What A Wonderful World!
আজ সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই আমার লুইস আমস্ট্রংয়ের এই শিরোনামের গানটার কথা মনে পড়লো। জলদি ঘুম থেকে উঠেই গানটা শুনলাম টানা। মাদাগাস্কার মুভির কারনেই এই গানটা আমার শোনা। যতবার এইসব টুকটাক অসুখ বিসুখ থেকে শরীর ভালো হয়, ততবারই আমি এই গানটা গাই,যদিও স্মৃতিভ্রষ্টতার কারনে আর লিরিক মনে থাকে না। ইংরেজী গানের কথা মনে রাখা বড়ই কষ্টের, এই বয়সে এত কষ্ট করতে মনে চায় না। তানভীর নামের এক বন্ধু ছিল ক্লাস নাইনের, কই থেকে নানান পদের ইংরেজী গান মুখস্থ করে এসে আমাদের কাছে ঝেড়ে দিত, আমরা অবাক হতাম। কারন বাংলা গান শুনে মনে রাখা খুব কঠিন কিছু না, কিন্তু বইদেশী ভাষার গান টেপরেকর্ডারের মতো গেয়ে চলা যথেষ্ট কামেল ব্যাপার। বিবিসি বাংলায় মেহের আফরোজ শাওনের ইন্টারভিউ হচ্ছিলো শুনলাম অনলাইনেই। সেখানে স্যার শাওনকে টেপরেকর্ডার বলে ডাকতেন, কারন শাওন নাকি এক গান জাষ্ট একবার শুনেই সেরকম ভাবে গেয়ে ফেলতে পারতেন। আমি মনে মনে হাসছিলাম, এরকম প্রতিভা কতজনেরই তো আছে কিন্তু সবাই শাওন হয় না। আর সবার জন্য- 'যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো এক বরষায়' লেখা হয় না। তবে আমি জানতাম না শাওন আহমেদ স্থাপত্যে পড়েছেন আর ৮৮ সালে তার বয়স ছিল নয়। তার মানে আমার মামার সমবয়সী।
কাল একটা বিপদে পড়েছিলাম বন্ধু চিটাগাংয়ে যাবে তাঁকে বাসে তুলে দিয়ে ফিরছিলাম। শীতের রাত, কেউ নাই, রিকশাওয়ালা সাই সাই করে ছুটছে, বাতাসে আমার কিছুটা অসস্তি লাগছে এমন সময় কত্থেকে এক ছোটো ট্রাক প্রায় রিকশা ছুয়ে চলে গেল। আমি ভয়ে হতচকিত, বুঝতে চেষ্টা করছি কি হলো। রিকশাওয়ালা তার ভোকাবুলারীতে যত গালি আছে তা সব ওই মিনিট্রাক ড্রাইভারের উদ্দেশে বিতরণ করছিলো। সেই চালক কবেই চলে গেছেন। অর্থহীন গালিগালাজে শুধু মনের শান্তি। আমি ভাবছিলাম আজ মরে যাওয়া কেবল কয়েক ইঞ্চির ব্যাপার ছিল। সাংবাদিক জগলুল আহমেদের মতো ঠুস করে আমিও মরে রাস্তায় পড়ে থাকতাম। আমি সব সময় বলি, বেঁচে থাকতে ভালো লাগে না। শুনে সবাই বলে এ কেমন কথা? আমি ভাব দেখিয়ে বলতাম, মরতে যখন হবে তখন আগে মরলেই ভালো। খামাখা কুসময়ের অপেক্ষা কেন? এমনকি যে বাসায় থাকি, সামনেই ছাদ, মাঝেমধ্যেই লাফ দিতে ইচ্ছে করে পরে ভাবি আজ থাক আরেকদিন, ভাতিজিরা আরেকটু বড় হোক, তাঁদের বড় হওয়াটা দেখে মরি। কিন্তু এই ঘটনার পর মনে হলো, কত কিছু করা হলো না-- এখনই মরে যাবো- এ কেমন কথা? আরো কিছুদিন অন্তত বাবা মায়ের কারনেই বেঁচে থাকতে হবে। কারন বেঁচে থাকা মানেই লাইট অন, মরে গেলে লাইট অফ। এত অল্প সময়ের জীবনে খামাখা নিজ উদ্যোগে লাইট বন্ধ করে দেয়ার মানে কি? স্রষ্টা যদি লাইন কেটে দেয় সেটা তার ব্যাপার। আমি আগ বাড়িয়ে কেন ইলেক্ট্রিশিয়ান হয়ে লাইটের ক্যাবল কাটবো? প্রতিদিন পত্রিকা নিয়ে বসলেই আমি বিশাল বাংলা পাতা মন দিয়ে পড়ি। শহর নগর বন্দরে কত মানুষ মরছে, গৃহবধুরা নির্যাতিত হচ্ছে, কিশোরী ধর্ষিত হচ্ছে, মানুষ খুন হচ্ছে, ঝগড়াঝাটি চলছে, গরীব মানুষরা কষ্ট পাচ্ছে। আমি পড়ি আর ভাবি শালার কি অমায়িক ভালো জীবন যাপন আমার, তাও মনে শুকরিয়া নাই। ঠিকঠাক মতো পাঁচওয়াক্ত নামাযটাও পড়ি না। কাল রাত থেকে মনে হচ্ছে সেই মিনিট্রাকে বিধস্ত হলে আর পেতাম কোথায় এই জীবনটা? জন্মান্তরে বিশ্বাস করলে খুব ভালো হতো। জাতিস্মর হয়ে জন্ম নিতাম। আগের জনম এই জনম সব মিলিয়ে ব্যাপক হতো। কিন্তু আমাদের জীবন একটাই, তাই কিছুদিন না হয় সামলে চলেই কাটুক। আমার খুব ভালো বন্ধু আছে, সে বলে প্রতিদিন মনে হয়- আজই শেষ দিন মরে গেলেই ভালো। কিন্তু মরছেও না, তাই আর মরনপিয়াসী আর হয়ে উঠে না।
জিন্দেগী না মিলেগি দোবারা টাইপ সিনেমা গুলার উপরে আমার খুব মেজাজ খারাপ লাগে। বন্ধুত্ব শুধু বড়লোকদেরই হয়, ব্যাচেলর ট্রিপে তারা স্পেনে যায় জীবন শিখতে, সেখানে পানিতে ঝাপ দিতে দিতে ক্যাটরিনার সন্ধান পায়। আমরা বাপের জন্মেও স্পেনে যাবো না, আমাদের বন্ধুরাও ডালভাত, আমাদের কোনো গল্পও নাই। অথচ সারাজীবন আমরা জেনে গেলাম নিম্ন বা উচ্চ মধ্যবিত্তরাই নাকি বেশি বন্ধুর মুল্য দেয়! তাই মধ্যবিত্ত বন্ধুদের কোনো গল্প নেই। আমি যদি সিনেমা বানাই তবে আমি অবশ্যই এদের নিয়েই সিনেমা বানাবো। কোন এক পোষ্টে বলছিলাম পেপার বিক্রেতা আলাউদ্দিনের কথা। আলাউদ্দিনের এক ক্লোস দোস্ত বন্ধু আছে রিপন। সেও পেপার বিক্রি করে। দুই বন্ধু ভোর বেলা সাইকেল চালাতে চালাতে গল্প করতে করতে আসাদগেটে যায় পেপার নিতে। আমার কাজ শেষে দুজনকেই দেখি একত্রে আড্ডা মারে। এইসব বন্ধুত্বের গল্প কই হিন্দি সিনেমায়? যদিওবা হিন্দি সিনেমায় এইসব গল্প দেয়, তাহলে দেখাবে দুই বন্ধু বড় হয়ে এক বিশাল মিডিয়া গ্রুপের মালিক ছোটবেলা থেকে কষ্ট করতে করতে, তারপর নায়িকার আগমন, দুই নায়কেরই প্রেমে হাবুডুবু, দুজন দুজনের শত্রু, ভিলেনের আগমন, শেষে দুই বন্ধু মিল। এইসব বালের আইডিয়া আর কতকাল বাংলা হিন্দি সিনেমায় থাকবে তা আমার জানা নাই। তবে এক হিন্দি সিনেমায় অবশ্য এর এক উত্তর পেলাম, যে ৩ ঘন্টার পিকচারে ৩০০ টাকার টিকেটে দুইজন মানুষকে জীবন শেখাতে- হলে সিনেমা বানাইস না, কারন জীবন শিখতে সে হলে আসে না, তোর আমার চেয়ে সে জীবনকে আরো ভালো চিনে।
এক কালে আমার ইবুক পড়ার চেষ্টা ছিল। চেষ্টা জারি রাখলে অবশ্য পড়তে পারতাম। কারন বসে থাকার ধৈর্য আমার আছে। কিন্তু ইবুক পড়ার অভ্যাসটা হয় না। অনেক কষ্টে মোবাইলে 'একাত্তর ভেতরে বাইরে' বইটা শেষ করলাম। আর পিসিতে বই এখন কেউ টাকা দিলেও পড়তে পারবো না। পারভীন আপু পেনড্রাইপে এত্তগুলা ইবুক দিছে, নাম দেখতে দেখতেই মনে হচ্ছে। আহা যদি পারতাম পড়তে কি ভালোটাই হতো। কিন্তু আমি তো জানি একটা ইবুক শেষ করতে আমার লেগে যাবে পাঁচ মাস। পাঁচ মাসে আমি নিদেন পক্ষে ২০ টা বই পড়ি সব চাইতে কম সময় পেলেও। তবে আমার বন্ধু জেমস ইবুকের মাষ্টার। নেট থেকে বই নামিয়ে পড়তে পড়তে মোটামুটি সে এখন জ্ঞানের জাহাজ। তাই আমার মুখে শুধু সে শুনে আশ্চর্য প্রদীপের ডায়লগটা। প্রজ্ঞান দা, আপনার কি জ্ঞান! চান্স পেলেই ভরে দেন। জানার বাহবা আসলে কম বেশী আমরা সবাই নিতে চাই। কিন্তু জানার জন্য যে পড়তে হবে তা পড়ি না। চিটাগাংয়ে গিয়ে দেখলাম প্রত্যেক ছেলের কিছু কিছু ব্যাপারে ব্যাপক জানাশোনা। নিজে নিজে খোজ নিলাম, সব জ্ঞানের উৎস এনিমাল প্লানেট, নেটজিও আর ডিসকভারী ও ফক্স ট্রাভেলের দোয়া। আমি দেখি না বলে জানি না। আমি টিভিতে লাইভ ক্রিকেট দেখি, নাটক দেখার চেষ্টা করি কিন্তু পাই না, হিন্দি সিনেমা দেখি পাঁচ দশ মিনিট করে, কমেডি ক্লাসেস দেখি, এনটিভি- যমুনা কিংবা সময়ের খবর দেখি আর চ্যানেল পাল্টানোর উপর থাকি। তাই আমার জ্ঞানের তেমন কিছু আপডেট হয় নাই। তাই আজকে আমার অর্জিত জ্ঞানী তথ্য হলো, পাকিস্তানের করাচীতে এক ফ্যাশন শো হয়েছে, ফিউশনের অনেক কাজ করছে পাক ডিজাইনাররা, এনটিভির গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ড অনুষ্ঠানে পাক্কা ৬ মিনিট সময় নিয়ে পাকিস্তানের র্যাম্প মডেলদের দেখালো। আমিও গিললাম, তালেবানরা কার বাল ছিড়ে তা নিয়ে ভাবতে থাকলাম।
অফিসে কাজ না থাকলে ইবুক চমতকার জিনিস
গানটা চমত্কার।
ইংরেজি গানের কথা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অনেক গভীর।
আল্লাহ বাঁচাইছে,
এই দুনিয়ায় সন্তুষ্টির চাইতে
বড় নিয়ামত কম আছে।
ইবুক ভাল্লাগে না,
কোন ফিলিং পাই না।
সেইম টু ইউ ব্রো!
আমার কখনই আলস্যতার কারনে বই পড়া হয়না। তবে এভাবে ব্লগ পড়তে খুব ভাল লাগে অথবা মানুষের জীবনকাহিনীগুলো পড়তে খুব ইন্টারইসটিং লাগে
থ্যাঙ্কস!
মন্তব্য করুন