স্মরণের টানে সামান্য এক মুহূর্ত হবে অনন্তকাল!
এখন আর এই শহরে দুইটাকার টোস্ট বিস্কুট পাওয়া যায় না। আগে ঢাকার বেশীর ভাগ চায়ের দোকানে, পলিথিনে ঝুলানো সস্তা টোস্ট পাওয়া যেত। খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি আর টাইসন নামের একটা কুকুর ছিল শেলী সাহেবের, দুজনেই সেই টোস্ট ভক্ষণ করতাম। এমনিতে খেতে ভালো না, কিন্তু চায়ের সাথে ডুবালেই সেটা অমৃত। অনেক পরে জেনেছি, জীবন এমনি, সময়ে ডুব দিলেই শেষ সব। এখন আর ঐসব টোস্ট পাওয়া যায় না, প্যাকেট সুদৃশ্য বাহারী টোস্ট। একদিন দেখলাম ২৫ টাকার ঘি টোস্ট। টোস্টে ঘি, আর অবাক হবার বাকী আছেই বা কী? যেমন ৮-২০ টাকার বাটারবনে আপনি ক্রিম আশা করবেনই বা কেন? তারা নামেই ক্রিম, বাস্তবে ডাল্ডা চিনি দিয়ে বানানো ঘন মিশ্রণ। তাও খেতে আমাদের কি ভালোটাই না লাগে। তবে সবচেয়ে ভালো লাগতো বাবুল নামের এক গ্যারেজে কাজ করা কিশোরের। সে আমাকে বলতো একদিন সে ক্রীম আলাদা কিনে তা দিয়ে পাওরুটি খাবে, এই ক্রীমের সংকট রুটিতে তার আর প্রাণে সয় না। বিভিন্ন ওয়ার্কশপে গ্যারেজে যারা কাজ করে তারা দুপুরে ভাত খায় না, সকালেও রুটি কলা, দুপুরেও একি, বিকালেও চা বিস্কুট, রাতে খায় ভাত। এত অল্প খেয়ে এত পরিশ্রম তাদের কিভাবে পোষায়? নাকি মানিয়ে নেয় সব আপোষ ও পোষ।
আমি খুব সময় সংক্রান্ত জটিলতায় থাকি। এখন যেমন মনে হয় আমি ২০১২-১৩ তেই আছি, ১২-১৩ তে ভাবতাম, ২০০৭-২০০৮ সালে আছি। অঞ্জন দত্ত গান গেয়েছেন, আমার বয়স বাড়ে আমি বারি না। আমি সব সময় চাইতাম বড় হতে, কারন বড় হলেই নাকি অনেক আরাম, সব জানা যায়, সব পড়া যায়, সব দেখা যায়, সব করা যায়। বড় হয়ে দেখলাম সব কথাই অযথার্থ। লোকজন যা করছে আপনাকেও তাই করতে হবে, নয়তো আপনি 'মার্কেট ফিট' হবেন না। 'মার্কেট ফিট' না হলে আপনাকে নিয়ে ফ্যামিলি দফায় দফায় বোর্ড মিটিং করবে, আপনার সমস্যা কি তা না জেনেই সমাধান দিবে। আপনি মানলে ভালো, না মানলে জানাবে আগেই বলছিলাম আপনাকে দিয়ে কিছুই হবে না। আমরা সবাই গণকের খাতায় নাম লেখাতে ভালোবাসি। নিজের কথা মিলে গেলে খুশীতে আট গুণ আট চৌষট্টি খানা হয়। বাংলাদেশ হেরে গেল ফাইনালে। আমার এক বন্ধু কি খুশী, পারে না মিষ্টি বিলাতে, কারন তার কথা মিলেছে, সে বলেছিল এই তিনজাতির শিরোপাও পাবে না বাংলাদেশ। খুব বলতে শুনি সবাইকে, আমার সময়- আমাদের জামানায়। আমি ভেবে দেখলাম- আমার কোনো সময়ই না ঠিক আমার না, আমার জামানা বলে কিছু ছিল না। সব সময় ছিল অন্যদের। আমি খালি সময় চুরি করে বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে। তাই অনেকদিন পর ব্যস্ত শপিং মলে স্কুল বন্ধুর সাথে দেখা হলেও শুনি সেই পুরাতন কথা, 'তুই আগের মতোই আছোস'। আমার বলা হয় না, আগের মতই তো থাকবো, তোদের মত আমূল বদলানো আমার স্বভাবে নেই।
আমরা সবাই এখন অনেক টিভি সিরিয়াল দেখি, অনেক ভাষার সিনেমা দেখি, অনেক ধরনের গান শুনি। এত কিছু উপভোগের, আজকাল উপভোগ করাও একটা যোগ্যতা। কে কি দেখে ভরেছে নিজের হৃদয় তাই নিয়ে অহংকার। আগে ছিল বই নিয়ে, কে কি পড়ে শেষ করেছে। পড়াকে আমি একটা বড় রকমের যোগ্যতা ভাবতে পারি। কারন পড়তে সহজ না। এই বিভক্ত ব্যস্ত দুনিয়ায় আপনি পড়েন মানে আপনি অন্যরকম মানুষ। কিন্তু বিনোদন উপভোগ করে নিজেকে ইন্টেল্যাকচুয়াল সুপ্রিমিস্ট ভাবার কি মানে হতে পারে তা আমার জানা নাই। গত কিছুদিন ধরে আমি ডুবে শঙ্খ ঘোষের গদ্যে। মাঝে মধ্যে ভাবি উনার কাব্যপ্রতিভার হাতটা আমি চাই না, যদি গদ্য লেখার হাতটা পেতাম কি দারুণ হতো। উনার এই গদ্য লেখার হাত একদিনে আসে নি, প্রচুর পড়াশোনা আর ব্যাপক জানাশোনায় উনি হয়েছেন এই মহীরুহ। আমার কখনো তা হওয়া হবে না। এই নির্জন ব্লগেই লিখে যেতে হবে নিজের কথা গুলো। কেউ কেউ অনেকদিন পর অবাক হয়ে বলবে, তুমি এখনো এখানে লিখো? ভাবাই যায় না। কমিউনিটি ব্লগ গুলোর অবস্থা খারাপ। লেখক নাই। একটা কালে সামহ্যোয়ারে লেখকদের পুলিশিং করার মত মনিটর করা হতো। এখন সেরকম ব্যান করার মত লেখক নাই। ফেসবুকের এত বড় আকাশ, তার কাছে ব্লগের ছোট আকাশে আর কেউ আশ্রয় নেয় না। লোকজনের যা খুশী করুক। আমার ব্লগ ছাড়া আর আছেই বা কি, দু তিনটে মনের কথা খুলে বলার মত জায়গাই আর কই?
পৃথিবী জুড়ে লিবারেলদের আর সুখের দিন নাই। লিবারেল যত পপুলিষ্ট মতবাদ তা নির্বাসনে যাচ্ছে। ট্রাম্পের মত এক রেসিস্ট উন্মাদের হাতে বিশ্বের সব চেয়ে বড় শক্তিধর দেশ। বিশ্বকে নিয়ে ভাবলে চিন্তা বেশী দূর আগায় না। কারন নিজের দেশ আক্রান্ত ছাত্রলীগের মত একটা রাষ্ট্রীয় বেসামরিক গুন্ডা বাহিনীতে। এহেন অপকর্ম নাই তা তারা বাকী রাখছে। বিএনপি জামাতের আমলে ছাত্রদল আর শিবিরও এরকম আসমানে উঠেছিল। ছাত্রলীগ বলা যায় সবার রেকর্ড ভেঙ্গে নিজেকে নতুন মাইল ফলকের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমি সামান্য মানুষ, আমার পরিচিত ছাত্রলীগ নেতাদের কাছেই দেখি বেশুমার টাকা। এরকম এক বেশুমার টাকার নেতা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর রেফারেন্স দিচ্ছে, সবাই তা শুনছে। মানুষ কি অশ্লীল ধরনের নির্লজ্জ হয়। প্রেসক্লাবের সামনে দিয়ে যাই আসি, সামান্য এমপিও ভুক্তির জন্য শিক্ষকদের যে নজিরবিহীন অনশন তা দেখে বিপর্যস্ত বোধ করি। বাসায় এসে অন্তত একটা ভালো সিনেমা দেখলে সেই মন খারাপের রেশটা কাটে। এভাবেই যাচ্ছে স্কেপটিক দিনকাল।
দেখতে দেখতে আরেকটা বই মেলা এসে পড়লো। মেলা শুরু হবার আগেই পুলিশ বলছে, বই চেক করে ছাড়বে। হাজার হাজার বই পুলিশ চেক করবে না তা বুঝাই যায়। পুলিশের আশ্রয় ফেসবুক, বিভিন্ন ছাগু একটিভিস্ট পোষ্ট দিবে কোন বইয়ের কোন অংশ তার অনুভূতিকে খুন করেছে, পুলিশ তা শুনে একশনে যাবে। পুলিশ একশনে নিজেরাই একশনে নামবে। ভুলে গেলে চলবে না কিছুদিন আগেই এক প্রকাশনী বন্ধ করে দিয়েছে, বইমেলার কাছেই খুন হয়েছে লেখক। এই মূর্খের দেশে লোকজন বই ই খুব একটা পড়ে না, জ্ঞান চর্চার পরিধি খুব সীমিত, তার ভেতরে আছে এইসব মনিটরিং, ফুল পাখি লতা পাতা, আর স্যান্ডুইচের ভেতর নীল মাছি টাইপ কবিতা ছাড়া আর কিসের আর বই আর বের হবে? প্রাণের মেলায় আর প্রাণ মন কিছুই বসে না। এখন বইমেলায় যাওয়া হয় মূলত ফেব্রুয়ারীর অভ্যাসের টানে। অনেকটা ঈদের নামাজের মত, ঘুম বাদ দিয়ে যেতে ইচ্ছে করে না তাও শুধু আনুষ্ঠানিকতার খাতিরেই যাওয়া। তবুও গেলে দু তিন জন মানুষের সাথে দেখা হয়, যাদের সাথে ফেব্রুয়ারী বাদে আর কথাই হয় না। কিছু বন্ধু জিগ্যেস করে, তোর বই বের হবে কবে? বই লেখার মত বিদ্যে বুদ্ধি আমার নাই জানিয়ে কেটে পড়তে হয়। আপাতত এবারের বইমেলায় আমি দুটো বই ই কিনবো।এক- কাছের বন্ধু লীনাপুর বড়ভাই সুলেখক মোস্তাক শরীফের- আবু তোরাবের দৌড়। উনার সব বই ই আমার প্রথমদিনই কেনা হয়,অত্যন্ত আন্ডাররেটেড একজন লেখক। আর অবশ্যই কিনবো আহমাদ মোস্তফা কামালের- নিরুদ্দেশ যাত্রা। অনেকদিন ধরেই তিনি উপন্যাসটা লিখছেন, এবার শেষ হলো। আশা করি দারুণ কিছু হবে। হাসান মাহবুবের উপন্যাস মন্মথের মেলানকলিয়াও কিনবো আশা করি শেষের দিকে। ঘরে অবশ্য প্রচুর অপঠিত বই। তাই এবার আর চাপ নিচ্ছি না তেমন।
আমার আর আমার বন্ধু জেমসের স্বপ্ন ছিল পিক আপ ভর্তি বই কিনবো আগামীতে। কিন্তু সে আগামী আর আসলো না এখনো। জেমস বাংলা বই ছেড়ে ধরেছে ইংরেজী বই। ইংরেজী ননফিকশন নাকি সস্তা আর পড়তেও দারুণ। আমি অবশ্য বাংলা বইয়েই আছি, পিসিতে পিডিএফ পড়া কিংবা ইংরেজী বই গোগ্রাসে গেলা এইসবে কোনো আরাম পাই না। যেমন ভালো লাগে না গ্রীন টি খেতে, মানুষ কিভাবে দিনের পর দিন গ্রীন টি সকাল বিকাল ভক্ষণ করে তা আমার কাছে বিষ্ময়কর। ইদানিং খুব গল্প লিখতে ইচ্ছে করে, কত গল্প মাথায় ঘুরে ঘুরে চলে যায়, লেখা হয় না। কারন গুছিয়ে লিখতে পারি না। দুবার শুরু করেও আর আগাতে পারিনি উপন্যাস লেখা। লেখক হবার আগেই আমার রাইটার্স ব্লক চলিতেছে। তাই ভাবলাম উপন্যাস লেখা যেতে পারে নতুন করে। আপাতত আমার লক্ষ্য এই বছরে আমার একটা উপন্যাস শেষ করা। তা কবে বের করবো তা আমার জানা নাই। কারন প্রকাশে আমার অনীহা, এরচেয়ে কিছু লোকজন জানুক, আমি লিখতে পারি দু চার লাইন তাতেই আনন্দ। আমাদের এক স্কুল মাস্টার বই লিখতেন, চট্টগ্রামের মোটামুটি চেনা সাহিত্যিক, আমাদের কাজ ছিল তার শিশুতোষ লিখিত ছড়া গুলোকে ভেঙ্গানোর। উনি একবার শুনে আমাকে ধরে দিবেন মার, তার আগে জিগ্যেস করছিলেন- মুখস্থ আছে কিনা। আমি গড়গড় সব বললাম, উনি শিশুদের মতোই খুশী। সেদিন বুঝলাম নিজের লেখা নিয়ে মানুষ কি অবসেশনে ভুগে। আমার সেরকম অবসেশন নাই। কারন আমি বাংলা সাহিত্যের সেরা লেখা গুলো পড়া, আমি জানি আমি সহ আমাদের প্রচেষ্টা কতটা মিনিমাম।
লেখার অনেকগুলো লাইন পুরাই আমার মনের কথা। জাস্ট আপনার মতো ভাল করে বুঝিয়ে লিখতে পারি নি। কিন্তু আপনার লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে ট্রাই করা সম্ভব।
বই প্রকাশ করাটা একটা ক্ষেত্রে জরুরি। আপনি যেমন কিছু মানুষের সাথে লেখার মাধ্যমে একটা যোগাযোগ স্থাপন করতে চান, তেমনি কিছু মানুষ থাকবে যারা পার্টিকুলারলি আপনার লেখার সাথেই শুধু যোগাযোগ করতে পারবে। অন্য অনেক ভাল লেখক থাকতে পারে, কিন্তু তাদের দরকার আপনার স্টাইল। সেই সব মানুষের কথা ভেবেও বই প্রকাশের ব্যপারটাকে আরেকটু জোরালোভাবে এগিয়ে নিতে পারেন চাইলে।
শুভকামনা থাকলো। লেখার কিছু কিছু বিষয় নেগেটিভ লেগেছে। তবে বেশিরভাগই সত্যকথন। তারপরও এই সব নিয়েই আমাদের টিকতে হয়। তাই আমি বলবো, যেভাবে চলছে সেভাবে খারাপ চলছে না। জাস্ট চলতে দিন। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবনে সুসময় আসবেই।
কথা ক'টা মন ছুঁয়ে গেলো
হুম..... বরাবর আগের মতোই..... চলুক...... অনেক মনের কথার প্রকাশ হলো আপনার লেখনীর মাধ্যমে...... শুভ কামনা।।
'নির্জন ব্লগ' টার্মটা কয়েন করে ফেললেন। ভালো হইছে খুব এই লেখাটা।
মন্তব্য করুন