প্রতিদিনের বেঁচে থাকায় কেটে গেল এই জীবন!
আমাদের স্কুলে অথবা কলেজে কোনোদিন স্বরসতী পুজো হয় নি। তাই আমার জানা নাই তা কেমন হয়। তবে আজ রাস্তায় প্রচুর শাড়ী পরিধান করা উর্বশীদের দেখে মনটা কেমন জানি করলো। অনেক জায়গাতেই ঢাকায় আজ আয়োজন ছিল। ভালোই, দেশে অসাম্প্রদায়িকতার বাতাস আমাকে আলোড়িত করে। কিন্তু আজ পত্রিকাতেই দেখলাম সংসদ প্লাজায় পূজা যখন হয়েও হয় না, দিনাজপুরে আদিবাসীদের ঘর জ্বালিয়ে দেয় বাঙ্গালী মুসলমানের বংশ, বিচারপতি অন্য ধর্মালম্বী হওয়ার কারনে আওয়ামীলীগের ইসলামিক উইং ওলামা লীগ যখন মিছিল সমাবেশ করে। তখন মনে হয় অসাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মনিরপেক্ষতা বিশাল বিশাল একেকটা ঠুনকো মুখোশ। যা প্রয়োজনে পড়তে হয়, সব সময় খুলে রাখতে হয়। আমাদের সবার জীবনেই এইসব ভেক ধরতে হয়। ভান করতে হয় অসাম্প্রদায়িকতার, নিজেকে উদার ও সভ্য মানুষ হিসেবে প্রমান দিতে হয়। বস্তুত সবই সুযোগের অপেক্ষা, সামান্য সুযোগই আমাদের সব মুখোশকে পেট্রোল বোমার মতো পুড়িয়ে দেয়, বের করে আনে লোভী অসভ্য এক কমিউনাল হালারপুত মার্কা মানুষে।
অনেক অযথা কথা বললাম। দুঃখের কথা বলি, আজ এক বাজীর শর্টপিচ ম্যাচ হেরেছি। কম টাকার না ৫০০ টাকার। আমার কাছ থেকে গেল ২০০ টাকা। আগের সেই ফর্ম আমাদের নাই, থাকলে হারতাম না। আবীর যা খেলছে, জিতলে ওকেই দিয়ে দিতাম টাকা। কিন্তু আমাদের যথেষ্ট বয়স হয়েছে তাই রানিং ভালো খেলে পোলাপানের সাথে খেলে ম্যাচ বের করা টাফ। তাও জিততাম তীরে এসেই হেরে গেলাম। সমস্যা নাই, না হারলে জিতবো কিভাবে? আমাদের উত্তেজনা দেখে ওদের দাবী- ভাই আমরা এক টুর্নামেন্ট ছাড়বো আপনারা দল দিয়েন। আপনাদের এন্ট্রি ফি লাগবে না। আবার শুভ বলতেছে, তাঁরা এক মেগা টুর্নামেন্ট ছাড়বে, আমাদেরকে দল দিতে। জানলাম তা শুরু হবে ফেব্রুয়ারীতে। আমি বললাম -ফেব্রুয়ারীতে আমার খেলার কোনো সময় নাই। বছরের সেরা একটা মাসই, সেই মাস এই সব এমেচার শর্টপীচ খেলে সময় কাটানোর ইচ্ছা নাই। খুব পড়ছি নানান কিছু, সামনেও পড়বো। সব বারের মতোই বই মেলা ও বই পড়েই কাটাতে চাই এই ফেব্রুয়ারী। বছরে কেন দু চারটা এই মাস আসে না কেন তা জানি না। শাহবাগে কতগুলো প্রকাশনীর মেলা হলো, বই কেনার মতো ছিল, কিনি নাই। কারন আসল মেলা না আসলে কিভাবে চলে? আর আমি মানুষের কাছ থেকেই বই ধারে এনে পড়তে পারি।
কাল দুপুরেই জেমস অফিস থেকে আসলো। দুপুর বেলা তাঁর বসের মনে হলো, পূজার দিন হিন্দু মানুষ ছেড়ে দিয়ে দেই। জেমস আসলো ভর দুপুরে, বাসা থেকে আবার বের হলাম। সেকি দারুন আড্ডা। জেমস কি কি নতুন সিনেমা দেখলো তাঁর ফিরিস্থি নিলাম। আমি জানিয়ে দিলাম -এই বছর আমি সিনেমা টিনেমা নতুন যা আছে তা যত পারি কম দেখবো। দেখলে পুরোনো সিনেমা, না দেখলে নাই। অতল সমুদ্রের মতো লাখো লাখো সিনেমা, কটা দেখবো এক জীবনে? কবীর সুমন বলে-- দুনিয়ায় ভালো গান সব হয়ে গেছে, আমারও ধারনা দুনিয়ায় ভালো সিনেমা সব হয়ে গেছে, শুধু আমার দেখা হয় নাই। জেমসকে নিয়ে বাসায় আসলাম। কোন চ্যানেলে জানি এওয়ার্ড দেখাচ্ছিলো হিন্দি সিনেমার, ফকিরনীদের হায়রে ঢং আর আজাইরা সব কমেডি। তাঁর ভেতরে আলিয়া ভাটকে দেখলাম আগে ভালোই লাগতো। কি এক জামা পড়ে কিছুক্ষণ পিটি প্যারেড মার্কা ড্যান্স করলো। আমি জেমসকে বললাম, বুয়ার রান্না যেমন জঘন্য তেমন জঘন্য টিভিতে এই নাচ। টিভিতে দেখলাম দুই নেত্রীর দেখা করা না করা নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ও আহাজারি। আমার অবশ্য এতে তেমন কিছু বলার নাই। কারন আমরা সাধারণ মানুষ ভাবি দুই নেত্রী দুই সখী হয়ে গেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আদতে এইটা একটা ভুল কথা। কিছু সমস্যা হয়তো মিটতে পারে। তবে দেশ শাসনে, লুটপাটে, আত্মীয়করনে, ক্ষমতা ব্যাবহারে দুই নেত্রী প্রায় উনিশ আর বিশ। একটাই শুধু সমস্যা বিএনপি জামাতকে সাথে লুটপাট করে আর আওয়ামীলীগ জামাতকে কিছুটা দূরে রাখে সেই একই কাজ করে। সেই কবে থেকে শুনছি, আওয়ামীলীগ নাকি জামাতকে নিষিদ্ধ করবে। শোনা টুকুই কেবল হলো, রুমি স্কোয়াডের অনশনও হলো। আর সব কিছু হলো ঘন্টা, সবাই সবার মতো আছে, বিএনপি পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়ছে, জামাত বিএনপি টানা অবরোধে দেশকে প্রায় অচল করে দিচ্ছে, সরকার তাঁর মতোই আছে, যৌথ বাহিনী গনগ্রেফতার করাচ্ছে, এক বাল মার্কা নির্বাচন করে ক্ষমতায় আরো ৪ বছর থাকার ধান্দায় মত্ত। সবাই যার যার বুঝ নিয়ে ভালো আছে দেশকে ছারখার হোক তাতে তাঁদের কি? সমস্যা আমাদের, আমরা বেশি ভাবি, বেশি উদ্বিগ্ন হই, তাতে কারোর কিছু আসে যায় না। আমাদের ভেতরে অনেক বিপ্লব, অনেক প্রতিবাদ সব শুধু ফেসবুকে আর নিজের মধ্যেই থাকে। তা কারো কাজে আসে না।
রনেশ দাশ গুপ্তর প্রবন্ধ পড়ছি। অসাধারণ উনার সব লেখা। কি চিন্তার প্রখরতা, মুগ্ধ হয়ে যাই। আজ থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগেই তিনি নিজের দেশের মানুষ রাজনীতি, সময়কাল- সব কিছু নিয়ে কি গভীর ভাবে ভাবতে পারতেন। এখন আর তেমন মানুষ খুব কম। যারা অন্য সবার চেয়ে অগ্রগামী ভাবতে পারে, লিখতে পারে, একই সমাজে থেকেই ভিন্ন দার্শনিক চিন্তা করতে পারে। এখন সবাই কমন, আমার মতো হালকা অগভীর মানুষের ছড়াছড়ি। যারা না পারে ভাবতে, না পারে নতুন কিছু বলতে, শুধু চর্বিত চর্বণ আর আরাম আয়েশেই কাটিয়ে দেয় জীবনকে। পড়াশুনার চলাচল এখন দেশ থেকে পুনর্বাসিত। সবার আছে সার্টিফিকেট, সবার আছে ফেসবুক, সবার আছে স্মার্ট ফোন, এইসবই এখন জীবন। জীবন যখন চলে যায় বিনোদনে তখন সেটা কিসের জীবন? আর আছে মানুষকে উপদেশ দিতে দিতে।
বরাবরের মতো সাবলীল। অারাফাত আপনি প্রথম অংশটা অযথা বললেন,কিন্তু আমার কাছে এই অংশটাই সবচাইতে ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন।
আপনাদের ভালোবাসায় অভিভুত হই!
সবার আছে সার্টিফিকেট, সবার আছে ফেসবুক, সবার আছে স্মার্ট ফোন, এইসবই এখন জীবন। সেটা ঠিক আছে, কিন্তু প্রবৃত্তি আর বিনোদন ছাড়া জীবনে তো আর কীছূ ণাঈ।
ভাই রনেশ দাশগুপ্ত কি মূলত লেখক-চিন্তুক ছিল?
বিখ্যাত সাংবাদিক ছিলেন।
অনেক দিন পর এত কম সময়ে আপনের দুই লেখা দেখে ভালো লাগলো, কিপ রকিং!
আগের মতো লেখার মুড আসে না। আর যখন আসে তখন ইচ্ছে করেই লেখি না। পাথর(রক) মারার উপরেই আছি!
:v
পুরোটা লেখার সাথে একমত
ভাইবোনে মিল তো থাকবেই!
বলে লাভ খুব কম। এটা আমাদের বাংলাদেশ; এখানে সবই হয়, সবাই বলে, সব কিছুই যৌগিক। আম লোকের কাজ শুধু শুনে যাওয়া আমি তাই করি!
ঠিক বলছেন শুভ্র!
বই পড়ো, সিনেমা দেখো, ব্লগ লেখো, আড্ডা দাও সেই ভালো। মন মানসিকতা ভালো থাকুক। ফেসবুক বুদ্ধিজীবিদের অরুচিকর আলাপ আলোচনায় নেট থেকে ভালো সময় পাওয়া, বিনোদন পাওয়া হারিয়ে গেছে
আপনিও ভালো থাকেন আপু। নিয়মিত ব্লগে আসেন!
মেলাদিন ক্রিকেট খেলি না। আফসুস
সমস্যা কি? আপনি তো ক্যাম্পিং হাইকিং করেন, নামকরা এডভেঞ্চারিষ্ট
মন্তব্য করুন