দিন হতে দিন, আসিবে কঠিন!
পেপার পড়া ছেড়ে দিয়েছি। ফেসবুকে মাঝে মধ্যে লিংক আসে শুধু দেখি, টিভিতে স্ক্রল দেখি, অনলাইনে নানান পত্রিকায় মুলত দেখি বিনোদনের খবর। ফাওয়াদ আফজাল খান- কারিনার সাথে 'উড়তা পাঞ্জাব' সিনেমায় নাই, অক্ষয়ের 'বেবি' কেমন করছে ব্যাবসা, কারিনা শহীদ নতুন এক সিনেমা আবার করছে এক সাথে, শাহরুখ খান হ্যাপি নিউ ইয়ার নিয়ে বিব্রত, ফিল্মফেয়ারের নমিনেশন পেল কি কি সিনেমা, অস্কার কাদের পাওয়ার চান্স বেশী, বয়হুড কিংবা গ্রান্ড বুদাপেষ্ট হোটেল দেখা হলো না, রনবীর কাপুর এতবেশী কেন গেইম খেলে, বাংলার শাকিব খান কি ইন্টারভিউ দিলো এসব পড়েই কাটাই। আর বই পড়ি, নানান বই নিয়ে বসি। শখ করে একজনের কাছ থেকে এনে অমিয়ভূষণ মজুমদার ধরেছি, বিখ্যাত লেখক। কিন্তু বোর হয়ে যাই। পড়ার আরেকটা সমস্যা হলো কনসেনট্রেশন হারাই। মোবাইলের দিকে তাকাই, সময় দেখি, চা বানাই, টিভিটা একটু চালাই, হাবিজাবি কাজ করি। ইচ্ছে করে না টানা পড়ে যেতে। আগে টানা পড়তে পারতাম, এখন আর পারি না। এই সমস্যার সমাধান মার্চ থেকেই হবে বলে আশা রাখি। মামা বাসা নিবে, মামী আসবে। তাঁদের সাথে আমিও উঠবো। তখন আরামে পড়াশুনা সম্ভব হবে। আজ সকালে দেরীতে ঘুম থেকে উঠেই হাঁটতে বের হলাম। রোদে টিকতে পারলাম না। তারপর এই হরতালের ভেতরে আমার লম্বা চুল দাড়ি পাঞ্জাবী, পুলিশকে বিব্রত করতে পারে, হরতালে জিয়া উদ্যানের ভেতরে ও রাস্তার আশেপাশে যে পুলিশ আর এসপিবিএন দেখি তাতে মনে হয় দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজমান, তাই সামলে চলাই ভালো।
সালাম বয়াতীর কথা মনে হয় বলেছিলাম আগে কখনো সখনো। গান গায়, আগে মিশুক চালাতো এখন কিছুই চালায় না, গান গায়। তাঁর ছেলেটা হারিয়ে গেছে ৬মাস আগে, অনেক খোজ নিয়েও সেই ছেলেকে আর পাওয়া গেল না। দশ বছর বয়স, বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে সেই খবরও জানা যায় না। আমি আর পুলক ছেলেটাকে খুব আদর করতাম। যদিও সে আদরের যোগ্য নয়। মুখ খারাপ, বেয়াদব কিসিমের ছেলে। তাও মুদী দোকানের আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে থাকতো। তাঁর চাহনী এত অসহায়ের লাগতো, মনটা চাইতো একটা ফ্রিজ ভর্তি আইসক্রিম কিনে দিই। তবে সামর্থ্য কম। তাই একটা কিংবা দুটা করনেটোই তাঁর জন্য ছিল বরাদ্দ। আমার আইসক্রিম খেতে এমনিতে মোটেও ভালো লাগে না। যাই হোক ছেলেটার বাবা- পুত্র হারানোর শোক কাটিয়ে উঠেছে। সেদিন আমাদেরকে গান শুনালো। চা সিগারেট খাওয়ানো হলো, ১০০ টাকাও দিলো, শান্ত ভাই। তিনি খুব খুশি। তবে যখন তিনি গান গাইতে থাকেন- অবলীলায় চোখ থেকে টপটপ পানি পড়ে। গাচ্ছেন দেহতত্ব কিংবা বাউল গান, কিন্তু চোখে আসে পানি। আপনার চোখে পানি কেন জিগেষ করলে উত্তর, 'এমনিতে আর ছেলেটার কথা ওতো মনে পড়ে না, কিন্তু গান গাই যখন তখন খুব দুঃখ লাগে তাই কান্দি'। তবে অনেকে মনে করে গানের আবেগ, আবেগ মাবেগ কিচ্ছু না'। এক অনুষ্ঠানের জন্য হারুন দেওয়ান নামে এক শিল্পীকে আনছে এলাকায় কে জানি। তিনিও গান গাইলেন। সবার উক্তি-- পুলক ভাই আর শান্ত ভাইদের ব্যাচকে গান শুনায়া প্রশংসা পাইলে এলাকার সবার প্রশংসা পাবা। সুফি ফেস্টের টিকেটের দাম ৫ হাজার, এত বড়লোকী ব্যাপার স্যাপারে যাওয়ার ইচ্ছে আগ্রহ আমাদের নাই। তাই আমাদের সুফী জীবন এইসব পার্টটাইম বাউলদের গান শুনেই কাটাতে হয়। যেখানে বিনিময় মুল্য খুব কম কিন্তু অসীম আবেগ। কাল ওয়ারফেইজের রিইউনিয়নেও যেতে পারলাম না, কারন যাতায়াত ভাড়া আর টিকেট এত টাকার শ্রাদ্ধ সম্ভব না। কত কিছু করা হয় না অর্থযোগের অভাবে, তাও সবাই ভাবে আমি মওজ মাস্তিতে আছি।
আমার বন্ধু আবীর আসছিলো বাসায়। সে খুব চিন্তিত। তাঁর এক বন্ধু নোয়াখালীতে শীর্ষ সন্ত্রাসীর সাথে যাতায়াত থাকার দরুন ধরা খেয়েছে। সেই সন্ত্রাসীকে পুলিশ নাকি র্যাব অলরেডি ক্রসফায়ার করে ফেলছে। গলিত লাশ পড়ে আছে মর্গে, পরিবারকে দেয় নাই, এলাকায় অশান্তি। আর আবীরের বন্ধুকে দিয়েছে আল্টিমেটাম, ৫ লাখ টাকা দিলে ক্রসফায়ার থেকে বাঁচাবে তাঁকে, নয়তো শেষ। এখন তাঁদের ফ্যামিলী এই দুর্যোগের ভেতর টাকা গুছাতে পারি নাই নির্ধারিত সময়ে, এদিকে ফোনও ধরে না পুলিশরা। মরে আছে নাকি বেঁচে আছে কেউ জানে না। এক বিভীষিকার দিন রাত পার করেছে, আর ওর ছোট ভাই খালি আবীরকে ফোন দেয়। মনে করে আবীরের অনেক ক্ষমতা, কিন্তু আমাদের যে কোন হিন্দি চুলের ক্ষমতা তা তো আমরা জানি। এইসব জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষন নিয়ে গল্প লিখতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারি না। সৈয়দ শামসুল হক বলেছিলেন, লেখার জন্য ভাষার দরকার, জীবনকে দেখার চোখ দরকার, আমার তেমন নাই। আমার আছে শুধু অন্যের থেকে শোনা ধার করা অভিজ্ঞতাগুলো। এগুলো দিয়ে আর কি গল্প হয়!
ফেসবুকে রাত জেগে থাকলে এক বান্ধবীর সাথে কথা হয়। ইংল্যান্ড প্রবাসী। তাঁর দুঃখ ভারাক্রান্ত জীবনের কথা শুনি। তাঁর স্বামী সারাদিন থাকে কাজে ব্যস্ত। বরের বড় ভাইয়ের বউ আর তাঁর শ্বাশুরী মিলে ব্যাপক মেন্টাল টর্চার করে। একটা ফুটফুটে ছেলে আছে তাঁর। সেই জন্যেই নাকি পড়ে আছে। স্বামীর কাছে এই নিয়ে কিছু বললে, আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ে মানিয়ে যেতে বলে, ধৈর্য্য ধরতে বলে, তাঁদের পরিবার কত অভিজাত তা নিয়ে বয়ান দেয়। আর রেগে খালি চড় মারে ঠাস ঠাস করে। আমাকে একটা সেলফি দেখালো পুরো লাল হয়ে গেছে মুখ চড় খেয়ে। কিছুই ভালো লাগেনা ওর। তাই নেটে বসে আমার সাথে ফেসবুকে বকবক করে, নিজের ফ্যামিলীতে শেয়ার করলে নাকি সবাই শুধু উপদেশ দেয়, একমাত্র আমি মন দিয়ে শুনি। এতসব চিত্তে আগুন লাগানো গল্প আমি চুপচাপ শুধু শুনে যাই। আমার কিছু করার নাই শুধু শোনা ছাড়া। সেও মানিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন এইসব একরকম করে। সবাই এই জাতির সারাবেলা মা মা করেন, আর মাকে পিটিয়ে তক্তা বানান সেটাও আমাদের একধরনের মাতৃভক্তি। দিনের বেলা এসব ভুলে থাকি মুলত। তাও মাঝে মাঝে মনে পড়লে এই দুনিয়াকেই এক জাহান্নাম মনে হয়। মনে হয় প্রত্যেকটা দিন আমাদের সবার জন্য একেকটা বিভীষিকার নাম। বিএনপির হরতাল অবরোধ চলছে, মানুষ পুড়ছে সমানে। পুরো দেশটাই একটা বার্ন ইউনিট হবে আগামীতে। দেশে গনতন্ত্র আসবে, বিএনপি পাওয়ারে যাবে কিন্তু মরতে হবে আমাদের। যেন তেন ইলেকশান করে সরকার থাকবে ক্ষমতায়, সেই ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে জান দিবো মোরা। এরকম জালিম রাজনৈতিক দুইটা দল বাংলাদেশের ক্ষমতার দুই স্তম্ভ, ভাবতেই অবাক লাগে। আমি দুই দলকেই বলবো। এর চেয়ে আমেরিকা রাশিয়া ভারত থেকে অস্ত্র কিনেন। আমাদের সবাইকে এক সাথে মেরে ফেলেন। বেঁচে থাকবেন শুধু আপনারা তখন রাষ্ট্রক্ষমতা ভাগাভাগি করেন।।
কি খবর বর্ণ?
আফসুসিত লেখা। তাইলে প্রথমেই মাইনাস।
সুফি ফেস্টের টিকেটের দাম ৫ হাজার? খাইছে!!
ক্রসফায়ার এখন বড় আতংকের নাম।
পোলাপাইন তাইলে এখনও মেয়েদের গায়ে হাত তোলে??
হ জামানা খারাপ!
এইবার দিওয়ালী গ্যাদারিং এর গল্প হচ্ছিলো, কণ্যাপূজা নিয়ে। ভারতে মেয়েদের কতো সম্মান করে, পূজা করে, ভারতীয় ট্র্যাডিশান ইত্যাদি ইত্যাদি। আর মনে মনে ভাবছিলাম, বাসের মধ্যে অত্যাচার করে মেরে ফেলে দেয়, গায়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারে সেগুলো মেয়েরা কী করে ভুলে যেয়ে চোখ বড় বড় করে ইনোসেন্ট আন্দদে এসব গল্প করে যায় কে জানে
সেটাই। মুখে মুখেই শুধু করি মা মা!
মন্তব্য করুন