সবকিছু অথবা কিছুই- না!
শিরোনামটা আমার মাথায় থেকে আসে নাই। 'লাতিন আমেরিকার গল্পসমগ্র' নামে একটা বই কামাল ভাই কিনে দিয়েছিলেন, এই বই মেলায়। সেখানে হোর্হে লুইস বোহের্সের গল্প। বইটা অসাধারন। দারুন সব গল্প, যার ভাষা সহজবোধ্য না, কিন্তু গল্পের এমন অদ্ভুত ছন্দময়তা, মানব মনের নানান অনুভুতির এত বিচিত্র বয়ান তা পড়তে পড়তে শুধু অবাক লাগে। অনেক কিছুই হয়তো বুঝে উঠতে পারি নি, তাও বইটা আমার খুব প্রিয়। বইটা কাগজ প্রকাশনের একটা দারুন উদ্যোগ। আজ ভোরে বাড়ীতে যাবো। তাই লিখতে বসা। জামালপুরে ল্যাপটপ নিতে পারবো না, মোবাইল নষ্ট প্রায়, মন মেজাজ ভালো না, অগ্রিম ট্রেনের টিকেট কাটতে পারি নাই, বাসের জন্য মহাখালী যেতে হবে ভোর বেলায়। ভালোই লাগছে না এবার বাড়ীতে যেতে। শুধু বাবা মা আছে বলেই যাওয়া, নয়তো আমার ঢাকা ছেড়ে এখন জামালপুর তো দূরে থাক, প্রিয় শহর চিটাগাং যেতেও ইচ্ছে করে না। তার সাথে সাথে ব্লগেও লেখা হবে না, যতদিন বাড়ীতে থাকা হবে। কি যে কষ্টের ব্যাপার, ব্লগ লিখতে না পারা তা শুধু আমি বুঝি। ইস, যদি নোকিয়া সিটু ডাবল জিরো সেটটা ভালো থাকতো, কতই না উপকার হতো এই বিপদের দিনে।
ঢাকায় গত দু তিন দিন দারুন যাচ্ছিল। যাওয়ার সময় যা সব বারই হয়। যাওয়ার আগের দিন গুলো খুব ভালো কাটে। বন্ধু আসছে জার্মানী থেকে- অমি আর জাফর। আমার চায়ের দোকানের বন্ধু। আমার চেয়েও তারা জেমসের বেশী আপন, ওরা এক স্কুলে পড়ছে। বন্ধু যারই হোক, যেহেতু দীর্ঘদিন আড্ডা মেরেছি এক সাথে তাই তাঁদের পেয়ে আমাদের অনেক উচ্ছাস। জার্মানির গল্প শুনি, জিনিসপত্রের দাম জানি, ভদকা স্কচ কত সস্তা তা শুনে বিস্মিত হই, ট্রেনের ভাড়া বন্টনের আলাপ জানি, চাকরীতে কি করতে হয় তা জানতে চাই, পড়াশুনার কি কঠিন দশা, দেড় বছরের দিন যাপনের আলাপ শুনি, সব কিছুই ভালো লাগে। আমাদের আপডেট জানানো লাগে না, ফেসবুকের টাইমলাইনের পাতায় পাতায় তা থাকে। বিদেশ থেকে আসলে মানুষের সাতদিন যায়, বিদেশ থেকে যে যা দিছিলো তা বিলি বন্টনে, ইউরো ভাঙতে আর ফ্যামিলীতে নানান শো অফ মার্কা দাওয়াত এটেন্ড করতে করতে। এদেরও সেই ব্যস্ততা, তাও যথেষ্ট সময় দেয় আমাদের। এত কিছুর পরেও আবার গার্লফ্রেন্ডকে সময় দিতে হবে। বাসা থেকে বিয়ের প্রেশার নিয়ে সেই মেয়ের হয়তো দিন কাটে। তাও কমিটমেন্ট বলে কথা। আমি সব সময় এইসব কমিটমেন্টের শক্তি দেখে বিস্মিত হই। আর আপসোস করি আমাদের কেউ নাই। কবীর সুমনের গান শুনি, সেন্টু খাই।
আমি যাকে ভালোবাসি
সে কাঁদে দুনিয়ার জন্য
সে বড় একলা অনন্য
বেশী বয়সের প্রেমের মতন।
পৃথিবী যে নিয়ম চলছে
সে ঠিক সে নিয়মে চলে না
তাকে সহজে বোঝা যায় না
তাঁর ভাবনা অন্যরকম।
পনেরো দিন হয়তো থাকবো বা তার কম। এরজন্যেও সবাই বিদায় নেয়, সবাই জানতে চায় কখন যাচ্ছি, কি হালচাল জার্নির। আমিও বলি। লোকজনের কাছ থেকে বিদায় নিতে ভালো লাগে। বারবার মনে হয়, মরে গেলে আর দেখাই হবেনা, বেঁচে থাকলে আবার আসবো। তবে আমার সাময়িক অনুপস্থিতি- বিদায়ের সময় গভীর হয়। কোনো এক প্রান্তে এসে মনে হয়, আমাকে পছন্দ করা বা আমার সঙ্গ প্রত্যাশী লোকের সংখ্যা নেহায়েত কম না। কিন্তু মানুষ মাত্রই অদ্ভুত, যারা আপনাকে ভালোবাসে তাঁদের আপনি যথার্থ মুল্যায়ন করেন না। আবার আপনি যাদের ভালোবাসেন তারা আপনাকে তেমন মুল্য দেয় না। যে আমাদের মুল্য দেয় না আমরা তাঁদের মুল্য পাওয়ার আশায় বসে থাকি প্রতিদিন। আমার ক্ষেত্রেও তাই। আমি যাদের গভীরভাবে পছন্দ করি, তারা আমাকে সময় দেয় না। যাদের সময় চাই বেশী না, তারাই থাকে পাশে সব সময়- আমার এইদিকের পাল্লাই ভারী। রাত বাড়ছে, শরীর খুব ক্লান্ত, সারাদিন বাইরে বাইরে তাও আমার ঘুমাতে আজ ইচ্ছে করছে না। আবার তো বাড়ী থেকে সুস্থভাবে ফিরে আসলেই ব্লগ লেখার সুযোগ মিলবে, ভাবতেই দম বন্ধ হয়ে আসে। লিখতে লিখতে অভ্যাস হয়ে গেছে। ফেসবুক দিয়ে আমি ব্লগে লেখার সাধ মেটাতে পারি না। ফেসবুকে লেখি, পরিচিতরা লাইক দেয়, কমেন্ট করে একটা নিয়মিত অভ্যাস। কিন্তু ব্লগে দিন যাপন নিয়ে লেখা, মনের ভাবনা গুলোর প্রকাশ, যা দেখছি-পড়ছি-শিখছি-জানছি তা নিয়ে লেখার আনন্দ, শুধু যারা নিয়মিত লিখে তারাই বুঝে। যাই হোক মনের দুঃখ, বলে আর কি। শুধুই তো লিখে যাওয়া আর না যাওয়া, এর বাইরে তো আর কিছু নাই। বাবা মার কঠিন আদর যত্নে থাকবো, গরুর মাংস খাবো, ভুড়ি বাড়বে, টিভি দেখে মেজাজ খারাপ হবে, বই পড়বো। এই তো। এইসব আমার আজকাল আর ভালো লাগে না কোনোকিছুই।
ঈদ মুবারাক। তুমি না থাকলে ব্লগটা পুরো মরে থাকে। তাড়াতাড়ি চলে এসো
আমার চোখের সামনে টেবিলে অনাদরে পড়ে আছে 'লাতিন আমেরিকার উপন্যাস সংগ্রহ'। প্রতিদিন ভাবি ইষ্টনাম জপে নিয়ে আমাজন একদিন ওর ভেতরে ঢুকেই পড়বো। দমে কুলোয় না। বোর্হেসকে পড়বার আগে যে পরিমাণ প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা আমার মতো বেদুঈন মনের মানুষের পক্ষে আজীবন চেষ্টায় কুড়িয়ে একত্র করা হয়ত কখনই সম্ভব নয়। তাই মাঝে মাঝে ভাবি, একদিন যেভাবে কাফকার অন্ধকার কুঠুরিতে 'যা থাকে কপালে' বলে অপ্রস্তুত ঢুকে পড়েছিলাম, ঠিক তেমনিভাবেই ঢুকে পড়ব বোর্হেসের জলসাঘরে। মাতাল ঋত্বিকের মতো, কিছুটা চেতনে, কিছুটা বা ঘোরের ভেতরে।
বোর্হেস এর উপন্যাস আমার পড়া হয় নি? আপনি পড়তেছেন? কেমন?
নতুন লেখা তো আর দিলেন না!
ভালো থাকবেন!
ফেসবুক আমার ভাল লাগেনা।
আমার ভালো লাগে না ফেসবুক কিন্তু ফেসবুক ছাড়া আর তেমন কিছুতে আজকাল ইন্টারেষ্ট পাই না। ক্যান্ডি ক্রাশ খেলো না আর?
ক্যান্ডি ক্রাশ খেলতেও এখন আর ভাল লাগেনা।
এত ভালো না লাগলে তো বিপদ। আমার ধরো কিছুই ভালো লাগে না এইভাবে চললে আমার মতো বোরিং হয়ে যাবা!
ব্লগের জন্য ভালোবাসা আজীবন থাকুক তোমার
দোয়া রাইখেন আপা!
মন্তব্য করুন