ভোট চাই ভোটারের, দোয়া চাই সকলের!
গত পাঁচ বছর ধরে একটা কাজ আমার খুব নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে করে যেতে হয়, তা হলো কাপড় ধোয়া। যদিও কাজটা অনেকের জন্য খুব সহজ, কিন্তু এই সাতাশ বছর বয়সের ভুড়িওয়ালা মধ্যবিত্ত শরীরে তা করতে করতে ক্লান্ত লাগে। মামী বলে আমি করে দিচ্ছি মামা, আপনি কাপড় গুলো দেন, তাও দেওয়া হয় না। নিজের কাপড় আম্মু ছাড়া কেউ ধুয়ে দিবে ব্যাপারটা খুব বেদনার। আবার বুয়ার ভরসায় থাকলে সেদিন বুয়াই আসে না। এই সামান্য ঘটনাতেই বুঝি আম্মু কত দারুণ, সংসারের শত কাজ করেও আমার কাপড় ধুয়ে দিতো অবলীলায়। কাপড় করতো ঝকঝক, মাঝে মধ্যে শুধু কাজ বেশী থাকলে বলতো, জমিয়ে রাখ কাল পরশু ধুয়ে দিবো। মামা তো আদর করেই, মামীও যথেষ্ট মামার মতোই। খুবই যত্ন আত্মিতে থাকি, দিনকাটে স্মুথলি। আর পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভুড়ি কারন খাই দাই- ঘুমাই -বই পড়ি- সিনেমা দেখি- বাসাতেই থাকি। দিনের পর দিন বাইরে যাওয়া এখন কম। পুলক ঢাকার বাইরে, আবীর চিটাগাং, জেমস অফিসের কাজে ব্যস্ত, ছোট ভাইদের সাথে আড্ডা মারতে ভালো লাগে না তাই আমি বিজি হবার ভাব নিয়ে বাসাতেই থাকি।
চারিদিকে শুধু ইলেকশন ইলেকশন গন্ধ, দিনে রাতে গগনবিদারী মাইকের আওয়াজ, উদ্ভট হিন্দি গানের সুরে নির্বাচনী গান, যখন তখন ক্যান্ডিডেটদের আনাগোনা, বিরক্তিকর এক সময়। লিফলেট বারেক সাহেবের দোকানে টেবিল স্তুপে পড়ে থাকে। গেলে তাই দেখি, মহিলা কমিশনারদের প্রতীকগুলো আসলেই আপত্তিকর, যেমন টিস্যু বক্স, শিল পাটা, বেগুন, মুলা, চিরুনি, চামচ, কাপ, কেটলি। অবশ্য পুরুষদের গুলো অবশ্য বিশেষ যুতের না, মিষ্টি কুমড়া, ঠেলাগাড়ি, কাটা চামচ, টিফিন ক্যারিয়ার, পিঞ্জর, প্লেট। গোলাম মাওলা রনির প্রতীকটা আমার খুব প্রিয় তা হলো, আংটি। আরেক দিকে এক জীবনঘনিষ্ঠ প্রতীক পেয়েছেন, সোহরাব রুস্তম নাটকের তাবিখ আওয়াল, বাস। এক হাজার বাস পুড়িয়ে উনি বাস প্রতীক পেয়েছেন। এরেই কয় বাজ পড়া কপাল। উনি ফুটবল খেলতেন, ফেডারেশনে বিশাল পোষ্টে ছিলেন, ফুটবল প্রতীকটা পেলে ভালো হতো। দুই বিশাল বড়লোক ও প্রভাবশালী মেয়র ক্যান্ডিডেট পেয়েছেন, মগ আর টেবিল ঘড়ি। সাইদ খোকন- লাকী পেয়েছেন ইলিশ মাছ, এরকম দামী জিনিস প্রতীক পেলে দারুণ একটা সুবিধা আছে। নানান লোকজন জানতে চায় ভোট কাকে দিবেন? আমি মোহাম্মদপুরের ভোটার। আমি স্থানীয় নই তবুও এই আট বছর থাকতে থাকতে এলাকার বিশেষ অনুরক্ত। যত বেসামালই হোক মনে হয় এইটা আমার জায়গা। ওউন করি সব সময়। আমি ভোট দিবো টেলিস্কোপ মার্কায় সাকী ভাইকে, নারী ক্যান্ডিডেটে দিবো টিয়া পাখী মার্কায় কারন উনার স্বামী আমাকে খুব স্নেহ করে। তবে যে দুইজন কে ভোট দিবো বলে শিউর আমি- তাঁদের দুইজনেরই জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাও তাঁরা সাহস করেছে আমার একটা ভোট দিতে কষ্টের কি আছে! কমিশনার পোষ্টে কাকে ভোট দিবো তা এখনও ভাবি নাই। কারন যে দু তিন জন দাঁড়িয়েছে সম্ভাব্য বিজয়ী, একজনও সুবিধার মানুষ না, বন্ধু আবীরের ভাষায় বলতে গেলে- ৩০০ টাকা মজুরীর কামলা হবারও যোগ্য না তাঁরা এসেছে ইলেকশন করতে!
আমাদের ভোটকেন্দ্র যে কলেজটা ছিল তা গায়েব হয়ে গিয়েছে। সেখানে এখন এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। এমপিও ভুক্ত কলেজও হাওয়া হয়ে যায় তা আমার আগে জানা ছিল না। ভোট এখন দিবো আমরা মাদ্রাসায়। মাদ্রাসা এখন আর আমার ভালো লাগে না- আগে লাগতো, আমার একটা পোষ্ট আছে যার শিরোনাম বুলডোজার তা পড়লে বুঝবেন কিভাবে যুক্ত ছিলাম নানান কিছুর সাথে। কিন্তু মাদ্রাসা ছাত্রদের এখন আমি বুঝে গেছি, তাঁরা এত ইসলামী জ্ঞানের অহংকারে থাকে তা বুঝে গেলে আপনি ব্যাপক অবাক হবেন। আপনার ইসলামী জ্ঞানকে তাহারা দুই পয়সার দামও দিবে না। অথচ আপনি জানেন আপনার জানায় ভুল নাই। আর এত ভারত বিদ্বেষী মনোভাব তবুও বাচ্চা ছাত্ররা এশারের পর বের হয়ে আইপিএলে জুয়া খেলে। আমি একদল মাদ্রাসার ছাত্রকে এক ডায়লগ দিয়েছিলাম- আইপিএল দেখো কেন? কয় আইপিএলে উত্তেজনা আছে। আমি যা বুঝার বুঝে নিলাম। যাই হোক মাদ্রাসা ছাত্ররা সবাই হয়তো এক নয়। কিন্তু অহংকারী আলেমের চেয়ে বেনামাজী ভদ্র মানুষ আমার কাছে বেশী প্রিয়। যার যারটা তার তার কাছে। চরমোনাই পীরের এক মেয়র ক্যান্ডিডেট আছে ঢাকা উত্তর থেকে। নাম সম্ভবত আক্তারুজ্জামান, তবে তিনি ইরানী খোমেনীর আদলে নিজের নাম দিয়েছেন, আয়াতুল্লাহ। তাঁর মাইকিংয়ে একটা উপাধি বলে খোদা ভীরু ও মেহনতি মানুষের ইসলামী শিক্ষক। এরকম টাইটেল কার কপালেই বা জুটে? লাঠির আগায় কমলা নিয়ে তাঁরা মিছিল করে নারায়ে তাকবীর বলতে বলতে আর হ্যান্ডশেক করতে করতে। সবাই এক, ইসলামের ইউস টিস্যু পেপারের মতোই করে, ছুড়ে ফেলে দেয় বাইরে। চরমোনাই কিংবা আটরশীরা প্রতিবার হাজার খানেক করে ভোট পায়, কে তাঁদের আখিরাতের ব্যবসা ছেড়ে এই দুনিয়াবী নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্তের বুদ্ধি দেয় তা আল্লাহই জানে!
নাদের চৌধুরী ইলেকশন করবেন, তিনি আমাদের এলাকারই লোক, মেয়র ইলেকশন, আশা করি তিন হাজার ভোট পাবেন ময়ূর মার্কা নিয়ে। জানি না সত্য কিনা তবে তিনি নাকি ভোট কিনবেন, এক দেড় হাজারের প্রতি ভোট। দামটা কম হয়ে গেলো। তিনটা ভোট যেহেতু দু হাজারের উপরে বাধ্যতামুলক হওয়া উচিত ছিল। আমার কাছে এক লোক আসলো, বললো বাপজান, আমার ফ্যামিলীর ১১ টা ভোট কারে দিবো? আমি বললাম ভোট বেচবেন? উনি বললো না, আমি বললাম তাহলে আর কি, আপনার যারে ভালো লাগে তাঁকে দিয়ে দেন। টেনশন করবেন না কোনো। যার যাকে মন চায় দিক, কি আর আছে জীবনে কাঁথা আর বালিশ। আমার অবশ্য উচিত সাকী ভাইয়ের পক্ষে প্রচারণা চালানো, কারন উনার তো আর হাতী ঘোড়া নাই- যে লোকজন ভোট দিবে। কিন্তু আমার কারো জন্যেই কাউকে বলতে ইচ্ছে করে না। ছ্যাবলামী। আসল নির্বাচনের খবর নাই, ক্লাস ক্যাপ্টেন ইলেকশন নিয়ে আমাদের অযথা উত্তেজনা। তবে শান্ত ভাইয়ের অবস্থা বাম্পার। তাঁদের প্রেসের ব্যবসা, আমাকে বললো শান্ত ভাই এবার একটা গ্যালাক্সী এস সিক্স কিনে ফেলবো, আর নতুন গাড়ী নিবো। আমি বললাম খুব ভালো, আপনাদেরই তো দিন। দিলে আল্লাহ নেয় কে? তবে প্রিয় ছোটভাই শুভ একটা ভালো কথা বলছে। আটাশে এপ্রিল শান্ত ভাই বাসার আশে পাশে কম থাইকেন বাইরে, তুহিন ভাই মানুষ ভালো না, হারলেই উনার মেজাজ হারাবেন। তুহিন হলো আদাবর থেকে কমিশনার প্রার্থী। আওয়ামী লীগ মনোনীত। কিন্তু হাসু কমিশনার তো ঝানু রাজনীতিবিদ, তিনি হেভীওয়েট পাওয়ারফুল লোক তিনি তো আর এমনি এমনি বসে থাকবেন না কিছু হলে। তাই দিনশেষে যেকোনো ইলেকশন পেশী আর টাকার খেলা। এই খেলা শেষ হতে আরো দুই যুগ লাগবে বলে মনে হয়! অনুমান করছি, কম বেশী হতে পারে, তবে সহসাই হচ্ছে না।
এই পোষ্ট নিবেদন করলাম বিষণ্ণ বাউন্ডুলে কে। অনেকদিন তাঁকে দেখি না, তবে সে ভালোই আছে সমানে বাংলাদেশের অসাধারণ ক্রিকেট খেলা গ্যালারীতে বসে দেখে বেড়াচ্ছে।
একদিন মাঠে যাও
হ
এই বয়সে ভুড়ি হইলে চলবো কেমনে? এট্টু হাঁটাহাঁটি কইরেন
মাঝামাঝি মানের ভুড়ি, আমি তো কম হাটি না, তাও ভুড়ি হচ্ছেই।
মামীর আদর-যত্নে ভুড়ি বাড়াইতে থাক। কে জানে বউ এসে এত আদর-যত্ন করে খাওয়াবে কিনা!


যদিও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কান-মাথা ঝালাপালা হয় বাসায় থাকলে। তবু ভালো লাগছে নির্বাচনী আমেজটা। অ-নে-ক-দিন পর এমন দেখতেছি। আমি আজিমপুরে ভোটার হইছিলাম। আমার তো ইচ্ছা করে ঢাকা উত্তরের প্রার্থীদের ভোট দিতে
আজিম্পুরে গিয়ে ভোট মেরে আসেন। কাউরে বলেন রিকশা পাঠাতে আপ ডাউন, যে পাঠাবে ভোটটা ওদেরকেই দিবেন।
নাদের চৌধুরী নাটক করতো না টিভিতে?
সেই বিটিভির অভিনেতাই, মোহাম্মদপুরে ভালো প্রভাব ও ব্যবসা আছে তাঁর। ডিশ ব্যবসা থেকেই মাসে ১০ লাখ টাকা আসে। আর ইনুর বোন জামাই না। সময় তো এখন উনাদেরই!
ইলেকশন ইলেকশন খেলা আমার একটুও ভাল্লাগে না, এই জায়গায় ভালো ভালো উল্টা পাল্টা বিবেচিত হয়। তাও ভাবি, সবচেয়ে কম খারাপ লোকটাই নির্বাচিত হোক। তাও যদি আমাদের শহরের কিছু হয়।
কিছুই হবে না। বেহুদা আস্ফালন!
আপ্নেরে গত পরশু ফোন দিছিলাম কয়েকবার, ধরেন নাই। বাংলাওয়াশের ম্যাচটা আপ্নের সাথে দেখার ইচ্ছা ছিল অনেক। টিকেটও যোগাড় হইছিল, অব্যাবহৃত রইয়া গেছে।
ব্লগে মাঝে মাঝেই ঢু দিয়া যাই, লেখা খুব বেশি পাই না কিছু বলার মতন তাই চুপচাপ থাকি।
আম্মু জিনিসটা আসলেই অদ্ভুত, বাংলাদেশের সব পোলাপাইন রে মাঝে মাঝে নিজের বাসাই সামলাইতে দেওয়া উচিত। মানুষ হইয়া যাওয়ার কথা সবার।
আরে আর কইয়ো না, সেদিন ছিলাম একে তো ঝামেলার মধ্যে, তারপর আমার সেটের অবস্থাও খারাপ, কল রিসিভ করা যায়। এসএমএস করবো ভাবছিলাম ভুলে গেছি, ফেসবুক ডীএক্টিভেট মারছো কেন? আছো ভালো তো? আমি খালি মিসই করে যাচ্ছি খেলাধুলা!
এফবি আর ভাল্লাগেনা! বেশিরভাগ টাইম অফই থাকে, মাঝে মাঝে খালি উঁকি দেই সিরাম কিছু হইলে আর কি!
দারুন ডিসিশান!
মন্তব্য করুন