ইউজার লগইন

বুধবার!

পরিচিত কেউ কেউ প্রশ্ন করে, দিনলিপি লেখা ছেড়ে দিলাম কেন? আমার দিনলিপির ব্লগ নাকি ভালো লাগতো। আমি অবাক হই। কখনো কমেন্ট করতে দেখি না এরকম লোকজন কেন আমার দিনলিপি ব্লগের কথা বলবে। আমি তো লিখতামই কতিপয় বন্ধু বান্ধবের জন্য। এইটাই হয়তো ব্লগের মজা। সেই কবে কার লেখা কেউ যদি আজ নতুন পড়ে ভালো লাগে, ফেসবুকে খুঁজে ইনবক্স করে তখন অবাক লাগে। যেমন আজ এক মেসেজ পেলাম সন্ধ্যায়, অদ্ভুত। এক ছেলে জানাচ্ছে আমার ২০১৩ সালের এক লেখা তার খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু তার প্রশ্ন হলো, আমার দিনলিপির বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু নাকি বানিয়ে লিখি? প্রথম কথা হলো, এটা কোনো প্রশ্নের মধ্যে পরে? মোটামুটি যা ঘটে তাই লিখি ফেসবুক ব্লগে। ফেসবুকে হয়তো সামান্য রং রস মিশাই কিন্তু মিথ্যা বলা হয় না। কারন পারসোনাল লাইফে আমি ভালোই মিথ্যা কথা বলি। তাই লেখার সময় মিথ্যার ফ্যান্টাসি আমার আনতে ভালো লাগে না। একটু আগে, আমি সেই ছেলের ইনবক্সের উত্তরটা দিলাম, আপনার যা মনে হয় ভাই।

আজ কেন লিখতে বসলাম, আজ কারো জন্মদিন নাই। জেবীন আপার জন্মদিন চলে গেছে দুদিন আগে। আজ লিখতে বসলাম একটা দিনলিপি লিখবো বলে। দিনটা আজ কেমন ছিল? আট দশটা দিনের মতোই ছিল। দেরীতে ঘুম ভাঙলো। কারন সকালে একবার উঠে আবার ঘুমিয়েছি। একবার উঠে চা বানিয়ে, অনলাইনে পেপার পড়তে পড়তে কখন যে টেবিল চেয়ার ছেড়ে বিছানায় গিয়েছি নিজেরই মনে নাই। পত্রিকা পড়েছি, কিন্তু পত্রিকাতে কি দেখেছি তাও মনে নেই। উঠে দাত ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে, ভাত ভাজি খেতে বসলাম। বুয়া না আসলে এই খেতে হয়। তবে ভাত ভাজিতে ডিম থাকলে ভালো লাগে। ফ্রাইড রাইস মনে করে খাওয়া যায়। অফিসে গেলাম। দুপুরে পুলকের ফোন। শান্ত ভাই রক্ত দিতে হবে? আমি সাধারণত রক্ত দেই না। কারন বি পজেটিভ রক্ত এভেইলেভল পাওয়াই যায়। আর খুব পরিচিত ছাড়া কেউ আমার রক্তের গ্রুপটাই জানে না। কারন আমি রক্তের গ্রুপ জানাই বি নেগেটিভ। কারন দিন যাপন বলেন আর যাই বলেন সব কিছুতেই আমি পেসিমিস্ট। কিছুই আশা করিনা কোথাও। আগে তো বন্ধুরা ডায়লগ দিতো, সব কিছু নিয়ে এত বিরক্ত হলে জীবন চলবে কিভাবে? আমি জবাব দিতাম-- চলছে তো- আর কি? যাই হোক রক্ত যখন দেয়ার কথা উঠছে আশেপাশে মনে হয় ডোনার পায় নাই। আমি জানালাম আচ্ছা আমি বাসস্ট্যান্ড আসতেছি। সেখান থেকে সিএঞ্জিতে করে আটিবাজার। আটিবাজার জায়গাটা অদ্ভুত। কেমন জানি জেলা শহরের মতো। অবশ্য আগে তো গ্রামই ছিল। আটিবাজার এখন ব্যস্ত বাজার। মানুষ আর মানুষ। বারেক সাহেবের সন্তান জুয়েল থাকলে বলতো, শান্ত ভাই আটিবাজারে মুড়ি খেতে খুব টেস্ট। আমি পাল্টা প্রশ্ন করতাম, মুড়ি খেতে কেন আমাকে আটিবাজার যেতে হবে? প্রতিদিনই হাইপোথেটিক্যালি মুড়ি খাওয়ার উপরেই আছি। যাই হোক পুলক ডাইরেক্ট সিএঞ্জি নিলো। ভাড়া মেলা। সেই পোস্তাগোলা ব্রীজের ডানপাশে বসুন্ধরা রিভারভিউতে। সেখানে আদ দ্বীন মেডিকেল কলেজ আছে সেখানে পেশেন্ট। উঠলাম পুলকের সাথে গল্প হচ্ছিলো, কিভাবে এই অঞ্চল শহর হয়ে গেল। কানেক্টিভিটি কিভাবে বদলে দেয় সব কিছু? পদ্মাসেতু হলে কি হবে? তবে ভালো লাগছিলো চারপাশ। মফস্বলের মতো মনোরম সবুজ চারপাশ। সবুজ ঘেরা অঞ্চল, মাঝখানে উকি দিচ্ছে ডেভোলাপারদের মাঝারী বিলবোর্ড- হোডিং। কিছু রাস্তা তো হুবহু জামালপুরে আমার নানু বাড়ীতে যেতে যেমন রাস্তা পরে তেমনটাই। তবে কেরানীগঞ্জ বিশাল এক অঞ্চল। সিএঞ্জি চালক কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা। তিনি জানালেন, তাদের আমান ভাই কেরানীগঞ্জের জন্য অনেক করছে। উনি যেভাবে 'আমগো আমানভাই' বলছিল তাতে মজা লাগছিলো। জনপ্রতিনিধিরা কত লাকী। সামান্য কিছু কাজ আর একটূ ভালো ব্যাবহার করলেই লোকজনের কত আপন হয়ে যায়। যাই হোক আসলাম। বসুন্ধরা রিভারভিউতে। জায়গাটা একদম নিরিবিলি। কিছু বিল্ডিং হয়েছে। সেখানেই বিশাল হাসপাতাল। বিশাল বিশাল ছবি, ব্যারিস্টার রফিকুল হক-বসুন্ধরার মালিক-আকিজের মালিকের। আমার মনে পড়ে গেল ছোট বেলার কথা। যশোহর সিএমএইচ দেখে যে অবাক হয়েছিলাম, এত বড় হাসপাতাল কিভাবে সম্ভব? তার আগে হাসপাতাল মানে আমার কাছে এক তালার সিক বে। একজন ডাক্তার থাকবে, সিস্টার থাকবে, চার পাচটা বেড থাকবে এইতো। গাল ভরা নাম দিতো নেভী, সিডব্লুসি- চিলড্রেন এন্ড ওম্যান কেয়ার। আদ দ্বীন হাসপাতালের সব কিছুই ঝকমকে, লোকজন নাই তো, তাই বিশাল বিশাল করিডোর ফাকা। গেলাম পুলকের কাজিনের বাচ্চা হয়েছে উনার রক্ত লাগবে। উনার বড় মেয়েটা সেই কিউট। যে চালু, আর যে পাকনা পাকনা কথা বলে। পুলকের আরেক কাজিন আসলো, উনাকে সবাই ডাকে মেঝদা বলে। মেঝদা এক ভয়াবহ মানুষ। ৩০ দিন আগে বিয়ে করেছে। উনার বয়স ৪০, মেয়ের বয়স ২০। এডাল্ট কথা বার্তায় কান গরম করে ফেলছে আমাদের। দেরীতে বিয়ে করে তিনি ঈদের খুশী। উনি যেসব বলেছেন সেসব এখানে লিখলে এই পোষ্ট সেই বিখ্যাত হবে। এত ভালগার আমার ভালো লাগে না। বাঁচার জন্য পুলক নিলো নামাজের আশ্রয় আমি হেটে হেটে দেখলাম হাসপাতাল। ক্রসম্যাচিং করতে দিয়ে এক ঘন্টা পরে আসতো বললো। এদিকে আরিফ ভাই আমাদেরকে খাওয়ানোর জন্য ও আরো মেহমানের জন্য পার্সেল আনতে উদগ্রীব। আমরা উনাকে নিরাশ করি নাই। গেলাম পোস্তাগোলায় রিক্সায়। সেদিকে আবার রিক্সা মানেই ব্যাটারী চালিত। সেই স্পিড।

ভালো দেখতে শুনতে অনেক রেস্টুরেন্ট ফেলে আমাদের নিয়ে আরিফ ভাই আসলো এক টিনের রেস্টুরেন্টে। দেখতে শুনতে খুবই সাধারন। জেলা শহরে বাস স্ট্যান্ডের পাশে যেমন থাকে ঠিক তেমন। আমি অর্ডার দেই নি, উনারাই প্লেইন পোলাও অর্ডার দিলো, তার সাথে আসলো রোস্ট। গরু ভুনা আসলো, ইলিশ মাছ ভাজি, চিংড়ি। যা খেলাম, এত স্বাদের রান্না অনেকদিন কোনো হোটেলে পাই না। সেই লেভেলের ভালো রান্না। দেখি লোকজনও খাচ্ছে ঠিকছে। আমি আর পুলক, আরিফ ভাই আর মেজদার সাথে পারলাম না, তাও যা খেয়েছি নড়তে পারিনা। তারপর ফিরনি খেলাম, চা খেলাম। উঠার এনার্জী নাই। রিক্সায় বসে ফেরার সময় মনে হচ্ছিলো দম আটকে আসছে। এরপর রক্ত দেয়ার অনেক আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। সেইসব হলো। রক্ত দিলাম। ফেরার সময় ক্যাফেটেরিয়ায় গেলাম। জঘন্য এক চা খাওয়ালো। নাম রাখছে আদ দ্বীন সবাই দেখি দ্বীনের পথে, সবার হিজাব মাথায়। ডাক্তার থেকে শুরু করে আয়া সবাইকে দেখে মনে হচ্ছে শিবিরের ইসলামী ছাত্রী সংস্থার কোনো হাসপাতাল। আবার সিএঞ্জি নিলাম। আবার সেই পথ। সেই মায়াময় সবুজ। মেঝদা তার গল্পে আমাদের হাসাতে হাসাতে ক্লান্ত করে ফেলছে। উনার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী একটু পরপর ফোন দেয়, তা নিয়ে রঙ্গরসিকতা তো আছেই। সন্ধ্যায় আসলাম বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে বারেকের দোকান। বারেকের দোকান থেকে বাসায়। মামার ছেলে সাইকের হাসি হাসি মুখ, দা দা দা ডাক শুনলে সব ক্লান্তি ভুলে যাই। গোসল করলাম এসে। পিসি খুলে জানলাম বিখ্যাত গীতিকার আবদুল গফুর হালী বেচে নেই। চিটাগাংয়ের অনেক নাম উনার। মাইজভান্ডারী গান লিখেছেন, তার সাথে লিখেছেন অসংখ্য কালজয়ী আঞ্চলিক গান।একটা সময় চিটাগাংয়ে হোটেলে হোটেলে, চিটাগাংইয়াদের অনেক বাসায় আবদুল গফুর হালী, শ্যাম সুন্দর, রমেশ শীলদের লেখা গানের নিম্নমানের মিউজিক ভিডিওর ডিভিডি সারাদিন ধরে দেখা হতো। তখনো ৫০টা চ্যানেল ছিল টিভিতে, তা বাদ দিয়ে লোকজন এই জিনিস গিলতো। কারন ভাষাগত, কারন অন্তরগত। নিজ ভাষায় অন্তর দিয়ে কাজ করেন তাহলে তা লোকজন দেখবেই। বিনম্র শ্রদ্ধা সদ্য প্রয়াত আবদুল গফুর হালীকে। উনার একটা গান ছিল আমার খুব প্রিয়। গানটা খুব বেশী মানুষ শুনেন নাই--ও শ্যাম রেঙ্গুন ন যাইয়ো। গানটা আমি শুনেছিলাম এক বিয়ের অনুষ্ঠানে। কি যে আবেগ দিয়ে গানটা গেয়েছিল একটা মেয়ে। ইউটিউবে এইগানটার ভালো গায়কীতে পেলাম না।

পোস্টটি ১৬ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

রাজসোহান's picture


যে মানুষ সারাদিন ঘরে বসেই ল্যাপটপে কাটায় দেয় তার কাছে এই দিনলিপিগুলো অনেক ভালো লাগে। যেমন আমি। মনে হয় একটার পর একটা ঘটনা স্লাইড আকারে কেউ বলে যাচ্ছে আর শুনছি। দিনলিপি লেখা আদতে সহজ মনে হলেও সহজ না। লেখার মধ্যে সহজবোধ্যতা সবার থাকেনা, তোমার লেখায় সহজবোধ্য গুণটা অনেক। এইজন্য ভালো লাগে বেশী।

তানবীরা's picture


বহুদিন পর একটা গরমাগরম সিঙ্গারা থুক্কু ব্লগ খেলাম - দারুন - শান্ত ইজ ব্যাক

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

আরাফাত শান্ত's picture

নিজের সম্পর্কে

দুই কলমের বিদ্যা লইয়া শরীরে আমার গরম নাই!