ইউজার লগইন

সীমাহীন নির্লিপ্ততা!

কোরিয়ান থ্রিলার ঘরনার মুভিগুলা খুব ভালো হয়। টানটান উত্তেজনা। তবে শিউর থাকবেন বড় চরিত্রের কেউ না কেউ মরছে, কারন জীবিত রেখে থ্রিলার শেষ করার মতো আইডিয়া তাঁদের এখনো মাথায় আসে না। ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে জবাই করার তিনদিন পর আমার খালি মনে- পথের পাশে অনেক আগে যে পোষ্টার দেখতাম, ডিপজল বিশাল রাম দা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, রক্তাক্ত পাঞ্জাবী লুঙ্গি। এমন একটা ভাব- সবাইকে কোপানোর জন্যই তাঁর এই সিনেমায় অংশগ্রহন। আমার এখন শুধু মনে হয়, এরকম কোনো ডিপজল, কোরিয়ান থ্রিলারের মতো নিখুঁত ভাবে, তামিল সিনেমার রগরগে খুনের দৃশ্যের মতোই আমাদের সবার সামনে উপস্থিত। কেউ দেখছি, কেউ দেখছি না, আর বেশীর ভাগ ভাবছি আমার কিছু হবে না। এখন এই যুগে আমার কিছু হবে না এইটা ভাবা কত বড় অন্যায় তা আরেকবার প্রমান দিলেন ওয়াশিকুর রহমান বাবু। তিনি আমার আপনার মতো সাধারণ, সাধারন লেখা লিখতেন, কিছু তর্ক করতেন ধর্ম নিয়ে, আশেপাশের কেউ জানতেনই না তিনি ব্লগিং করেন। মিশতেনও না কারো সাথে, তাও তিনি সংখ্যাগুরুর ইমানী দ্বায়িত্বের কারনে তেজগাঁও এর মত জনবহুল অঞ্চলে খুন হলেন, খুনীরা নির্বিঘ্নে পালিয়েই যাচ্ছিলো। ধরে ফেললো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা। যারা গালি দিতে এদের নাম ইউস করেন তাঁদের প্রতি আমার ঘৃণা রইলো আবার। নিভৃতচারী হয়েও এখন কোনো লাভ নাই, কারো চোখে আপনার সামান্য এক লাইন কথাই আপনার পত্রিকায় হেডিং হয়ে খুন হবার কারন। অনেক বিচক্ষণ লোকেরা এইসব ক্ষেত্রে বলবেন, যদি- কিন্তু -অথবা- কিংবা, তারাও প্রস্তুত থাকেন, আপনার স্বজনও সামনে এমন পরিস্থিতিতে পড়বে। তখন বলবেন, 'আমার বাবার হত্যার বিচার চাই কিন্তু আমার বাবা সকাল সকাল বাজারে না গিয়ে চায়ের দোকানে বসে থাকতো। সাথে সিগারেটও খেতো, যদি তিনি বাজারে থাকতেন তবে অবশ্যই বেঁচে যেতেন'। দিনের পর দিন এক অবিশ্বাস্য রকমের হারামজাদা জাতিতে পরিনত হচ্ছি আমরা।

মৃত্যুর পরেই আমি ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে চিনি। উনার ছবিও দেখলাম। এই চেহারার কতো ছেলেকে আমি চিনি। বয়সে আমার সমবয়সী। খবরটা শুনে ফেলার পর আমার মনে হয়েছিল দু ঘন্টা পড়েই উনার মন্তব্যের স্ক্রীনশট ফেসবুকে হাজির হবে। একদম ঠিক ঠিক তাই হলো। একবার স্ক্রীনশট পয়দা হয়ে গেলে তার আর বেচে থাকার পক্ষের লোকও পাওয়া যায় না। শারীরিক মৃত্যুর সাথে সাথেই তাঁর সব জায়গা থেকেই গায়েবী মৃত্যু ঘোষনা হয়ে যায়। অথচ কেউ তাঁর সাধারণ স্ট্যাটাস গুলো খুলেই দেখে না, দেখে না তাঁর আমাদের মতো সাময়িক মন খারাপের লেখা গুলো। আমি কোনো বয়ান দিবো না, প্রকৃত ইসলামে কি কি আছে তাও নিয়ে জাস্টিফাইয়ে মাঠে নামবো না। তবে মানব জাতি হিসেবে সব চাইতে নিকৃষ্ট কাজের দায় আমি আপনি কেউ এড়াতে পারবো না। সচলায়তনে একটা পোষ্ট দেখলাম-- আমাদের হাতে অভিজিতের রক্ত, আমি ওতো কাব্য করে পারবো না, তবে আমাদের পুরো জাতির আগামী নিয়ে আমি খুব চিন্তিত, এত খারাপ কপাল আর কোনো দেশের কিংবা জনগোষ্ঠীর নাই। আমাদের জাতীয় ইস্যু এখন লোটাস কামালের পদত্যাগ। কদিন আগে এরাই লোটাস কামালের নাম সঠিক ভাবে লিখতো না, আজ তাঁরা উচ্ছাসে ভেসে যাচ্ছে। আমাদের ইস্যু হলো রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা কোথায় গিয়ে বলেছেন মাদ্রাসায় দান না করতে তা। আমি একটা কথা ক্লিয়ার কাট বলে ফেলি, যার যা ইচ্ছে সে এইদেশে তাই করে, আমার আপনার আদেশ উপদেশে কাকুতি মিনতিতে কারো কিচ্ছু আসে যায় না। যে মরন খেলা দেশের বুকে শুরু হয়েছে, এর শেষ কোথায় তা আমার জানা নাই। এরা নাকি আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, এই পক্ষের চেয়ে শত্রু পক্ষের সাথে থাকা ভালো। যে সরকার তার সব শক্তি কাজে লাগায় সাধারন জনগন, বালের বিরোধীদল আর পাহাড়ের আদিবাসী নির্যাতনে, তেমন সরকারের কাছে বাবু, অভিজিৎ, রাজীব বিচারের আশাবাদ কেবল পাগলরাই করতে পারে।

তবুও সকালের শোক আমি দুপুরে গড়ালেই ভুলে যাই, বন্ধু পরাগ ডেকে নিয়ে খাওয়ায় স্টারে, দু বছর পরে তাঁর সাথে কথা হয় জীবনযাপনের সব কিছু নিয়ে, বিকেলে চলে যাই মতিঝিলে, জেমসের সাথে মারলিনে চা খেতে খেতে সৃজিতের নতুন সিনেমা নিয়ে আলাপ জমাই, রাজা নামের যে বাস- তাতে উঠে জ্যামে দরদর করে ঘেমে যাই, ডিজিটাল তসবীহ বিক্রেতা কিংবা কি খেলে উত্তেজনা বাড়ে মেডিকেল টিপস বই বিক্রেতার ক্যানভাস শুনি। বারেক সাহেবের দোকানে এসে আলাপ জমে উঠে, সবাই মিলে রাজনীতিবিদদের পিন্ডি চটকাই, বাংলা সিনেমা নিয়ে রসিকতা করি, হলিউড বলিঊডের নতুন সিনেমা নিয়ে হইচই করি। আটা আর চা পাতি কিনে বাড়ী ফিরি রিকশায়। আমরা এইভাবেই বেঁচে থাকি চুদির ভাই টাইপ নির্লিপ্ততায়, নিজের এক চোখও যদি কেউ উপড়ে ফেলে, আরেক চোখ দিয়ে চেষ্টা করবো মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে কটা লাইক পেলাম তা দেখতে।

সব ভুলে থাকার চেষ্টা করি। আগের মতো কাউকে টেক্সট করিনা, কল করিনা, পেপার পড়াও ছেড়ে দিয়েছি সেই কবেই। প্রতিদিন এত চাঞ্চল্যকর খুনের খবর লোকজনের মুখে শুনে শুনে দিশেহারা হয়ে যাই। বাসায় থাকি, গান শুনি হিন্দি বাংলা উর্দু জাপানিজ সব, ইউটিউবে গান অটো বাজতেই থাকে, টিভি সিরিজ দেখি। মামার বাচ্চাটার হাসি দেখি, কান্না শুনি,আমাকে দেখে যে হাসে তাতে আবেগে ভেসে যাই। আপসোস হয় মনে কি এক দুনিয়া রেখে যাচ্ছি এদের জন্য। মামাকে বুদ্ধি দেই, ছেলেকে জমি বেচে হলেও ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশুনা করাবা। যোগ্য লোক হবে আর জলদি দেশ ছেড়ে চলে যাবে। জাতির সমস্ত আশাভরসা এখানে দুটাকার সুতায় বাঁধা, সামান্য বাতাসেই যা খুলে যায়। সবাই সাবধানে থাকেন, আমার মতো নার্সিজমে আত্মমগ্ন হন। তাও বেঁচে থাকবেন কিনা সন্দেহ। তবে আশা করি আপনার আমার নির্লিপ্ততা ভাঙতে সহসাই কেউ আসছে না!

পোস্টটি ১৯ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

তানবীরা's picture


আমার পড়া তোমার সেরা পোষ্ট। প্রত্যেক কথায় একমত। কী হচ্ছে আর কী হবে আমাদের?

শ্রীনি বিশ্ববাসীর সামনে জুতা দিয়ে না পেটালে লোটা এখনও কম্বল ত্যাগ করতো না, আমি ওভারশিওর

আরাফাত শান্ত's picture


আমিও শিউর!
আমার লেখা তো লেখাই। ভালো হয় কিংবা আপনাদের ভালো লাগে লেখা মাঝে সাজে তাই অনেক!

জাকির's picture


এখনো আমরা সামাজিক দায় বদ্ধতা কমাতে কমাতে এত নিচে নামিয়ে এনেছি যে শুধু বেঁচে থাকা ছাড়া আর কোন অবকাশ নেই।

সকালে ওঠে একবার দেখ শ্বাস প্রশ্বাস ঠিক আছে কি না, আবার আরেকবার রাতে ঘুমানোর আগে। ব্যস, জীবনের ব্যবচ্ছেদ কমপ্লিট!

আরাফাত শান্ত's picture


নতুন শহরে কেমন লাগছে?

জ্যোতি's picture


যার যা ইচ্ছে সে এইদেশে তাই করে, আমার আপনার আদেশ উপদেশে কাকুতি মিনতিতে কারো কিচ্ছু আসে যায় না। যে মরন খেলা দেশের বুকে শুরু হয়েছে, এর শেষ কোথায় তা আমার জানা নাই। এরা নাকি আবার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার, এই পক্ষের চেয়ে শত্রু পক্ষের সাথে থাকা ভালো।

Sad

আরাফাত শান্ত's picture


মনটা খারাপ আপু!

উচ্ছল's picture


Sad সব ভুলে থাকার চেষ্টা

আরাফাত শান্ত's picture


ঠিক বলছেন ভাইয়া!

জামিল's picture


উপরোক্ত বিষয় পড়ে মনে হল হতাশায় সে ডুবে আছে।
মানুষ আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন থাকলে তার উপর হতাশা নামিয়ে দেওয়া হয়।

১০

আরাফাত শান্ত's picture


Sad

১১

জেবীন's picture


নির্বিবাদে মানুষ মেরে ফেলার মত ব্রেইনওয়াশড এখন কি অবলীলায় করে ফেলতে পারছে, আবার তা জাস্টিফাই করার মতো লোকেরও অভাব হচ্ছেনা! ধীরে ধীরে নয় রীতিমত জোরেসোরেই খুনি জাতি পাকিস্তান আফগানিস্তানের মতো নরক হয়ে যাচ্ছি!

পড়তে পড়তেই মনে হচ্ছিল, তোমার অন্যান্য লেখার লেখা থেকে অনেক আলাদা এটা, পরে তাতা'পুর কমেন্ট দেখলাম, হ্যা তোমার সেরা পোষ্ট এটা!

১২

আরাফাত শান্ত's picture


অনেকদিন পর আমার পোষ্টে আপনার কমেন্ট। থ্যাঙ্কস এগেইন আপু, এই ব্লগে লেখা নিয়মিত দেয়ার পেছনে আপনার অবদান অনস্বীকার্য!

১৩

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


টিপ সই

১৪

আরাফাত শান্ত's picture


Welcome

১৫

আরাফাত শান্ত's picture


Welcome

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!