নামের আগে বা শেষে যারা 'কমিশনার' লাগাতে আগ্রহী!
এই সরকার একদিক থেকে খুব বুদ্ধিমান, মাঝে মাঝে ইস্যু তুলে লোকজন তা নিয়ে দোড়ঝাপ করে তারপর আসে আরেকটা নতুন ইস্যু। ভুলে যায় পুরোনো দিনগুলোর কথা। এইভাবেই চক্রাকারে চলতে থাকে। এই হরতাল অবরোধ নাশকতার ভেতরে শহরে যেমন বাঁধে জ্যাম, ঠিক তেমনই নতুন করে বাঁধে নতুন নতুন ইস্যু। অন্য এলাকার খবর কেমন তা আমার জানা নাই, যেহেতু মোহাম্মদপুরে থাকি তাই না চাইতেই নানা ইস্যুতে নিজেই জড়িয়ে পড়ি। এখন যেমন মোহাম্মদপুরে চলছে কমিশনার ইলেকশন নিয়ে হাইভোল্টেজ আলোচনা ও প্রার্থী লইয়া তর্ক বিতর্ক। বিরোধী দলেরা কি করবে জানা নেই, কিন্তু এক আওয়ামীলীগ থেকেই সম্ভাব্য তিন চারজন মাঠে নেমেছে। ক্যান্ডিডেট ভিন্ন কিন্তু আওয়ামীলীগের লোকজন তো ঘুরে ফিরে সেই একই। আর স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা আমাকে চায়ের দোকানের সুত্রে হোক আর এলাকায় থাকতে থাকতে ও আড্ডা দিতে দিতে হোক- খুব জ্ঞানী লোক মনে করে। মনে করে আমার মাথায় অনেক বুদ্ধি। তাই যত কমই যাই চায়ের দোকানে, কে কি করছে, কার সাথে কে- সবার খোজ খবর বাতাসের আগেই পেয়ে যাই। শুনতে ভালো লাগে। ছোটবেলায় বড়রা যখন রাজনীতি নিয়ে আলাপ করতো, বিজ্ঞের ভাব নিয়ে শুনতাম এখন নিজেই সবজান্তা ভাব নিয়ে আপডেট পাই, লোকজন দেয়। নিজেকে তখন ব্যাপক প্রভাবশালী মনে হয়। আদতে আমি যে কি সামান্য, তাতো লোকজন জানেও না।
মোটামুটি ভাবে ধরে নিচ্ছে সবাই- এই সরকারের আমলেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হবে। তবে আমি চিন্তা করি, বিএনপি যে এত আন্দোলন করছে, অবরোধ হরতালে পুরো জাতিকে নাকানি চুবানি খাওয়াচ্ছে, তার রেজাল্ট কি? এভাবেই চলতে থাকবে দেশ? অবশ্য আমার আশেপাশে যার দিকেই তাকাই সবাই দেখি আমোদেই আছে। অফিস করে, বাসায় ফিরে নাস্তা খায়, সপ্তাহে ১দিন জুম্মার নামায পড়ে, চা খায়, বাজার থেকে মুরগী মাছ কিনে, ভালোই আছে সবাই, মোবাইল ভর্তি পর্ণ রাখে, ওয়াইফাই দিয়ে নামায় আবার হাদীস কুরআনের কথাও বলে। এই শহুরে জীবনে আপনি ব্যস্ত ক্লান্ত মানুষ পাবেন কিন্তু অভাবী-চিন্তিত- দিন চলছে না, এমন লোক পাবেন না। আর পেলেও সে আমার আপনার দৃষ্টিসীমানায় আসবে না। সেই আপাত সুখী মানুষদের জন্য আসছে স্থানীয় নির্বাচন। এখন পর্যন্ত আমাদের ওয়ার্ডে যারা ক্যান্ডিডেট সবাই আওয়ামীলীগের নেতা। বজলু কমিশনার, মহানগরে বড় পোষ্টে আছে, আমার সমান বয়সী রাজীব যুবলীগের থানা সভাপতি, রহমান- ওয়ার্ডের সভাপতি। এদের সবাইকেই আমি কম বেশী চিনি, চিনি মানে কেমন লোক, কি ব্যাকগ্রাউন্ড, আমলনামা কেমন ধরনের, পপুলারিটি কেমন এইসব আর কি। তবে এদের সবার মিল একটাই, এরা সবাই কম বেশী নানক সাহেবের ক্লোজ এবং নানকের আমলেই এদের অর্থনৈতিক উন্নতি চোখে লাগার মতো হয়েছে। যার কারনেই তাঁরা ভাবছে, লেটস মুভ অন। আমার সাথে অনেক কথা হয় মুলত ইউনিট নেতাদের। ইউনিট নেতারাও যে প্রভাবশালী তা আমি তাঁদের সাথে কথা বলে টের পাই। একেকজন ইউনিট নেতা মানে তিনি বিচার সালিশ করেন, দাওয়াত পান বিয়ে- জানাযা- দোকন উদ্বোধন সব কিছুর, চার পাঁচ জন লোক পালেন, কথায় কথায় ক্ষমতার গরম দেখান, ফুটপাতে দোকান বসিয়ে ভাড়া তুলেন, নারী প্রীতি থাকলে মওকা খুঁজেন- চেহারা কিংবা বয়স তাঁদের কাছে মুখ্য না, তাঁদের মেয়েদের ভালো বিয়ে হয়, কিন্তু ছেলেরা কিছু এমন হয়- যে ৫০০ টাকা দিলে কারো দোকানে আগুন লাগানোর জন্যেও তক্কে তক্কে থাকে, আর আগুন লাগালে বিচার আসে- বিচারে রায় হয় পোলাপান মানুষ, এই নাও ৫০০ টাকা জরিমানা করলাম, কথায় কথায় নিজেকে স্থানীয় প্রমান করতে বলতে হয় ২২ বছর ধরে এলাকায়, খিস্তি করতে হয় কথায় কথায়। আর কর্মীদের কাজ হলো ফাওয়ের ধান্দায় থাকা, ফাও সিগারেট চা গেলা, কথা লাগানো ও কারো বিপদে বড় বাঁশটা দেয়া। এখন আপনারা ভাবতে পারেন, এরকম ইউনিট নেতাদের সাথে আমার এত ভালো সম্পর্ক কেন। কারন একটাই আমি বাইরে বাইরে খুব সুবোধ বালকের জীবন যাপন করি, এমনিতেই সিগারেট খাই না, মাথা নিচু করে কথা বলি, লোকজনের আজাইরা প্যাচাল হজম করি, নিজের যতটুকু ক্ষমতা চেষ্টা করি উপকার করে সবার কাছে ভালো সাজার, আর সবাইকে চিনি ও সবার সাথে মিশি।
তবে ইউনিট নেতা কর্মীরা এবার আছে ফ্যাসাদে। কার ইলেকশন করবে? কারন সবাই এলাকারই লোক। বজলু কমিশনারের কথাই ধরেন। দীর্ঘদিন এলাকায়, ঢাকা মহানগরের বড় নেতা, প্রভাবশালী মানুষ, অনেক টাকার মালিক। অনেক আগে তিনি কমিশনার ছিলেন। তিনি যখন স্থানীয় নেতা কর্মীদের ডাকেন, তখন বয়স্করা তাঁর ডাক উপেক্ষা করতে পারে না। কারন বজলু কমিশনার আওয়ামীলীগ পাওয়ারে থাক না থাক, মিছিল মিটিংয়ে বিরিয়ানী আর টাকা দিতে কখনোই ভুলে নাই। তাঁর পক্ষ না থেকে উপায় কি লীগের লোকজনের। এরপর আসবে রাজীবের নাম। সে নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান, চেহারা ভালো। পড়াশুনা বাদ দিয়ে রাজনীতিতে নামছিলো, নানক সাহেবের খুব প্রিয় লোক। নানক সাহেবরে দিয়ে অনুমান করি দশ বারো কোটি টাকা অলরেডী সে কামিয়েছে। কামাল ক্যাটারিংয়ের সামনে এক গাদা লোকজন নিয়ে বসে থাকে। মেশিন টেশিনও আছে কম বেশী। এলাকার সবাই তাকে চিনে, সে মনে করছে বড় নেতা হবার এই সুযোগ। তবে সমস্যা হলো সে নাকি বেয়াদব, মুরুব্বীদের সম্মান করে না। আমি এমন অভিযোগ শুনে হাসি, শালার যে মানি- মাসল ম্যান রাজনীতি এইদেশে। সেখানে আমার বেয়াদব আদব লইয়াও তাহলে আলোচনাও হয়। তবে আমার চোখে তাঁর সমস্যা তাঁর লোকজন টাকা তুলে। আওয়ামীলীগ আছে বলেই তাঁর এত তাফালিং নয়তো তার অবস্থা ভালো কিছু হতো না। আর বাকী থাকে রহমান, রহমান সাব আমার কাছে ভালো মানুষ। পুরান ঢাকার একসেন্টে কথা বলেন, আওয়ামীলীগ করেন, ব্যাবসাপাতি আছে, দেদারছে টাকা ভাঙ্গেন। তিতা কথা বলেন। বুদ্ধি করে যে কথা বলা তা উনার হয় না। তবে প্রতিটা সমাবেশ শেষে উনার এক গল্প আমার খুব ভালো লাগে, 'বুঝলা বাজান সাংবাদিক আইলো এক এটিএনের, দিলাম ১ হাজার টেকা, দেখি আমগো বগল থেকে সরেই না, ক্যামেরা কুমেরা যা আছে সব আমগো দিকে'। আপাতত এই হলো আমাদের ওয়ার্ড থেকে দাঁড়াবে এমন আওয়ামী ঘরানার নেতাদের হালচাল। বিএনপি ইলেকশন করবে কিনা জানা নাই, করলে তাদের সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেটরাও আমার চেনাজানার ভেতরেই। আমার ধারনা দিন শেষে যেই ব্যাক্তি বেশী টাকা খরচ করবে সেই হবে জয়ী। কারন ঘুরে ফেরা নেতা কর্মীতো সবার একই- তাই যত গুড় তত মিঠা। সামান্য এক ওয়ার্ডের ইলেকশনের অনেক আগে প্রস্তুতি দেখে আমি বুঝলাম, কেন এই দেশের উন্নতি হবে না। কারন সবাই ক্ষমতা চায়, টাকা সবারই আছে, ক্ষমতায় গিয়ে সেই বিনিয়োগ কৃত টাকা সুদে আসলে ফেরত চায়, আর পাওয়ার তো থাকেই। এই শহরের নেতারা মুলত ক্ষমতার জন্য মরিয়া- অন্যকে অপদস্ত- অপমান- হেয়- যা খুশি তাই করার লাইসেন্সের জন্য। একবার পেলে নিজে কত বড় শুয়োরের বাচ্চা তাই প্রমান দিতে সদা সচেষ্ট থাকে!
খুব ভাল অভজারবেশান, ভাল লিখেছো
খারাপ লিখি না। কত কি লিখি এখন খালি তা ব্লগে দেই না!
নির্বাচন নিয়ে হিসাব-নিকাশ ভালোই করেছ
নির্বাচন নিয়ে এখন আর আগ্রহ নাই কুনুই। জোর যার মুল্লুক তার।
টেকাটুকাই আসল জিনিস!
লেখাটা বাস্তবধর্মী, একদমে পড়ার মত, তবে ভয় কি শান্ত সব স্ত্যি সব খানে না বলাই ভাল।
মানুষ কত সাহসী কত কি লিখে, এইসব তো সামান্যই। আমার তেমন ভয় করে না। কারন প্রত্যেকটা সকালেই আমি ভাবি আজ মরে যাবো।
মন্তব্য করুন