গার্হস্থ্য জীবনযাপন!
চারিদিকে এখন ক্রিকেট। এত ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা সবাই করছে, কদিন পরে আমাদের গায়েই ট্যাগ লাগবে-- বাঙ্গালী ইট ক্রিকেট, ড্রিম ক্রিকেট, লাভ ক্রিকেট। যেখানে যাই, যার মুখের দিকেই তাকাই, ব্যস্ত আড্ডায় উকি মারি, ক্রিকেট ছাড়া আলোচনা নাই কোনো। ক্রিকেটের আলোচনা সবাই করে সে রিকশা চালক আইনুল হোক আর ড্রাইভার জসিম হোক, নর্দানের ছাত্র বাবু হোক আর কোটিপতি শান্ত ভাই হোক কিংবা বন্ধু আদনানের বঊ রুমু ভাবীই হোক না কেন, মুক্তি নাই। আমাকেও করতে হয়। আমি খারাপ করি না। ক্রিকেট নিয়ে আমার জানাশোনাও কম না। কিন্তু প্যাচাল পারতে ইচ্ছে করে না সবসময়। এক কালে ক্রিকেট অনেক আবেগের জায়গা ছিল, যার খেলাই হোক টিভিতে মিস হতো না, এখনো তা আছে, তবে মাত্রা কমেছে। দিনশেষে ক্রিকেট একটা খেলাই। ক্রিকেটে ওয়ার্ল্ডকাপ পেলেও বাংলাদেশ, বাংলাদেশই থাকবে, ইংল্যান্ড হবে না। তবুও বাংলাদেশের বেলায় আমার আর এইসব এত মনে থাকে না। বাংলাদেশের পরাজয় দিনশেষে আমাদেরই পরাজয়, বাংলাদেশের জয় আমাদের এক অবিস্মরণীয় জয়ের দিন। বাংলাদেশ ভালো খেললে ভালো লাগে, কিন্তু খারাপ খেললে সেটাও মেনে নিই। কারন জীবনভর আমি কোন ভালো কাজটা করলাম দেশের জন্য? অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক লেখক প্রথম আলোয় কলাম লিখেছে, যে তার ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় ছোটবেলা থেকে, বাংলাদেশের ভালো খেলায় মুগ্ধ, তাঁর জানা ছিল না বাংলাদেশ এত ভালো খেলে। আমি এত চুদির ভাই বিশিষ্ট নাগরিক না, আমাকে মুগ্ধ করার জন্য আর সাপোর্ট পেতে দেশের ক্রিকেটারদের ভালো খেলতেই হবে।
আমার জীবন এখন যাচ্ছে আনোয়ারের সিমেন্ট শীটের বিজ্ঞাপনের মতোই ফুরফুরে। আমার সন্ধানে কেউ না আসলে- বাসা থেকেই বের হই না। সারাদিন বাসায়, বসে থাকি। পিসির সামনে, বই পড়ি, শুয়ে থাকি, বাসায় হাঁটি, ডায়রী লিখি। সময় কেটে যায়। কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না, কোথাও যাওয়াও হয় না। অতি জরুরীভাবে কেউ ডাকলে বের হই, নয়তো এখন আমার দিনকাটে ফ্যানের ব্লেড ঘুরে তা দেখতে দেখতে। বাসা পাল্টানোর সময় পুরোনো ডায়রী গুলো খুঁজে পেলাম অনেকদিন পর। মামা দেখার আগেই তা সাইড করলাম। মোটামুটি ২০০৮ সাল থেকে এন্ট্রিগুলো পেলাম। এর আগের যে ডায়রী ছিল তা হারিয়ে ফেলেছি। ডায়রীর পাতা গুলো দেখে মনে হলো তেমন লিখি নাই। আরো লেখা উচিত ছিল। তবে যাই লিখেছি তাই এখন প্রেশাস লাগে। মনে হয় বারবার উল্টে দেখি। তখন আমি প্রচুর পড়তাম, যে বই পড়তাম তা পড়ে কি মনে হতো তাও দেখি লিখে রেখেছি। তখন তো ব্লগে স্রেফ কমেন্টই করতাম, এখনকার মতে হলে সেগুলো ব্লগের পাতায় পাতায় থাকতো। সামহ্যোয়ারে শেষ কমেন্ট করেছিলাম মনে হয় আজ থেকে পাঁচ বছর আগে নয়তো বন্ধু রেজার কোনো পোষ্টে। অথচ সেই ব্লগেই আমার এখনো কমেন্টের সংখ্যা এগারো হাজার, আমার সহযাত্রী বড় ভাই বোনদের আরো কত বেশী। আহা কি দিনগুলো, যখন ব্লগ মেইল আর গুগল ছাড়া নেট চালানোর কোনো অর্থই ছিল না। এখন নেটে ঘরে বসে ৩ এমবিপিএসের লাইন চালিয়ে ভাবি, কি অদ্ভুত সুন্দর ছিল ১০ কেবিপিএসের ১২০০ টাকার লাইন- ইসনিপ্সে একটা গান শুনতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করতে পারতাম। ডায়রীর পাতাতে সেগুলাও দেখলাম, নেট নাই বলে হতাশা, সারদিন নেটে বসতে না পারার হাহাকার, বাড়ীতে গিয়ে নেটবিহীন জীবনযাপনের হাহুতাশ- সব আছে। তবে সব চেয়ে বেশী আছে মরন নিয়ে ভাবনা। পড়লে মনে হবে কত শত বার আমি মরতে চেয়েছি, হয়তো এখনো চাই। কিন্তু যথাযথ সাহস ও পরকাল এবং সামাজিক পারিবারিক জীবনের কথা ভেবে, আমার আর মরে যাওয়া হয় না। কিন্তু ডায়রী পড়লে যে কেউ ধারনা করবে, এক মৃত লোকের ডায়রী। মরনবাদী হয়ে আমার মতো উজবুকরা সারাজীবনই বেঁচে থাকে। ডায়রীতে আরেক জিনিস আছে, উজ্জল দিন গুলোর কথা, ভার্সিটি পিকনিক কিংবা লঞ্চ ভ্রমন, বাসায় না বলে চিটাগাংয়ে গিয়ে সমুদ্রের সামনে উদাস মনে বসে থাকার আলাপ, বা বিরহ বিরহ দিনগুলোর কথা। আমি পুরো মুগ্ধ এই জিনিস ২ বছর পর পেয়ে। খুটিয়ে খুটিয়ে পড়েছি। হাতের লেখার অবস্থা আমার সুবিধার না, তাও নিজের বলেই প্রথম বর্ণ দেখলেই বুঝতে পারি কি লিখেছি। ইংরেজীতেও অনেক এন্ট্রি আছে, নিজেকে তখন এলিট ভাবতে ভালোবাসতাম সেই কারনে লেখা। ইংরেজীতে লিখলে আরেকটা উপকার- কে আর তা খুঁজে পড়তে যায়। মনে করে ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্টের নোট লিখেছি।
ডায়রীর গল্প অনেক হলো। এবার গৃহের গল্প করি। মামী আসছে নতুন বাসায়, বাসায় নতুন নতুন ফার্নিচার আসছে, আমার আলাদা রুম। নতুন খাট, বিশাল এক বুক শেলফ, নিজের ক্যাবিনেট কি না পেলাম নতুন। মামী ব্যাপক আদর করে। খানাদানার মোটামুটি অত্যাচারে থাকি। এখন আর বুয়ার ভরসায় বসে থাকতে হয় না, বুয়া না আসলে বাইরে খেতে হয় না। ডাইনিং টেবিলে বসলেই, খাবার রেডি। আমি অবশ্য ডাইনিং টেবিল কখনোই পছন্দ করি না, কারন টিভি অথবা বই পড়া ছাড়া খাবার আমার পেটে ঢুকে না। তাও মামার সাথে বসি। কাল ছুটির দিন ছিল, মামা আমার জন্য বসে ছিল এক সাথে খাবো বলে। আহা! ফিলিং ফ্যামিলী ফ্যামিলী। মামার পিচ্চিটাকে দেখি, কোলে আসে না তাই নেইও না, কিন্তু দেখলেই শান্তি লাগে। আমার ভাই, আমার চেয়ে ২৬-২৭ বছরের ছোট দেব শিশু। আমিও এমন ছিলাম, আমাকে নিয়েও আব্বু আম্মুর এত উচ্ছাস ছিল। বাচ্চা আমার কোলে নিতে ভালো লাগে না কখনোই, ছোটবেলায় পারতামও না। এই জীবনে একটা বাচ্চাই আমার কোলে ছিল তা হলো চিটাগাংয়ে- পাশের বাসার এক পিচ্চি, নাম আবিদ। কুলির মতো ডাকতো আমাকে, শান্তবাইয়া শান্তবাইয়া। আমি যে গান গাইতাম ওকে কোলে নিয়ে তাই সে তা গাওয়ার চেষ্টা করতো, আমি সকালে ঘুম থেকে উঠে আলুভাজি খেতাম, সেও খেত, বাসায় থাকলে সারাদিন আমার সাথে সাথেই। একদিন তার জ্বর, নেভীর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, সে ফিরে এসেই বললো-- 'শান্তবাইয়া কোলে নেও, জর নাই'। আমার বন্ধুরা আসতো, অবাক হতো বলতো পাইছোস এক পিচ্চি ফ্যান। মামার ছেলেটার দিকে তাকালে আমার শুধু আবিদের কথা মনে পড়ে। হিসাবে এতদিনে তাঁর বয়স এগারো বারো হবার কথা। ক্লাস ফাইভে হয়তো পড়ে, হয়তো কোনোদিনও আবিদের সাথে আমার দেখা হবে না। তাও সেই দুই বছরের পিচ্চির ছবি এখনো আমার মনে পড়ে। এই জন্যেই বাড়ীতে গেলে আমার সাথে অনেকের দেখা হয় তাঁরা বলে ঊঠে-- 'শান্ত তোমাদের বাসায় গেলাম, কত কোলে নিলাম তোমারে'। কোলে নেয়ার স্মৃতি আসলে বড়দের জন্যই আনন্দের। বড়রাই শিশুদের কোলে নিয়ে নিজের শিশুকালকে মনে করে। আমি শিশুকালকে মনে করতে চাই না, তাই কাউকেই কোলে নেই না। বাচ্চারা থাকুক বাচ্চাদের মতো।
বাংলাদেশের মানুষের হাতে সময় অনেকককক। স্ট্রেস কম। তারা অল্পেই নিজেকে কোথাও ব্যস্ত করে উচ্ছাস আনন্দ পেতে পারে। সারা পৃথিবীর এই কারণেই বাংলাদেশকে হিংসা করা উচিত। আর একটা দেশ দেখেছিলাম, নেপাল। আমাদের থেকেও আজাইরা, টেনশান লেস। দরিদ্র থাকার অসুবিধার সাথে সুবিধাও আছে প্রচুর। যেকোন কারণে ছুটি, হরতাল। আনন্দ, ক্রিকেট। টাইম ইজ মানি, মানি ইজ টাইমের যন্ত্রনা নেই
খেলা দেখতে বসে টেনশনে ঘাড় ব্যাথায় ঘাড় কাইত করতে পারতেছি না। তোমার ব্লগ পড়ে ঘাড় ব্যাথা কমাতে আসলাম
আরামেই তো আছ। এমন আরামের দিন থাকুক সবসময় ।
খুব একটা ভালো নাই। আপনার শরীর কেমন?
মন্তব্য করুন