রাসেল ভাইয়ের স্মরণসভায়!
রাসেল ভাইকে নিয়ে কিভাবে কথা বলা সম্ভব এটা আমি এখনো খুঁজে পাইনা। আসলেই রাসেল ভাইকে নিয়ে এত কিছু কি বলার আছে? রাসেল ভাই তো আমাদের দিকে তাকিয়েই বুঝে যেত মজা করার হাসি কিংবা আড্ডার ভালোবাসা। রাসেল ভাইও কি এত বলাবলি পছন্দ করতেন। উনি হলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতেন। উনার চার্মই ছিল সবকিছু দেখা, কথা বলে বুঝে নেয়া। তারপর লেখায় নির্মোহ ভাবে হিউমার মিশিয়ে তা নিয়ে একটা বিকল্প মতামত দেওয়া। তবুও জীবনে কখনো আনুষ্ঠানিকতা তো রাখতেই হয়। সেই আনুষ্ঠানিকতা থেকেই আমরা আজ বিকালে পরীবাগে গেলাম, যে আমি ছুটিরদিন কোথাও যাই না।
সোহান আসলো আমার বাসায়। কাটাবন গেলাম রিকশায়। সোহানের সাথেও কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না। একবছর আগে যে কান্ডটা ঘটে গেছে সেটার পর তা নিয়ে কিবা বলার আছে। রাসেল ভাইয়ের কথা তো আমার প্রায়শই মনে পড়ে। যেমন সেদিন এক গান শুনছিলাম,রাসেল ভাই থাকলে বলতেন, গানটা তো ভালোই ছিল। কিন্তু শিল্পী বেশি তাফালিং করে গানটার সিম্পলিসিটি নষ্ট করে দিলো। এসব ইনপুট দেয়ার মানুষটা আর নাই। কিংবা মোস্তফা মামুনকে নিয়ে কিছু লিখলাম। উনি বলবে, স্কোর রেকর্ড আর নাম মুখস্থই মামুনের স্কিল সেট।
মনে পড়লো আজ থেকে সাত আট বছর আগে আমরা সবাই বাংলা একাডেমি গিয়েছিলাম। কামাল ভাই পুরষ্কার পাবে। সেদিন অনেকদিন পর রাসেল ভাইয়ের সাথে আমাদের দেখা হলো। আমরা কি যে খুশী! উনি জেল থেকে ফিরেছেন মাস দুই আগে। কি উচ্ছাস। আমাকে বলছেন, তোরও জেল থেকে ঘুরে আসা দরকার। আরো ভালো ব্লগ লিখতে পারবি। সবকিছুই তার কাছে স্পন্টেনিয়াস। এরকম একটা মানুষ আর নেই।
তো কাটাবন থেকে পরীবাগে গেলাম হেঁটে। যেয়ে দেখি তারার হাট। বাংলা ব্লগের সব স্টাররা দাঁড়ানো। অনেকদিন পর কৌশিক ভাইকে দেখলাম। এই প্রথম প্রণব আচার্য্যকে দেখলাম। শুভ ভাইয়ের সাথে দেখা হলো প্রায় ছয় বছর পর। অন্যমনস্ক শরতকে দেখলাম সাত বছর পর। লিপি ভাবীর সাথেও দেখা হলো চার বছর পর। ক্রমশো বড় হয়ে যাওয়া রিককে দেখলাম। মুক্তি মন্ডলের সাথে প্রথম দেখা হলো। বইমেলার বাইরে নজরুল ভাইকে দেখলাম। জেবতিক ভাইকেও দেখলাম চার বছর পর। এত লোক আলাপই হয়ে উঠেনি অনেকের সাথে।
শুরু হলো অনুষ্ঠান। বিথী ঘোষ গান গাইলো। টিএসসির বাইরে এই প্রথম শুনলাম সমগীত দলের কারো গান। এরপর স্মৃতিচারণ। রাসেল ভাই কতজনকে কত ভাবে স্পর্শ করেছে। জ্যোতির্ময় দা, বাকী বিল্লাহ, মিঠু ভাই, রুবেল ভাই এদের কথা ভালো লাগলো। পারিবারিক গল্পও শুনলাম। নজরুল ভাই কিংবা তার শ্যালকের জীবনে রাসেল ভাই কিভাবে স্বপ্ন দেখিয়েছে সেসব শুনে ভালো লাগলো। রাসেল ভাইয়ের কিছু কাজ করছিলো নিজে নিজে সেসব নিয়ে জানলাম। ভাবীর কথা শুনতে শুনতে চোখে পানি এসে গেল। উনিও স্পোর্টিং ভাবেই মেনে নিয়েছেন এ অনুপস্থিতি। আমি ভাবছিলাম লীনা আপুর কথা। আপু থাকলে রাসেল ভাইকে নিয়ে হয়তো ভিন্ন কিছু বলতে পারতেন। কামাল ভাইকেও মিস করেছি। তবে রাসেল ভাইকে আমার কখনো মনে হয় না- উনি নাই। কিছু নিয়ে স্ট্যাটাস দিলে ঠাস করে হয়তো বলবে, শান্তরে তুই অস্থির কেন? না বুঝেই রায় দিয়া দিলি। উনিও বলেন না। সময় চলে যায়।
কিছুদিন পর বইমেলা হবে, বাংলা বই নিয়ে যে রাসেল ভাইয়ের কত প্ল্যান ছিল। মেলা থেকে ফেরার সময় বলতে বলতে যেতেন, যে মার্কেট আমাদের নিতেই হবে। আর নেওয়া, বাংলা বই লোকে কম পড়ে, কেউ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একাত্তরের চেতনার আমলেই আগ্রহ পায় না। রাসেল ভাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহ সঞ্চার করেছিলেন আমাদের ভেতর। হদিস দিতেন কত বইয়ের। আর উনার বইমেলার ম্যাপিং থাকতো টপ নচ ক্যাটাগরির। জিগ্যেস করলেই বলতেন ওটার ডানদিকে যা। আর উনি চেষ্টাকে মুল্য দিতেন। কেউ যদি কোনো কিছু ট্রাই করতো, বলতেন এই চেষ্টাটাই অনেকে করে না। মানুষ বিস্মৃতির পক্ষের লোক। কিন্তু যতদিন আমরা আছি রাসেল ভাইকে মনে করবো। যিনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন, কীবোর্ড দিয়ে বিপ্লব না হলেও কিছু একটাতো হবেই।
মন্তব্য করুন