এনাদার ট্রিবিউট টু কামাল ভাই এন্ড লীনা আপু!
এজরা পাউন্ড নাকি বলেছিলেন, শিল্পীরা সমাজের এন্টেনার মত। গড়পড়তা মানুষদের চেয়ে তারা নাকি আগেভাগে বুঝে যান, সমাজের আগামী দিনগুলোতে কি হতে চলছে, কেমন চলছে বর্তমান সমাজ। এটা বোঝার জন্য তাদের কোনো গায়েবী ক্ষমতার দরকার হয় না। তাদের সংবেদনশীলতা ও যুক্তি নির্ভর চিন্তাভাবনাই যথেষ্ট। আজ যাদের নিয়ে পোষ্ট লিখছি তারা আমার কাছে সেরকম মানুষ। তাদের বিভিন্ন বিষয়ে ভাবনা, যুক্তির প্রাসঙ্গিকতা, চিন্তাশীল মতামত, মিডিওকারকে খারাপ বলার সাহস আমাকে মুগ্ধ করে বারবার। এইজন্য এই দুইজন মানুষকে নিয়ে লিখতে আমি ক্লান্ত বোধ করি না। যদি আজ হেক্টিক একটা দিন গেল আমার, মন মেজাজও খুব লেখা উপযোগী নেই, তাও আমি লিখছি। কারন আশা করি এত চমৎকার দুজন মানুষকে নিয়ে লিখলে মন ভালো হবার সম্ভাবনা আছে।
লেখা শুরু করার আগে আমি খুঁজে খুঁজে আমার পুরোনো লেখা দেখছিলাম উনাদের নিয়ে। সব পোষ্টেই ঘুরেফিরে একি ধরনের কথা বলেছি। নতুন খুব একটা কিছু বলা হয় নাই। অথচ তারা পুরোনোপন্থী মানুষ নন। আজকেও লিখতে বসে পাচ্ছি না নতুন কিছু। না পাওয়ার কারন শুধু মাত্র ফেসবুক আর লেখা পড়ে আসলে কাউকে নিয়ে লেখা কঠিন। এই দুজনের সাথেই আমার দেখা হয় না অনেকদিন। তাই জানতে পারছি না, উনারা কি নিয়ে এখন ব্যস্ত, কামাল ভাইয়ের বই এর আপডেট কি, কিংবা লীনাপু নতুন কি লিখছেন, নতুন কি পড়ছেন? এই নিয়ে বোঝার জন্য ডিএক্টিভেশন খানিকক্ষণের জন্য কাটিয়ে ফেসবুকে দেখেছিলাম। ফেসবুকেও খুব বেশী কিছু নাই। আর বাকী যা আছে তা আমার আগেই দেখা। লীনা আপু ব্যস্ত জীবনানন্দ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব বই পড়তে আর পরিবার ও চাকরী নিয়ে। কামাল ভাই ফেসবুকেই কম আসেন। যাও লেখা সব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উনার অসাধারণ বিশ্লেষনে। এইসব তাৎক্ষনিক সব লেখা নিয়ে দুজনকে নিয়ে নতুন কিছু লেখা আসলে এক ধরনের দৃষ্টতা। তার চেয়ে অন্য আগের পোষ্ট গুলোর মতোই পুরাতন চেনাজানা কথা গুলোই ভালো।
এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। তার বাসায় বই সামান্য। এর ভেতরে দেখলাম কামাল ভাইয়ের উপন্যাস 'অন্ধ জাদুকর' ও 'কান্নাপর্ব'। বলা বাহুল্য আমি বই দুটো তাকে উপহার দিয়েছিলাম। তাকে টিজ করার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসা করলাম, কিরে পড়েছিলি নাকি সাজিয়েই রাখলি? সে বললো- 'কবে পড়া শেষ, আমার আম্মা ও খালারও পড়া শেষ। আমার আম্মার বেশী ভালো লাগছে।' আমি ভাবছিলাম কামাল ভাই এই কমপ্লিমেন্ট শুনলে খুশী হতেন। মায়েদের জন্য উনার প্রাণ আকুল করা ভালোবাসা। উনার লেখা কোনো মা এর পছন্দ সেটা উনার পুত্র হিসাবে বারবার জিতে যাওয়ার মত আনন্দ। আজ অবধি আমি যাকেই কামাল ভাই এর লেখা পড়িয়েছি, বই গিফট করেছি, সবাই সাদরে পড়েছে, মুগ্ধতার খবর জানিয়েছে। আমি নিজেও কামাল ভাইয়ের লেখায় মুগ্ধ। তাই পরিচিত এইসব প্রিয় মানুষদের মুগ্ধতা আমার ভালো লাগে। কামাল ভাই নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন, আরো অগ্রসর হবেন সামনে উনার ভেতর আছে সংবেদনশীলতা আর ডাউন টু আর্থ মানসিকতা। নিজেকে তিনি গুটিয়ে রাখেন প্রচারের আলো থেকে। ক্যামেরা আর বুম হাতে সাংবাদিক দেখলেই তিনি কথা বলতে উৎসাহী হন না। তিনি খুঁজেন শান্ত নীরব জায়গা, ঝঞ্জাটহীন বন্ধুদের সাথে আড্ডা, নিজের সাথে একান্ত সময় কাটানো। তিনি বিশ্বাস করেন, এত প্রত্যাশা করে লাভ কি? চলে যাচ্ছে তো। এই যে উনার মত বরেন্য মানুষের এত সিমপ্লিসিটি তা আমাকে অবাক করে বারবার। আমার মতো সাধারণ মানুষের কথা তিনি এত মন দিয়ে শুনেন, সাজেশন দেন, মতামত ভিন্নতা থাকলে জানান আমি চমকিত হই। মেলামেশাতে আমি যা দেখেছি উনি কারো সাথেই রুঢ় হয়ে কথা বলেন না, উনি চরম বিরক্ত তখনও তিনি গলা নামিয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে কাজের কথাটা বলে যান। আমি অল্পতেই রিএক্ট করি, কিছু না বললেও চেহারায় লোকজন জেনে যায় আমি খুবই ক্ষেপে আছি। কিছুই শেখা হলো না। যেমন শেখা হলো না আমার লেখালেখিটাও। কামাল ভাইয়ের আশাবাদ ছিল আমাকে নিয়ে আমি ভালো লিখবো। তাও পারলাম না। তবুও এখন যে দু চার লাইন লিখতে পারি, লোকজন টুকটাক প্রশংসা করে তার পেছনে কামাল ভাই ও লীনাপু এই দুজনেরই অবদান অনস্বীকার্য। কামাল ভাইয়ের একটা বিশাল বড় কমেন্ট ছিল, আমার কোনো এক পোষ্টে যে কিভাবে লিখলে আমার লেখা আরো ভালো হতে পারে। এরকম বড় বড় কমেন্ট উনি অনেকবার করেছেন, ভালো ভালো সব বই উপহার দিয়েছেন, কিছু কিছু মানতে পেরেছি, বেশীর ভাগই রাখতে পারি নাই। একদিন বইমেলার কথা বিশেষ ভাবে মনে পড়ে, উনি আমাকে দাঁড়িয়ে ৪০ মিনিটের এক লেকচার দিয়েছিলেন, লেখা ও মানুষের জীবন নিয়ে। এত অসাধারণ সব উপদেশ কেউ আমাকে দেয় নি। উনার জানা শোনার পরিধি, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সলিড নলেজ, বিভিন্ন লেখক নিয়ে মূল্যায়ন এতই রক সলিড, আমি ভাবি এইসব উনি লিখেন না কেন? তখন আমি বুঝে নিই উনি সব সময় সুনির্বাচিত বিষয় নিয়েই লেখার মানুষ, যা লিখবেন কমপ্লিট ফোকাসড হয়েই লিখেন। যদিও পারিবারিক ও পেশাগত ব্যস্ততায় উনার লেখায় সময় কম দিতে পারেন, তাও তিনি লিখবেন, লিখছেন, লিখেই যাবেন। কারন তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন 'লেখাটা প্রতিদিনের বাঁচার মত, বাঁচা যেমন ছাড়া যায় না তেমন লেখাও ছাড়া যায় না। জীবন সাজাতে গিয়ে লেখা সাময়িক ছেড়ে দিলে, জীবনটাই শেষমেষ সাজানো হয়, লেখা আর হয় না।' জন্মদিনের শুভেচ্ছা কামাল ভাই। ভালো থাকুন। সাত্ত্বিক অনেক বড় মানুষ হোক, হবে আশা করি, কারন তার বাবাই তো একজন বড় মানুষ।
আমার পাঠ্যভাসে লীনাপুর যা অবদান তা এক প্যারাগ্রাফে লেখা অসম্ভব। বই আমি আগেও পড়তাম। নানান ধরনের বই পড়েছি। যা কাছে পেতাম তাই পড়তাম। একই লেখকের বই সব পড়তাম। লীনাপু আমাকে শিখিয়েছে জীবনে সময় কম। বই পড়লে পড়তে হবে ভালো বই। অযথা বই পড়ে সময় নষ্ট- মেজাজ নষ্ট করে লাভ নাই। উপদেশ দিয়েই তিনি থেমে থাকেননি, অজস্র বই দিয়েছেন ধার, প্রচুর বই দিয়েছেন কিনে। লীনাপার কারনে কত বই যে আমার পড়া হয়েছে তার হিসাব রাখা যাবে না। যেমন ধরুন, কুমার চক্রবর্তী কবিতা লিখেন এতটুকুই আমি জানতাম। উনার কারনে আমার পড়া হয়েছে কুমার চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ তিনটা বই। আত্মধ্বনি, নির্বাচিত প্রবন্ধ, অস্তিত্ব ও আত্মহত্যা। তারপর ফরিদ কবীরের অসাধারণ আত্মজীবনী, আমার গল্প পড়াই হতো না উনার কাছ থেকে না নিলে। এরকম কত বইয়ের কথা বলবো। মিহির সেনগুপ্ত থেকে শুরু করে সতীনাথ ভাদুড়ী কত লেখকের বই গোগ্রাসে গিলেছি উনার কারনে। বাসায় পড়ার বইয়ের ঘাটতি পড়লেই লীনাপু ভরসা ছিল একটা সময়। এখন দুইজনেরই ব্যস্ততার কারনে দেখা সাক্ষাৎ হয় না অনেক দিন, মাঝেমাঝেই ভাবি, লীনাপুর বাসায় গিয়ে অনেক গুলো বই আনা জরুরী। এত গেল শুধু বইয়ের দিক। আমার সব চাইতে প্রিয় হলো লীনাপুর মাতৃসুলভ স্নেহ, এই দুর্বিনীত শহরে উনার মত স্নেহশীল মানুষ খুব কম আছে। আদরে আপ্যয়নে তো আমাকে মুগ্ধ করেই, আমার জীবন জীবিকা সব কিছু নিয়েই উনি উনার মত উপদেশ দেন। কিছু কিছু মানুষের কন্ঠ শুনলেই আপনি বুঝেবেন আপনার জন্য উনার ভেতরে প্রচুর বাৎসল্য বিরাজমান। লীনা আপু সেরকম রেয়ার মানুষদের একজন। উনার দুই কন্যা শ্রেয়া ও নামিরাকে আমি অসম্ভব পছন্দ করি। শ্রেয়াকে বেশী ভালো লাগে। শ্রেয়ার যে ইন্টেলিজেন্স, এই বয়সেই চিন্তার ক্ল্যারিটি, মায়ের মতই পড়াশোনার আগ্রহ আমাকে অবাক করে। ওর মতো বয়সে আমি কত লেইম ছিলাম, শ্রেয়া কত স্মার্ট। এখন লীনাপুকে আমার বেশী ভালো লাগে, কারন তিনি পড়াশোনা নিয়ে অনেক বেশী সিরিয়াস, লেখা নিয়ে আরো বেশী ফোকাসড। কিছুদিন আগে উনার জীবনানন্দ নিয়ে লেখা পড়ছিলাম, কি অসাধারণ। আশা করি অচিরেই উনার বই আসবে। আমরা দল বেঁধে অটোগ্রাফ নিবো লেখক লীনা দিলরুবার। জন্মদিনের শুভেচ্ছা আপু, অনেকদিন বেঁচে থাকেন, শ্রেয়া নামিরা আর দুলাভাইকে নিয়ে হোক সুখের দিন যাপন।
শুভ জন্মদিন - কামাল ভাই আর লীনা - অভিনন্দন - ভালবাসা
শান্ত বোধ হয়, ফরিদ কবীর ভাইয়ের "আমার গলপ" লিখতে যেয়ে "আমার জীবন" লিখে ফেলেছো
হ, আমি আপনাকে বইটা গিফট করেছি কদিন আগে, নিজেই ভুলে গেছি। সবই বয়সের দোষ।
গুণী মানুষ দুই জনই, উনাদের জন্য অফুরান শুভেচ্ছা।
আপনাকেও শুভেচ্ছা ভ্রাতা। ভালো থাকবেন।
মন্তব্য করুন