাকে আমি অসম্ভব ভালো পাই। বিয়ে করছে, কদিন পর মাষ্টার্স করতে বিদেশ চলে যাবে। কিন্তু ফুটবলের প্রতি অসম্ভব রকম ভালোবাসা। জাপান গার্ডেনের ময়লা রাখে এমন জায়গাকে মাঠ বানিয়ে, ছোট বারে ফুটবল খেলে। মোহাম্মদপুরের ছোট বড় যত খেলা টুর্নামেন্ট হোক, খেলবেই। আবীরও খেলে ওদের দলের হয়ে। মোহাম্মদপুরের সমস্যা হলো ক্যাম্পের পুলাপানের সাথেই বেশী খেলা পড়ে। কারন ওরাই ভালো খেলে। সেই ভালো খেলা দলকে ওরা বলে কয়ে হারায়। ক্যাম্পের মোড়ে মোড়ে আবীর অভি বড় বড় স্টার সবাই চিনে। অভির বউকে নিয়ে সিনেমা দেখার কথা, দাওয়াতে যাবার কথা, পায়ে তীব্র ব্যাথা, সব বাদ পড়ে খেলার কাছে। এখন তো সবাই ফুটবল দেখেই খুশি, সেই জামানায় ওর ফুটবলের প্রতি ডেডিকেশন আমাকে মুগ্ধ করে। জেমস থাকার কারনে অভির সাথে কথা তেমন হলো না। বেচারা আমার সময়ের খুব প্রত্যাশা করে। জেমস আমি দশটায় ঊঠলাম। উদ্দেশ্যবিহীন হাটলাম ঘন্টা খানেক। সাম্প্রতিক সময়ে কি কি সিনেমা দেখছি তা নিয়ে লম্বা আলাপ জুড়ে দিলাম। ব্যাংক জব পেতে হলে জেমসকে কি কি পড়তে হবে তা নিয়ে লেকচার দিলাম। এগারোটায় বাসায় ফিরলাম। আবারো টিভি নিয়ে বসা, আবারো হতাশ হওয়া। এই দুঃখে টিভি দেখাই ছেড়ে দিছি। একেকটা শুক্রবার কি রবিবার যায়, সপ্তাহ মাস যায়, দেশের দুই ডজন টিভিতে দেখার মতো কিছুই নাই। গত চার মাস ধরে তিনশো টাকা করে ১২০০ টাকা বিল দিলাম। ফুটবল ওয়ার্ল্ডকাপ ও ক্রিকেট বাদে সব মিলিয়ে মোট ১২০ মিনিট হয় নি, যখন মনে হয়েছে ডিসের বিল উসুল করার মতো একটা প্রোগ্রাম দেখেছি এই চারমাসে! ইউটিউবের চেয়ে ভালো টিভি আর নাই এখন। যা নিয়ে ভাবতে চাই যেমন দেখতে চাই, তাই দেখা যায়। মুসাফির আরিয়ান নামের এক বাংলাদেশী ছেলে পাইছি যে প্রচুর গান সাধারন গলায় কাভার করে। সেসব শুনি। তাই মাসের ৫০ ভাগ হাতখরচ আমার চলে যায় ওলোর আনলিমিটেড প্যাকেজ চালাতে চালাতে। ওলোর কাছে আমি থ্যাঙ্কফুল, ওয়াইমেক্সে ভেতরে তারাই বস- কখনোই ডিস কানেক্ট থাকেনা লাইন, সুপার স্পিড, ব্রডব্র্যান্ডের মতো। আই লাই ইট!
আমার তোমার মত এরকম ছন্নছাড়া জীবন কাটাতে খুব ইচ্ছা করে। আই লাইক ইট!
তোমাদের দিয়ে ওসব হবে না! যা আছো, যেমন আছো, তাই দারুন।
টিভিতে আমিও দেখার কিছু পাই না বলে অনেক সময়ই বোরিং সময় কাটাই। তোমার মত ঘুরাঘুরি, আড্ডাও হয় না
আড্ডা তো এমনিতে হয়ই
আমার তোমার মত এরকম ছন্নছাড়া জীবন কাটাতে খুব ইচ্ছা করে। আই লাইক ইট!
কতো জীবন পড়ে এবার ঈদে '"আলো" দেখলাম, ভাইবোন সব মিলে তাও হজম হয় নাই। বুয়া জীবনে টিভি দেখার কোন বিলাসিতা নেই
মন্তব্য করুন