হারিয়ে গেল দিনগুলো, কুয়াশায়!
শহরেও আজকাল কুয়াশা প্রচন্ড পড়ে। দুইদিন আগের রাতে ছাদে দাঁড়িয়ে যখন এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম ফোনে দেখি কুয়াশা আর আলোর খেলায় অদ্ভুত লাগছে চেনা জানা রাস্তাটা। সব ফাকা ফাকা আর ঝাপসা। একটা বিশাল গাছ ছিল সামনের বিল্ডিংএর সামনে, কেটে ফেললো কিছুদিন আগে। চোখ কেমন জানি মানিয়ে নেয় সব কিছু, এখন যখন দেখি তখন মনে হয় এখানে কখনোই গাছ ছিল না। সবই মনের ভুল। এরকম আরো হয়, কোনো একটা কিছুর পরিবর্তন হয় তখন খুব মন খারাপ হয়। পুরো শহরকে গালাগালি করি, সিষ্টেমের বাপ মা তুলে পিন্ডি চটকাই, কিন্তু অন্য সবার মতোই কিছুদিন পরেই অভ্যস্ত হয়ে যাই, মনে হয় সব তো ঠিকই আছে। বেমালুম ভুলে যাই আমার আগের সংক্ষুব্ধতার কথা। চোখের সামনে হাউজিং সোসাইটির আট নাম্বার রোডে আটটা নতুন দোকান হলো। পুলকদের বাড়ী বাদে সবাই নিচ তালা ভেঙ্গে দুটা তিনটা করে দোকান করছে। প্রথম প্রথম দেখতে অসস্তি লাগতো, কি গিঞ্জি, একমাসের মধ্যে মনে হচ্ছে ঠিকই আছে, ব্যবসা করে খাক সবাই, না চললে- চলে যাবে। ছোটবেলা থেকেই আমার মুদি দোকানদার হবার খুব ইচ্ছা, সারাদিন বসে থাকা, ক্যাশে থাকবে টাকা, লোকজন আসবে জিনিস কিনবে, কাষ্টমারদের সাথে আড্ডা মারবো, খুব সহজে দিন কাটবে। কিন্তু দোকানদার হবার শখ আমার চলে যায় আমার বন্ধু মামুনের বোনের বিয়ের সময়। মামুনের বোনের বিয়ে ঠিক হয় এক ছেলের সাথে। সেই ছেলের বাবা ছিল দোকানদার। মামুনকে দেখলে কত লোক বলে বসতো 'শেষমেশ দোকানদারের ছেলের সাথে বিয়ে দিলা বোনের। তখন বুঝলাম দোকানদারের সামাজিক মর্যাদা নাই, এই দোকানদারী মার্কা অর্থনীতির দেশে।
অনেকবারই বলেছি- শীতকাল আমার একদম ভালো লাগে না। ছোটবেলায় ভালো লাগতো কারন তা ছোটবেলা ছিল বলেই। তখন জ্যাকেট পড়তে খুব ভালো লাগতো। কিন্তু শীত কাল থাকতোই খুব বেশী দিন না। তাই দুই মাসের বেশী শীতের কাপড় পড়াও যেত না। কিন্তু আমি আরো বেশী দিন এইসব জ্যাকেট সোয়েটার পরিধানের দাবি জানাতাম। আম্মু আমার সমন্ধে অভিমত দিল, তোর যা ভালোলাগা, গরমের দিনেও তুই জ্যাকেট পড়ে ঘুরতে পারবি খুশি মনে। বড় হয়ে জেনেছি গরমের দিনের জন্যেও পাতলা জ্যাকেট আছে, নাম তার- সামার জ্যাকেট। আমি বাইকওয়ালাদের ধুলা এড়ানোর এক জ্যাকেট দেখি সেইটার নাম নাকি ডাষ্টকোট। যাক কত কোট জ্যাকেট এখন বাজারে বিদ্যমান। আমার অবশ্য এখন এইসব জ্যাকেট সোয়েটার পুলওভার কিছুই ভালো লাগে না। এইসব সাজ পোষাক বিরক্তির উদ্রেক ঘটায়। তাও পড়তে হয় শীত তো লাগে। আমি তো গাউসের গ্যারেজের বাবুল নামের ছেলেটা না, যার শীতই লাগে না। তবে লোকজনকে শীতের পোশাক দিলে খুব খুশী হয়, সেই কবে আমি নান্নুকে নিউমার্কেট থেকে একটা মোটা স্যোয়েটার কিনে দিয়েছিলাম, এখনও দেখি তা গায়ে আর আমার সাথে দেখা হলে বলবে -মামা 'ঐযে আপনি দিছিলেন'। আমি ঠাট্টা করে বলি- আস্তাগফিরুল্লাহ আমি আবার কি দিছিলাম, এইসব দেওয়া দেওইর ভেতর আমি নাই'। চিটাগাংয়ে গিয়েছিলাম তখন এক বন্ধু ইয়ংওয়ানের এক দামি জ্যাকেট দিয়েছিল উপহার, কই থেকে ম্যানেজ করছে জানি না, একদম ইনট্যাক দারুন জিনিস পাতলা কিন্তু খুব কাজের। আমার বন্ধু সোহেলের তা পছন্দ হলো, সে যদিও বলে নাই, আমি তার চোখ দেখে বুঝলাম। আমি দিয়ে দিলাম সাথে সাথে। নিয়ে যা। ভালো লাগবে তোকে, ফর্সা মানুষ তুই। সে দেখি ঈদের চেয়েও বেশী খুশী। যাক শালা, একটা গিফটের জিনিস আরেকজনকে গিফট দিলে এত খুশী হয় তা আমার আগে জানা ছিল না। আমার যা আছে তাই অনেক, আমি আর কোথাকার স্টাইল মেকার, যে হাল ফ্যাশনের জামা পড়তে হবে। পড়ি তো সারাদিন পাঞ্জাবী, চাদর আর স্যোয়েটার। তবে শীত কালে মেয়েদের দেখতে ভালো লাগে, ওয়েস্টার্ন লুকে থাকে, হুডি সাথে জিন্স, অনেকের পায়ে স্নিকার। তবে আপসোসও জাগায়, জগতের যত বাতিল মাল, টাকলা টুকলা- কালা- মফিজ সব পেয়ে গেল দারুন দারুন মেয়ে। আমি পেলাম ঘন্টা। এই কথা শেয়ার করলাম জেমসকে। ওর ডায়লগ-- 'আপনি তো খুঁজেনই নাই। মেয়ে কি বাংলা লায়নের রিচার্জ নাকি, যে ফোন দিবেন আর এসে পড়বে!'
কাল টিএসসিতে বসে ছিলাম। এক মাইক্রো এসে দিল ধাক্কা, বয়ফ্রেন্ডের হাত ধরে থাকার পড়েও রিকশা থেকে মেয়েটা রাস্তায় ছিটকে পড়লো। হাত পা ছুলছে ভালোই। অবাক করা বিষয় হলো আশে পাশে যারাই দেখলো তাঁদের সবার সেকি হাসি কারন বেকায়দায় আছার খাওয়ায়, সবার চিত্তে এক ধরনের উত্তেজনাকর আনন্দ দিয়েছে। যেন মীরাক্কেলের জোকস বললো। আজকাল এক্সিডেন্টও জেন্ডার বেসিসে মানুষকে আনন্দ দেয় তা জেনে ভালো লাগলো। এমন বাংলাদেশই তো চেয়েছিলাম। টিএসসিতে এত মানুষ, বিষূদবার উপলক্ষে ব্যাপক জ্যাম, তাও ভালো লাগে। শীত যে পড়ছে তা টেরই পাওয়া যায় না। আজিজেও ছিলাম, পকেটে টাকা নাই অনেক বই উল্টিয়ে পাল্টিয়ে আসলাম শুধু। দেখা হলো এক ক্লাসমেট মেয়ের সাথে পেশায় ডাক্তার, পিজিতে চাকরী করছে সাথে পড়াশুনা। আমাকে খুব খাওয়াতে চাইলো সাথে প্রশংসাও শুনলাম নিজের অনেক। ভালো লাগলো। ভালো ভালো কথা শুনতে কার না ভালো লাগে। বাসায় এসে দেখলাম স্ট্যাটাস তার, এক দারুন সুখী মানুষ বন্ধুর সাথে দেখা হলো আজ, আগের মতোই আছে। আমার তখন কুয়াশার কথাই মনে পড়লো, ঝাপসা ঝাপসা পরিচয়ে হাসিখুশী সব গল্প শুনেছে তাতেই মনে করেছে বড় আমোদে কাটে দিন। আমোদে থাকা মানুষদেরও অনেক সময় মন খারাপ থাকে আড়ালে, তা কেউ বুঝে না।
শীতকালটা অবশ্য জামালপুরে থাকলে খুব আনন্দ। বাবা মায়ের সাথে ব্যাপক ভালো মন্দ খানাখাদ্য আর ঝাপসা এক দুনিয়া দেখা যায়। সারাদিন আয়েশে ঘুমোলেও মনে হয়, কই তেমন ঘুমালাম না? তবুও বাড়ীতে যাবো না এই শীতে। গেঞ্জাম পেরিয়ে শীত খাওয়ার এনার্জি নাই। শীতকালে শুরু হয় বস্ত্র বিতরনের নানান আয়োজন। বন্ধু জেমসের এক গল্প মনে পড়ে। তারা গিয়ে ছিল উত্তরবঙ্গের কোনো এক প্রান্তে বস্ত্র বিতরনে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গেছে খেপে, তাঁকে আগে থেকে জানানো হয় নাই। দাবী করলো উনার লোকেরাই নিবে ২০০ কাপড়। তারপর সমস্যা পুরাতন কাপড় কেউ নিবে না। কোনোরকমে কাপড় গুলো দিয়ে, মাইর খাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে- ঢাকায় ফিরে সস্তির নিশ্বাস ফেললো। নিঃসন্দেহে বস্ত্র বিতরন একটা মহতী উদ্যোগ। আমাদের করতে হবেই। কিন্তু আমাদের আসলে সবাই মিলে আগে করা উচিত যেন সবাই কাপড় কিনতে পায় শীতে এমন এক সময় আসবে সামনে তার ব্যবস্থা করা।
মন্তব্য করুন