ক্ষমাহীন প্রান্তর জুড়ে আমাদের বেঁচে থাকা!
এইসব জন্মদিন টন্মদিন আমার মোটেও ভালো লাগে না। খুব একটা ইঞ্জয়ও করিনা। তাও বছর ঘুরে আসে এসব দিন, আমার যেমন আসে ২০ শে জানুয়ারী, নিজেকে সেইসব দিনে কেমন জানি অযথা অযথা লাগে। আর বয়স নিয়ে ভাবলে হতাশ হয়ে যাই। বয়স একটা বোঝার নাম, হিসেবে আসবে আমার বয়স সাতাশ, আমার সবসময় মনে হয় আমার বয়স ১৭-১৮। অঞ্জন দত্ত কি আর এমনিতেই গানটা গাইছে, 'আমার বয়স বাড়ে, আমি বাড়ি না'। আমি আসলেই বুঝে উঠি না বয়সের লীলাখেলা। আমার এক কাছের বন্ধু বললো, এখনি এই দশা, সামনে কি করবো। আসলেই সামনে যে কি করবো তা ভাবতে বসলে মন খারাপ হয়। আসলেই তারুন্য কিংবা কিশোর কাল এক অসাধারণ জিনিস। তখন মনে হতো বড় হবো কবে? আর এখন মনে হয় বড় হয়ে হলোটা কি? ক্লাস থ্রি ফোরে যখন পড়তাম তখন শুনতাম নাইন টেনে উঠলেই শান্তি, নাইন টেনে জানলাম কলেজে পাশের পর শান্তি, কলেজে জানলাম ভার্সিটি লাইফ অসাম, ভার্সিটি লাইফে জানলাম কর্মজীবনই আসল। বড় হয়ে জানলাম জীবন মানেই অশান্তি। কোথাও সস্তিকা নেই। আছে শুধু পরমব্রত আর দেব, জিত। সব কথার শেষ কথা হলো জীবন জুড়ে শুধু এরকম অদ্ভুত আশাবাদ নিয়ে চুপ থাকা। পড়াশুনা শেষ করে কোন কচুর শান্তি তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
দেশের চলে আকাল, আমাদেরও ঠিক তাই। খালি পেট্রোল বোমায় এখনো গ্রীল হই নাই তাই শুকরিয়া। বেঁচে আছি, দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছি দিন। আগে আমি বাসে খুব উঠতাম, গত তিন চার মাস ধরে বাসে যত কম পারা যায়। সকাল ঘুম থেকে উঠেই যখন প্রথম আলোর অনলাইনে যাত্রাবাড়ীর দগ্ধ মানুষের ছবি ও খবর দেখছিলাম। ভাবছিলাম আমিও তো এমন পুড়ে যেতে পারি যেকোনো সময়। নিতান্তই কপাল ভালো বলে বেঁচে আছি। দুর্যোগ দুর্বিপাক সব আমাদের জন্যই বেঁধে দেয়া। পত্রিকা যতদুর পারা যায় এড়িয়েই চলি, কারন শোকার্ত আহত নিহত মানুষদের গল্প শুনতে ভালো লাগে না। এই মৃত্যু উপত্যকা আমার নয়- কারোরই দেশ নয়। তাও থাকি থাকতে হবে, যাবতীয় প্রতিকুলতা এড়িয়ে চলে। এইসব ঘটনা যখন ঘটে নিজেকে আরো বেশী অসহায় ও একা মানুষ লাগে। মনে হয় স্রষ্টা উপরে বসে বসে কি করে? আর কতদিন ঈশ্বর শয়তানের দখলে থাকবে তা নিয়ে ভাবি। ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই, এই দুনিয়াতেই আমাদের জন্য দোযখের কষ্ট রেখে গেছেন। যেন পরকালে আনন্দে থাকি। তবে সব দুঃখ আরো দ্বিগুণ করে দেয় যখন দেখি ফেসবুকে সব কিছু নিয়েই মানুষের অদ্ভুত আচরন। পুরো ফাটিয়ে রাখে, মেতে থাকে সব ইস্যুতেই। বিরক্তি লাগে নানান শিক্ষিত মানুষদের কাজকারবারে। তখন মনে হয় ফেসবুকটা না থাকলে আর কি এমন ক্ষতি হতো। আমার এক বন্ধু আছেন যিনি ফেসবুকে আসে না বিরক্ত লাগে বলে, জিগেষ করলে বলে, 'যে জিনিস ভালো লাগে না তা করি না'। ইশ, আমি যদি আমার বন্ধুর মতো হতে পারতাম। কতোকিছু বিরক্ত লাগে যেমন এই ফেসবুকটাও, তাও বসে থাকি, স্ট্যাটাস দিই, আলাপ জমাই, সিরিয়াল খোরে গিয়ে নতুন নতুন সিরিয়ালের নাম জানি, ফুডব্যাংক নানান রেষ্টুরেন্টের নানান ডিশের আলাপ দেখি, সিনেমা খোরে সিনেমা নিয়ে লোকজনের রিভিউ পড়ি, সেলিব্রেটিদের দলবাজি ও তালগাছবাদী নানান লেখা, ফুটবল ফ্রিক ও ক্রিকেটরঙ্গ তে গিয়ে লোকজনের খেলা ও সাপোর্ট নিয়ে তাফালিং দেখি। নিজেও লাইক কামানোর ধান্দায় থাকি আর দেখি আমি সহ সবার রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিপোক্রেসী। ফেসবুক না থাকলে এই দেশের মানুষকে চিনতে কষ্ট হতো। ফেসবুকে কিছু না পেয়েই আমাদের যে হম্বিতম্বি, পেলে যে কি করতাম তাই ভাবি।
শুরু করে ছিলাম জন্মদিন নিয়ে। আমার জন্মদিন সব সময়ই অতি সাধারণ। অনেক আগে থেকেই আমি আমার জন্মের জন্য বাবা মার কৃতিত্বকেই মুখ্য করে দেখি। এতে আমার খুশি হবার কি আছে তা আমি বুঝে পাই না। তাও বড় হয়ে একটু উইশ পেতে ভালো লাগে। তাই আগের রাতে ওয়াল খুলে দিই, ফেসবুকে উল্লেখ থাকার কারনে উইশ পাই। বন্ধুই মাত্র গোটা আড়াইশো, করুক উইশ, কি আর করা যাবে। টাইমলাইনের ওয়াল যার যার, উইশের অধিকার সবার। তবে এবার বাবা মাও উইশ করতে ভুলে গেছে, ক্লোজ বন্ধুরা ফেসবুকে রাখি নাই বলে উইশ পাই নি। তাতে অবশ্য আমি একটু অবাকই হলাম। ভাই ভাবী উইশ করেছে। আব্বু আম্মুকে ইচ্ছে করেই মনে করিয়ে দেই নি, বয়স বাড়ছে তাঁদের সন্তানের তা তাঁরা এমনিতেই জানে। নতুন করে বলার কি আছে। গত দু তিন বছর চায়ের দোকানে আড্ডার ছোটভাই ও বন্ধুরা নিউট্রিয়েন্টের কেক অর্ডার করে, এবার কারো মনেই ছিল না, তাই আমারও খাওয়ানো হয় নি কোথাও। মনে রেখেছিল পারভীন আপু, জ্যোতি আপু, আর অদিতি আপু। তাঁদের সাথে দেখা হলো, দারুন এক আড্ডা হলো, খেলামও বাইরে। জন্মদিনে যদি কিছু করে থাকি তবে সেইটুকুই। আর ভার্সিটির বন্ধুরা ফোন দিয়েছিল, সবার আপডেট জানলাম। নিজের দিনে অন্যের খোজখবর পাওয়াটাও ভাগ্যের। তুলি নামে আমাদের ক্লাসের এক মেয়ে ছিল, খুব ঘটা করে তাঁর বিয়ে খেয়েছি আমরা সে আমলে, ফোনে শুনলাম ডিভোর্স হয়ে যাবে। মনটা উদাস হলো, কারন প্রথম ওর বরের সাথে কথা বলেছিলাম- খুবই জেন্টেলম্যান ও সোবার লেগেছিলো। এখন শুনলাম অসভ্যতার ইতিহাস। কি আর করা যাবে। যাক যা গেছে তা যাক। আমার কি, মানুষের দুঃখ নিয়ে ভেবে লাভ নাই, ভাবা ছেড়ে দিছি, সবাই ভাবে করুনা করছি বা সামনের কোনো সুযোগের অপেক্ষায় আছি। সবাই এখন বাঁচে মুলত নিজের জন্যই।
২০১৪ সালের সেরা দুই বাংলা সিনেমা দেখে ফেললাম নেটে। একটা চতুষ্কোণ, আরেকটা এই দেশের পিঁপড়াবিদ্যা। 'চতুষ্কোণ' সিনেমাটা এত ইউনিক লেগেছে, রীতিমত মুগ্ধ। আগেই দেখেছিলাম হলপ্রিন্টে, ভালো প্রিন্টে দেখে মনে হলো সৃজিতের বেষ্ট কাজ। অবশ্য এইটা সৃজিতের অসাধারণত্ব। যে সে তাঁর প্রতিটা কাজকেই একটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। এক মাত্র কাকাবাবুর মিশর রহস্য বাদে সৃজিতের সব সিনেমাই মাষ্টারক্লাস। যারা দেখেননি এখনই দেখেন। সমসাময়িক কালের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্রের দাবীদার। চিরঞ্জিত আর পরমব্রতর যে অভিনয় তা অনেকদিন মনে রাখবো। 'পিঁপড়া বিদ্যা' সেই তুলনায় কিছুটা প্রেডিক্টেবল, একঘেয়ে, টিভি নাটক মার্কা সিনেমা। তবে ফারুকীর এই প্রজেক্টটা সত্যিই অসাধারণ। চেষ্টা করেছেন নতুন গল্প দেখানোর। আমি কোরিয়ান সিনেমা 'হ্যান্ডফোন' দেখি নাই তাই আমার কাছে প্লট নিয়ে কোনো ঝামেলা হয় নাই। জীবনের কাছাকাছি কনটেম্পরারী এক গল্প, যার সাথে রিলেট করতে পারি সবাই। তবে ফারুকীর কাস্টিং আমার পছন্দ না। নায়ক বাদে আর একটা লোকেরও অভিনয় তেমন মনে ধরে নি। তবুও সিনেমাটা ইউটিউবে দেখতে পারেন। ভালো লাগবে বলে আশা রাখি। চেষ্টা আছে ভালো করার। সামনে হয়তো হবে সত্যিই এক অসাধারণ ভালো সিনেমা।
কেক্কুক না খাইতে পারলে কি আর জন্মদিন ভালু লাগবে?
ফারুকীর ছিঃনেমা আমার কাছে নাটক মনে হয়। এই জন্য দেখতে মঞ্চায় না ।
কেমন আছো চাঙ্কু ভাই?
কেমন আছি? কডিন প্রশ্ন। চিন্তা করে পরে উত্তরামুনে
লেট হ্যাপি বাড্ডের শুভেচ্ছা!
প্রথম তিন প্যারার প্রায় সবগুলা কথাতেই লাইক দিতাম, পারলে।
চতুষ্কোণ পাই নাই এখনো,
পিঁপড়াবিদ্যার কাহিনী পইড়া দেখার ইচ্ছা হয় নাই।
থ্যাঙ্কু ম্যাঙ্কু!
পিপড়াবিদ্যায় হতাশ
ছোটভাইয়ের জন্মদিনে আমরা বড়রা পেটপুরে খেলোম
দোয়া করি অনেক বড় হও। শতবর্ষী হও। আমরাও যেন বারবার খাইতে যাই 
চতুষ্কোন অবশেষে দেখলাম। আসলেই দারুণ সিনেমা
মন্তব্য করুন