কার্যকরী লেখার বই, Ann-Handley. এর লেখা--Everybody Writes!
প্রথমেই বলে রাখি আমি ইংলিশ নন ফিকশন বই কম পড়ি। কারন বিবিধ। যেমন আমার ইবুক পড়তে কিছুটা বিরক্ত লাগে, আর বাসাতে প্রচুর বাংলা বই যা পড়ার মায়া কাটানো কঠিন। যেমন দুটো বই শেষ করলাম আনিসুজ্জামানের স্মৃতি কথা বিপুলা পৃথিবী, আর তপন রায় চৌধুরীর প্রবন্ধ সমগ্র। তার সাথে সাথে শেষ করলাম এই বইটা, Ann Handley এর লেখা। বইটা খুবই চমৎকার লেগেছে আমার কাছে। বিভিন্ন মাধ্যমে কনটেন্ট রাইটিং নিয়ে লেখা এরকম বই আমি কখনো পড়ি নি। তা নিয়ে দু চার লাইন লিখতেই আমার এই পোষ্টের অবতারনা।
বইটা শুরু হয়েছে মজার এক কথা দিয়ে। এভ্রিবডি রাইটস। সবাই লিখতে পারবে যদি সে চায়। লেখাকে আমরা যেভাবে দুরের জিনিস ভাবি। লেখক বলতে চাচ্ছেন, ওতো দুরের কিছু না আর কঠিন কিছুও না। একটু চেষ্টা করলেই মোটামুটি মানের লেখা সম্ভব। সেকেন্ড চ্যাপ্টারটাও খুব ইন্টারেস্টিং। রাইটিং ইজ এ হেবিট। লেখক এখানে দেখাচ্ছেন লেখা নিয়ে উন্নাসিক হবার কিছু নাই। প্রতিদিন লিখলেই ভালো লেখা সম্ভব। লেখক একটা চার্ট দিয়েছেন যে দিনে যা যা কাজ আমরা করি তাই লেখার সময় কিভাবে লেখা যায়। লেখার মূলমন্ত্রই হলো মোর দ্যা থিংক, দ্যা ইজিয়ার দ্যা ইংক। এভাবেই বিভিন্ন চ্যাপ্টারে লেখক হাস্যরস দিয়ে, নানা এক্সাম্পলে, অনেক ধরনের সাধারণ নির্দেশনা দিয়ে বুঝিয়েছেন রাইটিং এপ্রোচ কেমন হওয়া উচিৎ। কিভাবে লেখা উচিৎ। যেমন আমরা কথায় কথায় শুনি রাইটার্স ব্লক, বইতে জানাচ্ছেন ট্রাক ড্রাইভারের ব্লক হয়না, চাষীর ব্লক হয়না চাষে তাহলে লেখকের কেন ব্লক হবে? লেখক রিল্যাক্স করবে, কিছুক্ষণ ভাববে তারপর লেখা শুরু করবে। তিনি জানাচ্ছেন বইতে, যেকোনো কন্টেন্ট লিখতে চোখ কান খোলা রাখা জরুরী, গ্রামার ভুল করা যাবে না, শব্দের ডাবল মিনিং ভেবে লিখতে হবে আর পারলে এডিট করার সময় লেখকেরই সাধ্যমতো হিউমার ঢোকানো যেতে পারে। যাই লিখুক লেখা যেন কোনোভাবেই বোরিং না হয়। যে দেখবে সেই যেন এক নজরে হলেও পড়ার চেষ্টা করবে। লেখালেখি কে উনি পাঠদানের মতো নিবিষ্টতার দাবী রাখতে বলেন, আরো বলেন লেখা যেন সিম্পল হয় তবে সিম্পিলিস্টিক বলে বিবেচিত না হয়। এছাড়া তিনি কিছু ইংরেজি শব্দের কথা বলেছেন, যার অন্য মিনিং থাকার কারনে ভুল ভাবে ব্যবহৃত হয়। আর খুঁজতে বলেছেন লেখালেখির এক সঙ্গী যে ওয়েব হতে পারে কিংবা রিয়েল মানুষ যার সাথে লেখা নিয়ে খুটিনাটি অনেক কিছু নিয়ে শেয়ার করা যায়। কিছু আপাত দৃষ্টিতে সামান্য বিষয় কিন্তু ভালো ভাবে জানলে লেখার জন্য উপকারী, ভয়েস-এডভার্বের দিকে খেয়াল রাখা, খারাপ শব্দকে বাদ দিয়ে ভালো শব্দের ব্যাবহার। লেখা লেখার সময় পাঠক কি ভাবতে পারে তা জানাটা জরুরী, তেমন লেখা শেষে ভালো সম্পাদককে দিয়ে দেখে নেয়া। এই ডিজিটাল- অনলাইন যুগে বইটা একটা দারুণ সহায়ক গ্রন্থ কন্টেন্ট লেখার ক্ষেত্রে।
বইটার তিন নাম্বার অধ্যায়টা কিভাবে গল্প বলতে হবে তা নিয়ে। গল্প বলার ধরন, বাচনভঙ্গি, কি গল্প আর কি গল্প না তা নিয়ে বলা। চার নাম্বার অধ্যায়ে লেখক বলতে চাচ্ছেন লেখা প্রকাশ করলে কি মাথায় রাখতে হবে, যা লেখছি তা সত্য কিনা, আমি যা লিখছি তা নিয়ে আমি আসলে কতটা জানি, লেখার সময় আমি উদ্দেশ্যপ্রনেদিত ছিলাম নাকি ব্যালেন্সিংয়ের চেষ্টা করছি তা নিয়ে ভাবতে হবে। আরো ভাবতে হবে লেখাটা লিখে আমি কি চাই, আমরা লেখার নৈতিক মান কতটুকু, লেখার নামে অযৌক্তিক কোনো বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছি কিনা।
এরপর বইতে দিক নির্দেশনা দেয়া। কিভাবে আরো ভালো ফেসবুক ব্লগ টুইটার কিংবা মার্কেটিং কাজে লিখতে হবে তা নিয়ে বলা। কোন মাধ্যমে আইডিয়াল লেখার মাত্রা কতটুকু, বিভিন্ন মাধ্যম-- ফেসবুক টুইটার ব্লগে কিভাবে হিউমার দিয়ে লিখতে হবে তা নিয়ে অসংখ্য উপদেশ বিনয়ের সাথে বলা। লিঙ্কডইন, নিজের ওয়েবের হোম পেইজ, ছবি ও গ্রাফিক্সের সাথে লেখা, ইমেইলে কিভাবে কার্যকরী ভাবে লেখা যায় তা নিয়ে অনেক টিপস দেয়া। বইটাতে বেশী জোর দেয়া হয়েছে কি কনটেন্ট লিখবে তার উপর। সেখানে ব্লগের আইডিয়া কিভাবে পাওয়া যায়, গবেষনা ও ডাটা কিভাবে ম্যানেজ করা যায়, প্রচুর ইনফোরমেশন ও নির্ভুল এডিটিং রাইটিং কিভাবে সম্ভব তা নিয়ে পড়াশোনার ও জানার অনেক ওয়েবসাইটের নাম দেয়া।
বইটা আমার ধারনা বিজনেস গ্রাজুয়েট থেকে শুরু করে যারা লিখতে চান তাদের সবার জন্য খুব জরুরী। Ann Handley দেখিয়েছেন এই যুগে লেখালেখি তুলনামুলক কত সহজ, আর চাইলেই যেকোনো বিজনেস রিলেটেড কাজে সফলতার সাথে কন্টেন্ট লেখাও খুব বেশী কঠিন কিছু না। খালি কিছু নিয়ম ও টিপস মাথায় রাখতে হবে, আর মনে রাখে হবে আমি যেভাবেই হোক লিখবো। তাহলেই সম্ভব ভালো লেখার। বইটা পড়লাম, কিন্তু মনে থাকে না, আগের মত মাথা কাজ করে না। আগে যাই পড়ি ভুলতাম না, এখন ভুলে যাই অবলীলায়। এই বইটা অবশ্য আমি আবার পড়বো। ভাষাগত কারনে কিছু কিছু জায়গা মিস হলো, তা তখন দেখে নিবো।
পড়া শেষ হয়েছে তাহলে এখন লেখা শুরু করো - পরামর্শ অনুযায়ী - অপেক্ষায় আইজুদ্দিন
হুম, লেখা সহজ। তবে যদি কেউ সহজ বলে চিন্তা করে! লিখুন...
মন্তব্য করুন