দিন প্রতিদিন বইমেলায়-- (৩)
আজই প্রথম বইমেলা থেকে মোটামুটি মানের কেনাকাটা করলাম। কেনাকাটা ও রিকশা ভাড়াতেই টাকা শেষ। কি এক জামানা আসলো, বইয়ের যে দাম তা দিয়ে বারেক সাহেবের দোকানে ১ মাস প্রতিদিন দু চার কাপ চা খেলেও সমান হবে না। তাও বই তো বই, টাকা পয়সা অজুহাতে বইকেনা কি আর থেমে থাকে? দুখানা বাংলা একাডেমীর অভিধান, ছফার: হারানো লেখা, ও সুস্মিতা ইসলামের আত্মজীবনী মুলক একটা বই কিনে ফেললাম। কিনবো আরো কিছু বই, যেমন কর্নেল নুরুজ্জামানের একটা নির্বাচিত রচনাবলী বের করলো সংহতি সেটা, সাহিত্য প্রকাশের দু চারটা বই, জাদুঘরে একটা বই দেখলাম ঢাকা নিয়ে, পাঞ্জেরীর একটা পকেট বাংলা ব্যাকরন ডিকশেনারী সহ কিছু চমৎকার চেহারার বই দেখলাম, কিনে উপহার দিতে ইচ্ছে হচ্ছে কাউকে। মেলার শুরুতেই নান্দনিকে জিগ্যেস করেছিলাম, কামাল ভাইয়ের কোনো বই আসবে কিনা? সেই ছেলে বললো আসবে সামনে, সবুর করেন। কি বই সেটা গুরুত্বপূর্ণ না আমার কাছে, আহমাদ মোস্তফা কামালের নতুন বই সেটাই আসল। বইটার নাম-- 'একদিন সব কিছু গল্প হয়ে যায়'। যারা পড়বেন কেউ হতাশ হবেন না। কারন টুকটাক নানান জায়গায় এর সামান্য কিছু অংশ আমার আগেই পড়া। মুগ্ধতার গ্যারান্টি দিচ্ছি!
জনপ্রিয় লেখকদের সাথে পাঠক থাকে তাঁর ভক্তকুল থাকে, অটোগ্রাফ শিকারী লোকজনের আনাগোনা থাকে। কিন্তু মন্ত্রী আবুল মালের সাথে এত লোক কেন থাকে তা বুঝলাম না, বইমেলায় আসলেন তাঁর সাথে পুলিশ ও ব্যাক্তিগত সহকারী, বাংলা একাডেমীর লোকজন তো থাকলোই, সঙ্গে আসলো এক পাল জনতা। মন্ত্রী বই দেখে তাঁরা ছবি তুলে, মন্ত্রী বই কিনে তাঁরা হাসে, মন্ত্রীর সাথে থাকা লোকজন বইয়ের জন্য ব্যাগ চায় তারাও চিৎকার করে-- ওই ভাই ব্যাগ দেন! এই আমজনতাঁর ঠেলা শেষে এক পাবলিক হন্তদন্ত হয়ে আসলেন, মনে হয় ওরস্যালাইন লাগবে। কিন্তু না, তাঁর লাগবে টেলিটক সিম। সে ভুল দিকে এসেছে, তাঁকে জানিয়ে দিলাম রাস্তার ওপারে গিয়ে ঢুকবেন, দেখবেন আপনার মতো অনেক লোক, কলম দিয়ে ফর্ম পূরণ করছে। মেলায় অনেক মাদ্রাসার ছাত্র আসে, বাংলা একাডেমী থেকে ডিকশেনারী কিনতে। আমি যখন কিনছিলাম, তখন এক ছেলে বললো কাশেম বিন আবু বকরের বই কারা এবার আনছে? একাডেমীর লোকটা বলতে পারলো না। আমি বললাম আফসার ব্রাদার্সে গিয়ে জিগ্যেস করবেন, তাঁদের কাছে যদি না থাকে তবে তাঁদের ক্যাশে বসা যে লোক তাঁর কাছে জানতে চাইবেন, সমাধান পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ। বই কিনে হেলতে দুলতে আসছি, প্রচুর হাসি হাসি জুটি দেখে মনটা উদাস হয়। লোকজনের ভাব নিয়ে সেলফি তোলা, দেখে দেখে ক্লান্ত হই। অঙ্গভঙ্গি, মুখের অদ্ভুত এক্সপ্রেশনে তাকিয়ে থাকে ক্যামেরার দিকে। হাসি পায়। টিএসসির বারেকের দোকানে বসলাম কেবল, দেখি আনিসুল হক ভাই আমার পাশ দিয়েই হেঁটে যাচ্ছেন। মজা পেলাম, আমার মতো পাতি বুদ্ধিজীবির উপরে উনার দৃশ্যমান আছর সব সময় বিরাজমান!
আজ নিউমার্কেট পর্যন্ত রিকশা নিয়ে আসছি, তারপর হাঁটলাম। নীলক্ষেতে দেখি অনেক মানুষ বই কিনছে, সরগরম বাজার। কেউ সাহিত্য- কেউবা টেক্সট বই। হুমায়ূন আহমেদের পুরাতন বই এখন ফুটপাতে ভালো রিসেল হয়। এক লোক আয়েশ করে কিনছে, আর তাঁর বোনকে বলছে, 'দেখছোস- মায়মুনা তোরা হুদেই মেলা মেলা করোস। নীলক্ষেতে কত সস্তায় বই পাওয়া যায়, কিনা পড়ন যায়'। আমাদের কত জনগন, পাঠ্যবই আর সৃজনশীল সাহিত্যের বই মিলে কত বিশাল বড় বাজার। আমরা এই বাজারটার যত্ন করতে পারলাম না। ভালো একটা বইয়ের বিপনণ ব্যাবস্থা থাকলে আমাদের প্রকাশক ও লেখকদের অবস্থা কত ভালো হতো। যাবতীয় সব কিছু হয়ে গেছে মেলা নির্ভর। মেলায় বেচো, না হলে সারা বছরে খবর নাই। প্রকাশনা একটা শিল্প, শিল্পের যত্ন নিলে বানিজ্য হবে। বানিজ্য করলে শিল্প হবে না।
কাল ছিল শাহবাগের ২য় বার্ষিকী। আমার ছোট জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়। শাহবাগকে যারা ওউন করে না, তাঁরা বাংলাদেশকে ওউন করে কিনা- তা নিয়ে আমার যথেষ্ট ভাবনার অবকাশ রয়েছে! 'শাহবাগী'দের উপরে- তাঁদের অনেক কিছুতে আপনি বিরক্ত হতে পারেন, কিন্তু যেই কারনে শাহবাগ তাতে যদি আপনি বিরক্ত হন তাহলে আপনাকে নিয়ে আমি তো শুধু না পুরো জাতি চিন্তিত! তেমন এক লোক আজ আমাকে বললো, সরকারের টিম হয়ে শাহবাগে লোকজনের বসা আবার জরুরী কেন? আমি তাঁর মনের ভাব বুঝেই বললাম, নাদিম হোটেলের বিরিয়ানীর ব্রাঞ্চ খুলছে তো, সব গাঁজাখোর খেতে যায় ফ্রীতে। তিনি আর কথা বললেন না। শাহবাগ আর বাংলাদেশ ঠিক একই, বিভক্তি আছে, স্বার্থ আছে, দলবাজি আছে, স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা আছে, সোনালী অতীত আছে, পক্ষ-বিপক্ষ আছে, কিন্তু থেমে আছে সেই একদিকেই।
আজ আমার একমাত্র ভাইয়ের বড় মেয়ে মাহাদীয়ার জন্মদিন। মাহাদীয়ার বয়স পাঁচে গিয়ে দাঁড়ালো, আশা করি আরো ১০০ বছর বেঁচে থাকবে। বড় হয়ে এক নতুন দুনিয়া দেখবে। আমরা যে এক সংকীর্ণমনা ছোটলোকের দুনিয়ায় ছোট হয়ে বেঁচে ছিলাম, সেই জীবনের চেয়ে অন্য এক বিপুল মহৎ জীবন তাঁদের হবে। বড় হয়ে দারুন এক মানুষ হবে, এই দেশটাও দারুন হবে। এই দেশ নিয়ে কোনো হীনমন্যতায় ভুগবে না। নতুন এক প্রতিযোগীতাহীন সুন্দর দুনিয়ার আলোকিত মানুষ হবে সে। অনেক অনেক শুভকামনা তাঁর জন্য। আমি খুবই পছন্দ করি তাঁকে। এক সময় আমার ওয়ালেটে তাঁর ছবি থাকতো, ওয়ালেট হারালো ছবিও আর রাখা হয় না। থেকে যায় তা অয়াটস্যাপে, রাতে ঘুম আসে না, বারবার দেখি তখন। সবাই দোয়া করবেন তাঁর জন্য। ভাবী ভাইয়া আর ছোট্ট মৌনিয়া কে অনেক শুভেচ্ছা।
বই উপহার দিতে ইচ্ছে করলে, "রেখো মা দাসেরে মনে"
মাহদীয়াকে পৃথিবীর সকল ভালবাসা
আপনি দাস কেন হবেন আপনি তো ক্যাপ্টেন। মনে রাখলাম!
এবার এখনো বই মেলায় যেতে পারলাম না
ব্যস্ত চাকুরে কাম বিজনেসম্যান, সময় কই যাওনের?
প্রকাশনা একটা শিল্প, শিল্পের যত্ন নিলে বানিজ্য হবে। বানিজ্য করলে শিল্প হবে না।
কথাটা যুক্তি সংগত এবং আমি এতে প্রচন্ড ভাবে বিশ্বাসী। আর বই যদি উপহার দিতে চান তো.... !
শুভ্র নামটাতো ভালোই ছিল, কাটলেন কেন?
মাহাদীয়ার জন্য শুভকামনা।
তুমি মন্ত্রী মহোদয়ের কুনু বই কিন নাই? না কিনলে ধিক্কার তোমারে।
শাহবাগ যখন শুরু হলো অনেক আবেগ, উত্তেজনা মনে নিয়ে গিয়ে বসে থাকতাম অথবা খবর দেখতাম, পড়তাম, জানতাম। কিছুদিন পরই যখন শুরু হলো শাহবাগ নিয়ে দলবাজী, শাহবাগ কেন্দ্র করে কিছু মানুষের ষ্টার হওয়ার ধান্ধা---- বিরক্ত লাগলো যে একটা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু হওয়া বিশাল ব্যাপারটাকেও পুঁজি করার লোভ কতজনের!
মাহাদীয়ার জন্য শুভকামনা আর দোয়া। আলোকিত মানুষ হোক।
মন্তব্য করুন